জ্যাকোবিন শাসনের পরিচয়
জ্যাকোবিন শাসনের পরিচয় দাও। |
বিপ্লবের সময়ে ফ্রান্সের উগ্র বামপন্থী রাজনৈতিক দল ছিল জ্যাকোবিন দল। এই দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রোবসপিয়ার, দাঁতো, ম্যারাট প্রমুখ।
জ্যাকোবিন শাসন
[1] দলের আদর্শ
জ্যাকোবিন দল সম্পত্তির ভিত্তিতে নাগরিকের ভোটাধিকারের বিরোধিতা করে। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে দেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এই দলের মূল লক্ষ্য ছিল। জ্যাকোবিনরা রুশোর সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী ছিল। দরিদ্র শ্রেণির মানুষের মধ্যে এই দলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ছিল।
[2] জিরন্ডিস্টদের বিতাড়ন
জ্যাকোবিনরা প্যারিসের সর্বহারা জনতার সহায়তায় আইনসভা থেকে জিরন্ডিস্টদের বিতাড়িত করে এবং শাসনব্যবস্থায় একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, রাজতন্ত্রের অবসান ঘটায়।
[3] সন্ত্রাস
দেশের সংকটকালে জ্যাকোবিন দলের নেতৃত্বে ফ্রান্সে সন্ত্রাসের শাসন শুরু হয়। তারা বিপ্লবী ফ্রান্সকে রক্ষার নামে নির্বিচারে বহু মানুষকে হত্যা করে। রাজপরিবারের প্রায় সকলকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়। জ্যাকোবিন নেতা হিবার্ট বলেন, “নিরাপত্তার প্রয়োজনে সকলকে হত্যা করতে হবে।”জ্যাকোবিন দল তিনটি সংস্থার সহায়তায় দেশে স্বেচ্ছাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে, যথা-জ্যাকোবিন ক্লাব, বিপ্লবী কমিউন ও কনভেনশন কমিটি।
[4] জনকল্যাণ
সন্ত্রাসের শাসনকালে জ্যাকোবিন দল বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক পদক্ষেপ নেয়। [i] মজুতদারি বন্ধ করার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। [ii] নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সর্বোচ্চ মূল্য এবং মজুরির সর্বনিম্ন হার বেঁধে দেওয়া হয়। [iii] দাসপ্রথার অবসান ঘটানো হয়। [iv] অভিজাতদের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের বণ্টন করা হয়। [v] অবৈতনিক সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হয়। [vi] খ্রিস্টান বর্ষপঞ্জি বাতিল করে ‘প্রজাতান্ত্রিক বর্ষপঞ্জি’ চালু করা হয়।
উপসংহার
বিপ্লবের কালে ফ্রান্সে টানা তেরো মাস জ্যাকোবিন দলের শাসন চলে। এই পর্বে অহেতুক ভীতি প্রদর্শন, সন্ত্রাস ও ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চলে। তাদের এই শাসন ‘সন্ত্রাসের রাজত্ব’ নামে পরিচিত।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা