মধ্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো |
ভূমিকা :
খাদ্যসংগ্রহকারী পুরা বা প্রাচীন প্রস্তরের যুগ ও খাদ্য উৎপাদনকারী নব্য প্রস্তর যুগের মধ্যবর্তী সময়কে ‘মধ্য প্রস্তর যুগ’ বলা হয়। আজ থেকে 17000 বছর আগে অর্থাৎ জিশুখ্রিস্টের জন্মের 15000 বছর আগে এই যুগের সূচনা হয় এবং সমাপ্তি ঘটে আজ থেকে 12000 বছর আগে অর্থাৎ 10000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
পটভূমি :
প্লেইস্টোসিন যুগের শেষ পর্বে সর্বশেষ বরফ যুগের অবসানের পর ভূপ্রকৃতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রের জলের স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। পূর্ব ইউরোপের কিছু অংশ বিশেষত বলকান অঞ্চল ও উত্তর আফ্রিকা মরুভূমিতে পরিণত হয়। অন্যদিকে ইউরোপের তুন্দ্রা অঞ্চল বনভূমিতে পরিণত হয়। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পারার জন্য বহু প্রাণী এবং বেশ কিছু প্রজাতির মানুষ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বেঁচে থাকা অবশিষ্ট মানব প্রজাতি নতুন একটি সংস্কৃতির জন্ম দেয়। এর ফলে মধ্য প্রস্তর যুগের সূচনা হয়।
হাতিয়ার :
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষের হাতিয়ারগুলি ছিল ক্ষুদ্র ও প্রাচীন প্রস্তর যুগের থেকে উন্নত। পাথর ছাড়াও এই সময়ে মানুষ জীবজন্তুর হাড় ও দাঁত দিয়ে বিভিন্ন হাতিয়ার তৈরি করে। বর্শা, তিরধনুক, হারপুন, বড়শি, চারকোণা ছুরি প্রভৃতি হাতিয়ার ব্যবহার করত। এই হাতিয়ারগুলি আকারে ক্ষুদ্র ছিল বলেই এই যুগকে ‘ক্ষুদ্র প্রস্তরের যুগ’ (Micro- lithic Age) বলা হয়।
জীবিকা :
মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল বনের ফলমূল সংগ্রহ করা, বন্যপশু শিকার করা ও মাছ | ধরা। এযুগে মানুষ পশুপালন করতে শেখে। খাদ্য : এই যুগের মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল বনের ফলমূল, হরিণ, শূকর, গোরু, ভেড়া প্রভৃতি পশুর মাংস, মাছ ও শামুক।
বাসস্থান :
মধ্য প্রস্তর যুগের মানুষ ছিল যাযাবর প্রকৃতির। তবে এই যুগের শেষভাগে মানুষ লতাপাতা, গাছের ডাল এবং পশুর চামড়া দিয়ে বাসস্থান তৈরির কৌশল আয়ত্ত করে।
যানবাহন :
মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষ যানবাহনের ব্যবহার শেখে। বরফের ওপর চলাচলের জন্য কুকুরে টানা স্লেজ গাড়ি এবং জলপথে চলাচলের জন্য গাছের গুঁড়ি দিয়ে নৌকা তৈরি করে।
পোশাক-পরিচ্ছদ :
এই সময়ে মানুষ গাছের ছাল ও পশুর চামড়ার পোশাক পরত। চামড়ার পোশাকগুলি ছিল ছুঁচ দিয়ে সেলাই করা।
ধর্মীয় জীবন :
মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষ ধর্মীয় কারণে কোনো অলৌকিক শক্তিকে প্রসন্ন করার জন্য গুহার দেয়ালে বৃত্তাকার, চতুষ্কোণ, ত্রিকোণ আকৃতির চিত্র আঁকত। বিভিন্ন ধরনের হাতিয়ার, হরিণের শিং ও মাথা, মাছ ধরার ছবিও গুহাগুলিতে ছিল।
সভ্যতার প্রাপ্তিস্থান :
সুইডেন, ফিনল্যান্ড, রাশিয়া প্রভৃতি পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে এবং ভারতবর্ষের গুজরাট, রাজস্থান ও পঞ্জাবে মধ্য প্রস্তর যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে।
মূল্যায়ন :
মধ্য প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। এই ঘটে। এই যুগে মানুষ বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে উন্নত ধারালো হাতিয়ার তৈরি করে। কুকুরকে পোষ মানায়। উয়তা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ম্যামথ, লোমশ গন্ডার প্রভৃতি শীতল আবহাওয়ার প্রাণীগুলি লুপ্ত হয়ে যায়। বল্গা হরিণ উত্তরমেরু অঞ্চলের দিকে চলে যায়। ফলে মানুষের খাদ্যাভাসের পরিবর্তন ঘটে। মাছ, শামুক, ঝিনুক মানুষের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।