নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো। এই যুগের গুরুত্ব লেখো। অথবা, নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের জীবনযাত্রার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো। এই যুগের গুরুত্ব লেখো।
নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য গুলি লেখো। এই যুগের গুরুত্ব লেখো।

ভূমিকা : 

প্রস্তর যুগের শেষ পর্বকে নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age) বলা হয়। মধ্য প্রস্তর যুগের অবসানের পর এই যুগের সূচনা হয়। এই যুগের সূচনা হয় 10000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে এবং সমাপ্তি ঘটে 5000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। তবে ভারতে এই যুগের সূচনা হয় 6000 খ্রিস্টপূর্বাব্দে। নব্য প্রস্তর যুগে আদিম মানবের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটে। খাদ্য সংগ্রহকারী মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।

জীবনযাত্রা

হাতিয়ার : 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের তৈরি হাতিয়ারগুলি ছিল উন্নত, ধারালো ও হাতলযুক্ত। মাটি কাটার জন্য কোদাল, গাঁইতি, ফসল কাটার জন্য কাস্তে, হামানদিস্তা, শিলনোড়া, জাঁতা, বাটালি, হাতুড়ি, নেহাই প্রভৃতি হাতিয়ার আবিষ্কার করে ।

জীবিকা : 

নব্য প্রস্তর যুগে আদিম মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করতে শেখে।
i. কৃষিকাজ : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কৃষিকাজের কৌশল আবিষ্কার করে। প্রথমে তারা যবের চাষ শুরু করে। ফলে খাদ্যের অনিশ্চয়তা দূর হয় এবং মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।
ii. পশুপালন : এই সময়ে কৃষির প্রয়োজনে মানুষ পশুপালন করতে শেখে। পশুকে ব্যবহার করে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি করে। গোরু, মহিষ, ছাগল, কুকুর প্রভৃতি পশু এই যুগে তারা পালন করত।

স্থায়ী বাসস্থান তৈরি : 

নব্য প্রস্তর যুগে কৃষির প্রয়োজনে ফসলের খেতের ধারে গাছের ডালপালা, লতাপাতা দিয়ে কুটির বা গৃহ নির্মাণ শুরু করে। এর ফলে তাদের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে। বসত অঞ্চলগুলি ধীরে ধীরে গ্রামে পরিণত হয়।

যানবাহন তৈরি : 

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ চাকাযুক্ত গাড়ি তৈরি করে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়। পালতোলা নৌকা আবিষ্কার করে জলপথকে সুগম করে।

আগুন ও অন্যান্য আবিষ্কার : 

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ কৃত্রিম আগুন তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে। কুমোরের ‘ঢাকা’ আবিষ্কার করে মৃৎশিল্পের উন্নতি ঘটায়। পাথর সাজিয়ে সমাধি মন্দির নির্মাণ করে। কাপড় বুনতে শেখে। আগুনে পোড়ানো মৃৎপাত্র তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে।

রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনা : 

নব্য প্রস্তর যুগেই রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্ম হয়। গোষ্ঠীগুলি স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করলে গোষ্ঠীর নেতার পদটিও স্থায়ী হয়। কৃষিজমি ও পশু নিয়ে গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বিবাদ লেগেই থাকত। ফলে গোষ্ঠীর জয়লাভের জন্য গোষ্ঠীর নেতা গোষ্ঠীর ওপর বিভিন্ন নিয়মকানুন চাপিয়ে দিত । ফলে একটি প্রশাসনিক কাঠামোর সৃষ্টি হয়।

শ্রমবিভাজন : 

নব্য প্রস্তর যুগে নারী ও পুরুষের শ্রম বিভাজন তৈরি হয়। পুরুষরা হাতিয়ার তৈরি, শিকার, পশুপালন ও গৃহনির্মাণের কাজ করত। অপর দিকে মহিলারা কৃষিকাজ, কাপড় বোনা, মাটির পাত্র নির্মাণ, গৃহস্থালির কাজ ও সন্তান পালন করত।

অর্থনৈতিক জীবন : 

এযুগের মানুষের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বিনিময় প্রথার মাধ্যমে লেনদেন শুরু হয়।

ভাষার উন্নতি : 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের মধ্যে মেলামেশা বৃদ্ধি পায়। সামাজিক সম্পর্ক ও ভাববিনিময়ের ফলে ভাষার উন্নতি ঘটে। সেমেটিক, হেমেটিক প্রভৃতি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার জন্ম এই যুগেই হয়।

ধর্মবিশ্বাস : 

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নব্য প্রস্তর যুগের আদিম মানুষ প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তিকে দেবতা হিসেবে পুজো করা শুরু করে। পাথর কেটে দেবদেবীর মূর্তি নির্মাণ এ যুগেই শুরু হয়। মেসোপটেমিয়া ও ক্রিটে এইরকম দেবদেবীর মূর্তির নিদর্শন পাওয়া গেছে।

গুরুত্ব : 

মানবসভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় নব্য প্রস্তর যুগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও মধ্য প্রস্তর যুগের থেকে নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল অনেক কম হলেও এই যুগে মানব সভ্যতার বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটে। এই কারণে ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড এই অগ্রগতিকে নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলেছেন।

i. মানবসমাজের চরিত্রগত পরিবর্তন : 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করার কৌশল আবিষ্কার করে। ফলে খাদ্যসংগ্রহকারী মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।

ii. হাতিয়ারের উন্নতি : 

নতুন পাথরের যুগের মানুষ মসৃণ ধারালো হাতলযুক্ত হাতিয়ার নির্মাণ করে। ফলে হাতিয়ারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় ।

iii. নতুন আবিষ্কার : 

এই যুগে মানুষ কৃত্রিম আগুন, চাকা, চাকাযুক্ত গাড়ি, পালতোলা নৌকা, কাপড় বোনার কৌশল, আগুনে পোড়া মৃৎপাত্র তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে।

iv. ভাষার ব্যবহার : 

এই যুগে ভাষার উন্নতি ঘটে।

v. স্থায়ী বাসস্থান : 

নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে, ফলে যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে।

vi. রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্রম : 

স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠার পর গোষ্ঠীপতি ধীরে ধীরে শাসকে পরিণত হন ।

Leave a Comment