অমাধ্যম অনুমান কাকে বলে? অমাধ্যম অনুমানকে কি প্রকৃত অনুমান বলা যায়? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। |
অমাধ্যম অনুমান:
যে অবরোহ অনুমানে একটিমাত্র হেতুবাক্য (Premise) থেকে কোনো সিদ্ধান্তে (Conclusion) উপনীত হওয়া যায়, সেই অনুমানকে অমাধ্যম অনুমান বলে। যেমন–
কোনো মানুষ নয় চতুষ্পদ জীব (E)
∴ কোনো চতুষ্পদ জীব নয় মানুষ (E)।
অমাধ্যম অনুমান প্রকৃত অনুমান কি না তার সপক্ষে যুক্তি:
অমাধ্যম অনুমান প্রকৃত অনুমান কি না-এ বিষয়ে যুক্তিবিদদের মধ্যে মতভেদ আছে। প্রখ্যাত যুক্তিবিদ, মিল (Mill) ও বেইন (Bain) অমাধ্যম অনুমানকে যথার্থ অনুমান বলে গণ্য করেন না। এঁরা মনে করেন, প্রকৃত অনুমানে জ্ঞানের অভিনবত্ব থাকবে অর্থাৎ অনুমানের সিদ্ধান্তটি যুক্তিবাক্য থেকে ভিন্ন হবে, সিদ্ধান্ত যুক্তিবাক্যের পুনরুক্তি হবে না। কিন্তু অমাধ্যম অনুমানে সিদ্ধান্ত কোনো নতুন তথ্য দেয় না, সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যেরই পরিবর্তিত রূপমাত্র। এই অনুমানে হেতুবাক্যে যা বলা হয়, সিদ্ধান্তে তাকেই একটু ভিন্ন ভাষায় প্রকাশ করা হয়। একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে বিষয়টি আলোচনা করলে সহজেই বোঝা যাবে। উপরোক্ত উদাহরণটিতে সিদ্ধান্তটি (কোনো চতুষ্পদ জীব নয় মানুষ) হেতুবাক্য (কোনো মানুষ নয় চতুষ্পদ জীব) অতিরিক্ত কোনো নতুন তথ্য প্রকাশ করে না। অনুমানটিতে সিদ্ধান্ত ও হেতুবাক্যের মধ্যে ভাষাগত পার্থক্য ছাড়া অন্য কোনো পার্থক্যই নেই। সেই কারণেই মিল ও বেইন বলেন যে-অমাধ্যম অনুমান প্রকৃত অনুমান নয়।
কিন্তু মিল এবং বেইন-এর বক্তব্যে কিছুটা সত্যতা থাকলেও তাঁদের মতটি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। যে-কোনো অবরোহ যুক্তিতে সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকেই নিঃসৃত হয়, তাই সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্যের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কিত। কিন্তু অমাধ্যম অনুমানে সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্যের পুনরুক্তি-এই অভিযোগ একেবারেই ঠিক নয়। হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে শুধু ভাষাগত পার্থক্যই থাকে না, থাকে অর্থগত বা জ্ঞানগত পার্থক্য। এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, অমাধ্যম যুক্তিতে হেতুবাক্যে যা অস্পষ্ট থাকে সিদ্ধান্তে তাকেই সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করা হয়। হেতুবাক্যে যে সত্য সুপ্ত থাকে, সিদ্ধান্তে সেই সত্য সম্পূর্ণরূ পে প্রকাশ পায়। কার্ডেথ রিড (Carveth Read) বলেছেন, কোনো একটি প্রদত্ত বচন থেকে যখন সরাসরি সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত আমরা টানি, তখন ওই বচনটির বিচিত্র দিক আমাদের দিকে উদ্ভাসিত হয় এবং ওই বচনটির মধ্যে যা কিছু অন্তর্নিহিতভাবে থাকে, তা আমরা স্পষ্ট করে জানি; এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিচার করলে বলা যায় যে, অমাধ্যম যুক্তির সিদ্ধান্ত আমাদের অবশ্যই কিছু নতুন জ্ঞান দেয়।
তা ছাড়া যে-কোনো অবরোহ অনুমানেই সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যের মধ্যে নিহিত থাকে। তাই মিল এবং বেইন-এর বক্তব্য সত্য হলে শুধুমাত্র অমাধ্যম নয়, সম্পূর্ণ অবরোহ তর্কবিদ্যা অর্থহীন হয়ে পড়বে। মনে রাখতে হবে, যা নিহিত ছিল, অথচ জানা ছিল না, তাকে জানতে পারা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অবশ্যই নতুন এবং এই নতুনত্ব অমাধ্যম অনুমানই দিতে পারে। তা ছাড়া মাধ্যম অনুমানের মতো অমাধ্যম অনুমানকে অগ্রাহ্য করা যায় না, একই জিনিসকে দু-ভাবে দেখলে যেমন কিছুটা জ্ঞান বাড়ে, একই বচনকে দু-ভাবে জানলে তেমনি কিছু জ্ঞান নিশ্চিতভাবেই বাড়ে।
সুতরাং অমাধ্যম অনুমানকে অবশ্যই প্রকৃত অনুমান বলে স্বীকার করে নিতে হবে। যুক্তিবিজ্ঞানী ওয়েলটন (Welton) সংগতভাবেই মন্তব্য করেছেন যে, অমাধ্যম যুক্তিতে হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্তে যাওয়ার পথ সংক্ষিপ্ত, তাই বলে এটি কোনো পথ নয় বা এর কোনো প্রয়োজন নেই-এমন কথা কখনোই বলতে পারা যায় না।