আবর্তন কাকে বলে? সরল আবর্তন সম্ভব নয় কেন? অথবা, A বচনের সরল আবর্তন কি সম্ভব? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো। |
আবর্তন:
যে অমাধ্যম যুক্তিতে হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ যথাক্রমে সিদ্ধান্তের বিধেয় ও উদ্দেশ্য পদ হয় এবং হেতুবাক্যের ও সিদ্ধান্তের গুণের কোনো পরিবর্তন হয় না এবং উভয়ের অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয় না, সেই অমাধ্যম যুক্তিকে আবর্তন (conversion) বলে। যে বচন থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় সেই বচনকে বলে আবর্তনীয় (convertend) আর যে সিদ্ধান্ত ওই আবর্তনীয় বচন থেকে নিঃসৃত হয় সেই বচনকে বলে আবর্তিত (converse) বচন। যেমন–
কোনো কোনো কবি হয় দার্শনিক (Ⅰ)-আবর্তনীয়।
∴ কোনো কোনো দার্শনিক হয় কবি (1) আবর্তিত।
A বচনের সরল আবর্তন:
সাধারণভাবে বলা হয় যে ‘A’ বচনের সরল আবর্তন সম্ভব নয়। ‘A’ বচনের আবর্তন করতে গেলে আবর্তনের ব্যাপ্যতা সংক্রান্ত নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়। বিষয়টি একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বোঝা যাক–
সকল কবি হয় মানুষ (A)-আবর্তনীয়।
∴ সকল মানুষ হয় কবি (A)-আবর্তিত।
এই যুক্তিটিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হেতুবাক্যে ‘মানুষ’ পদটি A বচনের বিধেয় হওয়ায় ব্যাপ্য হয়নি অথচ সিদ্ধান্তে A বচনের উদ্দেশ্য হওয়ায় ‘মানুষ’ পদটি ব্যাপ্য হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে, আবর্তনের বাকি নিয়মগুলি (হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য সিদ্ধান্তের বিধেয় হবে, হেতুবাক্যের বিধেয় সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য হবে এবং হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তে গুণের কোনো পার্থক্য ঘটবে না) এই যুক্তিতে যথাযথভাবে পালিত হয়েছে। কিন্তু ব্যাপ্যতা সংক্রান্ত নিয়মটি লঙ্ঘিত হয়েছে। এই নিয়মটি হল, যে পদ হেতুবাক্যে ব্যাপ্য হয় না, সেই পদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। এই কারণে A বচনের সরল আবর্তন একটি দোষযুক্ত আবর্তন বলে গণ্য হয়। এই দোষের নাম- ‘A’ বচনের সরল আবর্তনঘটিত দোষ (Fallacy of simply converting ‘A’ proposition) |
ব্যতিক্রম:
কিন্তু কয়েকটি ব্যতিক্রম আছে যেখানে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। A বচনে সাধারণভাবে উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য হয়, বিধেয় অব্যাপ্য থাকে, কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ সমমানের হয় অর্থাৎ উভয়ের প্রয়োগক্ষেত্র সমান হয়, এসব ক্ষেত্রে ‘A’ বচনের সরল আবর্তন সম্ভব হয়। নিম্নোক্ত কয়েকটি ক্ষেত্রে A-বচনের সরল আবর্তন সম্ভব।
( ১) সংজ্ঞামূলক (Definition) :
সংজ্ঞামূলক A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। কেন-না- সংজ্ঞামূলক বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় সমমানের হয়। দুটি পদ যদি সমমানের হয় তাহলে তাদের একটি ব্যাপ্য হলে অপরটিও ব্যাপ্য হয়। যেমন-
সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব (A)-আবর্তনীয়।
∴ সকল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হয় মানুষ (A)-আবর্তিত।
‘মানুষ’ পদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে ‘বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’; কাজেই ‘মানুষ’ ও ‘বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’- এই দুটি পদ সমমানের। এমন ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন হতে পারে।
(২) বিশিষ্ট পদ:
যেসব A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ (Definite Singular Term), সেইসব A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। এই জাতীয় বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় নির্দিষ্ট করে একই বিষয়বস্তুকে বোঝায়। যেমন-
হিমালয় হয় পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত (A)-আবর্তনীয়।
∴ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত হয় হিমালয় (A)-আবর্তিত।
এক্ষেত্রে যেটি ‘হিমালয়’ সেইটিই ‘পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত’। ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন হতে পারে।
(৩) উদ্দেশ্যের পুনরাবৃত্তি:
যেসব A বচনের বিধেয়টি উদ্দেশ্যের এমন সমার্থক (Synonym) বা উদ্দেশ্যের পুনরাবৃত্তি (Tautologous), সেইসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। যথা-
সকল অবিবাহিত পুরুষ হয় অকৃতদার (A)-আবর্তনীয়।
∴ সকল অকৃতদার পুরুষ হয় অবিবাহিত (A)-আবর্তিত।