কারক, বিভক্তি ও অনুসর্গ সম্পর্কিত প্রশ্ন ও উত্তর |
কারক কাকে বলে?
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়াপদের সঙ্গে বিশেষ্য, সর্বনাম অথবা বিশেষ্য অর্থে ব্যবহৃত কোনো পদের যে সম্বন্ধ বা সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় কারক।
কারক পদ ও অকারক পদের পার্থক্য কী?
কারক পদ ও অকারক পদের পার্থক্য হল-কারক পদগুলি বাক্যে ক্রিয়ার সঙ্গে অন্বিত হয় কিন্তু অকারক পদগুলি ক্রিয়া, এমনকি কখনো-কখনো অন্য কোনো পদের সঙ্গেও অন্বিত হয় না।
কারক-সম্বন্ধ বলতে কী বোঝায়?
শব্দ যখন বাক্যে ব্যবহারের যোগ্যতা লাভ করে তখন তাকে বলে পদ। শব্দকে পদবাচ্য করে তোলার ক্ষেত্রে বিভক্তি ও অনুসর্গের মাধ্যমে বাক্য মধ্যস্থিত শব্দগুলির পরস্পরের মধ্যে একটা অন্বয় বা সম্বন্ধ গড়ে ওঠে। একেই বলা হয় কারক-সম্বন্ধ।
কারক কয় প্রকার ও কী কী?
কারক ছয় প্রকার। যথা- (১) কর্তৃকারক, (২) কর্মকারক, (৩) করণকারক, (৪) অপাদানকারক, (৫) অধিকরণকারক ও (৬) নিমিত্তকারক।
বিভক্তি কী?
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাক্যে ব্যবহারযোগ্য পদ গড়ে তোলে তাকে বলে বিভক্তি।
বিভক্তি কয় প্রকার হয় ও কী কী?
বিভক্তি মূলত দুই প্রকার হয়। যথা-(১) শব্দবিভক্তি ও (২) ধাতু বা ক্রিয়াবিভক্তি।
শব্দবিভক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে সকল বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি (অর্থহীন ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ এবং সার্থক শব্দ) পদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শব্দকে বাক্য পদবাচ্য করে তোলে, বাক্যস্থিত পদগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ণয় করে ও ক্রিয়াপদের সঙ্গে বাক্যের অন্তর্গত বিশেষ্য-সর্বনাম অথবা বিশেষ্য স্থানীয় কোনো পদের কারক-সম্পর্ক নির্ণয় করে তাদের বলা হয় শব্দবিভক্তি।
উদাহরণ: সে মাঠে খেলা করে। বাবা তোমায় ডাকছেন।
বাংলায় প্রচলিত শব্দবিভক্তির সংখ্যা ক-টি ও কী কী?
বাংলায় প্রচলিত শব্দবিভক্তি মূলত পাঁচটি। যথা- এ (য়), কে, রে (এরে), র (এর), তে (এতে)। এ ছাড়া রয়েছে শূন্যবিভক্তি।
শূন্যবিভক্তিকে কি ‘অ’ বিভক্তি বলা যায়?
শূন্যবিভক্তিকে আধুনিককালে অনেকেই ‘অ’ বিভক্তি রূপে চিহ্নিত করতে চাইলেও শূন্যবিভক্তিকে এই নামে গ্রহণ করার বিষয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। কারণ, শূন্যবিভক্তি বলার মধ্যে একটি শূন্যতার বোধ কাজ করে কিন্তু ‘অ’ বিভক্তির একটা দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ লক্ষ করা যায়। উভয় বিভক্তিতে কোনো শব্দ যুক্ত হওয়ার সময় আকারগত ক্ষেত্রে পরিবর্তন না হলেও ‘অ’ বিভক্তি কিন্তু অনুমানসাপেক্ষ। তাই শূন্যবিভক্তিকে ‘অ’ বিভক্তি না বলাই শ্রেয়।
তির্যক বিভক্তি কাকে বলে?
সংস্কৃত ব্যাকরণ অনুসারে ‘এ’ বিভক্তি প্রধানত অধিকরণকারকের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো-কখনো দেখা যায় অন্যসব কারকেও ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই একেই তির্যক বিভক্তি বলা হয়। উদাহরণ: পাগলে (এ) কি না বলে!-কর্তৃকারক। ও তো দেখি গঙ্গাজলে (এ) গঙ্গাপুজো করে। -করণকারক। অর্থ উপার্জনে (এ) এই প্রথম মুম্বাইয়ে এলাম। -নিমিত্তকারক।
শব্দবিভক্তির প্রসারণের বিষয়টি যে-কোনো একটি বিভক্তির উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
শব্দবিভক্তি ‘এ’-এর প্রসারিত রূপ হল ‘য়’। ‘এ’ বিভক্তি যুক্ত হয় অ-কারান্ত অথবা ব্যঞ্জনান্ত শব্দের শেষে। তবে ‘এ’ বিভক্তি যখন আ-কারান্ত শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয় তখন তা ‘য়’ বিভক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
উদাহরণ: ঘরে < (ঘর + এ), রাস্তায় < (রাস্তা + য়), গোড়ায় < (গোড়া + য়)।
করণকারকে ‘অ’ বিভক্তি ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
করণকারকে ‘অ’ বিভক্তি ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত হল-বাবা ছেলেকে বেত (বেত + অ) মারলেন।
ক্রিয়াবিভক্তি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি কাল ও পুরুষানুসারে ধাতুর পরে যুক্ত হয়ে ক্রিয়াপদ গঠন করে তাকে ধাতুবিভক্তি বা ক্রিয়াবিভক্তি বলে।
উদাহরণ : বর্তমান-অতীত-ভবিষ্যৎ কালের মৌলিক ক্রিয়াবিভক্তি হল যথাক্রমে-ই, অ, এ; ইলাম/লাম, ইলে/লে, ইল/ল; ইব/ব, ইবে/বে।
অনুসর্গ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে সকল অব্যয় বিশেষ্য, সর্বনাম বা বিশেষ্য স্থানীয় পদের পরে বসে শব্দবিভক্তির কাজ করে এবং কারক-সম্পর্ক বোঝাতে সাহায্য করে তাদের বলা হয় অনুসর্গ। উদাহরণ: দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক, নিমিত্ত (জন্য), হইতে (হতে), থাকিয়া (থেকে) ইত্যাদি।
অনুসর্গ ক-টি দিক দিয়ে গড়ে ওঠে ও কী কী?
অনুসর্গ দুটি দিক দিয়ে গড়ে ওঠে। যথা- (১) নামপদজাত অনুসর্গ ও (২) অসমাপিকা ক্রিয়াজাত অনুসর্গ।
নামপদজাত অনুসর্গের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
নামপদজাত অনুসর্গের উদাহরণ হল- দ্বারা, দিয়া (দিয়ে), কর্তৃক, নিমিত্ত (জন্য), নিকটে (কাছে), অপেক্ষা (চেয়ে) ইত্যাদি।
ক্রিয়াপদজাত অনুসর্গের কয়েকটি উদাহরণ দাও।
ক্রিয়াপদজাত অনুসর্গের উদাহরণ হল- চাহিয়া (চেয়ে), হইতে (হতে), লাগিয়া (লেগে), থাকিয়া (থেকে) ইত্যাদি।
অনুসর্গ ও বিভক্তির মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।
অনুসর্গ ও বিভক্তির মধ্যে একটি পার্থক্য হল- বিভক্তির চিহ্নগুলি অর্থহীন কিন্তু অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।
অনুসর্গ ও বিভক্তির একটি মিল লেখো।
অনুসর্গ ও বিভক্তির একটি মিল হল- বিভক্তি শব্দকে পদে রূপান্তরিত করে তাকে বাক্য পদবাচ্য করে তোলে। অনুসর্গও শব্দকে পদে রূপান্তরিত করে।
কোন্ কোন্ কারকে অনুসর্গের ব্যবহার রয়েছে?
বাংলায় কর্তৃকারক ও কর্মকারকে অনুসর্গের ব্যবহার বিরল। প্রধানত, করণকারক, নিমিত্তকারক ও অপাদানকারকে শব্দবিভক্তি রূপে অনুসর্গ ব্যবহারের প্রাধান্য রয়েছে। অধিকরণকারকে অনুসর্গের ব্যাপক, ব্যবহার না থাকলেও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন বাক্যবিন্যাসে অনুসর্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায়।
অধিকরণকারকে অনুসর্গ ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
অধিকরণকারকে অনুসর্গ ব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত হল-ওর মনের মধ্যে কী আছে জানি না।
নির্দেশক বলতে কী বোঝো?
যে বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি কোনো ব্যক্তি বা বস্তুবাচক পদের অন্তে যুক্ত করে তার সংখ্যা অর্থাৎ একবচন না বহুবচন নির্ণয় করা হয়, তাকে নির্দেশক বলা হয়।
উদাহরণ: বালকটি (টি) মাঠে খেলছে। ছেলেটা (টা) বড্ড দুষ্টু। দোয়াতখানি (খানি) ভারী সুন্দর। লোকগুলো (গুলো) ওখানে ভিড় করেছে।
নির্দেশক ও বিভক্তির মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো।
নির্দেশক ও বিভক্তির মধ্যে একটি পার্থক্য হল-বিভক্তি কখনোই শব্দের পূর্বে বসে না। কিন্তু নির্দেশক পরিমাণবাচক অথবা সংখ্যাবাচক বিশেষণের সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে শব্দের পূর্বেও বসে।
অনুসর্গ ও নির্দেশকের একটি পার্থক্য লেখো।
অনুসর্গ ও নির্দেশকের একটি পার্থক্য হল-অনুসর্গ সাধারণত স্বতন্ত্রভাবে শব্দের পরে বসে (মাঝে মাঝে পূর্বেও বসে)। কিন্তু নির্দেশক ব্যক্তি বা বস্তুবাচক শব্দের পরে সংযুক্তভাবে বসে (তবে সংখ্যাবাচক বা পরিমাণবাচক বিশেষণ যুক্ত হয়ে স্বতন্ত্রভাবে শব্দের পূর্বেও বসে)।
কর্তৃকারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বাক্যে যে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে বলা হয় কর্তা। বিশেষ্য ও সর্বনামবাচক এই কর্তার সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় কর্তৃ-সম্পর্ক এবং কর্তাই হল কর্তৃকারক। উদাহরণ : সোমা চিঠি লেখে। রীতা ছবি আঁকে।
কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি ও ‘র’ বিভক্তি প্রয়োগের একটি করে উদাহরণ দাও।
কর্তৃকারকে ‘এ’ বিভক্তি প্রয়োগের উদাহরণ হল-পাগলে (এ) কি না বলে। কর্তৃকারকে ‘র’ বিভক্তি প্রয়োগের উদাহরণ হল- সোমার (র) দিল্লি যাওয়া হল না।
সহযোগী কর্তা ও প্রতিযোগী কর্তার পার্থক্য কী?
সহযোগী কর্তা ও প্রতিযোগী কর্তার পার্থক্য-সহযোগী কর্তায় ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে দুটি কর্তার পারস্পরিক সহযোগিতার ভাব লক্ষ করা যায়। কিন্তু প্রতিযোগী কর্তায় ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার মধ্যে একটা প্রতিযোগিতার ভাব লক্ষ করা যায়।
প্রযোজক কর্তা ও প্রযোজ্য কর্তার পার্থক্য কী?
প্রযোজক কর্তা ও প্রযোজ্য কর্তার পার্থক্য-প্রযোজক কর্তা নিজে ক্রিয়া সম্পন্ন না করে অন্যকে দিয়ে সম্পন্ন করায়। আর প্রযোজ্য কর্তা প্রযোজক কর্তার প্রেরণায় নিজে কাজ সম্পন্ন করে বা প্রযোজক কর্তা প্রযোজ্য কর্তাকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়।
অনুক্ত কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কর্তৃবাচ্যে ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তার যেভাবে সাক্ষাৎ সম্পর্ক থাকে কর্মবাচ্যে বা ভাববাচ্যে সেভাবে থাকে না। উভয়ক্ষেত্রে কর্তা গৌণভাবে অবস্থান করে। কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে এই গৌণভাবে অবস্থান করা কর্তাকেই বলা হয় অনুক্ত কর্তা।
উদাহরণ: আমার খাওয়া হয়েছে। রামের লেখা হল।
উদাহরণ সহযোগে সমধাতুজ কর্তা কাকে বলে লেখো।
বাক্যে অকর্মক ক্রিয়াপদ যে ধাতু থেকে নিষ্পন্ন হয় সেই একই ধাতু নিষ্পন্ন বিশেষ্য পদ যদি ক্রিয়ার কর্তা রূপে কাজ করে তাহলে সেই কর্তাকে সমধাতুজ কর্তা বলা হয়।
উদাহরণ: ‘আশ্বিনের মাঝামাঝি উঠিল বাজনা বাজি।’ সে বড়ো বাড় বেড়েছে।
নিরপেক্ষ কর্তা কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বাক্যের মধ্যে অসমাপিকা ও সমাপিকা ক্রিয়া যদি ভিন্ন হয় তাহলে অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে নিরপেক্ষ কর্তা বলে।
উদাহরণ: তুমি এলে আমি যাব। খোকা ঘুমোলে মা বেরোবেন।
কর্ম-সম্বন্ধ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
বাক্যের মধ্যে কর্তা যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পন্ন করে তাকে বলা হয় কর্ম এবং কর্মের সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক তাকে বলা হয় কর্ম-সম্বন্ধ।
উদাহরণ: শিক্ষকমশাই বাংলা পড়াচ্ছেন। কল্পনা ছবি আঁকছে।
মুখ্যকর্ম ও গৌণকর্মের পার্থক্য উদাহরণ সহযোগে বুঝিয়ে দাও।
মুখ্যকর্ম হল বাক্যের দ্বিকর্মক ক্রিয়ার বস্তুবাচক কর্ম। কিন্তু গৌণকর্ম হল সেই দ্বিকর্মক ক্রিয়ার প্রাণীবাচক কর্ম। উদাহরণ: প্রবীণ ভাইকে ইংরেজি পড়াচ্ছে।-দ্বিকর্মক ক্রিয়াযুক্ত এই বাক্যটিতে বস্তুবাচক কর্ম ‘ইংরেজি’ হল মুখ্যকর্ম আর প্রাণীবাচক কর্ম ‘ভাইকে’ হল গৌণকর্ম।
উদাহরণসহ উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম কাকে বলে লেখো।
কোনো কোনো ক্রিয়ার কাজ একটি কর্মের দ্বারা সম্পন্ন হয় না। পরিপূরক রূপে অপর একটি কর্মপদ ব্যবহৃত হয়। বিভক্তিযুক্ত স্বাভাবিক কর্মকে বলে উদ্দেশ্য কর্ম এবং বিভক্তিহীন অতিরিক্ত কর্মকে বলে বিধেয় কর্ম।
উদাহরণ: দেশবাসী তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করেছে। এখানে ‘তাঁকে’ উদ্দেশ্য কর্ম এবং ‘প্রধানমন্ত্রী’ বিধেয় কর্ম।
সমধাতুজ কর্ম কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ক্রিয়াপদটি যে ধাতু দিয়ে গঠিত, সেই ধাতু দিয়ে গঠিত বিশেষ্য পদ ওই ক্রিয়ার কর্ম হলে তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম।
উদাহরণ: দাদা আজ একটা লম্বা ঘুম ঘুমিয়েছে। সে কী খাওয়াটাই না খেল!
কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
কোনো বাক্যে কর্মই যখন কর্তা রূপে ক্রিয়া সম্পাদন করে তখন তাকে কর্মকর্তৃবাচ্যের কর্ম বলা হয়।
উদাহরণ : তাকে শাড়িটা পরে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। এই জামাটায় তোমাকে মানাবে ভালো।
নীচের চিহ্নিত পদের কারক/অকারক সম্পর্ক নির্দেশ করে তার চিহ্ন নির্ণয় করো- পোকাটা উড়ে গেল।
চিহ্নিত পদটি কর্মকারকে ‘টা’ নির্দেশক চিহ্নযুক্ত।
করণকারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
কর্তা ক্রিয়া সম্পন্ন করে যে উপায়ে বা যার সাহায্যে তাকে বলা হয় করণকারক।
উদাহরণ: খেলাধুলায় শরীর সুস্থ হয়। টাকায় সব হয় না।
করণকারকের একটি উদাহরণ দাও ও অনুসর্গটি চিহ্নিত করো।
করণকারকের একটি উদাহরণ-চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না। এখানে অনুসর্গ হল-দ্বারা।
‘দিয়ে’ অনুসর্গের মাধ্যমে গঠিত একটি করণকারকের উদাহরণ দাও।
‘দিয়ে’ অনুসর্গের মাধ্যমে গঠিত একটি করণকারকের উদাহরণ-এ পুতুল মাটি দিয়ে গড়া।
যন্ত্রাত্মক করণ ও উপায়াত্মক করণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
যন্ত্রাত্মক করণ ও উপায়াত্মক করণের মধ্যে পার্থক্য- যন্ত্রাত্মক করণে ক্রিয়া সম্পাদনের উপায়টি পার্থিব ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য। কিন্তু উপায়াত্মক করণে ক্রিয়া সম্পাদনের উপায়টি বাস্তব তথা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়।
হেতুর্থক করণের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
হেত্বর্থক করণের একটি দৃষ্টান্ত-তৃয়ায় প্রাণ যাওয়ার উপক্রম।
বীন্সাসূচক করণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ক্রিয়া সম্পাদনের উপায় যদি যুগপৎ ব্যাপ্তি অর্থ প্রকাশ করে তখন তাকে বীপ্সাসূচক করণ বলা হয়।
উদাহরণ: রোগে রোগে শীর্ণ দেহ। কথায় কথায় আঘাত করে।
অপাদানকারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যার থেকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর বিচ্যুতি, উৎপন্ন হওয়া, স্খলন, নির্গমন, পতন, নিঃসরণ, গ্রহণ, অপসারণ ইত্যাদি বোঝায় তাকে বলা হয় অপাদান পদ বা অপাদানকারক।
উর্দাহরণ : ছেলেরা স্কুল পালিয়ে খেলা করছে। মৌমাছিরা ফুলে মধু সংগ্রহ করছে।
তারতম্যবাচক অপাদান কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে তুলনা বোঝাতে বাক্যে যে অপাদান পদ ব্যবহৃত হয় তাকে বলে তারতম্যবাচক অপাদান।
উদাহরণ : স্বর্গের চেয়ে জন্মভূমির গৌরব বেশি। প্রাণের অপেক্ষা প্রিয় আর কী আছে?
স্থানবাচক অপাদান ও অবস্থানবাচক অপাদানের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।
স্থানবাচক অপাদানে কর্তা কোনো স্থান বা আধার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কর্ম সম্পাদন করে। কিন্তু অবস্থানবাচক অপাদানে কর্তা কোনো স্থানে অবস্থান করে কর্ম সম্পাদন করে।
কালবাচক অপাদানের বৈশিষ্ট্য লেখো।
কালবাচক অপাদানে কর্তার স্থানচ্যুতি ঘটে না। এই অপাদানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা কালকে নির্দেশ করা হয়।
দূরত্ববাচক অপাদানের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
দূরত্ববাচক অপাদানের একটি দৃষ্টান্ত হল-আমার বাড়ি থেকে শীলার বাড়ি এক মাইল পথ।
অধিকরণ-সম্বন্ধ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যে আধারে ক্রিয়া সম্পন্ন হয় তাকে বলে অধিকরণ পদ। সেই অধিকরণ পদের সঙ্গে ক্রিয়ার যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাকে বলা হয় অধিকরণ-সম্বন্ধ।
উদাহরণ: কলশিতে জল আছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি হয়।
কালাধিকরণ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
প্রধানত সময় ও কালকে কেন্দ্র করে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে যে অধিকরণকারক গড়ে ওঠে তাকে বলে কালাধিকরণ।
উদাহরণ: গতকাল বাবা বাড়ি ফিরেছেন। দুপুর দুটোয় ট্রেন ছাড়বে।
উদাহরণসহ বিষয়াধিকরণ কাকে বলে লেখো।
প্রধানত বিষয়কে অবলম্বন করে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে যে অধিকরণকারক গড়ে ওঠে তাকে বলে বিষয়াধিকরণ।
উদাহরণ: সুরেশবাবু বাংলায় সুপণ্ডিত। সে অঙ্কে দুর্বল।
দেশাধিকরণের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
দেশাধিকরণের একটি দৃষ্টান্ত-আজ শহরে জল নেই।
অধিকরণকারকে কোন্ কোন্ বিভক্তি প্রযুক্ত হয়? যে-কোনো একটির উদাহরণ দাও।
অধিকরণকারকে শূন্য, এ (য়), তে (এতে), কে বিভক্তি প্রযুক্ত হয়।
উদাহরণ: রমা নদীতে (তে) সাঁতার কাটছে।
‘মধ্যে’ অনুসর্গ প্রয়োগে সৃষ্ট অধিকরণকারকের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
‘মধ্যে’ অনুসর্গ প্রয়োগে সৃষ্ট অধিকরণকারকের দৃষ্টান্ত-ওর মনের মধ্যে কী আছে জানি না।
নিমিত্তকারক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বাক্যের মধ্যে যার জন্য আকাঙ্ক্ষা বা ইচ্ছা প্রকাশ পায় তাকে বলে নিমিত্ত পদ। এই নিমিত্ত পদেরই হয় নিমিত্তকারক।
উদাহরণ: বিপিনবাবু স্নানের নিমিত্ত গঙ্গায় গেছেন।
নিমিত্তকারকে ‘এ’ বিভক্তি প্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত লেখো।
নিমিত্তকারকে ‘এ’ বিভক্তি প্রয়োগের একটি দৃষ্টান্ত-অর্থ উপার্জনে (এ) এই প্রথম মুম্বাইয়ে এসেছি।
নিমিত্তকারকে প্রযুক্ত কয়েকটি অনুসর্গের উল্লেখ করো।
নিমিত্তকারকে প্রযুক্ত কয়েকটি অনুসর্গ-জন্য, তরে, লাগি, উদ্দেশে, কারণে, হেতু, নিমিত্ত।
বিভক্তি ও অনুসর্গ অনুযায়ী কারক কয় প্রকার এবং কী কী?
বিভক্তি ও অনুসর্গ অনুযায়ী কারক তিন প্রকার। যথা-(১) বিভক্তি প্রধান, (২) অনুসর্গ প্রধান ও (৩) বিভক্তি ও অনুসর্গ প্রধান।
বিভক্তি প্রধান কারক কোগুলিকে বলা হয়?
বাংলায় প্রচলিত পাঁচটি বিভক্তি মূলত কর্তৃকারক ও কর্মকারকেই প্রযুক্ত হওয়ায় এগুলিকেই বিভক্তি প্রধান কারক বলা হয়।
অনুসর্গ ও বিভক্তি একইসঙ্গে প্রযুক্ত হয় কোন্ কোন্ কারকে?
অনুসর্গ ও বিভক্তি একইসঙ্গে প্রযুক্ত হয়-করণকারক, অপাদানকারক ও নিমিত্তকারকে।
অকারক পদ কাকে বলে?
বাক্যের মধ্যে কোনো কোনো পদ থাকে যারা অন্য পদের সঙ্গে অন্বিত হয়, কিন্তু ক্রিয়ার সঙ্গে হয় না। আবার, কোনো কোনো পদ থাকে যারা কারওর সঙ্গেই অন্বিত হয় না-না ক্রিয়া না পদে, তাদের বলা হয় অকারক বা অকারক পদ।
অকারক পদ কয় প্রকার ও কী কী?
অকারক পদ দুই প্রকার। যথা- (১) সম্বন্ধপদ ও (২) সম্বোধন পদ।
সম্বোধন পদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বাক্যের গতি ভঙ্গ করে যাকে বিশেষভাবে আহ্বান করা হয় তাকে বলে সম্বোধন পদ।
উদাহরণ: সুমন, তুমি আগামীকাল এসো।
সম্বন্ধপদ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তিযুক্ত যে পদের ক্রিয়ার সঙ্গে কোনো সম্বন্ধ থাকে না, কিন্তু বাক্যের মধ্যে অন্য পদের সঙ্গে সম্বন্ধ থাকে তাকে বলে সম্বন্ধপদ।
উদাহরণ: রমেনের দাদা ভালো খেলে। রমার বাবা বেড়াতে গেছেন।
সম্বন্ধপদকে কারক বলা যায় কিনা বিচার করো।
বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের প্রত্যক্ষভাবে অন্বয় বা সম্বন্ধকে কারক বলে। যার সঙ্গে এই প্রত্যক্ষ সম্পর্ক বা অন্বয় ঘটে না তা কারক নয়। তাই সম্বন্ধপদের সঙ্গে ক্রিয়ার প্রত্যক্ষ অন্বয় হয় না বলে একে কারক বলা যায় না। বাক্যে এটি শুধু পদ হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। তবে ইংরেজি ‘Case’ অর্থে সম্বন্ধপদকেও পরোক্ষভাবে কারকের সগোত্র হিসেবে গণ্য করা যায়। কারণ, এখানে কোনো-না-কোনো শব্দের সঙ্গে তার সম্পর্ক রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাংলা ব্যাকরণে সম্বন্ধপদকে কারকের সঙ্গে যুক্ত না করে আলোচনা করাই শ্রেয়।
কারক-সম্বন্ধ অনুযায়ী সম্বন্ধপদ কত প্রকার ও কী কী?
কারক-সম্বন্ধ অনুযায়ী সম্বন্ধপদ ছয় প্রকার। যথা- (১) কর্তা-সম্বন্ধ, (২) কর্ম-সম্বন্ধ, (৩) করণ-সম্বন্ধ, (৪) অপাদান-সম্বন্ধ, (৫) অধিকরণ-সম্বন্ধ ও (৬) নিমিত্ত-সম্বন্ধ।
বাংলায় সম্বোধন পদ ও সম্বন্ধপদে কোন্ কোন্ বিভক্তি-চিহ্ন নির্দিষ্ট করা আছে?
বাংলায় সম্বোধন পদে ‘শূন্য’ বিভক্তি এবং সম্বন্ধপদে ‘র’, ‘এর’ বিভক্তি-চিহ্ন নির্দিষ্ট করা আছে।
পেঁয়াজের ঝাঁঝ-এটি কোন্ ধরনের সম্বন্ধপদের দৃষ্টান্ত?
এটি কার্যকারণ সম্বন্ধের দৃষ্টান্ত।
অভেদ সম্বন্ধ বলতে কী বোঝো? উদাহরণ দাও।
উপমেয় ও উপমানের অভেদ কল্পনায় সম্বন্ধ-বিভক্তির প্রয়োগ ঘটলে সেই সম্বন্ধকে অভেদ সম্বন্ধ বলা হয়।
উদাহরণ: রাজার মুকুট, দুঃখের সাগর।
যোগ্যতা সম্বন্ধ ও নির্ধার সম্বন্ধের মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করো।
কোনো ব্যক্তি, বস্তু বা বিষয়ের নিজ নিজ পৃথক যোগ্যতা তুলে ধরতে যোগ্যতা সম্বন্ধের প্রয়োগ ঘটে। কিন্তু নির্ধার সম্বন্ধের প্রয়োগ ঘটানো হয় বহুর সঙ্গে একের তুলনা করতে গিয়ে।