সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্রাজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্রাজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো

সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্রাজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা দাও। সাম্রাজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।

ভূমিকা

সাম্রাজ্যশব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Empire’ ইংরেজি ‘Empire’ শব্দটি লাতিন শব্দ Imperium থেকে এসেছে, যার অর্থ হলকর্তৃত্ব’ (authority) বাশক্তি’ (power) সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা
প্রসার ঘটে রাজতন্ত্রকে কেন্দ্র করে।

সাম্রাজ্যের সংজ্ঞা

বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ঐতিহাসিকগণসাম্রাজ্যেরসংজ্ঞা দিয়েছেন।

প্রচলিত সংজ্ঞা

i. যখন কোনো ভূখণ্ডের শাসকসম্রাটউপাধি ধারণ করেন, তখন তার অধীনস্থ রাষ্ট্রকে সাম্রাজ্য বলা হয়।

ii. সাম্রাজ্য হল কোনো শাসকের নেতৃত্বাধীন সেই ভৌগোলিক অঞ্চল যেখানে শাসক সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করে রাষ্ট্রের সীমানার প্রসার ঘটায়।

iii. কোনো শক্তিশালী রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের অধীনস্থ সুবিশাল রাষ্ট্রকে সাম্রাজ্য বলে।

রাজনৈতিক সংজ্ঞা

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সাম্রাজ্য বলতে ভৌগোলিকভাবে বিস্তৃত বিভিন্ন রাজ্য জাতির সুসংবদ্ধ
একককে বোঝায়, যেখানে শাসনকার্য পরিচালনা করে সম্রাটসাম্রাজ্ঞী অথবা ক্ষুদ্র একটি শাসকশ্রেণির গোষ্ঠী।

Oxford Dictionary-এর সংজ্ঞা

শাসক শাসিতের ব্যবধানের উপর গুরুত্ব দিয়ে The Oxford English Reference Dictionary সাম্রাজ্যের
সংজ্ঞা দিয়েছেন— “সাম্রাজ্য হল রাজনৈতিক সামরিক ভিত্তিতে গঠিত ভূখণ্ডে সেই জনসমষ্টি যারা সংস্কৃতিগত জাতিগতভাবে শাসকগোষ্ঠী থেকে পৃথক

সাম্রাজ্যের বৈশিষ্ট্য

সাম্রাজ্যের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি হল

i. শাসকের সাম্রাজ্যবাদী নীতির অনুকরণ

সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শাসকের সাম্রাজ্যবাদী
নীতি অনুসরণ করা। শাসকশ্রেণি সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করার ফলেই বিশ্বের প্রাচীনতম সাম্রাজ্যগুলির উদ্ভব প্রসার ঘটেছিল।
কোনো শক্তিশালী রাষ্ট্র ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দখল করেই সুবিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল।

ii. প্রধান শাসকের চূড়ান্ত ক্ষমতা

সাম্রাজ্যের অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলসাম্রাজ্যের প্রধান শাসক বা সম্রাট রাষ্ট্রের
চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। সাম্রাজ্যের শাসনকার্যে জনসাধারণের ইচ্ছাঅনিচ্ছার কোনো মূল্য ছিল না। সম্রাটের ইচ্ছানুসারেই রাষ্ট্র পরিচালিত হত। সম্রাটগণ অনেক সময় নিজেদের ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে প্রচার করতেন এবং প্রজাদের উপর কঠোর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিতেন। সাম্রাজ্যে জনগণের প্রতিবাদ বা বিদ্রোহ করার অধিকার সম্রাট স্বীকার করতেন না।

iii. বিশাল আয়তন

সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ একটি বৈশিষ্ট্য হল এর বিশাল আয়তন। ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলি দীর্ঘকাল ধরে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে ধারাবাহিকভাবে বহু রাষ্ট্রকে পরাজিত করে। এই পরাজিত রাষ্ট্রগুলির ভূখণ্ড দখল করেই সাম্রাজ্যের আয়তন বিশাল হয়ে ওঠে।

iv. বিভিন্ন জাতির অস্তিত্ব

সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্রাটের জাতি সাম্রাজ্যে বসবাসকারী
মানুষের জাতি পৃথক হয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করলেও সম্রাটকে আধুনিক যুক্তরাষ্ট্রের কাঠামোর সঙ্গে এক করে দেখা
ঠিক নয়।

v. বিভিন্ন রাজ্যের সমন্বয়

সাম্রাজ্য হল কোনো একটি কর্তৃপক্ষের অধীনে কতকগুলি প্রদেশ বা রাজ্যের জোট। যেমন সম্রাট আকবরের সাম্রাজ্যে 15টি প্রদেশ ছিল, যথাদিল্লি, আগ্রা, অযোধ্যা, আমেদাবাদ, আজমির, আহম্মদনগর, বাংলা, বিহার প্রভৃতি।

vi. রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্র

সাম্রাজ্যের শাসন সাধারণত পরিচালিত হত বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র বা অভিজাততন্ত্রের অধীনে।

vii. ভিন্ন উপাদান

জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম সংস্কৃতির উপাদানের সংমিশ্রণে সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে এবং এই উপাদানগুলির মধ্যে যথেষ্ট বিভেদ ছিল।

আরও পড়ুনশৈশবের স্মৃতি রচনা

Leave a Comment