পরিবর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় প্রাইভেট টিউশনের ভূমিকা সম্পর্কে দুই অভিভাবিকার কাল্পনিক সংলাপ |
রমা: কী ব্যাপার আজ তোমার ছেলে স্কুলে গেল না কেন? পরীক্ষার আগের মুহূর্তের এই ক্লাসগুলো ছাত্রছাত্রীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় শিক্ষক-শিক্ষিকারা পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্ন সম্পর্কে একটা আভাস প্রদান করেন।
সুরঞ্জনা: হ্যাঁ, সে বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ রূপেই ওয়াকিবহাল। কিন্তু হঠাৎ ছেলেটার কাল থেকে জ্বর। তা ছাড়া বিকেলে কোচিং আছে। আর কোচিং-এ না পাঠানোর প্রশ্নই ওঠে না। তাই ভাবলাম স্কুলে না পাঠিয়ে শরীরটা ঠিক করিয়ে নিয়ে কোচিং-এ পাঠাব।
রমা: সে ঠিক। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা আর স্কুলের চৌহদ্দির মধ্যে আবদ্ধ নেই। স্কুলশিক্ষকরাও বহুক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে পক্ষপাতিত্ব করেন। অনেকে আবার একটি বিষয়ে একাধিক প্রশ্ন করা পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনায় সম্পূর্ণতা প্রদানের জন্য প্রাইভেট টিউটরই একমাত্র ভরসা।
সুরঞ্জনা: আমাদের সময়ে কিন্তু প্রাইভেট টিউশনের এত চাহিদা ছিল না, মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের সময়টুকুতেই যা একজন শিক্ষিকা ছিলেন। তাও তিনি একাই সব বিষয় পড়িয়ে যেতেন। এখন তো প্রতিটা বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রয়োজন।
রমা: স্কুলও জেনে গেছে ছেলেমেয়েরা বাড়িতে পড়া ঠিক শেষ করে নেবে। তাই তাদের পড়ানোর প্রতি আগ্রহও যেন কমে যাচ্ছে।
সুরঞ্জনা: বেশিরভাগ স্কুল শিক্ষক তো এখন নিজ গৃহে ব্যক্তিগতভাবে পড়ান। এমনকি অনেকে তো এমনও বলেন যে তার কাছে ছাড়া অন্য কারও কাছে পড়লে পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রী ভালো নম্বর পাবে না।
রমা: এ যেন জোর যার মুলুক তার, আর আমরা বাবা-মায়েরাও ছেলেমেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে সাধ্যাতীতভাবেই সন্তানদের ভালো শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে পড়তে পাঠাচ্ছি।
সুরঞ্জনা: তবে সেখানেও কি যথাযথ ও সম্পূর্ণ শিক্ষাদান সম্পন্ন হয় বলে তোমার মনে হয়? ব্যক্তিগত শিক্ষকতা তো এখন অর্থোপার্জনের এক সীমাহীন মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। একসঙ্গে প্রায় পঞ্চাশ-ষাট জন ছেলেমেয়ের একত্রাবস্থানের কারণে অনেক সময় কেউ শিক্ষকের দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়।
রমা: তাও কিছু করার তো নেই। বর্তমান যুগের প্রেক্ষিতে শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান তথা ক্রম-প্রসরমান চাহিদাগুলি পূরণ করা অভিভাবক হিসেবে আমাদের কর্তব্য।
সুরঞ্জনা: সময়ের সঙ্গে নিজেদের একাত্ম করার জন্য চাহিদাগুলো তো মেটাতেই হবে।