দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা 400 শব্দে

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা

মানুষ যেদিন পাথরে পাথরে ঘষে আগুন জ্বালাতে শিখল, সেদিন থেকেই শুরু হল তার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথে যাত্রা। আগুন আবিষ্কারই মানুষের বিজ্ঞানের জয়যাত্রার পথে প্রথম পদক্ষেপ। এইভাবে সভ্যতা যত এগিয়ে চলল, বিজ্ঞানের জয়রথও হল গতিশীল। আর আধুনিক যুগ তো সম্পূর্ণভাবেই বিজ্ঞাননির্ভর। বিজ্ঞান ছাড়া মানুষের এক পা-ও অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা নেই। প্রযুক্তি হল সেই বিজ্ঞানেরই প্রয়োগ।

প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান

সকালে খবরের কাগজ আর এক কাপ চা দিয়ে জীবন শুরু তো অনেকদিন আগে থেকেই চলে আসছে। মাথার ওপর ফ্যান, রাতে বিদ্যুতের আলো, বাস, ট্রাম, ট্রেন, প্লেন-এগুলো তো বহুদিন আগেই আবিষ্কার হয়েছে। প্রতিদিন এগুলোকে ব্যবহার করেই আমরা দৈনন্দিন জীবনকে আরামদায়ক ও গতিশীল করেছি। ঠিক এই মুহূর্তে আমরা এতটাই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর যে, এক পা এগিয়ে যাওয়া তো দূরের কথা, একজায়গায় দাঁড়িয়ে একটু নড়তেও পারি না। আমাদের আজকের জীবন সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞাননির্ভর। রান্নার কাজটাও এখন মানুষকে করতে হয় না, করে দেয় মাইক্রোওভেন।

ইনটারনেটের সাহায্য নিয়ে বিভিন্ন সাইট থেকে অনলাইনে অর্থাৎ বাড়ি বসে জিনিস কেনাবেচা করা, এ ছাড়া ইনটারনেট ব্যাংকিংয়ের সাহায্যে টাকা জমা দেওয়া, ইলেকট্রিক ও টেলিফোনের বিল জমা দেওয়া-এইসবই এখন আমাদের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। শুধু তাই নয়, নবপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে রোগ নির্ণয়ের বহু পদ্ধতিও আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ছাড়া ঘরে বসেই আমরা জেনে নিতে পারি ডাউন রাজধানী এক্সপ্রেস এখন কোথায় আছে। রেল বা প্লেনের টিকিট কাটতে এখন আমাদের আর লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না। বাড়ি বসেই সব পাওয়া যায় মোবাইলের বোতাম টিপে। বলা যায় আমাদের আধুনিক জীবন একশো ভাগই বিজ্ঞাননির্ভর।

অতিরিক্ত বিজ্ঞাননির্ভরতার কুফল

বিজ্ঞান প্রগতির ধারক ও বাহক-এ কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু অতিরিক্ত বিজ্ঞাননির্ভরতা মানুষকে চেষ্টাহীন জড় পদার্থে পরিণত করছে। তার মাথা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে নব নব সৃষ্টির আবেগ এবং সংগ্রামী চেতনা। এর ফলে মানুষে মানুষে সামাজিক সম্পর্কও শিথিল হয়ে পড়ছে। মানুষ যন্ত্রের ব্যবহার করতে গিয়ে নিজেই যেন একটা যন্ত্র হয়ে উঠেছে। হারিয়ে যাচ্ছে তার আবেগ। তাই সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন- “বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ।” আবেগহীন মানুষ তো যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়।

উপসংহার

এমন দিন বোধহয় আর বেশি দূরে নেই, যেদিন বিজ্ঞানই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করবে। এ কথাও অনস্বীকার্য যে, বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে আমাদের প্রাত্যহিক জীবন একেবারেই অচল। বিজ্ঞানের সাহায্যেই আমরা বহু প্রতিকূলতাকে অনায়াসে অতিক্রম করতে সক্ষম হচ্ছি। মনে রাখতে হবে, বিজ্ঞাননির্ভরতা আমাদের মানবিক বোধকে যেন নষ্ট না-করে। বাইরের জগৎকে আলোকিত করার সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান যেন আমাদের অন্তরকেও জ্ঞানের আলোকে আলোকিত করে তোলে।

বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা প্রবন্ধ রচনা

বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা প্রবন্ধ রচনা
বনসৃজন ও পরিবেশরক্ষা প্রবন্ধ রচনা
“আয় আমাদের অঙ্গনে অতিথি বালক তরুদলー/ মানবের স্নেহ সঙ্গে নে, চল্ আমাদের ঘরে চল্।”
—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ভূমিকা:

গাছই হল পৃথিবীতে প্রাণের অগ্রদূত। তাই মানুষ সৃষ্টির পূর্বেই বৃক্ষশ্রেণি মানুষের জন্য খাদ্য ও শীতল ছায়া সৃষ্টি করে প্রতীক্ষা করছিল তার আবির্ভাবের। পৃথিবীতে মানুষের আগমনের পরে অরণ্যই সেদিন তাকে দিয়েছিল খাদ্য, ছায়া, বিশুদ্ধ অক্সিজেন ও নিরাপদ আশ্রয়। কিন্তু কালক্রমে মানুষই অরণ্য ধ্বংস করে পৃথিবীকে বৃক্ষহীন করে তুলেছে। তবে ক্রমশ মানুষ বুঝেছে এভাবে অরণ্যের ধ্বংসসাধন আত্মহননেরই নামান্তর। বৃক্ষসৃজন মানুষের সেই বোধোদয় ও শুভবুদ্ধিরই প্রকাশ।

বৃক্ষরোপণের উদ্দেশ্য:

মানুষ অরণ্য বিনাশের মাধ্যমে পৃথিবীর প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জলবায়ুকে নষ্ট করেছে। বৃক্ষচ্ছেদনের ফলে বায়ুস্তরে দূষিত কণা ও উপাদানের পরিমাণ বাড়ে, বৃষ্টিপাত ও ঋতুচক্রের চরিত্র বদলে যায়। ফলে প্রকৃতির সার্বিক তাল-মিলের ছন্দপতন ঘটে।

অরণ্য ও ভারতীয় সভ্যতার বিকাশ:

ভারতীয় সভ্যতা অরণ্যনির্ভর। অরণ্যে ঢাকা শ্যামল পটভূমিকায় স্থাপিত তপোবনই ছিল এই সভ্যতার অন্যতম পীঠস্থান। জনভূমি ও বনভূমির মধ্যে ছিল আত্মার সম্পর্ক। কিন্তু পাশ্চাত্য সভ্যতার নগরকেন্দ্রিকতা অরণ্যকে ধ্বংস করে তার ওপর ইট- কাঠ-পাথরের কৃত্রিম ইমারত স্থাপন করে মানবজাতির কবর রচনা করেছে। ভারতীয় বিজ্ঞানীই প্রমাণ করেছেন যে, গাছেরও প্রাণ আছে। নাগরিকতায় ক্লান্ত কবিও প্রার্থনা করেছেন, “দাও ফিরে সে অরণ্য, লহ এ নগর।”

পরিবেশদূষণ রোধ ও বনভূমি:

মানুষ তার নিশ্বাসের মাধ্যমে যে কার্বন ডাইঅক্সাইড ত্যাগ করে উদ্ভিদ তা গ্রহণ করে পরিবেশে পর্যাপ্ত ও বিশুদ্ধ অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। কলকারখানা ও গাড়িঘোড়া থেকে নির্গত দূষিত ধোঁয়া পরিশোধনেও অরণ্য সাহায্য করে। তা ছাড়া ভূমিক্ষয় রোধের দ্বারাও অরণ্য প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে।

বনসৃজনের উপযোগিতা:

অক্সিজেন থেকে শুরু করে খাদ্য-বাসস্থান-ওষুধ পর্যন্ত সবই অরণ্যের অবদান। যান্ত্রিক সভ্যতার বিস্তার ও অরণ্যনিধনের ফলে প্রাকৃতিক আবহাওয়ার ভারসাম্য এখন নষ্টের মুখে। বনসৃজনই এর অন্যতম প্রতিকার। তাই আজ বনভূমি ধ্বংস নয়, বনভূমি সৃজনই হোক মানুষের অন্যতম প্রতিশ্রুতি।

সামাজিক বনসৃজন:

বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সামাজিক বনসৃজনের কর্মসূচি গ্রহণ করে বলা হয়েছে, “একটি গাছ,একটি প্রাণ।” এই উদ্যোগকে সফল করতে প্রয়োজন আবশ্যিকভাবে বৃক্ষরোপণ এবং একটি বৃক্ষচ্ছেদনের আগে দুটি করে গাছ লাগানো।

বৃক্ষরোপণ উৎসব:

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই আধুনিক ভারতে বৃক্ষসৃজন উদ্যোগের প্রথম ও অন্যতম প্রবর্তক। শান্তিনিকেতনে তাঁর কবিজীবনের গভীর উপলব্ধিকে রূপ দান করতে গিয়ে তিনি জানান, “মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে হে প্রবল প্রাণ। ধূলিরে ধন্য কর করুণার পুণ্যে হে কোমল প্রাণ।।” বর্তমান ভারতে শুধু নয়, সমগ্র বিশ্বে কবি প্রবর্তিত এই বৃক্ষরোপণ উৎসবের উপযোগিতা স্বীকৃতি লাভ করেছে।

উপসংহার:

বনসৃজন সমবেত মানুষের উদ্যোগ। বৃক্ষের উপযোগিতা উপলব্ধি করে বৃক্ষচ্ছেদের পরিবর্তে অরণ্য ও অরণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে উদ্যোগটি ধরে রাখতে হবে। সভ্যতা, প্রকৃতি ও পরিবেশের অস্তিত্বরক্ষার স্বার্থেই সকলের এগিয়ে আসার প্রয়োজন আছে।

আরও পড়ুনশৈশবের স্মৃতি রচনা

Leave a Comment