কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা 400+ শব্দে | Kanyashree Prakalpa Rachana

কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা

কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা
কন্যাশ্রী প্রকল্প রচনা

ভূমিকা

সমাজ বদলায়। বিজ্ঞানের অভিষেক হয়। বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই বিজ্ঞানের বিজয় অধিকার। মানুষ ছুটে চলে গ্রহ-গ্রহান্তরে। তবু প্রদীপের তলাতেই অন্ধকার ঘন হয়। অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অনগ্রসর তার কালিমাও বেড়ে চলে। সমাজে উপেক্ষিত হয় নারীর মর্যাদা। আজও লাখো লাখো নারীর স্বপ্ন-সাধ অকালে শেষ হয়ে যায়। পুরুষশাসিত সমাজের অবহেলায়, উপেক্ষায় এখনও হাজারে হাজারে নারীর জীবন অন্ধকারেই হারিয়ে যায়। কেউ তার খোঁজও রাখে না। আজও নারী লাঞ্ছনার শেষ হয় না। জন্মলগ্ন থেকেই শিশুকন্যারা শুধু কন্যা বলেই দুর্ভাগ্যের শিকার। অথচ সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা থাকে অনেকটাই; তা কখনও প্রকাশ্যে বা পরোক্ষে। তাই প্রয়োজন নারীশিক্ষার অগ্রগতির মধ্য দিয়ে নারীজাগরণ ঘটানো। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ তারই এক শক্ত ভিত্তি।

নারী শিক্ষা

নারীশিক্ষা প্রাচীনকালে যেভাবে ছিল তার পরিচয় পাওয়া যায় গার্গী, মৈত্রিয়ী, খনা প্রমুখ নারীদের মধ্য দিয়ে। তাঁদের শিক্ষা, জ্ঞান, পাণ্ডিত্য আজও মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। তারপর মধ্যযুগে নারীরা সম্পূর্ণভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। পুরোপুরি তমসাবৃত হয়ে পড়ে। পরবর্তীকালে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মতো মনীষীরা নারীদের গুরুত্ব বুঝে তাদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে সচেষ্ট হন। তাই বর্তমানে নারীরা শিক্ষিত হয়ে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে নিজেদেরকে প্রকাশ করতে সচেষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সে সংখ্যা খুবই কম। বর্তমানেও নাবালিকা কন্যার বিবাহ হয়ে চলেছে। ফলে তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে।

কন্যাশ্রী প্রকল্পের রূপ

বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ গ্রহণ করে নারীদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। ‘কন্যাশ্রী প্রকল্পে’র মাধ্যমে নারীরা, যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮, তারা সরকারের কাছ থেকে বছরে ৫০০ টাকা হারে বৃত্তি পাবে। আর তাদের বয়স যখন ১৮-১৯ হবে এবং উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে তখন তারা এককালীন ২৫,০০০ টাকা অনুদান পাবে। তবে জন্ম হতে হবে ০১/০৪/১৯৯৫-এর পরে। এ ছাড়া আরও কিছু শর্ত সরকার আরোপ করেছে। তা হল (১) ছাত্রীর বাবা / মায়ের বার্ষিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার কম থাকতে হবে। (২) যে-কোনো স্বীকৃত বিদ্যালয়ে পাঠরত থাকতে হবে। (৩) তবে বাবা / মা দুজনেই যদি মারা যান বা ছাত্রী যদি প্রতিবন্ধী হয় তাহলে আয়ের শর্তটি প্রয়োগ করা হবে না।

প্রকল্প সম্পর্কে আশা

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’টি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। প্রকল্পটির সূচনা হয়েছিল ২০১৩ সালে। প্রকল্পটির বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট। এই দিনটিকে ‘কন্যাশ্রী দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ এক প্রকল্প তা ভাবলেই কিছুটা অনুধাবন করা যায়। একদিকে নারীদের শিক্ষাকে সুনিশ্চিত করছে, অপরদিকে দারিদ্র্যের মধ্যে থাকা পরিবারকে অর্থনৈতিক ভিতকে সুদৃঢ় করছে আবার নারীদের অল্পবয়সে বিবাহ দিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা তাও রোধ হচ্ছে। নারীরা নিজেরা ছোটোখাটো কাজ করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে। নারীকেই অর্থাভাবের যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে নাবালিকা অবস্থায় বিয়ের পিড়িতে বসতে হত, তা কিন্তু আর হবে না বলে বিশ্বাস দৃঢ় করা যায়।

উপসংহার

‘কন্যাশ্রী প্রকল্প’ সরকারের এক সুনিশ্চিত পদক্ষেপ। তবে তার সঙ্গে কন্যার পিতা-মাতাকে সচেতন হতে হবে। কন্যাকে মনের দিক থেকে শক্তি জোগাতে পারেন বাবা-মাই । তাই সরকারের সঙ্গে বাবা-মাকে একজোট হয়ে চলতে হবে। তবে নারী সমাজ ঠিক ঠিক ভাবে অগ্রগতির দিকে এগিয়ে চলতে স্বচেষ্ট হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্পের গুরুত্ব।

Leave a Comment