পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির ফলাফলগুলি আলোচনা করো। |
সংজ্ঞা:
যে গতিতে পৃথিবী নিজ মেরুদণ্ডের চারদিকে আবর্তন করতে করতে একটি নির্দিষ্ট দিকে (পশ্চিম থেকে পূর্বে), একটি নির্দিষ্ট পথে (উপবৃত্তাকার কক্ষপথে) ও একটি নির্দিষ্ট সময়ে (365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড) সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, তাকে পৃথিবীর বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি (Revolution) বলে।
বার্ষিক গতির ফলাফল:
বার্ষিক গতির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে- দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, ঋতুপরিবর্তন হয়, রবিমার্গ সৃষ্টি, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান পরিবর্তন, তাপমণ্ডল সৃষ্টি ও স্থানান্তর, মেরুজ্যোতি সৃষ্টি, বছর ও অধিবর্ষ গণনা এবং অপসূর ও অনুসূর অবস্থার সৃষ্টি হয়। নীচে এগুলি আলোচনা করা হল–
- দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি:
(a) পৃথিবীর অভিগত গোলীয় আকার, (b) উপবৃত্তাকার কক্ষপথ, (c) কক্ষতলের সঙ্গে পৃথিবীর 66½° কোণে হেলে অবস্থান পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সূর্যরশ্মির পতনকোণের তারতম্য ঘটায়। ফলে, দিন ও রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।
- ঋতুপরিবর্তন:
দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে উন্নতার পার্থক্য ঘটে। উষ্ণতার পার্থক্যের ওপর ভিত্তি করে একটি বছরকে যে বিভিন্ন সময়কালে ভাগ করা হয়, সেই প্রতিটি ভাগকে একটি ঋতু বলে। ঋতু প্রধানত চারটি – গ্রীষ্ম, শরৎ, শীত ও বসন্ত। এই ঋতুসমূহের পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনকে ঋতুপরিবর্তন বলে।
- সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান পরিবর্তন:
21 মার্চ ও 23 সেপ্টেম্বর ঠিক পূর্বদিকে সূর্যোদয় ও পশ্চিমদিকে সূর্যাস্ত হলেও বছরের বাকি দিনগুলিতে পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির জন্য সূর্য কখনো একটু উত্তরে আবার কখনো একটু দক্ষিণে সরে গিয়ে উদিত হয় ও অস্ত যায়।
- তাপমণ্ডল সৃষ্টি ও স্থানান্তর:
গোলাকার পৃথিবীর 66½° কোণে হেলে পরিক্রমণের ফলে পৃথিবীতে উন্নতার যে তারতম্য ঘটে তার ফলে উন্মুমণ্ডল, নাতিশীতোম্নমণ্ডল ও হিমমণ্ডল – এই তিনটি তাপমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছে। পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধ পর্যায়ক্রমে সূর্যের দিকে হেলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই তাপমণ্ডলগুলিও যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে স্থানান্তরিত হয়।
- মেরুজ্যোতি সৃষ্টি:
পরিক্রমণ গতির ফলে যখন সুমেরু ও কুমেরু অঞ্চলে 6 মাস রাত থাকে, তখন সেখানে রাতের আকাশে রামধনুর ন্যায় আলোর জ্যোতি দেখা যায়, একে মেরুজ্যোতি বলে। সুমেরুতে সুমেরুপ্রভা ও কুমেরুতে কুমেরুপ্রভা নামে পরিচিত।
- বছর ও অধিবর্ষ গণনা:
পৃথিবীর একবার পরিক্রমণ করতে সময় লাগে 365 দিন 5 ঘণ্টা 48 মিনিট 46 সেকেন্ড। হিসাবের সুবিধার জন্য আমরা 365 দিনে বছর গণনা করি। অবশিষ্ট সময়কে 4 বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসে একদিন যোগ করে মেলানো হয়। এই বছরটি 366 দিনের হয়। একে অধিবর্ষ বলে। এক বছরকে আবার 12 মাসে, প্রতি মাসকে 30 দিনে এবং দিনকে ঘণ্টা-মিনিট-সেকেন্ডে ভাগ করে সময় গণনা করা হয়।
- অপসূর ও অনুসূর অবস্থার সৃষ্টি:
উপবৃত্তাকার কক্ষপথে পরিক্রমণের ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব 4 জুলাই 15 কোটি 20 লক্ষ কিমি হয়, একে অপসূর বলে। আবার, ও জানুয়ারি এই দূরত্ব সবচেয়ে কম 14 কোটি 70 লক্ষ কিমি হয়, একে অনুসূর বলে।