অন্যতম প্রিয় একটি বই (এই নিয়ে দুই বন্ধুর সংলাপ)
|
শ্রীতমা : ‘আরণ্যক’ পড়লাম। দারুণ লাগল। তুমিও তো পড়েছ?
কৃপা : হ্যাঁ, লবটুলিয়া বইহার, সরস্বতী কুন্ডী, রাজু পাঁড়ে-সবই যেন চিরনতুন, একেবারে অন্যরকম।
শ্রীতমা : এই উপন্যাসে প্রকৃতিপ্রেমিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিবিড়ভাবে খুঁজে পেলাম, তাই না। এই বইটি মা আমায় দিয়েছিলেন গত জন্মদিনে, তখন পড়িনি। এখন বারবার পড়ছি, মনে হচ্ছে যেন অরণ্যের রূপ-রস-গন্ধ বাড়ি বসেই পেয়ে যাচ্ছি।
কৃপা: ঠিক বলেছ। তোমার সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে পড়ল ভিয়ো লতা বা ভোমরা লতার কথা। জানো তো, এইখানেই প্রথম বনেশ পাখির নাম শুনেছি। পরে অবশ্য চিড়িয়াখানায় দেখেছি। তবে আরণ্যক পড়লেই বোঝা যায় গহন প্রকৃতি কীভাবে একট চরিত্র হয়ে ওঠে ও মানুষের মনকে বারবার ব্যাকুল করে তোলে।
শ্রীতমা: সত্যিই, প্রকৃতির অসাধারণ বর্ণনা আমায় মুগ্ধ করেছে। তবে, মাঝে মাঝে ভূত, পরলোক ইত্যাদি অংশ একটু কেমন যেন লাগল। কিন্তু টাঁড়বারো আমার ভালো লেগেছে।
কৃপা : আসলে ওই সমস্ত কিছু নিয়েই তো প্রকৃতি, মানুষের অনুভূতির জগৎ। তাই না। আচ্ছা টাড়বারো ছাড়া আর কাদের ভালো লাগল?
শ্রীতমা : ভালো লেগেছে আরণ্যকের মানুষদের। দোবরু পান্নার ব্যক্তিত্ব, ভানুমতীর আতিথেয়তা। সবচেয়ে কোন অংশটি আমায় ভাবিয়ে স্কুলছে জানো? লেখকের ইতিহাসচেতনা ও মানবপ্রীতি। দোবস্তু পান্নার সঙ্গে তার পূর্বপুরুষের সমাধি। তবে জ্যোৎস্না রাতে সরস্বতী কুন্ডীর বর্ণনা আজও আমাকে কল্পলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়।
কৃপা : আমাকেও। জ্যোৎস্নালোকে ঘোড়ায় চেপে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে যাবার বর্ণনাটি আমার স্পষ্ট মনে আছে। পথের পাঁচালী যেমন অপুর পথচলার কাহিনি, এই উপন্যাসটি হল সত্যচরণের অভিজ্ঞতার ফসল। এক অনবদ্য উপন্যাস তাই তো।