সমাজজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব
“কত অজানারে জানাইলে তুমি,
কত ঘরে দিলে ঠাঁই দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই।”
–রবীন্দ্রনাথ
ভূমিকা :
বিজ্ঞানের জগতে দূরদর্শন এক অত্যাশ্চর্য আবিষ্কার। দূরদর্শন শব্দটির ইংরেজি অর্থ হল টিলিভিশন’। গ্রিক শব্দ ‘টেলি’, যার অর্থ ‘দূর’ আর ল্যাটিন শব্দ ‘ভিসিয়ো’ যার – অর্থ দৃশ্য; একসঙ্গে টেলিভিশন কথাটির অর্থ দূরকে যা দৃশ্যমান করে তোলে। এই দূরদর্শনের মাধ্যমে ঘর থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের কোনো দৃশ্যকে দেখা যায়। একই সঙ্গে শব্দও শোনা যায়। একই সঙ্গে দেখে ও শুনে মন আনন্দে ভরে ওঠে।
আবিষ্কারের প্রথম ধাপ :
১৯২২ খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী কর্ণ প্রথম বিদ্যুৎ তরঙ্গের মধ্য দিয়ে ছবি পাঠালেন ইটালি থেকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে। এরপর আমেরিকার বিজ্ঞানী রেঞ্জারের প্রচেষ্টায় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ছবি পাঠানো সম্ভব হল। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে স্কটল্যান্ডের বিজ্ঞানী জন লোগি বেয়ার্ড একটি জীবন্ত মানুষের ছবি বেতারের পর্দায় তুলে ধরতে সমর্থ হন। এভাবেই দূরদর্শন আবিষ্কৃত হয়। এরপর ক্রমোন্নতির পথে নিয়ে যান ভ্লাদিমির জোরিকিন ও ফিলো ফামসওয়ার্থ।
ভারতে ও কলকাতায় দূরদর্শন :
অবশেষে ভারতবর্ষের রাজধানী দিল্লির বুকে এল দূরদর্শন। সেদিনটি ছিল ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর। প্রথম প্রকাশ; পরিধি বেশি নয়। মাত্র ২৪ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ তার প্রচার। তবে কিছুদিনের মধ্যে তার ক্ষেত্র প্রসারিত হল। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ২ অক্টোবর উদ্বোধন হল মুম্বাই দূরদর্শনের। কলকাতায় দূরদর্শন কেন্দ্রের উদবোধন হয় ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর থেকে দিল্লির অনুষ্ঠান মাইক্রোওয়েভ লিংক-এর মধ্যস্থতায় সারা ভারতে দূরদর্শন সম্প্রসারিত হল।
দূরদর্শনের উপকারিতা :
একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেছে মানুষ। সভ্য নাগরিক জীবনের ঘটেছে নানান পরিবর্তন। দূরদর্শন সেই পরিবর্তনের অপরিহার্য সঙ্গী। বিশ্বের বুকে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানান ঘটনা। মানুষ ঘরে বসে এই দূরদর্শনের মাধ্যমেই পেয়ে থাকে তার সচিত্র সংবাদ। নানা অনুষ্ঠানে ভরা থাকে দূরদর্শন। কর্মক্লান্ত মানুষ বাড়িতে ফিরে সঙ্গী করে এই দূরদর্শনকে। নিজের মতো করে অনুষ্ঠানের স্বাদ গ্রহণ করে। খেলাধুলা, সংগীত, চলচ্চিত্র, সাহিত্য, সংস্কৃতির নানান অলংকারে জীবনকে ভরিয়ে দেয় নানান বৈচিত্র্যে। শিক্ষার এক শক্তিশালী মাধ্যম এই দূরদর্শন।
দূরদর্শনের অপকারিতা :
আলোর পিছনেই থাকে অন্ধকার। বিজ্ঞানের নব আবিষ্কারটি আশীর্বাদস্বরূপ ঠিকই কিন্তু এরও অন্ধকার দিক রয়েছে। দূরদর্শন এখন কিশোরমতি ছেলেমেয়েদের কাছে নেশার বন্ধু হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মন ছুটে যেতে চায় দূরদর্শনের পর্দায়। বিশেষ করে খেলার আসর বিশ্বের বুকে বসে অত্যন্ত ঘনঘন। ক্রিকেট, ফুটবল, সিনেমা, নাচ-গান তাদের আকর্ষণ করে। ফলে যুবক-যুবতি বিশেষত বিদ্যার্থীদের পাঠের মনঃসংযোগ নষ্ট হচ্ছে খুবই বেশি। এ লক্ষণ স্বাভাবিকভাবেই অত্যন্ত ক্ষতিকর।
উপসংহার :
তবু বিজ্ঞান মানুষের কল্যাণের সূচক। প্রয়োগেই এর সার্থকতা। দূরদর্শনের যাঁরা পরিচালক তাঁদেরকে অধিক … মাত্রায় সচেতন হতে হবে। মানবিক কল্যাণের কথা মাথায় রেখে দূরদর্শনকে পরিচালনা করলে আলোর দিশা ফুটে উঠবে। দূরদর্শন –লোকশিক্ষার মাধ্যম; তার বাস্তব প্রয়োগে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) আধুনিক জীবন ও দূরদর্শন, (২) দূরদর্শনের সুবিধা-অসুবিধা, (৩) ছাত্রসমাজে দুরদর্শনের প্রভাব।