বস্তুগত বিবর্তন কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও। একে কি প্রকৃত বিবর্তন বলা যায়

বস্তুগত বিবর্তন কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও। একে কি প্রকৃত বিবর্তন বলা যায়

বস্তুগত বিবর্তন কাকে বলে? একটি উদাহরণ দাও। একে কি প্রকৃত বিবর্তন বলা যায়?

বস্তুগত বিবর্তন

যুক্তিবিজ্ঞানী বেইন (Bain) ‘বস্তুগত বিবর্তন’ (Material obversion) নামে নতুন এক ধরনের বিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। সাধারণভাবে বিবর্তনের সময় বিধেয় পদের আগে ‘Not’ বা ‘না’ বা ‘অ’ যোগ করে মূল হেতুবাক্যের গুণের পরিবর্তন করলেই সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়। এখানে বচনের যৌক্তিক গঠন বা আকার বা ‘form’ দেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বেইন-এর পদ্ধতিতে হেতুবাক্যের বস্তুগত উপাদান বা ‘Matter’-এর উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মূল হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় দ্বারা যে বস্তু বা গুণ উল্লেখ করা হয়, কেবল অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে তার ঠিক বিপরীত বস্তু বা গুণের উল্লেখ করে সিদ্ধান্তে একটি নতুন বচন গঠন করাই বেইন প্রস্তাবিত বিবর্তন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য। যেমন–
আলো হয় সুখদায়ক (A)-বিবর্তনীয়।
এই বচনের বস্তুগত বিবর্তন হবে,
∴ অন্ধকার হয় কষ্টদায়ক (A)-বিবর্তিত।
এখন প্রশ্ন হল, বস্তুগত বিবর্তনকে কি যথার্থ বিবর্তন বলে গ্রহণ করা যাবে?
না, বস্তুগত বিবর্তনকে যথার্থ বিবর্তন বলা যাবে না। কারণ–
প্রথমত, বিবর্তনে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তে উদ্দেশ্য একই থাকা উচিত, কিন্তু এই পদ্ধতিতে তা থাকছে না। যেমন, উপরোক্ত দৃষ্টান্তটিতে হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য ‘আলো’, কিন্তু সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হল ‘অন্ধকার’।
দ্বিতীয়ত, বিবর্তনের স্বীকৃত নিয়ম অনুসারে হেতুবাক্যের বিধেয় পদের বিরুদ্ধ পদকে সিদ্ধান্তের বিধেয় করতে হবে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে সিদ্ধান্তের বিধেয়টি হেতুবাক্যের বিধেয়ের ‘বিপরীত পদ’, ‘বিরুদ্ধ পদ’ নয়। যেমন, উপরোক্ত দৃষ্টান্তে নিয়ম অনুসারে হওয়া উচিত ছিল ‘অ-সুখদায়ক’, কিন্তু তা না হয়ে বিধেয় হয়েছে ‘কষ্টদায়ক’।
তৃতীয়ত, নিয়ম অনুসারে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের গুণ ভিন্ন হয়। কিন্তু এখানে তা হয়নি, একই আছে। দুটি বচনই সদর্থক বচন।
চতুর্থত, এই পদ্ধতিতে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের সম্পর্ক যৌক্তিক ও আবশ্যিক নয়। যেমন-‘আলো সুখদায়ক’ হলেই যে ‘অন্ধকার কষ্টদায়ক’ হবে- এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। তা নির্ভর করে অভিজ্ঞতার উপর এবং এ কথা অস্বীকার করা যায় না যে, একই বস্তু সম্পর্কে একই লোকের বিভিন্ন সময়ে বা বিভিন্ন লোকের একই সময়ে অভিজ্ঞতা বিভিন্ন হতে পারে। মোট কথা, হেতুবাক্যের গঠন থেকে সিদ্ধান্ত এখানে অনিবার্যভাবে আসে না, যা সাধারণ বিবর্তনের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
সুতরাং, আমরা বুঝতেই পারছি যে, বস্তুগত বিবর্তনের ক্ষেত্রে বিবর্তনের নিয়মগুলি যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তাই বস্তুগত বিবর্তনকে ‘নিয়মসংগত বিবর্তন’ হিসেবে স্বীকার করা যায় না।

Leave a Comment