‘মহাজনপদ’ কাকে বলে? ‘জনপদ ও ‘মহাজনপদ’-এর পার্থক্যগুলি লেখো। |
মহাজনপদ
:
খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে শক্তিশালী জনপদগুলি দুর্বল ‘জনপদ’কে যুদ্ধে পরাজিত
করে দুই বা তার বেশি
জনপদ নিয়ে এক একটি বৃহৎ
জনপদ গড়ে ওঠে। এই বৃহৎ জনপদগুলিকে
‘মহাজনপদ’ বলা হয়। ‘মহা’ শব্দটির অর্থ বৃহৎ এবং জনপদ হল ‘কোনো নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে কোনো উপজাতি গোষ্ঠীর প্রথম পদার্পণ।‘ এই অর্থে মহাজনপদ
হল প্রাচীন ভারতের ‘বৃহৎ রাজ্য‘।
তথ্য
:
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ ‘পুরাণ’, বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ ‘অঙ্গুত্তর নিকায়’ জৈন্য ধর্মগ্রন্থ ‘ভগবতী সূত্র‘ থেকে আমরা এই মহাজন পদগুলির
কথা জানতে পারি। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠশতকে ভারতে ষোলোটি জনপদের অস্তিত্ব ছিল। এগুলিকে একত্রিতভাবে ষোড়শ মহাজনপদ বলা হয়।
এই
ষোলোটি মহাজনপদ হল—কাশী, কোশল,
অঙ্গ, মগধ, কুরু, পাঞ্চাল, অবন্তী, মৎস্য, বৃজি, মল্ল, চেদি, বৎস, অস্মক, সুরসেন, গান্ধার, কম্বোজ। এই ষোলোটির মধ্যে
আবার অবন্তী, বৎস, কোশল, মগধ, কাশী, অঙ্গ বিশেষ শক্তিশালী ছিল।
জনপদ
ও মহাজনপদের মধ্যে পার্থক্য :
জনপদ ও মহাজনপদের মধ্যে
উদ্ভবের সময়কাল, আয়তন, শাসন কাঠামো, সৈন্যবাহিনী ও করব্যবস্থায় বিশেষ
পার্থক্য লক্ষ করা যায়।
i. উদ্ভবের
সময়গত পার্থক্য :
জনপদগুলির উদ্ভব হয় খ্রিস্টপূর্ব 1500 অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব 600 অব্দে মহাকাব্যের যুগে। কিন্তু মহাজনপদগুলির উদ্ভব হয় জনপদগুলির উদ্ভবের অনেক পরে খ্রিস্টপূর্ব 600 অব্দে।
ii. উদ্ভবের
প্রক্রিয়ার পার্থক্য :
বৈদিক যুগের জনপদগুলি দীর্ঘ সংগ্রামের পর মহাকাব্যের যুগে
জনপদে পরিণত হয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে অবিরাম যুদ্ধের ফলে বৃহৎ রাষ্ট্ররূপে ‘মহাজনপদ’গুলির উত্থান ঘটে।
iii. আয়তনগত
পার্থক্য :
মহাজনপদগুলির আয়তন অপেক্ষা জনপদগুলির আয়তন ছিল অনেক ছোটো। অপরদিকে জনপদগুলির আয়তন অপেক্ষা মহাজনপদগুলির আয়তন ছিল অনেক বড়ো।
iv. জনসংখ্যার
পার্থক্য :
আয়তনে জনপদগুলি ছোটো হওয়ার ফলে জনসংখ্যাও কম ছিল। অপরদিকে
আয়তন বৃহৎ হওয়ার ফলে মহাজনপদগুলির জনসংখ্যা জনপদের অপেক্ষা অনেক বেশি ছিল।
v. রাজনৈতিক
চেতনার পার্থক্য :
জনপদগুলির সময়কালে ভারতীয়দের রাজনৈতিক চেতনা ছিল প্রাথমিক স্তরে। কিন্তু মহাজনপদের যুগে ভারতীয়দের রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষ বিশেষভাবে ঘটেছিল।
vi. সামরিক
ক্ষমতার পার্থক্য :
জনপদগুলির স্থায়ী সৈন্যবাহিনী ছিল না। যুদ্ধের সময় সৈন্যবাহিনী গঠন করা হত। তা ছাড়া জনপদগুলির
সৈন্যসংখ্যা ছিল কম। অপরদিকে মহাজনপদগুলি স্থায়ী সৈন্যবাহিনী গঠন করেছিল এবং জনপদগুলি অপেক্ষা মহাজনপদগুলির সৈন্যসংখ্যা ছিল অনেক বেশি।
vii. অর্থনৈতিক
পার্থক্য :
জনপদগুলিতে করব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। শাসককে জনগণ কিছু স্বেচ্ছাকর ও কিছু দ্রব্য
দান করত। ফলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল দুর্বল। অপরদিকে মহাজনপদগুলিতে সুনির্দিষ্ট করব্যবস্থা গড়ে ওঠে। জনগণ শাসককে বা রাজাকে নিয়মিত
কর দিত। ফলে মহাজনপদগুলির অর্থনৈতিক কাঠামো ছিল শক্তিশালী।
viii. সম্পদের
পার্থক্য :
জনপদগুলির সম্পদ নির্ধারণ করা হত গোরুর সংখ্যার
ওপর ভিত্তি করে। জনপদের প্রধান সম্পদ ছিল গোরু। অপরদিকে মহাজনপদগুলিতে কৃষির মাধ্যমে অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। ফলে উৎপাদিত শস্য সম্পদে পরিণত হয়। অবশ্য মহাজনপদের যুগে গোরুও অন্যতম প্রধান সম্পদ ছিল।
ix. শাসকের
ক্ষমতা ও চরিত্রের পার্থক্য
:
জনপদগুলিতে
শাসক বা ‘জনপদিনের’ ক্ষমতা ছিল কম। তবে জনপদের শাসক শ্রেণি ছিল জনগণের পিতৃতুল্য ও রক্ষাকর্তা। কিন্তু
মহাজনপদগুলির শাসকশ্রেণির ক্ষমতা ছিল বেশি এবং শাসকশ্রেণি ছিল স্বৈরাচারী।