|
বাক্য ও বচনের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো। |
(১) সংজ্ঞা
বাক্য হল কতকগুলি শব্দের সমষ্টি, যার সাহায্যে বক্তা তার মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে।
বচন হল দুটি পদের (উদ্দেশ্য ও বিধেয়) মধ্যে কোনো একটির সম্বন্ধে স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি।
(২) গঠন
বাক্যের দুটি অংশ- উদ্দেশ্য ও বিধেয়।
বচনের চারটি অংশ-পরিমাণক, উদ্দেশ্য, বিধেয় ও সংযোজক।
(৩) আকার
বাক্যের কোনো নির্দিষ্ট আকার নেই। একটি, দুটি এমনকি বহু শব্দ দিয়েও বাক্য গঠিত হতে পারে। যেমন- (ক) যাও (খ) তুমি যাও (গ) তুমি নিয়ে যাও (ঘ) তুমি কাল নিয়ে যাবে ইত্যাদি।
বচনের নির্দিষ্ট আকার আছে। যেমন- (ক) কোনো মানুষ নয় অমর। (খ) কোনো মহিলা নয় পুরুষ ইত্যাদি।
(৪) প্রকারভেদ
বাক্য বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে। যেমন- জিজ্ঞাসাসূচক বাক্য, ঘোষক বাক্য, নির্দেশসূচক বাক্য প্রভৃতি।
বচন কেবল ঘোষকবাক্য হয়। ঘোষকবাক্য ছাড়া আর কোনো প্রকার বাক্যই বচন হিসেবে গ্রাহ্য নয়।
(৫) সত্য মিথ্যার গুরুত্ব
বাক্যের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ের প্রশ্ন ওঠে না।
বচনের ক্ষেত্রে সত্য-মিথ্যা নির্ণয়ের প্রশ্ন ওঠে। অবরোহ অনুমানে প্রধানত আকারগত সত্যতা এবং আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় প্রকার সত্যতার দিকে লক্ষ রাখা হয়।
(৬) কালের গুরুত্ব
একটি বাক্য অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ- যে-কোনো কালের হতে পারে।
বচন কেবল বর্তমান কালের হয়।
(৭) নঞর্থক চিহ্নের ব্যবহার
ব্যাকরণে নঞর্থক বাক্যের নঞর্থক চিহ্নটি বিধেয়র অংশরূপে গণ্য হয়।
যুক্তিবিজ্ঞানসম্মত বচনে নঞর্থক চিহ্নটি সংযোজকের অংশরূপে গণ্য হয়।
(৮) ব্যবহারিক গুরুত্ব
বাক্য সাহিত্যে ব্যবহৃত হয়।
বচন কেবল যুক্তির অবয়ব হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
(৯) ব্যাপ্তি
বাক্যের ব্যাপ্তি বচনের চেয়ে অনেক বেশি। এই কারণে বলা হয় সমস্ত বচনই বাক্য কিন্তু সমস্ত বাক্য বচন নয়।
বচনের ব্যাপ্তি বাক্যের চেয়ে অনেক কম।
(১০) গুণ ও পরিমাণের গুরুত্ব
বাক্যের ক্ষেত্রে সর্বদা গুণ ও পরিমাণের উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। যেমন- (ক) মানুষ মরণশীল (খ) মানুষ সৎ নয়।
বচনে গুণ ও পরিমাণ অবশ্যই উল্লেখ করতে হয়। যেমন- কোনো কোনো মানুষ হয় অসৎ- এই বচনটির গুণ সদর্থক এবং পরিমাণ বিশেষ।
(১১) উপস্থাপন
বাক্যের অন্তর্গত অংশগুলি উপস্থাপনের কোনো নিয়ম নেই। এগুলিকে নিজেদের ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যায়।
বচনের অন্তর্গত অংশগুলিকে নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করা যায় না। সেগুলিকে যুক্তিবিজ্ঞানের নিয়ম অনুসারে সাজাতে হয়।