তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা

তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা – অবসর পেলেই যে সাহিত্যিকের রচনা আমি উলটে-পালটে পড়ি, তিনি হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণ আমার অন্যতম প্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং তাঁর লেখা পথের পাঁচালী উপন্যাসটি আমার সবচাইতে পছন্দের।
 
তো চলুন আজকের মূল বিষয় তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা পড়ে নেওয়া যাক।

তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা

তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা
তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা

তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা

ভূমিকা

লেখাপড়া, পরীক্ষা আর সিলেবাসের চাপে এখন পাঠ্যসূচির বাইরের বই পড়ার সময় মেলে না। তবুও অবসর পেলেই যে সাহিত্যিকের রচনা আমি উলটে-পালটে পড়ি, তিনি হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভূতিভূষণ আমার অন্যতম প্রিয় কথাসাহিত্যিক এবং তাঁর লেখা পথের পাঁচালী উপন্যাসটি আমার সবচাইতে পছন্দের।

উপন্যাসের কাহিনি

পথের পাঁচালী-তে গ্রামবাংলার একটি অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। নিশ্চিন্দিপুর নামের একটি গ্রামের কথা উপন্যাসে বলা হয়েছে। আরও স্পষ্ট করে বললে অপু নামের এক কিশোর, তার দিদি দুর্গা, মা সর্বজয়া, বাবা হরিহর ও পিসিমা ইন্দির ঠাকরুনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। পথের পাঁচালী আসলে অপুর বেড়ে ওঠার গল্প। উপন্যাসের ঘটনাক্রমও এগিয়েছে সে কী কী দেখছে, কী কী শুনছে এবং সেগুলি থেকে কী বুঝছে-এইসমস্ত বিষয় অবলম্বন করে। দীর্ঘদিন নিজের পরিচিত গ্রাম্য ঘেরাটোপে থাকার ফলে অপুকে সুদূর অত্যন্ত প্রবলভাবে আকৃষ্ট করত। এর অন্যতম কারণ ছিল তার কল্পনাবিলাসী মন। দিদির সঙ্গে অপুর যে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার অপূর্ব বর্ণনা রয়েছে উপন্যাসে। দিদিই ছিল তার সবচেয়ে কাছের, সবচেয়ে আপনার। অপুর বাবা হরিহর পেশায় যজমান ছিলেন। অত্যন্ত আর্থিক অনটনের মধ্য দিয়ে তাদের জীবন অতিবাহিত হত। দুর্গার আকস্মিক মৃত্যু অপু, সর্বজয়া এবং হরিহরের জীবনে ছন্দপতন ঘটায়। তারা পা বাড়ায় শহরের দিকে। কাশীতে গিয়ে নতুন করে সংসার বাঁধেন সর্বজয়া। কিন্তু অপুর চিন্তায় ও চেতনায় আজন্ম মিশে থাকে নিশ্চিন্দিপুর। 

প্রিয় হওয়ার কারণ

পথের পাঁচালীর কাহিনিতে উল্লিখিত গ্রামজীবনের প্রকৃতি, সেখানকার মানুষজনদের সঙ্গে আমি খুব সহজেই একাত্ম বোধ করেছিলাম। ছুটিতে বা সময়-সুযোগ পেলে আমি এখনও নিজেদের গ্রামের বাড়ি চলে যাই। উপন্যাসটি পড়ে আমার এই উপলব্ধি হয় যে, রোজ চোখে পড়ে এমন ঘটনা ও চরিত্রদের নিয়েও কেমন আশ্চর্য সুন্দর আখ্যান লেখা যায়। উপন্যাসের অপু-দুর্গা, অপু-দুর্গার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়পরিজন সকলেই যেন আমার খুব চেনাপরিচিত হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঔপন্যাসিকের বর্ণনার দক্ষতা। বিভূতিভূষণের লেখার ভাষা ভীষণ সহজসরল হলেও তার একটি আকর্ষণ ক্ষমতা রয়েছে। পাঠক তাই চট করে লেখা ছেড়ে উঠতে পারে না। অপু-দুর্গার কাশফুলের জঙ্গল পেরিয়ে রেললাইন দেখতে যাওয়ার দৃশ্য, ঝড়ের মধ্যে তাদের আম কুড়োতে যাওয়ার ঘটনা কিংবা দুর্গার মৃত্যুর বর্ণনা ভাষার সৌন্দর্যে কখনও আমাদের বিষণ্ণ করে, কখনও করে বিমর্ষ।
নায়ক অপু তার সজীব, সতেজ কিশোর মনের কল্পনায় যা-কিছু ভাবে, চিন্তা করে, যে-কারণে দুঃখ পায় কিংবা আনন্দ অনুভব করে-আমিও সেরকম ভাবি। অপুর মতো আমারও অন্যতম প্রিয় চরিত্র ‘মহাভারত’-এর কর্ণ। অনুভূতিপ্রবণ অপু এবং প্রাণবন্ত দুর্গা ‘পথের পাঁচালী’র অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্র। অপুর মধ্যে আমি যেন নিজেকে দেখতে পাই।

উপসংহার

বিভূতিভূষণ চমক লাগানো বা জটিল, মনস্তাত্ত্বিক কোনো আখ্যান লিখতে চাননি। তিনি চেয়েছিলেন গ্রামবাংলার সমাজের যে চালচিত্র অনুপম হয়েও সাধারণের নাগাল ও দৃষ্টির বাইরে ছিল তাকে অবিকলভাবে হাজির করতে। উপন্যাসটি তাই আমার হৃদয়ের খুব কাছের।
আপনি আমাদের একজন মূল্যবান পাঠক। তোমার প্রিয় উপন্যাস রচনা -এই বিষয়ে আমাদের লেখনী সম্পূর্ণ পড়ার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না।

Leave a Comment