প্রত্যয় কাকে বলে? প্রত্যয় শব্দের অর্থ কি? প্রত্যয় সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর |
১। ব্যুৎপত্তি কাকে বলে?
শব্দ তৈরি বা উৎপন্ন হবার পদ্ধতিকে বলে ব্যুৎপত্তি।
২। প্রত্যয় শব্দের অর্থ কী?
অভিধানে ‘প্রত্যয়’ শব্দের অর্থ ‘বিশ্বাস’।
৩। প্রকৃতি কী?
ধাতু বা শব্দের যে মূল অংশের সঙ্গে প্রত্যয় যোগ হয়, সেই মূল অংশকে প্রকৃতি বলে। উদাহরণ: রাঁধ+ উনি = রাঁধুনি। এখানে রাঁধ প্রকৃতি।
৪। ‘ইৎ’ কাকে বলে?
যখন ধাতু বা শব্দের সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত হয়, তখন প্রত্যয়টির কিছু অংশ ধাতু বা শব্দের সঙ্গে মিশে যায় আর বাকি অংশ লোপ পায়। প্রত্যয়ের এই লোপ পাওয়া অংশকে বলা হয় ইৎ। উদাহরণ: ফল + অন = ফলন (অ-লোপ)।
৫। উপধা কাকে বলে উদাহরণসহ লেখো।
যে কোনো শব্দের শেষ বর্ণের ঠিক আগের বর্ণকে বলা হয় উপধা। যেমন- ‘চল্’, ধাতুর শেষ বর্ণ ‘ল’-এর পূর্ব বর্ণ হল ‘অ’ (চ্ + অ = চ)। সুতরাং ‘চল্’ ধাতুর উপধা হল ‘অ’। একইরকমভাবে ‘পশু’ শব্দের উপধা হল ‘শ’।
৬। প্রত্যয় কাকে বলে?
যে ধ্বনিখণ্ড ধাতু বা শব্দের মূল অংশের সঙ্গে যোগ করে নতুন ধাতু বা শব্দ তৈরি করা হয় এবং নতুন অর্থের প্রতীতি বা ধারণা হয়, তাকে প্রত্যয় বলে। যেমন- চল্ (ধাতু) + অন (প্রত্যয়) = চলন মনু (নাম প্রকৃতি) + অ (প্রত্যয়) = মানব
উদাহরণগুলিতে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি শব্দ গড়ে উঠেছে ধাতু এবং নাম প্রকৃতির পরে অন, অ প্রভৃতি ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ বা প্রত্যয় যোগ করে। এইভাবে ধাতু ও নাম প্রকৃতির পরে অ, আ, ঈ, ই, অন, ইক, তা প্রভৃতি প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠনে সাহায্য করে।
৭। প্রত্যয় কত প্রকার ও কী কী?
প্রত্যয় প্রধানত দু-রকমের- কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়।
৮ কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে?
ধাতুর শেষে যে প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে। যেমন-তব্য, নীয়, ন্যৎ, যৎ, শতৃ, শানচ্, ক্রি, অন্ত প্রভৃতি।
৯। কৃদন্ত শব্দ কাকে বলে?
কৃৎ প্রত্যয় যোগে গঠিত শব্দকে কৃদন্ত শব্দ বলে। যেমন-ধূ + তব্য = ধর্তব্য। ‘ধর্তব্য’ এখানে কৃদন্ত শব্দ।
১০। করা উচিত বা করার যোগ্য-এরকম অর্থ বোঝাবার জন্য কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে কী কী প্রত্যয় ব্যবহার করা হয়? এগুলি কী জাতীয় প্রত্যয়? প্রত্যেকটি যোগে একটি করে শব্দ গঠন করে দেখাও।
করা উচিত বা করার যোগ্য-এরকম অর্থ বোঝাবার জন্য কর্মবাচ্যে ও ভাববাচ্যে তব্য, অনীয়, ণ্যৎ, যৎ, ক্যপ্ এই প্রত্যয়গুলি ব্যবহৃত হয়। এগুলি সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়।
১২। তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে?
শব্দ বা নাম প্রকৃতির সঙ্গে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাকে তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।
১৩। তদ্ধিতান্ত শব্দ কাকে বলে?
তদ্ধিত প্রত্যয়যোগে গঠিত শব্দকে তদ্ধিতান্ত শব্দ বলে। দশরথ (নাম শব্দ) + ঘ্নি (ই) (তদ্ধিত প্রত্যয়) = দাশরথি (তদ্ধিতান্ত শব্দ)।
১৪। বাংলায় কত রকম তদ্ধিত প্রত্যয় হয়?
বাংলায় তিন রকম তদ্ধিত প্রত্যয় ব্যবহৃত হয়। যথা- কি সংস্কৃত যে খাঁটি বাংলাও বিদেশি।
১৯। স্বার্থিক প্রত্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে-সমস্ত প্রত্যয় যোগে মূল শব্দের অর্থের কোনো পরিবর্তন হয় না, মূল শব্দ এবং প্রত্যয়ান্ত শব্দের অর্থ একই থাকে তাকে স্বার্থিক প্রত্যয় বলে। যেমন- দেব + তা (স্বার্থিক প্রত্যয়) = দেবতা
২২। ‘কল্প’ প্রত্যয় মূলত কোন্ অর্থে যুক্ত হয়? উদাহরণ দাও।
‘কিছু কম’ বা ‘প্রায়’ অর্থে ‘কল্প’ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন- পিতৃ + কল্প = পিতৃকল্প (প্রায় পিতার মতো), মৃত + কল্প = মৃতকল্প (প্রায়-মৃত)
২৩। প্রত্যয় ও বিভক্তির পার্থক্য লেখো।
ধাতু বা শব্দে প্রথমে প্রত্যয় যোগ হয়, পরে বিভক্তি আসে। শব্দে শব্দবিভক্তি বা ধাতুতে ধাতুবিভক্তি যোগ করার পর আর কোনো প্রত্যয় যোগ করা চলে না।
প্রত্যয়যুক্ত হলেও ধাতু বা শব্দ ধাতু বা শব্দই থাকে, বাক্যে প্রযুক্ত হবার উপযুক্ততা লাভ করে না। কিন্তু ধাতু বা শব্দ বিভক্তিযুক্ত হয়ে বাক্যে স্থানলাভের যোগ্যতা পায়।
২৪। কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের অপর নাম কী?
কৃ প্রত্যয় ও শব্দ প্রত্যয়ের অপর নাম হল যথাক্রমে ধাতু প্রত্যয় এবং শব্দ প্রত্যয়।
২৫। কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের পার্থক্য লেখো।
কৃৎ প্রত্যয় ধাতুতে, তদ্ধিত প্রত্যয় শব্দে যুক্ত হয়।
কৃৎ প্রত্যয়ে বাচ্য সম্পর্ক থাকে, তদ্ধিত প্রত্যয়ে থাকে না।
ধাতুর পর একটিমাত্র কৃৎ প্রত্যয় যুক্ত হয় (ধাত্ববয়ব) কিন্তু একাধিক তদ্ধিত প্রত্যয় শব্দের পরে যুক্ত হতে পারে।
২৬। কৃৎ প্রত্যয় ও ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের একটি পার্থক্য লেখো।
কৃৎ প্রত্যয় ও ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের মূল পার্থক্য হল-কৃৎ প্রত্যয় ধাতুর পরে যোগ হয়। কিন্তু ধাত্ববয়ব প্রত্যয় ধাতু ও নাম শব্দের পরে যোগ হয়।