বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা 400+ শব্দে

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানুষ তার বুদ্ধিবৃত্তি দিয়েই প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করেছে; নানান প্রতিকূলতাকে জয় করে লক্ষ্যে পৌঁছেছে। বিচারবোধ, বুদ্ধি, সংগ্রাম করার মানসিকতাই জীবজগতের কাছে সাফল্য এনে দিয়েছে। আজ মানুষ সভ্যতার গর্বে গর্বিত। তবে এসবের পিছনে রয়েছে বিজ্ঞান ।

শারীরিক সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানে বিজ্ঞান

বিজ্ঞানের আবিষ্কারেই মানুষের জীবনযাত্রায় এসেছে নানান পরিবর্তন। অরণ্য-শ্বাপদসংকুল পরিবেশ ছেড়ে মানুষ সমাজ গড়েছে। নগর সভ্যতাকে উন্নত করে অভাবনীয় পরিবেশ তৈরি করেছে। চলছে নানান যানবাহন, নানান স্থাপত্য-ভাস্কর্য, শিল্প-কারখানা, রয়েছে নানান অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সবকিছু বিজ্ঞানচিন্তা ও বিজ্ঞান সহায়তারই ফলশ্রুতি।

বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশ

জ্ঞান মানুষের ধাঁধাকে দূর করে প্রকৃত সত্যের পথ উন্মুক্ত করে। অজ্ঞানতাই অন্ধকার, জ্ঞানের আলোকেই এই অন্ধকার দূরীভূত হয়। তাই প্রয়োজন প্রকৃত শিক্ষা বা জ্ঞানালোকে নিজেকে শিক্ষিত করা। কিন্তু আজও মানুষ নানা কুসংস্কারে আবদ্ধ। বিজ্ঞান জানলেই বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশ ঘটে না। মনের সংস্কার, অন্ধ-বিশ্বাসকে দূরে সরিয়ে প্রকৃত সত্যের উদ্ঘাটনই হল বৈজ্ঞানিক বোধ। এই বোধই মানুষকে কার্য-কারণকে বুঝতে সাহায্য করে, আর তাতেই আসে প্রকৃত অগ্রগতি।

বিজ্ঞান ও কুসংস্কার

বৈজ্ঞানিক বোধের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হল অন্ধ কুসংস্কার। নানান লোকাচারে সমাজ আবদ্ধ। ধর্মীয় বিদ্বেষ ও মানুষের মনে তীব্র সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ জ্ঞান দুর্নিবার। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আচার, রীতি-প্রথাকে অন্ধভাবে মেনে চলার তাগিদ, অথচ রীতি-আচার অনুষ্ঠান করাই যে ধর্মাচারণ নয়, তা সাধারণ মানুষ বোঝে না। নিজে বাঁচা ও অপরকে বাঁচানোই ধার্মিক মানুষের লক্ষণ। আসলে বিজ্ঞান বোধের অভাবের জন্য আমাদের মনের এই অস্থিরতা। তাই আজও বন্ধ হয়নি জাতপাতের লড়াই, বর্ণভেদও সমাজে প্রকট; সংস্কারের গণ্ডিতে আবদ্ধ আমাদের মন। শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণীতে পাই, “যে আচরণ বাক্য কর্ম বাঁচা বাড়ার উৎস হয়, তাকেই জানিস ধর্ম বলে নইলে ধর্ম কিছুই নয়।” আসলে প্রয়োজন এই বোধ, তবেই আসবে প্রকৃত উন্নয়ন ও বিকাশ।

বিজ্ঞানমনস্কতা বিকাশের কর্মসূচি

আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার যুগেও বিজ্ঞানমনস্কতার অভাব প্রকট। বিজ্ঞানী হয়েও অনেকে সংস্কারাচ্ছন্ন। বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক হয়েও জীবনচর্চা বৈজ্ঞানিক চিন্তাবিমুখ। আমাদের ভাবতে হবে, কোনো কিছুকে অন্ধভাবে মেনে না নিয়ে যাচাই করে তবেই গ্রহণ করতে হবে। তাই গঠিত হয়েছে ‘ভারত জনবিজ্ঞান জাঠা’। ১৯৮৭ সালে গঠিত হয় এই কমিটি। উদ্দেশ্য বৃহত্তর বিজ্ঞান আন্দোলনের মধ্য দিয়ে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলা।

উপসংহার

একবিংশ শতাব্দীর মানুষ হয়েও এখনও আমরা মোহাচ্ছন্ন। ক্ষুদ্র সংকীর্ণ মন নিয়ে আমাদের চলা। তাই অনেক কিছুই আমাদের কাছে আজও অস্পষ্ট। কার্য-কারণ ছাড়াই আমরা ধর্মীয় অনুশাসন অন্ধভাবে মেনে চলি। প্রয়োজন এই বন্ধনের মুক্তি। বিজ্ঞানমনস্কতা বা বিজ্ঞানবোধই আমাদের মনে প্রকৃত আলোর প্রকাশ ঘটাতে সক্ষম।

Leave a Comment