ভারতবর্ষকে বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ বলা হয় কেন
ভারতবর্ষকে ‘বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ’ বলা হয় কেন? |
ভারতবর্ষকে ‘বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ’ বলা হয় নানা কারণে—
ভৌগোলিক বৈচিত্র্য
ভারতের উত্তর দিক বরাবর অবস্থান করছে ভঙ্গিল পর্বতমালা হিমালয়; দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যথাক্রমে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর এবং মধ্যভাগে রয়েছে বিশাল সমভূমি ও মালভূমির সমাহার, পশ্চিম দিকে রয়েছে মরুভূমি। উপকূলভাগে উপকূলীয় বৈশিষ্ট্যও বর্তমান। এতরকম ভূপ্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ভারতের ভূমিরূপকে আলাদা বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
জলবায়ুগত বৈচিত্র্য
ভারতের পূর্বে মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত যেমন হয় তেমনই পশ্চিম দিকে বৃষ্টিহীন মরু জলবায়ু দেখা যায়। উত্তর দিকে পার্বত্য অঞ্চলে শীতল জলবায়ুর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ দিকে উপকূলবর্তী অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু পরিলক্ষিত হয়। মধ্যভাগে তেমনই চরমভাবাপন্ন জলবায়ু বিরাজ করে। এই জলবায়ুর বৈচিত্র্য ভারতকে অন্য দেশ থেকে আলাদা করেছে।
মৃত্তিকাগত বৈচিত্র্য
ভারতের মধ্যভাগে পলিমাটি, দাক্ষিণাত্যে কালো মাটি, ছোটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লালমাটি, উপকূলে লবণাক্ত মাটির প্রাধান্য দেখা যায়, যা ভারতের কৃষিকাজ ও স্বাভাবিক উদ্ভিদের ওপর প্রভাব ফেলেছে এবং ভারতকে বৈচিত্র্যপূর্ণ করে তুলেছে।
স্বাভাবিক উদ্ভিদগত বৈচিত্র্য
পার্বত্য অঞ্চলে সরলবর্গীয় উদ্ভিদ, মরু অঞ্চলে কাঁটাজাতীয় উদ্ভিদ, উপকূলে ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ, সমভূমিতে চিরহরিৎ ও পর্ণমোচী জাতীয় উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়। এই বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদের সমন্বয় ভারতে বৈচিত্র্য এনেছে।
সংস্কৃতিগত বৈচিত্র্য
ভারতে নানা ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, জাতির সংমিশ্রণ ঘটেছে, যা বিভিন্ন প্রকার সংস্কৃতিকে একত্রিত করে সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে সমৃদ্ধ করেছে।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতের অবস্থান ও আয়তনগত বিশালতার জন্য সারা দেশ জুড়ে মানুষের ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি ও পোশাকপরিচ্ছদে পার্থক্য লক্ষ করা গেলেও সব জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মিলে এক ঐক্যের বন্ধন গড়ে তুলেছে। এই বহু ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বাকে মর্যাদা দিয়ে সকলে মিলে এক ও অখণ্ড ভারতবর্ষকে বাঁচিয়ে রেখেছে। বহুর মধ্যে ঐক্যের এমন সহাবস্থান পৃথিবীর আর কোথাও নেই – সেই কারণে ভারতকে “বৈচিত্র্যের মধ্যে একতা” আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা