শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা/শিক্ষা ও গণমাধ্যম/শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম

শিক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা/শিক্ষা ও গণমাধ্যম/শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম

ভূমিকা : 

মানুষের অন্তর্নিহিত পূর্ণতার বিকাশই শিক্ষা। শিক্ষাই নবোদিত সূর্যের আলোকিত ঝরনাধারায় মানুষের অন্তরের অমিত শক্তিকে বিকশিত করে। প্রাচীনকালে তপোবনের উদার প্রাঙ্গণে বিকশিত হত শিক্ষার্থীর জ্ঞান। তারপর একদিন পাশ্চাত্যের তরঙ্গাঘাতে এল নতুন কালের ঢেউ। সেই শিক্ষা ধারায় মুষ্টিমেয় মানুষ শিক্ষার সংস্পর্শে এল। শিক্ষা হল চার দেওয়ালের বন্দি।

প্রাচীন ভারতের জনশিক্ষা : 

প্রাচীন ভারতের জনশিক্ষা একদিকে ছিল যেমন ব্যাপক, অন্যদিকে তেমনি ছিল জীবনচর্চার প্রথম পদক্ষেপ। আর্যযুগে জনশিক্ষা প্রচারিত হত প্রধানত সূত্রকারগণের মধ্য দিয়ে। অতীতের সেই সম্পর্কই গণশিক্ষার দায়িত্ব তুলে নিয়েছিল সগৌরবে। ব্রতকথা, যাত্রাগান, পাঁচালি, কবিগান, বাউল, সংকীর্তন ইত্যাদির বিভিন্ন ভাবরসে আপ্লুত হত ধনী-দরিদ্র সকলেই।

আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতি : 

তারপর এল ইংরেজ শাসকগণ। গুরুগৃহ বা প্রকৃতির উদার প্রাঙ্গণ ছেড়ে শিক্ষার্থীরা পেল নতুন শিক্ষাপদ্ধতি। শিক্ষার গণমাধ্যমগুলি পরিবর্তিত হল। পুরোনো মাধ্যমের বদলে এল নতুন মাধ্যম নতুন শিক্ষাদান পদ্ধতির সহায়করূপে।

বর্তমান গণমাধ্যম : 

ভারতবর্ষ স্বাধীন হওয়ার পর মানুষ বুঝতে পারল গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্যে প্রয়োজন গণশিক্ষার। তাই শিক্ষার মাধ্যমগুলিকে বিজ্ঞানভিত্তিক করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হল। শিক্ষার মাধ্যমরূপে এল সংবাদপত্র, বেতার, দূরদর্শন, চলচ্চিত্র ও কম্পিউটার।

বেতার : 

স্বাধীন ভারতবর্ষে নতুন ভাবনা শুরু হল। গণজাগরণ, গণশিক্ষা আগে, তারপর দেশের উন্নয়ন। সেই ভাবনার ফলস্বরূপ মানুষ হাতের কাছে পেল বেতারযন্ত্র। বেতারের মধ্য দিয়ে নানা রকম অনুষ্ঠান প্রচার করা শুরু হল।

সংবাদপত্র : 

সংবাদপত্র শিক্ষার গণমাধ্যম হিসেবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত পশ্চিমি দেশগুলিতে শিক্ষার হার বেশি হওয়ায় সংবাদপত্র প্রকাশনা অনেক বেশি। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ভারতে শিক্ষার হার অনেক কম। গ্রামের কৃষক শ্রমিক শ্রেণির পরিবারে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি সংবাদপত্র। কিন্তু বিশ্বের সংবাদ প্রতিদিন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে এই সংবাদপত্রের মাধ্যমে।

চলচ্চিত্র : 

গণমাধ্যম হিসেবে চলচ্চিত্রের ভূমিকা অত্যধিক। সামাজিক চিত্র, আর্ট ফিল্ম খুবই শিক্ষণীয়। চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক সংস্কৃতি উঠে আসে যা বর্তমানে হারিয়ে গিয়েছে। সেগুলি মানুষ জানতে পারে।

দূরদর্শন : 

গণমাধ্যমগুলির মধ্যে দূরদর্শন মানুষের কাছে খুবই গ্রহণীয়। শহর ছেড়ে গ্রামের অন্দরমহলে দূরদর্শন পৌঁছে গিয়েছে। বিভিন্ন ক্লাবে, পাঠাগারে, সর্বজনীন সংগঠনে দূরদর্শন রয়েছে। দূরদর্শনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত আকর্ষক। জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুষ্ঠান, কুইজ, যুক্তিতক্কো, দেশবিদেশের খবর, কৃষিবিষয়ক আলোচনা, খেলাধুলা, ধর্ম, স্বাস্থ্য, পারিবারিক শিক্ষা সমস্ত কিছুই দূরদর্শনের অনুষ্ঠান সূচির মধ্যে রয়েছে।

কম্পিউটার : 

বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে মানুষ পেয়েছে কম্পিউটার। দেশ-বিদেশের দুর্লভ তথ্য জানা সম্ভব হচ্ছে এই কম্পিউটারের মাধ্যমে। বহুমূল্যের বই সহজে কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে ওঠে। শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।

উপসংহার : 

ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। গণশিক্ষা মানুষের নবজাগরণে সাহায্য করে, দেশের উন্নয়নে সহায়তা করে। গণমাধ্যমগুলি মানুষকে সহজভাবে নানা তথ্য পরিবেশন করে জ্ঞানভাণ্ডার বাড়িয়ে দিচ্ছে। তাই গণমাধ্যমগুলিকে আরও দায়িত্বসম্পন্ন হয়ে জনসংযোগ সাধনের উপযোগী করে তুলতে হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) শিক্ষা ও গণমাধ্যম, (২) শিক্ষাবিস্তারে গণমাধ্যম।

Leave a Comment