বাংলার উৎসব রচনা
বাংলার উৎসব রচনা |
“এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ তবু রঙ্গে ভরা”
-ঈশ্বর গুপ্ত
ভূমিকা
মানবজীবনের অপরিহার্য অঙ্গ হল উৎসব। মানুষ কেবল খেয়ে-পরে বেঁচেই সন্তুষ্ট হয় না। সে অনেকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে চায়, দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমি থেকে মুক্তি চায়, শ্রমক্লান্ত জীবনে পেতে চায় অনাবিল আনন্দ। আর সেজন্যই মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। উৎসব মানুষকে আনন্দ দেয়, প্রসারিত করে তার অস্তিত্বকে।
ধর্মীয় উৎসব
নানান ধর্মসম্প্রদায়ের বাস এই বাংলায়। সকল সম্প্রদায়ই আপন আপন ধর্মীয় উৎসবে মেতে ওঠে। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপুজো। শরৎকালে দেবী দুর্গার আরাধনাকে কেন্দ্র করে কয়েকদিনের জন্য ধর্মমত নির্বিশেষে বাঙালিজীবন আনন্দমুখর হয়ে ওঠে। দুর্গাপুজো ছাড়া কালীপুজো, সরস্বতীপুজো, লক্ষীপুজো, বিশ্বকর্মাপুজো, মনসাপুজো, ধর্মপুজো প্রভৃতিও বাংলার বিশিষ্ট ধর্মীয় উৎসব। এ ছাড়া আরও নানা ধরনের ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় হিন্দুসমাজে। মহরম, ইদ, সবেবরাত প্রভৃতি মুসলমান সম্প্রদায়ের উৎসবও বাঙালি-জীবনের সঙ্গে অচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। বাঙালি-খ্রিস্টানদের মধ্যে রয়েছে বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে প্রভৃতি উৎসব।
সামাজিক-পারিবারিক উৎসব
মানুষ সামাজিক জীব। ব্যক্তিগত আনন্দ-অনুষ্ঠানকেও সে ভাগ করে নিতে চায় আর পাঁচজনের সঙ্গে। বিবাহ, অন্নপ্রাশন, জন্মদিন, উপনয়ন, ভ্রাতৃদ্বিতীয়া-এই পরিবারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানগুলিও শেষপর্যন্ত বাংলার সামাজিক উৎসবে পরিণত হয়। এগুলির মধ্যে দিয়ে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গেও নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।
ঋতু-উৎসব
বিভিন্ন ঋতুতে বাংলা দেশে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণময় উৎসব। এগুলির মধ্যে প্রধান কয়েকটি হল নবান্ন, পৌষপার্বণ, মাঘোৎসব, দোলযাত্রা, নববর্ষোৎসব প্রভৃতি। রবীন্দ্রনাথের শান্তিনিকেতনে বৃক্ষরোপণ, বর্ষামঙ্গল, বসন্তোৎসব প্রভৃতি ঋতু-উৎসব বিশেষ গুরুত্ব সহকারে উদ্যাপিত হয়। রবীন্দ্রনাথের ধারা অনুসরণ করে এই সমস্ত উৎসব আজ শান্তিনিকেতনের বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জাতীয় উৎসব
শুধু ধর্মীয়, সামাজিক-পারিবারিক কিংবা ঋতু-উৎসব নয়, স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, রবীন্দ্রজয়ন্তী, নজরুলজয়ন্তী, নেতাজিজয়ন্তী ইত্যাদি পালন উপলক্ষ্যে বাঙালি উৎসবে মেতে ওঠে।
উপসংহার
বাঙালি উৎসবপ্রিয় জাতি। সেজন্যই বাঙালিসমাজে বারো মাসে তেরো পার্বণের সমারোহ। এইসব উৎসব একের সঙ্গে অন্যকে মিলিয়ে দেওয়ার, নিজের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসার মাধ্যম। উৎসব আছে বলেই সমস্যাজটিল দুঃখজর্জর জীবনেও বেঁচে থাকার আশ্বাস পাওয়া যায়। উৎসবের মধ্যেই রয়ে যায় বাঙালির প্রাণের পরিচয়।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা