বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা প্রবন্ধ রচনা

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা

ভূমিকা : 

প্রাগৈতিহাসিক যুগে আগুন জ্বালানোর কৌশল আয়ত্ত বা উদ্ভাবনকে বিজ্ঞানচর্চার জন্মলগ্ন বলে চিহ্নিত করা যায়। তারপর যে যাত্রা শুরু হয়েছে; সে যাত্রা দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। আবিষ্কৃত হয়েছে নতুন নতুন বিস্ময়। অথর্ববেদের চিকিৎসাবিজ্ঞান বর্তমানে আয়ুর্বেদশাস্ত্র, সুশ্ৰুতসংহিতাই আজকের শল্যচিকিৎসার সূতিকাগৃহ, চরকসংহিতাই মূলত ভেষজ গ্রন্থ। প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানের আকাশে যে সমস্ত বিজ্ঞানী নক্ষত্ররূপে বিরাজিত ছিলেন তাঁরা হলেন চরক, পতঞ্জলি, নাগার্জুন, আর্যভট্ট, বরাহমিহির প্রমুখ।

প্রথম যুগের বাঙালি বিজ্ঞানী : 

বিজ্ঞান সাধনার ক্ষেত্রে বাঙালিদের মধ্যে যাঁরা উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন রাধানাথ শিকদার। তিনি গাণিতিকসূত্র প্রয়োগ করে মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা নির্ধারণ করেছিলেন। মহেন্দ্রলাল সরকার তাঁর সর্বস্ব ব্যয় করে ‘বিজ্ঞান সাধনায় ভারতীয় সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানটি পরে ‘সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন’ রূপে খ্যাত হয়। তবে বিশ্ববিজ্ঞানে যাঁর নাম সর্বাগ্রে রাখা যায় তিনি হলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। ‘উদ্ভিদের প্রাণ মানুষের মতোই সাড়াপ্রবণ’ – তাঁর অনবদ্য আবিষ্কার। এ ছাড়াও রয়েছে বিদ্যুৎ-চুম্বক, ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, রাডার প্রভৃতি। ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম পীঠস্থান। ভারতীয় রাশিবিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এক স্মরণীয় নাম। ইনি আবহাওয়া, বন্যানিয়ন্ত্রণ, কৃষিবিজ্ঞানের জটিল তথ্যকে রাশিবিজ্ঞানের সাহায্যে বিশ্লেষণ করেছেন।

দ্বিতীয় যুগের বাঙালি বিজ্ঞানী : 

বিজ্ঞানের জগতের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় নামটি বিশেষ স্মরণীয়। ইনি ছিলেন রসায়নবিদ ও বিজ্ঞানী। ভারতে প্রথম রাসায়নিক দ্রব্য ও ঔষধ তৈরির কারখানা ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড’ -এর তিনিই প্রতিষ্ঠাতা। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন ‘মারকিউরাস্ নাইট্রেট’ যৌগ। তাঁর রচিত একটি পুস্তক হল ‘History of Hindu Chemistry |

তৃতীয় যুগের বাঙালি বিজ্ঞানী : 

এ সময়ের ড. মেঘনাদ সাহার নাম পদার্থবিদ্যায় উল্লেখযোগ্য। মেঘনাদ সাহার স্মরণীয় কীর্তি ‘ইন্সটিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স’, বর্তমানে এটি পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র রূপে পরিগণিত হয়েছে। বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আবিষ্কার পারমাণবিক গবেষণার ক্ষেত্রকে অনেক প্রসারিত করেছে। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তত্ত্বের সংশোধনও তিনি করেছিলেন। স্যার উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী কালাজ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কার করেন। রাধাগোবিন্দ কর, নীলরতন সরকার, বিধানচন্দ্র রায় প্রমুখ চিকিৎসকদের অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয়। ডা. সুবোধ মিত্রের ‘মিত্র অপারেশন’-এর বিশ্বজোড়া খ্যাতি। টেস্টটিউব বেবির স্রষ্টা ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের নাম আমাদের অজানা নয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়; স্বাধীন ভারতে বিজ্ঞানচর্চা যতটা প্রয়োজন ছিল ততটা হয়ে উঠছে না। পরিবেশ বা পরিস্থিতি বিজ্ঞানচর্চার অনুকূল নয়। বহু রত্ন বিদেশে গিয়ে মেধার স্বাক্ষর রাখছেন।

উপসংহার : 

বাংলার বুকে কৃতী সন্তানরা আজও নিরন্তর শ্রম করে চলেছেন। মানুষের কল্যাণকাজেও তাঁরা হবেন হোতা। তবে বহু মেধাসম্পন্ন ছাত্রছাত্রী বৃহত্তর জীবনে দেশ ছেড়ে বিদেশে যাচ্ছেন। ধনশালী দেশ তাঁদের প্রলুব্ধ করছে। দেশের নেতৃত্বকে এ-বিষয়ে সচেতন হতে হবে; সুযোগ এবং ক্ষেত্র তাঁদের দিতে হবে। দেশপ্রেমের ছোঁয়া দেশসেবার প্রেরণা তাঁদের প্রাণে দিতে হবে। তা না হলে দেশ হারাবে বহু কৃতী বা ভবিষ্যতের সূর্যসম বাঙালি বিজ্ঞানীদের।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বাঙালির বিজ্ঞানসাধনা, (২) বিজ্ঞানে বাঙালির অবদান।

Leave a Comment