তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা

তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা
তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা
“চলচ্চিত্র কেবলমাত্র অবসর বিনোদনের সামগ্রী নয়, এটা / একটা সিরিয়াস আর্টও বটে।”
-সত্যজিৎ রায়

ভূমিকা: 

আমি বই পড়তে যেমন ভালোবাসি, সিনেমা দেখতেও তেমনই ভালোবাসি। দুটোই আমার অবকাশের আকাশকে ভরিয়ে রাখে। কিন্তু সব বই যেমন মনে দাগ কাটে না, তেমনই প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে আসার পর অধিকাংশ সিনেমাই আমরা বিস্মৃত হই। তবে কিছু সিনেমা এর মধ্যেই তার বিষয় ও নির্মাণ দক্ষতায় মনের মধ্যে স্থায়ী জায়গা করে নেয়। সম্প্রতি এমনই একটা সিনেমা আমি দেখেছি। ছবির নাম ‘চাঁদের পাহাড়’। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি অবলম্বনে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত একটা অসাধারণ সিনেমা।

কাহিনি: 

চাঁদের পাহাড় আমার প্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিভূতিভূষণের এই কাহিনি সুদূর আফ্রিকার পটভূমিকায়। সেখানকার প্রকৃতির আদিম সৌন্দর্য, হিংস্র জন্তু-জানোয়ার, পদে-পদে বিপদ আর তারমধ্যে এই বাংলারই গ্রাম থেকে যাওয়া একজন ছেলে, শংকর- সবমিলিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্নালু অথচ রোমাঞ্চকর পরিবেশ রচনা করে। অসংখ্য প্রতিকূলতার মধ্যে একজন বঙ্গসন্তানের অ্যাডভেঞ্চার পুরো কাহিনিটাকে এক অন্য মাত্রা দেয়।

চলচ্চিত্রায়ণ: 

উপন্যাসের এই জাদু-বিন্দুগুলোই সিনেমার পর্দায় তুলে এনেছেন পরিচালক কমলেশ্বর। আমার কল্পনার জগৎটাকেই আমি চোখের সামনে তার যাবতীয় রং-রূপ নিয়ে হাজির হতে দেখি। ছবিটির আগাগোড়াই আফ্রিকায় শুটিং করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে একেবারে সত্যিকারের সিংহ, সাপ, জেব্রা এবং হাতি। কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কোনো কারসাজি সেখানে নেই। অবশ্য আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের দৃশ্য আর বুনিপকে দেখাতে কম্পিউটার গ্রাফিক্সেরই সাহায্য নিয়েছেন পরিচালক। আসল প্রাণী, জীবন্ত প্রেক্ষাপট আর কম্পিউটারের কৌশলী উপস্থাপনা-সবমিলিয়ে সিনেমার পর্দার ‘চাঁদের পাহাড়’ একেবারে টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ। চোখ সরাবার জো থাকে না এতটুকুও। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অভিভূত হয়ে দেখতে হয়। বইটা পড়ার সময় যে রোমাঞ্চ অনুভব করি, সিনেমাটা দেখার সময়েও একই অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। সিনেমার বুনিপ তো আমার কল্পনার বুনিপকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। সেজন্যই এই ছবিটি আমার মনে এত গভীরভাবে রেখাপাত করেছে।

অভিনয়: 

ছবিটির আর-একটি আকর্ষণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দুর্দান্ত অভিনয়। শংকরের ভূমিকায় টলিউডের জনপ্রিয় নায়ক দেব অসাধারণ অভিনয় করেছেন। সিংহ মারার পর তাঁর রক্তস্নানের দৃশ্য এবং কালাহারির মরু অঞ্চলে প্রতিকূল প্রকৃতির মধ্যে একক মানুষ হিসেবে তাঁর তীব্র লড়াইয়ের দৃশ্য, আমি আজও চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই। মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন গেরার্ড রুডল্ফ। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অভিনেতা আলভারেজের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। বইয়ের পাতায় শংকর- আলভারেজের জুটির মতোই পর্দায় দেব ও রুডল্ফ পরস্পরকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। তিরুমলের ভূমিকায় নবীল খানের অভিনয়ও মনে রাখার মতো। মানুষের পাশাপাশি আফ্রিকার সিংহ, বিষাক্ত ব্ল্যাক মাম্বা আর হাতিও দুর্দান্ত অভিনয় করে পুরো ছবিটাকে জমিয়ে দিয়েছে। প্রেক্ষাগৃহের পর্দা সরতেই ইগলের উড়ান আর তারপর হাতির দৌড় শিহরণ জাগায়। 

উপসংহার: 

উপন্যাসের পৃষ্ঠা ধরে ধরে এই চলচ্চিত্র তৈরি হয়নি। তবু এ-ছবি দেখার পর উপন্যাস পাঠের আমেজটা ফিরে আসে। ‘চাঁদের পাহাড়’ দেখার পর সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো পাওনা। সারা জীবন এই সিনেমাটার কথা আমার মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল থাকবে।

Leave a Comment