পৃথিবীর আবর্তন গতির সংজ্ঞা:
পৃথিবী তার কক্ষতলের সঙ্গে 66/½° কোণে হেলে নিজ অক্ষ বা মেরুদণ্ডের চারদিকে নির্দিষ্ট গতিতে 23 ঘণ্টা 56 মিনিট 4 সেকেন্ডে বা প্রায় 24 ঘণ্টায় পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর এই গতিকে আবর্তন গতি বলে।
পৃথিবীর জাবর্তন গতির সপক্ষে প্রমাণ :
• পর্যায়ক্রমিক দিন-রাত্রি সংগঠন:
পৃথিবী তার মেরুদণ্ডের উপর প্রায় 24 ঘণ্টায় একবার সম্পূর্ণ আবর্তন করে বলে পর্যায়ক্রমিকভাবে পৃথিবীতে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের মধ্যে দিয়ে দিন-রাত্রি সংঘটিত হয়।
• মহাকর্ষ সূত্রের সাহায্যে প্রমাণ:
বিশ্ববিখ্যাত পদার্থবিদ স্যার আইজ্যাক নিউটন 1687 খ্রিস্টাব্দে বস্তুর ভর সম্পর্কিত মহাকর্ষ সূত্রে বলেন যে, পদার্থের আয়তন ও ঘনত্ব যত বড়ো তার আকর্ষণ বল তত বেশি। পৃথিবীর চেয়ে সূর্য 13 লক্ষ গুণ বড়ো ও 3½ গুণ ভারী বলে সূর্য স্থির এবং পৃথিবী সূর্যকে সামনে রেখে ঘূর্ণায়মান।
• নিশ্চল বায়ুতে প্রস্তরখণ্ডের পরীক্ষা :
নিশ্চল বায়ুতে কোনো উঁচু স্থান থেকে একটি পাথরখণ্ড নীচে ফেলে দিলে পাথরখণ্ডটি ওপর থেকে নীচে সরাসরি উল্লম্বভাবে না পড়ে সামান্য পূর্বদিক ঘেঁষে মাটিতে পড়ে। পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বে আবর্তন করে বলেই এটি ঘটে। ফ্রান্সের বুলো ও জার্মানির হামবুর্গ শহরে প্রায় 250 ফুট উঁচু থেকে নিক্ষিপ্ত প্রস্তরখণ্ড 8.4 মিলিমিটার পূর্ব দিকে সরে মাটিতে পতিত হয়।
• পৃথিবীর অভিগত গোলকাকৃতি :
কোনো নমনীয় বস্তুর ক্রমান্বয়ে আবর্তনের ফলে তার উত্তর-দক্ষিণ দিক চেপে গিয়ে এবং পূর্ব-পশ্চিম দিকের স্ফীতি ঘটে যে গোলক সৃষ্টি করে, তাকে অভিগত গোলক বলে। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলেই পৃথিবীর মেরুদ্বয় কিছুটা চাপা ও নিরক্ষীয় অঞ্চল সামান্য স্ফীত।
• জোয়ারভাটা :
পৃথিবী 24 ঘণ্টায় একবার পূর্ণ আবর্তন করে বলেই প্রতিদিন কোনো স্থানে 2 বার জোয়ারভাটা হয়।
• সমুদ্রস্রোত ও বায়ুপ্রবাহের দিক বিক্ষেপ:
পৃথিবীর আবর্তন গতি রয়েছে বলেই বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোেত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাঁদিকে বেঁকে বয়ে চলে।
• আলোকচিত্র :
মহাকাশে পাঠানো বিভিন্ন মহাকাশযান (স্পুৎনিক, ভয়েজার প্রভৃতি) এবং কৃত্রিম উপগ্রহের দ্বারা প্রেরিত আলোকচিত্রে নির্ভুল ভাবে প্রমাণিত হয় পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে আবর্তনশীল।
• অন্যান্য গ্রহদের দৃষ্টান্ত:
দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে সূর্যের অন্যান্য গ্রহগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের আবর্তন গতি রয়েছে। যেহেতু পৃথিবী নিজেও সূর্যের একটি গ্রহ তাই তারও আবর্তন গতি থাকা স্বাভাবিক।
• ধ্রুবতারার চিত্র:
পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থান থেকে ধ্রুবতারাকে ফোকাস করে কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্যামেরা ফিট করে রাখলে ধ্রুবতারার চিত্রটি একটি বিন্দু না হয়ে বক্ররেখা ধারণ করে। পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্যই এরূপ ঘটে।
• প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা:
সম্প্রতি ইউরি গ্যাগারিন, তেরোস্কোভা, আর্মস্ট্রং, অলড্রিন, সুনিতা উইলিয়ামস প্রমুখ মহাকাশচারীগণ মহাশূন্য থেকে শক্তিশালী দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পৃথিবীর আবর্তনগতির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।