আদিম মানুষের পরিযান বলতে কী বোঝো? আদিম মানুষের আন্তর্মহাদেশীয় পরিযানের কারণগুলি লেখো।

আদিম মানুষের আন্তর্মহাদেশীয় পরিযানের কারণগুলি লেখো।
আদিম মানুষের আন্তর্মহাদেশীয় পরিযানের কারণগুলি লেখো।

ভূমিকা : 

পৃথিবীতে আধুনিক মানুষের উদ্ভব ঘটে আফ্রিকা মহাদেশে। চার্লস ডারউইন ও অন্যান্য আধুনিক গবেষকরা আফ্রিকা মহাদেশকেই আদিম মানুষের জন্মস্থান বলে মনে করেন। তা ছাড়া আধুনিক মানুষ ও তাদের পূর্বপুরুষদের প্রাচীনতম নিদর্শনগুলি আফ্রিকা মহাদেশে পাওয়া গেছে। দীর্ঘকাল ধরে আদিম মানুষ আফ্রিকাতে বসবাস করে।

পরিযান-এর সংখ্যা : 

সুদীর্ঘকাল আফ্রিকার মাটিতে বসবাসের পর আদিম মানুষ খাদ্য ও অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশের সন্ধানে দূরদূরান্তের অজানা ভূখণ্ডের সন্ধানে যাত্রা করে এবং পৃথিবীর অন্যান্য মহাদেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। আদিম মানুষের এই অন্যান্য মহাদেশে গমনকে পরিযান (Migration) বা আন্তর্মহাদেশীয় পরিযান (Intercontinen – tal migration) বলা হয়। প্লেইস্টোসিন যুগে সমুদ্রের জল বরফে পরিণত হয়। আদিম মানব মহাসাগরীয় বরফের উপর হেঁটে গিয়ে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিযানের প্রমাণ : 

ডি এন এ (DNA) পরীক্ষার দ্বারা পরিযানের তত্ত্বটি প্রমাণিত হয়েছে। প্রথমে আফ্রিকার প্রাচীন জীবাশ্মগুলির DNA টেস্ট করা হয়। এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের DNA টেস্ট করা হয়। DNA টেস্টের পর দেখা যায় যে আদিম মানুষের DNA-এর বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষের DNA-র বৈশিষ্ট্যগুলির প্রচুর সাদৃশ্য আছে। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আফ্রিকা মহাদেশ থেকেই আদিম মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিযানের কারণ : 

আদিম মানুষ তাদের জন্মভূমি আফ্রিকা ত্যাগ করে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ার পিছনে কতকগুলি কারণ ছিল। এই কারণগুলি হল—

i. খাদ্য সংকট : 

আদিম মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল বন্যপশুর মাংস ও বনের ফলমূল। প্লেইস্টোসিন যুগের শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়াতে আফ্রিকার বনভূমির পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে বন্যপশুর সংখ্যা কমে যায় এবং ফলমূলের জোগানও হ্রাস পায়। শিকার করার মতো পশুর সংখ্যা কমে গেলে খাদ্যের অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তাই শিকার ও খাদ্যসংগ্রহের জন্য আদিম মানুষ আফ্রিকা থেকে অন্য মহাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে।

ii. অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধান : 

প্লেইস্টোসিন যুগের বেশির ভাগ সময় জুড়ে পর্যায়ক্রমে হিমযুগ বা তুষার যুগ বিরাজ করেছিল। এই ঠান্ডা আবহাওয়া মানুষের জীবনযাপনের প্রতিকূল হয়ে ওঠে। আদিম মানুষ অনুকূল আবহাওয়ার সন্ধানে নতুন স্থানের উদ্দেশে যাত্রা করে। অনুরূপভাবে উযুগে আফ্রিকার আদিম মানুষ অনুকূল আবহাওয়ার খোঁজে অন্য স্থানে যাত্রা করে।

iii. স্থলভাগের ঐক্য স্থাপন : 

মহাসাগরের জলরাশি মহাদেশগুলিকে বিচ্ছিন্ন করে ঐক্যের বাধা সৃষ্টি করে। কিন্তু প্লেইস্টোসিন যুগে সমুদ্র, হ্রদ, নদনদীর জল শীতল হয়ে বরফে পরিণত হয়। কঠিন বরফ মহাদেশগুলির স্থলভাগগুলির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করে। মানুষ বরফের উপর হেঁটে একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে সক্ষম হয়।

iv অন্যান্য কারণ : 

আফ্রিকাতে আদিম মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে বসবাসের জন্য গুহার অপ্রতুলতা, গোষ্ঠী সংঘর্ষ, বন্যপশুর দলকে অনুসরণ প্রভৃতি কারণের ফলেও আদিম মানুষ একস্থান ছেড়ে অন্য স্থানের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। 

মূল্যায়ন : 

আদিম মানুষ পরিযানের ফলে আফ্রিকা থেকে বিভিন্ন মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি গোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে। প্রথম পর্যায়ে মানুষের খাদ্যের জোগাড় করা সহজ হয়।

Leave a Comment