পণপ্রথা (এই নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ)

পণপ্রথা (এই নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ)
পণপ্রথা (এই নিয়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সংলাপ)

পর্ণা: এই একবিংশ শতকেও রোজ টিভি আর খবরের কাগজ খুললেই বধূহত্যার কোনো-না-কোনো ঘটনা দেখে মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। আচ্ছা সব্যসাচী, একজন ছেলে হিসেবে মেয়েদের এমন মর্মান্তিক পরিণতিতে তোর বা তোদের কী মনে হয়।

সব্যসাচী : সত্যি বললে, লজ্জা হয়। বিয়ের সঙ্গো পণের ঘৃণ্য সম্পর্কটাকে মেনে নিতেই পারি না। কিন্তু লোভী পুরুষশাসিত সমাজের শিকড় যে অনেক গভীরে-

পর্ণা : পুরোটা মানতে পারলাম না রে। মেয়েকে পণ্য হিসেবে দেখা বা বিয়ের সময় যৌতুক আদায় করার ব্যাপারে আজ পুরুষ কিংবা মেয়ে উভয়েই সমান পারদর্শী। মেয়েরা নিজেদের অতীত ভুলে গিয়ে যখনই শাশুড়ি হয়ে ওঠে, তখন সে লোভ বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অম্লান বদনে পণ আদায় করে।

সব্যসাচী : সেই রবিঠাকুরের ‘দেনা-পাওনা’ গল্পের ‘হাতে হাতে আদায়’-এর ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। অথচ কঠোর আইন হয়েছে।

পর্ণা : শুধু আইন দিয়ে একটা অন্যায়কে কখনই বন্ধ করা যায় না; যতক্ষণ না পর্যন্ত সমস্ত মানুষের মানসিকতায় আঘাত করা যায়। কারও মেয়ে-বোন কিংবা দিদি যে একটা গাড়ি-ফ্রিজ বা টাকার সমতুল্য নয়। এমন ভাবনাটাই যে বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ এবং লজ্জার- বোঝানো প্রয়োজন।

সব্যসাচী : মানে কি বলছিস, নিরন্তর প্রচার-

পর্ণা : অবশ্যই। সরকার যে উদ্যমে নিজের কাজের কথা প্রচার কিংবা প্রকাশ করে, পণপ্রথা নিয়ে প্রচার অভিযানে সেই উদ্যম কোথায়? হোর্ডিং-বিজ্ঞাপন-ফ্রেক্স-ব্যানার-রেডিয়ো কিংবা টিভি জঙ্গলে নিরন্তর পণপ্রথা বিরোধী প্রচার প্রয়োজন।

সব্যসাচী: তাহলে মানুষ লজ্জা পাবে, সচেতন হবে।ঠিক বলেছিস। আমাদেরও সেমিনার পথসভা কিংবা লেখালিখির মাধ্যমে সক্রিয় হতে হবে।

পর্ণা : যে-কোনো ভাবে, যে-কোনো ফর্মে পণপ্রথার বিরুদ্ধে প্রত্যেকটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে মুক্তকণ্ঠে প্রতিবাদ করতে হবে। আর এ লড়াইটার কোনো বিরতি নেই। কারণ এ ক্ষেত্রে পুরুষ নারী নির্বিশেষে আমরাই আমাদের শত্রু। তাই বারবার ঘা মেরে বিবেককে জাগিয়ে তোলাই প্রধান কাজ।

সব্যসাচী: ভালো বলেছিস। এটাই একমাত্র পথ।

Leave a Comment