টীকা লেখো: ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা

টীকা লেখো: ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা

টীকা লেখো: ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা।
টীকা লেখো: ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা।
ফরাসি সংবিধান সভা মূল সংবিধান রচনার আগে ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা’ (‘Declaration of Rights of Man and Citi- zen’) নামে একটি দলিল প্রকাশ (২৬ আগস্ট, ১৭৮৯ খ্রি.) করে।

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণা

[1] ঘোষণাপত্রের ভিত্তি

ফরাসি সংবিধান সভা কর্তৃক প্রকাশিত ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্র’ রচনার ক্ষেত্রে ‘আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ এবং ইংল্যান্ডের ‘ম্যাগনা কার্টা’ ও ‘বিল অব রাইট্স’, লক, রুশো, মন্তেস্কু প্রমুখ দার্শনিকের মতাদর্শ প্রভৃতির বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়।

[2] মানুষের অধিকার ঘোষণা

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রে বলা হয় যেー[i] মানুষ জন্মগতভাবে মুক্ত ও স্বাধীন, [ii] মানুষের জন্মগত অধিকারগুলি পবিত্র ও অলঙ্ঘনীয়, [iii] আইনের চোখে সব মানুষ সমান, [iv] রাষ্ট্রের প্রকৃত সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী হল জনগণ, [v] যোগ্যতা অনুসারে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার অধিকারী, [vi] বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার প্রভৃতি হল মানুষের সর্বজনীন অধিকার।

[3] সীমাবদ্ধতা

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন- [i] ঘোষণাপত্রে সামাজিক সাম্যের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়নি। [ii] এতে মানুষের অর্থনৈতিক অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। [iii] এতে শিক্ষার অধিকার সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। [iv] মানুষের সংগঠিত আন্দোলন করার অধিকার সম্পর্কেও ঘোষণাপত্রটি নীরব থেকেছে। [v] নাগরিকের অধিকারের কথা বলা হলেও তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ঘোষণাপত্রে কিছুই বলা হয়নি।

[4] গুরুত্ব

কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকারের ঘোষণাপত্রের গুরুত্বকে মোটেই অস্বীকার করা যায় না। ঐতিহাসিক ওলার বলেছেন যে, এই ঘোষণার মাধ্যমে “বিশেষ অধিকার ও অসাম্যের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার ও সাম্যের নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।” কোবান মনে করেন যে, এই ঘোষণাপত্র “বিশেষ অধিকারের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেছে।”

উপসংহার

ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণাপত্রের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই ঘোষণাপত্রই সামন্ততান্ত্রিক পুরাতনতন্ত্রের সমাধি রচনা করে। এতে আধুনিক গণতন্ত্রের মৌলিক নীতিগুলির স্পষ্ট উল্লেখ ছিল। তাই ঐতিহাসিক ওলার বলেছেন যে, এই ঘোষণাপত্র ছিল “পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরয়ানা।”

Leave a Comment