সমাজগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা/সমাজসেবা ও ছাত্রদল/ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্ব/সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজ

সমাজগঠনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা

ভূমিকা : 

ছাত্রসমাজের উদ্দেশ্যে যত কথাই বলা যাক না কেন, তাতে তাদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যের ঠিকানা পাওয়া যায় না। তারা প্রকৃতির মতোই অধরা। বিদ্যুতের গতির মতো তাদের গতি। দুঃখ সাগর মাঝে, আনন্দের লহরি নিয়ে চলে এদের তরি। সংসার কাননে এরাই সৌরভসম পুষ্প। সংসার প্রাঙ্গণের সংস্কাররূপ বেড়াজালকে এরাই অপসারিত করে। এরাই ভবিষ্যতের স্বপ্নসাধক।

ছাত্রজীবনের লক্ষ্য ও প্রকৃতি : 

ছাত্রসমাজের স্বতন্ত্র চিন্তা- ভাবনা তাদের চরিত্র বৈশিষ্ট্যকে পৃথক মাত্রা দিয়েছে। একদিকে যেমন জ্ঞান আহরণের তীব্র আকুতি, অন্যদিকে পরের কারণে স্বার্থ বলি দিতে ছাত্রসমাজ আগুয়ান। সংসারের ডাক পেলে যে-কোনো প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলতে তারা কঠিন কঠোর। সংগ্রামে সাফল্যলাভের জন্য তারা চরম মূল্য দিতেও প্রস্তুত। যুবসমাজের এই ঐকান্তিক স্বার্থহীন কর্মপ্রেরণা চিরদিনই সমাজের বড়োদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এসেছে।

সামাজিক কর্মযজ্ঞে ছাত্রসমাজ : 

সামাজিক ক্ষেত্র বহু ব্যাপক। সমাজকল্যাণে উদ্‌বুদ্ধ প্রাণ ছাত্রসমাজ। চারদিকে নিরক্ষর মানুষের বোবা চাহনি; বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত চলছে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে হিংসা মারামারি। সব পরিস্থিতিতে ছাত্রসমাজ এগিয়ে যায়। এসব কাজে ছাত্রসমাজই হোতা। ছাত্রদের ত্যাগেই জীবন ধন্য। ত্যাগব্রতের দীক্ষায় নিষ্ঠুর সংকটের অবসান ছাত্রসমাজই করেছে। তাই তাদের ব্যবহার করতে হবে সঠিকভাবে।

শিক্ষাপ্রসারে ছাত্রসমাজ : 

জিজ্ঞাসু মন নিয়ে ছাত্রসমাজ যেমন শিক্ষাভাণ্ডারের পূর্ণতা আনে, পাশাপাশি সমাজের নিরক্ষর মানুষের অন্ধকার জীবনকে আলোকিত করতেও নিজেদের নিয়োজিত করে। শিক্ষাপ্রসারে কেন্দ্রীয় স্তরে বা রাজ্যস্তরে নানান পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। গ্রীষ্মাবকাশে বা পূজাবকাশে ছাত্রসমাজ নিরক্ষরদের শিক্ষাদানে অনুপ্রাণিত হয়। নিরক্ষরতাকে অভিশাপরূপে চিহ্নিত করে বসে থাকলেই সমস্যার সমাধান হয় না, প্রয়োজন সমাধানের সঠিক পথনির্দেশ এবং তার বাস্তব রূপায়ণ। ছাত্রসমাজই এতে অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে।

সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজের বাধা ও প্রতিকার :

 ছাত্রসমাজের দুর্বার শক্তি। কিন্তু সেই শক্তির কাছে রয়েছে সামাজিক বাধা নিষেধের বেড়াজাল। রয়েছে পারিবারিক বন্ধন। কিন্তু সবচেয়ে বড়ো বন্ধন রয়েছে তা হল আদর্শহীন নেতৃত্ব। প্রতিটি মানুষ কাউকে না কাউকে অনুসরণ করে। তাই অনুসৃত পথ এবং অনুকরণযোগ্য ব্যক্তিত্ব যদি আদর্শবান না হয়, তাহলে জীবনে জিজ্ঞাসা থেকে যায়। এ ছাড়াও রয়েছে ব্যক্তিগত জীবনে হতাশা, ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা। যার জন্য বর্তমান ছাত্র-যুবসমাজ দিশাহারা। তাই বড়োদের দায়িত্ব কর্মমুখর প্রাণবন্ত, উচ্ছল জীবনের অধিকারী ছাত্রসমাজকে প্রেরণা দান করা।

উপসংহার : 

ছাত্ররা সমাজের আয়ুধ। ছাত্রশক্তি সমাজের বল ভরসা। সমাজকল্যাণ যজ্ঞ ছাত্রসমাজ ছাড়া পূর্ণ নয়। সমাজের যে-কোনো অশুভ শক্তির সঙ্গে সংগ্রাম করে এই ছাত্রসমাজই। উন্নয়নে যেমন অর্থ প্রয়োজন, তেমনই প্রয়োজন ছাত্র উপাদান। একমাত্র ছাত্র-উপাদানই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। তাই • অহংকার নয়, হতাশা নয়, সংঘাত নয় – চাই জাতীয়তাবোধের উন্মেষ। ছাত্রসমাজ বুঝুক বয়স্করা তাদের চালক। বয়স্কদের স্বপ্নও সার্থক হোক ছাত্রদের মধ্য দিয়ে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) সমাজসেবা ও ছাত্রদল, (২) ছাত্রদের সামাজিক দায়িত্ব, (৩) সমাজকল্যাণে ছাত্রসমাজ।

Leave a Comment