ভারতের জাতীয় সংহতি প্রবন্ধ রচনা/জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তা/জাতীয় সংহতি বনাম বিচ্ছিন্নতাবাদ/জাতীয় সংহতি বিনষ্টের কারণ ও প্রতিকার

ভারতের জাতীয় সংহতি প্রবন্ধ রচনা
“নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান
বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।” 

ভূমিকা : 

ভারতবর্ষ এক মহান বৈচিত্র্যের দেশ। বৈচিত্র্য ভূপ্রকৃতিতে, বৈচিত্র্য মানুষের ভাষায়, পোশাকে, শিক্ষায়, সংস্কৃতি ও ধর্মে। এই বৈচিত্র্য নিয়েই ভারতবর্ষের মানুষ জাতীয় ঐক্য স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। আ-সমুদ্র-হিমাচল সেই ঐক্যের ধারা প্রবাহিত।

সংহতি ভাবনার অতীত ও বর্তমান রূপ : 

প্রাচীন ইতিহাসের পাতা ওলটালে দেখা যাবে, মানুষ অতীতে আত্মকলহে, পাশবিক আক্রমণে ও দৈবদুর্বিপাকের চাপে অসহায় অবস্থায় পতিত হত। তাই মানুষ গড়েছিল সমাজ। বর্তমান ভাবনাতেও বিশ্বজুড়ে মানবজাতির একটি ভাবনা ‘এক রাষ্ট্র এক জাতি’। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই”।

বিদেশি শাসনে ভারতের জাতীয় সংহতি : 

ভারতবর্ষ ইংরেজ শাসনের পূর্বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে বিভক্ত ছিল। পারস্পরিক বিদ্বেষ, যুদ্ধবিগ্রহ থাকলেও জীবনচর্যায় ছিল অখণ্ড সুর। কিন্তু ইংরেজরা যখন ভারতের শাসক হল তখনই ঘটল জাতীয়তাবোধের উন্মেষ। ইংরেজরা জাতীয় সংহতি নষ্ট করতে চাইল। হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যে ফাটল ধরাতে চাইল। পরিণাম হল দেশ বিভাগ।

জাতীয় ক্ষেত্রে সংহতির অভাব :

ভারতবর্ষে জাতীয় সংহতিতে প্রথম আঘাত আসে ইংরেজ শাসনে। এরপর উগ্র-প্রাদেশিকতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তারই ফলশ্রুতি খালিস্তানি আন্দোলন, গোর্খাল্যাণ্ড আন্দোলন, ঝাড়খণ্ড আন্দোলন, আসাম ও ত্রিপুরার উপজাতিদের আন্দোলন, নাগা ও মিজোদের উপজাতি আন্দোলন।

অসংহতির কারণ – ধর্মীয় সংকীর্ণতা : 

জাতীয় ক্ষেত্রে অসংহতির অন্যতম কারণ হল ধর্মীয় সংকীর্ণতা। ধর্মধ্বজী মানুষদের ধর্ম সম্পর্কে সংকীর্ণ ধারণা মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় নেতাদের ব্যাখ্যায় সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। বিনষ্ট হয় সংহতি।

ভাষা : 

ভাষা সমস্যাও জাতীয় সংহতির ক্ষেত্রে একটি অন্যতম কারণ। হিন্দি ভারতবর্ষের রাষ্ট্রভাষা। এটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা। আবার কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষাকেও স্বীকৃতি জানানো হয়েছে। তাই হিন্দি রাষ্ট্রভাষা ঠিকই, উগ্র হিন্দি ভাষাপ্রীতি অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

অন্যান্য কারণ : 

এ ছাড়া সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানও জাতীয় সংহতি নষ্ট করার ক্ষেত্রে আর একটি কারণ। বর্ণবৈষম্য, জাতপাতের বিচার, অনুন্নত সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত এগুলিও জাতীয় সংহতিকে দুর্বল করে।

জাতীয় সংহতি রক্ষার পথ : 

কথায় আছে ‘সংহতি কার্যসাধিকা’ অর্থাৎ সংহতি কার্যসাধনের উপায়। প্রয়োজন দেশবাসীর সার্বিক কর্তব্যসচেতনতা ও সুচিন্তিত উদ্যোগ। প্রয়োজন সুনাগরিক গড়ে তোলা। মানুষই প্রধান সম্পদ। মানুষ তৈরি হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে ও সু-সংসর্গে। তাই এই ক্ষেত্রগুলি শিশুদের মানবিক, বৌদ্ধিক বিকাশের সহায়ক করে তোলে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচারনিষ্ঠ হয়ে উঠতে হবে। খেলাধুলাকে শিক্ষার সহায়ক করে তুলতে হবে। রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে দায়িত্ব নিতে হবে।

উপসংহার : 

সংহতির চেতনাই ভারতীয় সংস্কৃতির ধারক। মনীষীদের বাণী কণ্ঠে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে। ভবিষ্যৎ কল্যাণের পথে তাঁরাই পথপ্রদর্শক। শুধু আত্মিক উন্নতি নয়, প্রয়োজন সার্বিক কল্যাণ। মিলনমন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে তারই সাধনায় ব্রতী হতে হবে। তখনই ভারতবর্ষের জাতীয় সংহতি অমল বিভায় দীপ্তিমান হয়ে উঠবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) জাতীয় সংহতির প্রয়োজনীয়তা, (২) জাতীয় সংহতি বনাম বিচ্ছিন্নতাবাদ, (৩) জাতীয় সংহতি বিনষ্টের কারণ ও প্রতিকার।

Leave a Comment