ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব কী ছিল? |
ফরাসি সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণা করে।
ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের গুরুত্ব
এই ঘোষণাপত্রের বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল। যেমন-
[1] স্বাধীনতার স্বীকৃতি:
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ফরাসি তথা বিশ্বমানবতার অধিকার ঘোষণা করে। এই অধিকারপত্র ঘোষণা করে যে, স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এর দ্বারা ফ্রান্সের মানুষ বাস্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তি ক্রয়বিক্রয় ও ভোগের অধিকার প্রভৃতি লাভ করে।
[2] পুরাতনতন্ত্রের ধ্বংস:
ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র ফ্রান্সের পচনশীল পুরাতনতন্ত্র, স্বৈরাচারী দৈব রাজতন্ত্র, যাজকতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র প্রভৃতির পতন ঘোষণা করে। ঐতিহাসিক ওলার এই ঘোষণাপত্রটিকে ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু-পরোয়ানা’ বলে অভিহিত করেছেন।
[3] জনগণের সার্বভৌমত্ব:
ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম লক্ষ্য ছিল জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা। ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারপত্র প্রমাণ করে যে, স্বৈরাচারী ও দৈব ক্ষমতার দাবিদার রাজা নন, দেশের জনগণই হল প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। ঐতিহাসিক লেফেভর বলেছেন যে, “এই ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ফরাসি বিপ্লবের কালজয়ী আবেদনের সূত্রপাত ঘটে।”
[4] আন্তর্জাতিক প্রভাব:
ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র ফ্রান্সের বাইরে বিভিন্ন দেশের মানুষকেও মুক্তির পথ দেখায়। ইউরোপের বঞ্চিত ও নিপীড়িত মানুষের মনে এই ঘোষণাপত্র নতুন আশার আলো সঞ্চার করে। তাই ঐতিহাসিক লর্ড অ্যাক্টন বলেছেন যে, এই ঘোষণাপত্রটি “নেপোলিয়নের সমগ্র বাহিনীর চেয়েও শক্তিশালী ছিল।”
উপসংহার:
বিপ্লবের কালে ফরাসি সংবিধান সভা ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের দ্বারা সেদেশের পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বাজিয়ে দেয়।