ধ্বনি পরিবর্তন, ধ্বনি পরিবর্তনের কারণ ও পরিবর্তনের বিভিন্ন রীতি |
১। ধ্বনি পরিবর্তনের কারণগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।
ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান কালপরম্পরায় ভাষার পরিবর্তন, আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে। ভাষাপরিবর্তনের অন্যতম প্রধান দিক ধ্বনিপরিবর্তনের কয়েকটি মূল কারণ ভাষাবিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন। যেমন-
(ক) ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ু :
প্রকৃতির কোমলতা ও কঠোরতা মানবচরিত্র গঠনে যেমন প্রভাব ফেলে তেমনই প্রভাবিত করে ভাষাকেও। ধ্বনিগঠনে ভৌগোলিক পরিবেশ ও জলবায়ুর আংশিক প্রভাব ধ্বনিপরিবর্তন ঘটায়।
(খ) অন্য জাতির ভাষার প্রভাব :
অন্য জাতির শাসনে বা সুগভীর প্রভাবে একটি জাতির উচ্চারণরীতি ও ধ্বনি বদলে যায়। পশ্চিমবঙ্গের চলিত বাংলায় তিনপ্রকার শিসধ্বনির (শ, ষ, স্) মধ্যে মূলধ্বনি ‘শ’-ই স্বীকৃত। কিন্তু পূর্ববাংলা (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যযুগ থেকে মুসলিম শাসনপ্রভাবে ফারসি ভাষার ‘স্’ ব্যবহার করে এবং ‘স্’-কে মূলধ্বনি স্বীকার করে। অন্ত্য ‘অ’ বাংলায় ‘ও’ উচ্চারিত হলেও (বন্ধ > বন্ধো, ছন্দ ছন্দো) বর্তমানে হিন্দি ভাষার প্রভাবে পদান্তিক যুক্তব্যঞ্জন হসন্ত ব্যঞ্জনরূপে উচ্চারিত হচ্ছে (ধর্মঘট অর্থে বনধ)।
(গ) উচ্চারণের ত্রুটি, আরামপ্রিয়তা, অনবধানতা, বিকৃতি :
উচ্চারণে সুবিধা, অন্যমনস্কতা, আরামপ্রিয়তা এবং বিকৃতি শব্দমধ্যস্থ ধ্বনির বদল ঘটায়। যেমন-স্কুল > ইস্কুল, গামোছা > গামছা, মুকুট > মুটুক ইত্যাদি।
(ঘ) শোনা ও অনুভবের ত্রুটি:
বক্তার শুনতে ভুল হলে বা উচ্চারণের দোষ থাকলেও ধ্বনিপরিবর্তন ঘটে। জার্মান ‘zars’ উচ্চারণটি বাংলা ‘ৎসার্’ এবং বাঙালি গড়পরতা উচ্চারণে তা হয়েছে ‘জার’। তেমনই ‘দণ্ড’ উচ্চারণের দোষে হয়ে যায় ‘ডন্ডো’।
(ঙ) সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাবে:
ধ্বনিপরিবর্তনের ওপরের চারটি বাহ্যিক কারণ ছাড়াও আর-একটা অভ্যন্তরীণ কারণ সন্নিহিত ধ্বনির প্রভাব। একই ভাষায় নিজস্ব ধ্বনির প্রভাবে অন্য ধ্বনি বদলে যায় (পদ্ম > পদ্দ, জন্ম > জন্ম ইত্যাদি), লোপ পায় (সংস্কৃতে ণ নেই, অন্তস্থ ‘ব’ বাংলায় নেই), এমনকি নতুন ধ্বনিও জন্মায় (বাংলায় ‘অ্যা’-অ্যাখন, অ্যাতো; ‘ডু’, ‘ঢ়’- বড়ো, মূঢ় ইত্যাদি)।
২। ধ্বনিপরিবর্তনের রীতি কত প্রকার ও কী কী?
ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞানীরা চলিত বাংলা ভাষায় ধ্বনি- পরিবর্তনের ধারাকে পর্যবেক্ষণ করে প্রধানত চারটি ধারায় বিভক্ত করেছেন- ধ্বনির আগম, ধ্বনির লোপ, ধ্বনির রূপান্তর এবং ধ্বনির স্থানান্তর।
৩। ধ্বনির আগম বা ধ্বন্যাগম বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
কোনো শব্দে পূর্বে অনুপস্থিত কোনো ধ্বনির আগমন ঘটলে, তাকে ধ্বন্যাগম বলে। যেমন-কখ> কখগ বা গকখ বা কগখ। যেমন-স্কুল > ইস্কুল। ‘ই’ ধ্বনিটি শব্দের আদিতে যুক্ত হয়েছে বা বলা যায় ‘ই’ ধ্বনিটির শব্দের আদিতে আগম হয়েছে।
৪। ধ্বন্যাগম কত প্রকার ও কী কী?
ধ্বন্যাগমকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- স্বরাগম, খ) ব্যঞ্জনাগম।
৫। স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো শব্দে পূর্বে অনুপস্থিত স্বরধ্বনির আগমন ঘটলে তাকে স্বরাগম বলে। উচ্চারণের সুবিধার্থেই স্বরাগম ঘটানো হয়। যেমন-বেঞ্চ > বেঞ্চি।
৬। স্বরাগম কত প্রকার ও কী কী?
স্বরের আগমনের স্থান অনুযায়ী স্বরাগমকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- আদি স্বরাগম, মধ্য স্বরাগম, গা অন্ত্য স্বরাগম।
৭। আদি স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের আদি বা শুরুতে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে আদি স্বরাগম বলা হয়। যেমন-স্টেশন > ইস্টিশন, স্টেবল > আস্তাবল, স্কেল > এস্কেল/ইস্কেল, স্পর্ধা > আস্পর্ধা, স্টেট > এস্টেট, স্টক > ইস্টক ইত্যাদি।
৮। মধ্য স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের মাঝে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে মধ্য স্বরাগম বলে। যেমন-চাকরি > চাকুরি, ভক্তি > ভকতি, বয়ন > বয়ান, নয়ন> নয়ান ইত্যাদি। মধ্যস্বরাগমের অপর নাম স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ।
৯। স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
মধ্য স্বরাগমের অন্য দুটি নাম স্বরভক্তি বা বিপ্রকর্ষ। ‘স্বরভক্তি’ শব্দের অর্থ স্বরধ্বনির সাহায্যে ভক্তি বা ভাগ। যুক্তব্যঞ্জনের উচ্চারণ সহজ করার জন্য কোনো শব্দের মধ্যে যুক্তব্যঞ্জন থাকলে একটি স্বরধ্বনি এনে যুক্তব্যঞ্জনটিকে ভাগ করে দেবার রীতিকে স্বরভক্তি বলে। যেমন-ধর্ম (ধ + অ + র্ + ম্ + অ) > ধরম (ধ + অ + র্ + অ + ম্+অ)। শব্দমধ্যে স্বরধ্বনির আগমন ঘটে বলে, এর নাম মধ্য স্বরাগম। ‘প্রকর্ষ’ শব্দের অর্থ প্রকৃষ্ট আকর্ষণ। প্রকৃষ্ট আকর্ষণ যে প্রক্রিয়ায় বিগত হয়, তাকে বিপ্রকর্ষ বলে। ‘বিপ্রকর্ষ’-এর অপর অর্থ ‘দূরত্ব’। স্বরধ্বনি এসে দূরত্ব তৈরি করে বলে এই নাম। অর্থাৎ স্বরভক্তিমাত্রই মধ্য স্বরাগম। কিন্তু মধ্য স্বরাগম হলেই তা স্বরভক্তি নয়।
শব্দের আদিতে স্বরভক্তি : প্রথম > পরথম, ত্রাস > তরাস, প্রকার > পরকার ইত্যাদি।
শব্দের মধ্যে স্বরভক্তি : জন্ম > জনম, কর্ম > করম, গর্ব > গরব, বর্ষ > বরষ ইত্যাদি।
শব্দের অন্তে স্বরভক্তি : গার্ড > গরাদ, নম্ > নরম, ভূ > ভুরু ইত্যাদি।
১০। অন্ত্য স্বরাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের শেষে যখন স্বরধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে অন্ত্য স্বরাগম বলে। সাধারণত শব্দান্তের যুক্ত ব্যঞ্জনে এটি ঘটে। যেমন-দিশ্ > দিশা, ইঞ্চ > ইঞ্চি, কেল্> কেট্লি, শর্ত > শর্ত, সত্য > সত্যি, ধন্য > ধন্যি, পথ্য > পথ্যি, বাদ্য > বাদ্যি, লিস্ট > লিস্টি ইত্যাদি।
১১। ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অসাবধানতা, ত্রুটি বা উচ্চারণের সুবিধার্থে কোনো শব্দে পূর্বে অনুপস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটলে, তাকে ব্যঞ্জনাগম বলে। যেমন-ধনু > ধনুক।
১২। আদি ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের আদি বা শুরুতে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে আদি ব্যঞ্জনাগম বলে। শব্দের আদিতে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন বাংলা ভাষায় বিরল। যেমন-ওঝা > রোজা।
১৩। মধ্য ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের মধ্যে যখন ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন ঘটে, তখন তাকে মধ্য ব্যঞ্জনাগম বলে। শব্দের মধ্যে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমন বাংলায় সুপ্রচলিত। যেমন-অম্ল > অম্বল, ডমরু > ডম্বরু ইত্যাদি।
১৪। শ্রুতিধ্বনি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো।
প্রকৃতপক্ষে শব্দমধ্যস্থ ব্যঞ্জনধ্বনিগুলি উচ্চারণকালে ত্রুটি বা অসাবধানতায় বা উচ্চারণ সহজ করার জন্য দুটি ধ্বনির মাঝে একটি ব্যঞ্জনের উচ্চারণে মধ্য ব্যঞ্জনাগম হয়। অতিরিক্ত যে ধ্বনিটি উচ্চারিত হয়ে যায় তাকে শ্রুতিধ্বনি বলে। যেমন—চা + এর = চায়ের। এখানে ‘য়’ আগম বা ‘য়’ শ্রুতি ঘটেছে।
১৫। অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের অন্তে ব্যঞ্জনধ্বনির আগমনকে বলে অন্ত্য ব্যঞ্জনাগম। শব্দান্তে ব্যঞ্জনাগম বাংলা ভাষায় প্রচলিত। যেমন-খোকা > খোকন, সীমা > সীমানা, নানা > নানান ইত্যাদি।
১৬। ধ্বনির লোপ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে, অনবধানতায় বা ত্রুটির জন্য শব্দমধ্যস্থ এক বা একাধিক ধ্বনি বর্জন করে (উচ্চারণ না করে) শব্দটিকে সহজে উচ্চারণযোগ্য ও সংক্ষিপ্ত করে নেওয়ার পদ্ধতিকে ধ্বনিলোপ বলে। যেমন-অতসী > তিসি।
১৭। ধ্বনির লোপ কত প্রকার ও কী কী?
ধ্বনিলোপ দু-ভাবে হতে পারে- স্বরধ্বনি লোপ, ব্যঞ্জনধ্বনি লোপ।
১৮। স্বরধ্বনিলোপ বা স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে, অনবধানতায় বা উচ্চারণের ত্রুটিতে শব্দের আদি, মধ্য বা অন্ত্য স্বরধ্বনির বিলোপ ঘটলে; তাকে স্বরধ্বনিলোপ বলে। যেমন-গামোছা > গামছা।
১৯। স্বরধ্বনিলোপ কত প্রকার ও কী কী?
স্বরধ্বনিলোপ তিনপ্রকার। যথা- আদি স্বরলোপ, মধ্য স্বরলোপ, গা অন্ত্য স্বরলোপ।
২০। আদি স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের আদি বা শুরুতে স্বরধ্বনির লোপ ঘটে যেক্ষেত্রে, তাকে আদি স্বরলোপ বলে। যেমন-অলাবু > লাউ, অভ্যন্তর > ভিতর, ইউরোপ > য়ুরোেপ, উদ্ধার > ধার, উদ্ভুম্বর > ডুমুর ইত্যাদি।
২১। মধ্য স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের মধ্যের স্বরধ্বনি লোপ ঘটে যেক্ষেত্রে, তাকে মধ্যস্বরলোপ বলে। যেমন-জানালা > জাল্লা, সরিষা > সর্ষে, সুবর্ণ > স্বর্ণ, বসতি > বস্তি, ভগিনী > ভগ্নি ইত্যাদি।
২২। অন্ত্য স্বরলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের শেষস্থিত স্বরধ্বনিটির যেক্ষেত্রে লোপ হয়, তাকে অন্ত্য স্বরলোপ বলে। যেমন-রাশি > রাশ, সন্ধ্যা > সাঁঝ, রাতি > রাত, দন্ত > দাঁত, বন্যা > বান, লজ্জা> লাজ, সজ্জা > সাজ, আজি > আজ ইত্যাদি।
২৩। ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে, অনবধানতায় বা উচ্চারণের ত্রুটিতে শব্দের আদিতে, মাঝে বা শেষে ব্যঞ্জনধ্বনির বিলোপ ঘটলে; তাকে ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-ফলাহার ফলার।
২৪। ব্যঞ্জনলোপ কত প্রকার ও কী কী?
ব্যঞ্জনলোপ তিন প্রকার। যথা- আদি ব্যঞ্জনলোপ, বা মধ্য ব্যঞ্জনলোপ, অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ।
২৫। আদি ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের আদিতে বা শুরুতে স্থিত ব্যঞ্জনবর্ণ লোপ পায় যেক্ষেত্রে, তাকে আদি ব্যঞ্জনলোপ বলে। যেমন-স্ফটিক > ফটিক, স্ফোটক > ফোটক ইত্যাদি।
২৬। মধ্য ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের মধ্যস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনিটি লুপ্ত হলে, তাকে মধ্য ব্যঞ্জনলোপ বলা হয়। যেমন-জঙ্গল > জংলা, তহবিল > তবিল।
২৭। অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দের অন্তস্থিত ব্যঞ্জনধ্বনিটি লুপ্ত হলে, তাকে অন্ত্য ব্যঞ্জন লোপ বলে। যেমন-কুটুম্ব কুটুম, আল্লাহ > আল্লা, পঙ্ক > পাঁক ইত্যাদি।
২৮। সমাক্ষর লোপ কী? উদাহরণ দাও।
পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সমধ্বনির মধ্যে একটি লোপ পেলে তাকে সমাক্ষর লোপ বলে। শ্বাসাঘাতের জন্য এই বিলোপ হয় বলে একে অন্ত্য ব্যঞ্জনলোপও বলা চলে। যেমন-পাদোদক > পাদোক, মেজদিদি > মেজদি, বউদিদি > বউদি ইত্যাদি।
২৯। সমধ্বনি লোপ বা সমবর্ণ লোপ কী?
শব্দের মধ্যে পাশাপাশি দুটি সমবর্ণ লেখার বানানে লোপ পেলেও যদি উচ্চারণে ঠিক থাকে তাকে সমবর্ণ লোপ বলে। ইংরেজি বানানে একসময় Krishnanagar লেখা হত Krishnagar। কিন্তু লোকে কৃষ্ণনগরই উচ্চারণ করত।
৩০। বাংলায় কোন্ ধ্বনির লোপ সবচেয়ে বেশি এবং কেন?
বাংলায় সবচেয়ে দুর্বল ধ্বনি ‘হ’। তাই বাংলা উচ্চারণে প্রায়শই ‘হ’ ধ্বনির বিলোপ ঘটে। যেমন-সহি > সই, বহি > বই, মহিষ > মোষ, দহি > দই, বহিন > বোন, শিয়ালদহ > শিয়ালদা, খড়দহ > খড়দা, মালদহ > মালদা ইত্যাদি।
৩১। ধ্বনির রূপান্তর বলতে কী বোঝো?
ধ্বনির আগম বা ধ্বনির লোপের ফলে শব্দের মধ্যে পাশাপাশি থাকা ধ্বনিগুলির কোনো কোনো ক্ষেত্রে বদল ঘটে। এই বদল বা পরিবর্তনকেই ধ্বনির রূপান্তর বলে। বাংলা ভাষায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি উভয়েরই রূপান্তর ঘটে।
৩২। ধ্বনির রূপান্তর কটি ভাগে হয় ও কী কী?
ধ্বনির রূপান্তর সাধারণতদু-ভাগে হয়। যথা- স্বরধ্বনির রূপান্তর, ব্যঞ্জনধ্বনির রূপান্তর।
৩৪। স্বরধ্বনির রূপান্তর বর্লতে কী বোঝো?
শব্দের মধ্যে একাধিক ভিন্ন ভিন্ন স্বরধ্বনি থাকলে একটির প্রভাবে আর-একটি বদলে যেতে পারে। একেই বলে স্বরধ্বনির রূপান্তর।
৩৫। স্বরধ্বনির রূপান্তরের ভাগগুলি কী কী?
স্বরধ্বনির রূপান্তরের ভাগগুলি হল- স্বরসংগতি এবং খ অভিশ্রুতি।
৩৬। স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে শব্দমধ্যস্থ অসম স্বরধ্বনি যখন সম বা প্রায় সম স্বরধ্বনি হয়ে যায়, তখন তাকে স্বরসংগতি বা স্বরের উচ্চতা সাম্য বলে। যেমন-দেশি দিশি ইত্যাদি।
৩৭। স্বরসংগতি কত প্রকার ও কী কী?
স্বরসংগতি তিন প্রকার। যথা-ক প্রগত স্বরসংগতি, বা পরাগত স্বরসংগতি এবং অন্যোন্য বা পারস্পরিক স্বরসংগতি।
৩৮। প্রগত স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রথম ধ্বনির প্রভাবে শব্দের পরবর্তী ধ্বনির বদল ঘটলে তাকে প্রগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-দিশা > দিশে, ফিতা > ফিতে, শিকা > শিকে, চুলা > চুলো, কুলা> কুলো, পূজা > পুজো, মুঠা > মুসে, দুটি > দুটো, মিথ্যা > মিথ্যে ইত্যাদি।
৩৯। পরাগত স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
পরবর্তী ধ্বনির প্রভাবে পূর্ববর্তী ধ্বনির বদল ঘটলে, তাকে পরাগত স্বরসংগতি বলে। যেমন-শিয়াল > শেয়াল, নিতাই > নেতাই, বেটি > বিটি, ফিরা > ফেরা, উপর > ওপর, ভুলা > ভোলা, তেলি > তিলি ইত্যাদি।
৪০। অন্যোন্য স্বরসংগতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
দুটি পরস্পর স্বরধ্বনি যদি একে অপরের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে সম বা প্রায় সমস্বরধ্বনিতে রূপান্তরিত হয়, তাকে অন্যোন্য স্বরসংগতি বলে। যেমন-যদু > যোদো, কেনে > কিনি, খোকা > খুকি, খুকু ইত্যাদি। রাঢ়ি উপভাষায় স্বরসংগতির প্রাচুর্য লক্ষ করা যায়।
৪১। স্বরসংগতির দ্বিত্ব কী? উদাহরণ দাও।
কোনো কোনো শব্দে দু-বার স্বরসংগতি ঘটে। একে স্বরসংগতির দ্বিত্ব বলে। যেমন-চিরনি > চিরোনি > চিরুনি, হিসাবি > হিসেবি > হিসিবি, পিচকারি > পিচকেরি > পিচকিরি ইত্যাদি।
৪২। অভিশ্রুতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অপিনিহিতি, স্বরলোপ ও স্বরসংগতির ফলে বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিভিন্ন শব্দ পশ্চিমবঙ্গের কথ্য ভাষায় সংক্ষিপ্ততমরূপ লাভ করে। উচ্চারিত ধ্বনির এই পরিবর্তনকেই অভিশ্রুতি বলে। যেমন-রাখিয়া > রেখে, আজি > আজ ইত্যাদি।
৪৩। ব্যঞ্জনধ্বনি রূপান্তরের ভাগগুলি কী কী?
ব্যঞ্জনধ্বনি রূপান্তরের ভাগগুলি হল যথাক্রমে-সমীভবন, বিষমীভবন, ঘোষীভবন, অঘোেষীভবন, মহাপ্রাণীভবন, অল্পপ্রাণীভবন, মূর্ধন্যীভবন, উষ্মীভবন, নাসিক্যীভবন, স্বতোনাসিক্যীভবন, সকারীভবন, রকারীভবন।
৪৪। সমীভবন বা ব্যঞ্জনসংগতি কাকে বলে?
শব্দমধ্যে যুক্তব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে তাদের যুগ্মব্যঞ্জনে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিকে ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন বা সমীকরণ বলে। যেমন-পদ্ম > পদ্দ।
৪৫। ‘সমীভবন’ নামটি হবার কারণ কী?
সমীভবন (উৎপত্তিস্থান) থেকে জাত ধ্বনিতে রূপান্তরিত হয় বলে, সমীভবন নামকরণটি করা হয়েছে।
৪৬। সমীভবনের কটি ভাগ ও কী কী?
সমীভবনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
প্রগত সমীভবন: পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পরবর্তী ব্যঞ্জন পূর্ব বা পূর্ববৎ ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন-চন্দন > চন্নন, বিশ্ব > বিশৃশ, সূত্র > সুত্ত, শুক্তো > শুত্তো, গল্দা > গল্লা, ছদ্ম > ছদ্দ ইত্যাদি।
পরাগত সমীভবন: পরবর্তী ব্যঞ্জনের প্রভাবে পূর্ববর্তী ব্যঞ্জন পূর্ব বা পূর্ববৎ ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন-জন্ম > জন্ম, ধর্ম > ধৰ্ম্ম, কর্ম > কৰ্ম্ম, পাঁচশের > পাঁশশের, দুর্গা > দুগ্গা, রাতদিন > রাদ্দিন, দুর্বা > দুব্বা, গল্প > গল্প, তর্ক > তক্ক, বড়ঠাকুর > বঠাকুর, হরতাল > হত্তাল, পাঁচজন > পাঁজ্জন, সৎজন > সজ্জন ইত্যাদি।
অন্যোন্য বা পারস্পরিক সমীভবন: পাশাপাশি অবস্থিত অসম ব্যঞ্জন দুটি রূপান্তরিত হয়ে এক বা একজাতীয় ব্যঞ্জনে বদলে যায়। যেমন-বৎস > বাচ্চা, মহোৎসব > মোচ্ছব, উৎশ্বাস > উচ্ছ্বাস, মৎস্য > মচ্ছ, বৎসর > বচ্ছর, কুৎসা > কেচ্ছা, সত্য > সাচ্চা ইত্যাদি।
৪৭। সরলীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
সমীভবনের পর একজাতীয় ব্যঞ্জন দুটির একটাকে লোপ করে উচ্চারণকে আরও সহজ করা হলে, তাকে সরলীভবন বলে। যেমন-কর্ম > কম্ম > কাম, জন্ম > জন্ম > জাম, পূর্ব > পুব্ব > পুব, লক্ষ > লক্ষ্ম > লাখ ইত্যাদি।
৪৮। সমীভবনের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম কী? এই প্রক্রিয়া আর কোন্ কোন্ নামে পরিচিত?
সমীভবনের সম্পূর্ণ বিপরীত প্রক্রিয়ার নাম হল বিষমীভবন।
এই প্রক্রিয়ার অপর নামগুলি হল-অসমীকরণ বা বিষমবর্ণতা।
৪৯। বিষমীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো শব্দে একই ব্যঞ্জনধ্বনি পরপর দু-বার থাকলে আঞ্চলিক উচ্চারণে কোনো একটি ধ্বনি বদলে যায়। এই পরিবর্তনকেই বিষমীভবন বলে। যেমন-লাল > নাল, শরীর > শরীল।
৫০। ঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি যখন সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হয়, তখন তাকে ঘোষীভবন বলে। যেমন-চাকদহ > চাগ্দা।
৫১। অঘোষীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি অঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হলে, তাকে অঘোষীভবন বলে। যেমন-ছাদ > ছাত।
৫২। মহাপ্রাণীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
নিকটস্থ বা সংযুক্ত কোনো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে যদি কোনো অল্পপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি মহাপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মহাপ্রাণীভবন। যেমন-স্তম্ভ > থাম।
৫৩। অল্পপ্রাণীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো মহাপ্রাণ ব্যঞ্জনধ্বনি যদি অল্পপ্রাণরূপে উচ্চারিত হয়, তবে তাকে অল্পপ্রাণীভবন বলে। যেমন-ভাই > বাই।
৫৪। মূর্ধন্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
‘ঋ’, ‘র্’, ‘ষ’, এবং ‘ট্’, ‘ই’, ‘ড্’ ইত্যাদি মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনির প্রভাবে সন্নিকটস্থ কোনো দন্ত্যব্যঞ্জনধ্বনি যদি মূর্ধন্য ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিণত হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে মূর্ধন্যীভবন বলে। যেমন-বৃদ্ধ > বুড্ > বুড়া।
৫৫। উষ্মীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারণকালে যদি শ্বাসবায়ু পূর্ণ বাধা না পেয়ে আংশিক বাধা পায়, তবে স্পর্শ ব্যঞ্জনধ্বনি উষ্ম ব্যঞ্জনধ্বনিতে পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ার নাম হল উষ্মীভবন। যেমন-কালীপূজা > (চট্টগ্রামের উপভাষায় উচ্চারিত হয়) খালী ফুজা।
৫৬। নাসিক্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি যদি ক্ষীণ হতে হতে ক্রমশ বিলোপ পায় এবং তার প্রভাবস্বরূপ পূর্ববর্তী স্বরধ্বনিতে একটা অনুনাসিকতা যোগ হয়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে নাসিক্যীভবন বলে। যেমন-দন্ত > দাঁত, হংস > হাঁস ইত্যাদি।
৫৭। স্বতোনাসিক্যীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
শব্দমধ্যে নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি না থাকলেও অনেক সময় শব্দটি নিজে থেকেই অনুনাসিক উচ্চারিত হয়। এই পরিবর্তনকে স্বতোনাসিক্যীভবন বলে। যেমন-পেচক > পেঁচা, ঝাটা > ঝাঁটা ইত্যাদি।
৫৮। সকারীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উষ্মীভবনের ফলে যদি ঘৃষ্ট ব্যঞ্জনধ্বনি ‘স্’, ‘শ’ বা ‘জ'(z) -তে রূপান্তরিত হয়ে যায়, তবে সেই প্রক্রিয়াকে বলে সকারীভবন। যেমন-খেয়েছে > (পূর্ব বাংলার উচ্চারণে) খাইসে।
৫৯। রকারীভবন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
‘স্’ (s) ধ্বনিটি অনেক সময় পরিবর্তিতহয়ে প্রথমে সঘোষ ব্যঞ্জনধ্বনি ‘জ’ (z) এবং পরে ‘র্’ ধ্বনিতে পরিণত হয়। সেই পরিবর্তনকে বলে রকারীভবন। যেমন-পঞ্চদশ > পনেরো।
৬০। সম্প্রকর্ষ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে বা উচ্চারণকে সংক্ষেপ করার জন্য শব্দমধ্যস্থিত স্বরধ্বনির বিলুপ্তি ঘটে যুক্তব্যঞ্জনে পরিণত হয়। এরূপ ধ্বনি পরিবর্তনকে সম্প্রকর্ষ বলে। যেমন-বসতি > বস্তি, ভগিনী > ভগ্নী।
৬১। ধ্বনিদ্বিত্ব বা ব্যঞ্জনদ্বিত্ব কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
অর্থের গুরুত্ব বেশি বোঝানোর জন্য শব্দের মধ্যে কোনো ধ্বনির দ্বিত্ব করা হলে, তাকে ধ্বনিদ্বিত্ব বলা হয়। যেমন-সক্কাল সক্কাল চলে আসবে। বড় > বড্ড, মুলুক > মুল্লুক, পাকা > পাক্কা, একেবারে > এক্কেবারে ইত্যাদি।
৬২। ধ্বনিবিকার কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের সুবিধার্থে বা বিকৃতিতে বা ত্রুটিতে শব্দমধ্যস্থ মূল ধ্বনির বদল ঘটলে, তাকে ধ্বনিবিকার বলে। যেমন-কাক > কাগ, বিনতি > মিনতি, লুচি > নুচি, লেবু > নেবু, কবাট > কপাট ইত্যাদি।
৬৩। ধ্বনির স্থানান্তর বলতে কী বোঝো? এটি কত প্রকার ও কী কী?
অসর্তকতাবশত বা দ্রুত উচ্চারণের জন্য শব্দমধ্যের ধ্বনিগুলি নিজের স্থান বদল করে নেয়। ধ্বনিপরিবর্তনের এই রীতিকে ধ্বনির স্থানান্তর বলে।
৬৪। অপিনিহিতি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কোনো শব্দের দ্বিতীয় অক্ষরের ব্যঞ্জনের পর ‘ই’, ‘উ’ ধ্বনি থাকলে, ‘ই’ বা ‘উ’ ধ্বনিটিকে নির্দিষ্ট স্থানের পূর্বে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলে। যেমন-করিয়া > কইর্যা, গাছুয়া > গাউছুয়া।
৬৫। অপিনিহিত কত প্রকার ও কী কী?
অপিনিহিতি পাঁচ প্রকার। যথা-
‘ই’ কারের অপিনিহিতি-আজি > আইজ, কালি > কাইল। ক
‘উ’ কারের অপিনিহিতি-সাধু> সাউধ, মাছুয়া > মাউছুয়া > মাউছ্যা, গাছুয়া > গাউছুয়া > গাউচ্ছ্যা ইত্যাদি।
এ ‘য’ ফলার অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি-সত্য > সইও, বাক্য > বাইক্ক ইত্যাদি।
‘জ্ঞ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপনিহিতি-যজ্ঞ > যইগ্গ । ঘ
‘ক্ষ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি-চক্ষের > চইক্ষের, লক্ষ > লইকখ ইত্যাদি।
৬৬। কোন্ কোন্ ধ্বনির অপিনিহিতি বাংলা ভাষায় দেখা যায়?
বাংলা ভাষায় সাধারণত ‘ই’, ‘উ’ ইত্যাদি ধ্বনির অপিনিহিতি দেখা যায়।
৬৭। কোন্ সময়ের কাব্যে অপিনিহিতির প্রচলন লক্ষ করা যায়?
মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে অপিনিহিতির প্রচলন লক্ষ করা যায়।
৬৮। অপিনিহিতির প্রভাব কোন্ কোন্ বাংলা উপভাষায় দৃষ্ট?
বঙ্গালী উপভাষায় অপিনিহিতির প্রয়োগ সবচেয়ে বেশি। কামরূপী ও বরেন্দ্রী উপভাষাতেও এর ব্যবহার আছে।
৬৯। ধ্বনিবিপর্যয় কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উচ্চারণের দ্রুততা, ত্রুটি বা বিকৃতিতে শব্দমধ্যস্থ ধ্বনি পরস্পর স্থান বিনিময় করলে, তাকে ধ্বনিবিপর্যয় বা বিপর্যাস বলে। যেমন-পিশাচ > পিচাশ।
৭০। ‘বিপর্যাস’ নামকরণের কারণ কী?
‘বিপর্যাস’ শব্দের অর্থ ‘বিনিময়’। এই জাতীয় ক্ষেত্রে ধ্বনিগুলি পরস্পর স্থানবিনিময় করে বলে এমন নাম। যেমন-বাতাসা > বাসাতা ইত্যাদি।