আবর্তন কাকে বলে? কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব? উদাহরণসহ লেখো। |
আবর্তন:
যে অমাধ্যম যুক্তিতে হেতুবাক্যের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ যথাক্রমে সিদ্ধান্তের বিধেয় ও উদ্দেশ্য পদ হয় এবং হেতুবাক্যের ও সিদ্ধান্তের গুণের কোনো পরিবর্তন হয় না, অর্থেরও কোনো পরিবর্তন হয় না সেই অমাধ্যম যুক্তিকে আবর্তন বলে। যে বচন থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় সেই বচনকে বলে আবর্তনীয় (Convertend) আর যে সিদ্ধান্ত ওই আবর্তনীয় বচন থেকে নিঃসৃত হয়, তাকে বলে আবর্তিত (Converse)। যেমন–
কোনো কোনো ছাত্র হয় খেলোয়াড় (1) -আবর্তনীয়।
∴ কোনো কোনো খেলোয়াড় হয় ছাত্র (I)-আবর্তিত।
A বচনের সরল আবর্তন :
সাধারণভাবে বলা যায় যে, A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব নয়। A বচনের সরল আবর্তন করতে গেলে আবর্তনের ব্যাপ্যতা সংক্রান্ত নিয়মটি লঙ্ঘন করা হয়। A বচনের সরল আবর্তন করলে A বচনের সরল আবর্তনঘটিত দোষ (Fallacy of simply converting A proposition) ঘটে।
কিন্তু কয়েকটি ব্যতিক্রম আছে যেখানে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। কোনো কোনো ক্ষেত্রে A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদ সমমানের হয় অর্থাৎ উভয়ের প্রয়োগক্ষেত্র সমান হয়-এসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব হয়। নিম্নোক্ত কয়েকটি ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব।
(১ ) সংজ্ঞামূলক :
সংজ্ঞামূলক A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। কারণ, সংজ্ঞামূলক বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় সমমানের হয়। দুটি পদ যদি সমমানের হয় তাহলে তাদের একটি পদ ব্যাপ্য হলে অপর পদটিও ব্যাপ্য হয়। যেমন–
সকল মানুষ হয় বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব (A)-আবর্তনীয়।
∴ সকল বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব হয় মানুষ (A)-আবর্তিত।
এক্ষেত্রে ‘মানুষ’ এবং ‘বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জীব’-এই দুটি পদ সমমানের। এ ধরনের A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব।
(২) পদের সমবাচ্যার্থ:
যেসব A বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয়ের বাচ্যার্থ সমান সেইসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। যেমন–
সকল সমবাহু ত্রিভুজ হয় ত্রিভুজ যাদের বাহুগুলি পরস্পর সমান (A)-আবর্তনীয়।
∴ সকল ত্রিভুজ যাদের বাহুগুলি পরস্পর সমান হয় সমবাহু ত্রিভুজ (A)-আবর্তিত।
(৩) বিশিষ্ট পদ:
যেসব A বচনে উদ্দেশ্য ও বিধেয় নির্দিষ্ট বিশিষ্ট পদ (Definite Singular term), সেইসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। যেমন–
রাজীব গান্ধী হন ইন্দিরা গান্ধীর জ্যেষ্ঠ পুত্র (A)-আবর্তনীয়।
∴ ইন্দিরা গান্ধীর জ্যেষ্ঠ পুত্র হন রাজীব গান্ধী (A)-আবর্তিত।
এখানে যিনি রাজীব গান্ধী, তিনিই ইন্দিরা গান্ধীর জ্যেষ্ঠ পুত্র। এইসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব।
(৪) যেখানে A বচনের উদ্দেশ্য পদ ও বিধেয় পদ প্রতিশব্দ বা সমার্থক (Synonym) হয় বা উদ্দেশ্যের পুনরাবৃত্তি (Tautologous) হয়, সেইসব A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব। যেমন–
সব গাছ হয় বৃক্ষ (A)-আবর্তনীয়।
∴ সব বৃক্ষ হয় গাছ (A) আবর্তিত।
এখানে গাছ ও বৃক্ষ-একে অন্যের প্রতিশব্দমাত্র। তাই এসব ক্ষেত্রে A বচনের সরল আবর্তন সম্ভব।
কিন্তু তর্কবিদ হ্যামিলটন (Hamilton) উপরোক্ত A বচনগুলিকে ‘U’-বচন নামে অভিহিত করেন। তাঁর মতে, ‘A’ বচনের দুটি বৈশিষ্ট্য-(১) এটি হবে সামান্য সদর্থক বচন এবং (২) এর বিধেয়টি হবে অব্যাপ্য। কাজেই হ্যামিলটন-এর দৃষ্টিতে A বচনকে সরলভাবে আবর্তিত করা যায় না– ‘U’ বচনগুলির সরল আবর্তন সম্ভব।