ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যা ও সমাধান লেখো

ভারতের কার্পাস বয়ন শিল্পের সমস্যাগুলি হল-

ভারতে চাহিদার তুলনায় কাঁচা তুলোর জোগান কম। তা ছাড়া দীর্ঘ আঁশযুক্ত তুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। ফলে, ভালো কাঁচামালের অভাব রয়েছে।

ভারতের কার্পাস বয়ন কলগুলির উৎপাদন ক্ষমতা কম কিন্তু উৎপাদন ব্যয় বেশি, কিন্তু সুতিবস্ত্রের দাম সেইভাবে বৃদ্ধি পায় না, ফলে মিলগুলি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

রপ্তানিতে বিভিন্ন কার্পাস বয়ন শিল্পে উন্নত দেশ যেমন- জার্মানি, হল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতা রয়েছে। এই সমস্ত দেশের উৎপাদন ব্যয় কম বলে এরা কম মূল্যে বস্ত্র বিক্রি করতে পারে। কিন্তু ভারতে বস্ত্রের উৎপাদন ব্যয় বেশি বলে রপ্তানি বাজারে ভারতের গুরুত্ব কমছে।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতের কাপড়কল গুলির মধ্যে অধিকাংশ কলেরই যন্ত্রপাতির বয়স 25 বছরের বেশি। ফলে, এই যন্ত্রগুলির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি ও এদের উৎপাদন ক্ষমতা কম এবং উৎপাদিত দ্রব্যের মান তেমন আশানুরূপ নয়, যা ভারতীয় কার্পাস বয়ন শিল্পের প্রধান সমস্যা।

অর্থের অভাব, বিদেশি যন্ত্রের আমদানি, শুল্ক বৃদ্ধি, 1991 সালে ভারতীয় টাকার অবমূল্যায়ন প্রভৃতি কারণে পুরাতন যন্ত্রপাতি আধুনিকীকরণের সমস্যা রয়েছে, যার প্রভাব পড়ছে কার্পাস বয়ন শিল্পের ওপর।

পেট্রোরাসায়নিক শিল্পের উন্নতির ফলে রেয়ন, নাইলন, পলিয়েস্টার, ডেক্রন প্রভৃতি কৃত্রিম তন্তু তৈরি হচ্ছে, যার ফলে দেশীয় বাজারে এই কম মূল্যের অথচ টেকসই তন্তুর সঙ্গে সুতোর প্রতিযোগিতা হয়, ফলে সুতিবস্ত্র শিল্পের বাজারের পরিধি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে।

1972 সালে 46টি রুগ্ন মিলের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য NTC (National Textile Corporation) গঠিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত মিলের সংখ্যা 104 টি। এই সমস্ত মিলগুলিকে লাভের মুখ দেখিয়ে অবিলম্বে সরকারকে ভারমুক্ত করা প্রয়োজন।

শক্তির স্বল্প জোগান, পরিবহণের সমস্যা, রাজ্যে পণ্য প্রবেশে করের চাপ প্রভৃতি সমস্যাগুলি দূর করে শিল্পের যথাযথ পরিকাঠামো গড়ে তোলার দিকে নজর দিতে হবে। কাঁচামালের সমস্যা: কাঁচামালের দাম প্রায় 200% বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মিলগুলি লাভজনক হয়ে ওঠার পথে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ: শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ, ধর্মঘট প্রভৃতি কারণে অনেক শ্রমদিবস নষ্ট হয়, ফলে কার্পাস বয়ন শিল্প কেন্দ্রগুলি সমস্যার সম্মুখীন হয়।

উপরিউক্ত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে। যথা-

বয়নকলগুলির পুরাতন যন্ত্রগুলি বাতিল করে নতুন উন্নত যন্ত্র বসানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

বর্তমানে যোশি কমিটির সুপারিশক্রমে সরকার অন্তঃশুল্ক ও রপ্তানি শুল্ক হ্রাস করে কার্পাস বয়ন শিল্পকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে সাহায্য করেছে।

উন্নত কার্পাস উৎপাদনের জন্য এবং নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে।

ভারত সরকার কার্পাস বয়ন শিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য বেশ কয়েকটি কার্পাসবয়ন কেন্দ্রকে অধিগ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে কার্পাসবস্ত্র রপ্তানি উন্নয়ন সংস্থা ও জাতীয় সুতিবস্ত্র কর্পোরেশন গঠন করে এই শিল্পের উন্নতির চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা