প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান রচনা 400+ শব্দে

প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান রচনা

প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান রচনা

প্রতিদিনের জীবনে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা

মানবসভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ প্রকৃতির কাছে ছিল অসহায়। জীবনযাপনের পথ ছিল কঠিন। বেঁচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে নিরন্তর সংগ্রাম। অরণ্য, শ্বাপদসংকুল পরিবেশই তাদের ঘর ও প্রতিবেশী। ধীরে ধীরে পরিবর্তন হল জীবন পদ্ধতির। গড়ে উঠল গ্রাম, নগর। তৈরি হল সমাজ। এর মূলে মানুষের অদম্য শক্তি, বুদ্ধি ও নিরলস প্রয়াস। মানবসভ্যতার বিকাশের মাধ্যম হল বিজ্ঞান।

বিজ্ঞান ও মানবজীবন

বিজ্ঞান হল বিমূর্ত জ্ঞান, যা মূর্ত হয়ে ওঠে প্রযুক্তির মধ্যে। একদিন প্রকৃতির কাজ মানুষের কাছে ছিল দুর্বোধ্য। মেঘের গর্জন শুনে, বিদ্যুতের চমক দেখে মানুষ ভয় পেত। দাবানল, ঝড়-ঝঞ্ঝা ছিল মানুষের কাছে প্রকৃতির রোষ। বিজ্ঞানকে আশ্রয় করেই মানুষ পেল শক্তি ! মন থেকে দূর করল সংস্কার। ঊষর ভূমিকে করল উর্বর। বাঁধা পড়ল নদী তরঙ্গ, তৈরি হল বিদ্যুৎ। জীবনের সঙ্গে একসূত্রে গ্রথিত হল বিজ্ঞান।

বিজ্ঞানের ব্যবহারে জীবনযাপনের পরিবর্তন

বিজ্ঞান মানবজীবনকে দ্রুত পরিবর্তিত করেছে। দূরকে করেছে নিকট। যে পথ ছিল দুর্গম, বিজ্ঞানের প্রভাবে তাকেই করেছে সুগম। পায়ে হাঁটা পথে চলছে বাষ্পচালিত যান, বিদ্যুৎচালিত ট্রেন। কেরোসিনের আলোর পরিবর্তে এসেছে বিদ্যুৎ। অজানা রোগে অকালে প্রাণ দিতে হয় না মানুষকে। একদিন মানুষের কাছে যা ছিল অবিশ্বাস্য, আজ একবিংশ শতাব্দীতে সবই যেন বিশ্বাসের গভীরে বদ্ধ।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান

বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে একান্তভাবে যুক্ত। প্রভাতের কলরব ওঠে। প্রকৃতি জাগে। মানুষের ঘরে পৌঁছে যায় সংবাদপত্র। বেতারে ধ্বনিত হয় বিশ্ববার্তা। দূরদর্শনের পর্দায় ভেসে ওঠে পৃথিবীর দূর-দূরান্তের ছবি। কর্মব্যস্ত জীবনে দূরভাষের মাধ্যমে সেরে নিতে পারি আমাদের প্রয়োজনীয় কথা। প্রিয় মুখকে ধরে রাখতে পারি সেলুলয়েডের স্বচ্ছ আধারে। প্রিয় কণ্ঠকে ধরে রাখতে পারি টেপ রেকর্ডের রেখা তরঙ্গে। যাতায়াতের জন্য রয়েছে নানান যানবাহন। ঘর-বাড়ি, পথ-ঘাট, পাঠ্যপুস্তক, লেখার সামগ্রী, শয্যাদ্রব্যাদি থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, ভোগ্যপণ্য সব কিছুতেই রয়েছে বিজ্ঞানের ছোঁয়া। কৃষি যন্ত্রপাতি, শিল্প কলকারখানা থেকে শুরু করে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান চলার পথের একান্ত সাথী। বিজ্ঞান ছাড়া আমরা এক পাও চলতে পারি না।

অপকারিতা

বিজ্ঞান যেমন কল্যাণসাধক, বিজ্ঞানের তেমনই অকল্যাণের দিকটি রয়েছে। কৃষি-যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার ব্যবহারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ঠিকই, পাশাপাশি জমি হারায় তার উর্বরতা। বিজ্ঞানের উন্নতিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি মানুষকে চরম বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ ঘটছে বিজ্ঞানের ব্যবহারে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে অমানবিক মানুষ রাসায়নিক দ্রব্যাদি, অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। যদিও এর জন্য লোভী, স্বার্থপুর মানুষ দায়ী, তবু পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানই।

উপসংহার

বিজ্ঞান আমাদের দোসর, অগ্রগতির মূল সহায়ক। বিজ্ঞান ছাড়া মানবজীবন সমাজ অচল। তবে মানুষকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। মানবকল্যাণে বিজ্ঞানকে ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। ধ্বংস নয়, সৃষ্টি – সংহার নয় রক্ষণই হবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষও তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে ঐক্য গড়ে সামাজিক কল্যাণকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বিজ্ঞান ও মানবজীবন, (২) প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান।

Leave a Comment