মাধ্যম ও অমাধ্যম অনুমান কাকে বলে? দৃষ্টান্তসহ মাধ্যম ও অমাধ্যম অনুমানের পার্থক্য করো। |
মাধ্যম অনুমান:
যে অনুমানে দুই বা ততোধিক হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, সেই অনুমানকে বলে মাধ্যম অনুমান (Mediate Inference)। যথা-
সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব (A)
সকল কবি হয় মানুষ (A)
∴সকল কবি হয় মরণশীল জীব (A)।
অমাধ্যম অনুমান :
যে অবরোহ অনুমানে একটিমাত্র হেতুবাক্য (Premise) থেকে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়, সেই অনুমানকে বলে অমাধ্যম অনুমান (Immediate Inference) | যথা-
কোনো কোনো ছাত্র হয় খেলোয়াড় (1)
∴ কোনো কোনো খেলোয়াড় হয় ছাত্র (I)।
অমাধ্যম ও মাধ্যম অনুমানের পার্থক্য:
উভয় প্রকার যুক্তিই অবরোহাত্মক (Deductive) যুক্তি, যেখানে সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যের তুলনায় কখনও ব্যাপকতর হয় না; তবে হেতুবাক্যের সমব্যাপক হতে পারে। অমাধ্যম ও মাধ্যম যুক্তির পার্থক্যটি ওই ‘মাধ্যম’ ও ‘অমাধ্যম’-এই কথা দুটির মধ্যেই নিহিত আছে।
(১) হেতুবাক্যের সংখ্যা
অমাধ্যম অনুমানে একটিমাত্র হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। যেমন–
সকল মানুষ হয় মরণশীল (A)
∴ কোনো কোনো মরণশীল প্রাণী হয় মানুষ (I)।
মাধ্যম অনুমানে দুই বা ততোধিক হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়। যেমন–
সকল মানুষ হয় বুদ্ধিমান (A)
সকল ভারতীয় হয় মানুষ (A)
∴ সকল ভারতীয় হয় বুদ্ধিমান (A)।
(২) পদের সংখ্যা
অমাধ্যম অনুমানে কেবল দুটি পদ থাকে- (১) উদ্দেশ্য পদ (২) বিধেয় পদ।
যেমন- কোনো কোনো ফল হয় মিষ্টি (1)
∴ কোনো কোনো মিষ্টি (দ্রব্য) হয় ফল (I)।
ফল = উদ্দেশ্য পদ
মিষ্টি = বিধেয় পদ
মাধ্যম অনুমানে তিনটি বা তার বেশি পদ থাকে- (১) পক্ষপদ (২) সাধ্যপদ এবং (৩) হেতুপদ। যেমন-
সকল ব্যবসায়ী হয় ধনী ব্যক্তি (A)
রোহিত হয় ব্যবসায়ী (A)
রোহিত হয় ধনী ব্যক্তি (A)
ব্যবসায়ী-হেতুপদ, ধনী ব্যক্তি-সাধ্যপদ, রোহিত-পক্ষপদ
(৩) বচনের সংখ্যা
অমাধ্যম অনুমান কেবল দুটি বচন দিয়ে গঠিত হয়। যেমন-
আশ্রয়বাক্য : সকল শিক্ষিত ব্যক্তি হয় জ্ঞানী (A)।
সিদ্ধান্ত: কোনো কোনো জ্ঞানী ব্যক্তি হয় শিক্ষিত (I)।
মাধ্যম অনুমান দুই-এর অধিক বচন দিয়ে গঠিত হয়। যেমন–
প্রধান আশ্রয়বাক্য: কোনো মানুষ নয় পশু (E)।
অপ্রধান আশ্রয়বাক্য: সকল বাঘ হয় পশু (A)।
সিদ্ধান্ত: কোনো বাঘ নয় মানুষ (E)।
(৪) যুক্তির প্রকৃতি
অমাধ্যম অনুমান কেবল দুটি নিরপেক্ষ বচন দিয়ে গঠিত হয়। যেমন-
কোনো কোনো আম হয় মিষ্টি (1)
∴ কোনো কোনো মিষ্টি ফল হয় আম (I)।
মাধ্যম অনুমান নিরপেক্ষ বা সাপেক্ষ অথবা নিরপেক্ষ ও সাপেক্ষ উভয় বচন দিয়ে গঠিত হয়। যেমন –
সাপেক্ষ বচন: যদি বৃষ্টি হয় তবে মাটি ভিজবে
নিরপেক্ষ বচন : বৃষ্টি হয়েছে।
নিরপেক্ষ বচন : মাটি ভিজেছে।
(৫) সিদ্ধান্তের নিঃসরণ
অমাধ্যম অনুমানে সিদ্ধান্তটি একটি হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।
মাধ্যম অনুমানে সিদ্ধান্ত নিঃসরণের মাধ্যম হিসেবে একাধিক হেতুবাক্যের প্রয়োজন হয়।
(৬) সিদ্ধান্তের প্রকৃতি
অমাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্তে কোনো নতুনত্ব থাকে না। সিদ্ধান্তে হেতুবাক্যের পুনরাবৃত্তি হয়।
মাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্তে সর্বদাই নতুনত্ব থাকে, মাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যের পুনরাবৃত্তি নয়।
(৭) ক্ষেত্রগত বৈষম্য
অমাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্তটি একটিমাত্র আশ্রয়বাক্য থেকে নিঃসৃত হয় বলে এর ক্ষেত্র সংকীর্ণ।
মাধ্যম অনুমানের সিদ্ধান্তটি একাধিক হেতুবাক্য থেকে নিঃসৃত হয় বলে এর ক্ষেত্র অমাধ্যম অনুমানের তুলনায় ব্যাপক হয়।
(৮) ব্যাবহারিক গুরুত্ব
অমাধ্যম অনুমানে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মাধ্যম অনুমানে আকারগত বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
(৯) শ্রেণিবিভাগ
অমাধ্যম অনুমান নয় প্রকারের হয়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-আবর্তন, বিবর্তন, অন্তরাবর্তন ইত্যাদি।
মাধ্যম অনুমান দুই প্রকারের হয়- (১) ন্যায় এবং (২) অ-ন্যায়।