দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা
দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা রচনা – “সকল দেশে সকল কালে উৎসাহ তেজ অচঞ্চল, ওই আমাদের আশার প্রদীপ, ওই আমাদের ছেলের দল।” ছাত্রসমাজ তারুণ্যের প্রতীক; অমানুষী শক্তির আধার। পার্বত্যপথে চলা নদীর মতো এই ছাত্রসমাজ। কোনো বাধা প্রতিবন্ধকতা যেমন নদীর চলাকে স্তব্ধ করতে পারে না, ছাত্রসমাজও তেমনই দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। সমাজ ও দেশের জন্য ভালো-বড়ো কিছু করা। যুগে যুগে ছাত্রদল এভাবেই সমাজ ও দেশকে নিজেদের জীবন উপহার দিয়ে এসেছে।
![]() |
দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা |
ভূমিকা :
“সকল দেশে সকল কালে উৎসাহ তেজ অচঞ্চল, ওই আমাদের আশার প্রদীপ, ওই আমাদের ছেলের দল।” ছাত্রসমাজ তারুণ্যের প্রতীক; অমানুষী শক্তির আধার। পার্বত্যপথে চলা নদীর মতো এই ছাত্রসমাজ। কোনো বাধা প্রতিবন্ধকতা যেমন নদীর চলাকে স্তব্ধ করতে পারে না, ছাত্রসমাজও তেমনই দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য। সমাজ ও দেশের জন্য ভালো-বড়ো কিছু করা। যুগে যুগে ছাত্রদল এভাবেই সমাজ ও দেশকে নিজেদের জীবন উপহার দিয়ে এসেছে।
দেশ ও ছাত্রসমাজ
মানুষ একা বাঁচতে পারে না; কারণ, মানুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তাই মানুষ বাঁচার তাগিদেই গড়ে- ছিল সমাজ। নিজের বেঁচে থাকা যে অন্যের বেঁচে থাকার উপরেই নির্ভর করে তা বুঝেছে নিশ্চিতভাবে। তাইতো মানুষ নিজের স্বার্থ উপেক্ষা করে দশের, দেশের স্বার্থরক্ষায় হয়েছে ব্যাপৃত। ছাত্রসমাজই এই মানসিকতার একমাত্র অধিকারী। কারণ সাবধানীরা বাঁধ বাঁধে কিন্তু ছাত্রসমাজ কোনো বাধা মানে না।
জনসেবায় ছাত্রসমাজের ভূমিকা :
বর্তমান সমাজ সবদিক দিয়ে উন্নত। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, কৃষি কোনো কিছুতেই পিছিয়ে নেই। কিন্তু সমাজের দিকে তাকালে চোখে পড়বে নানান অভাব। আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা ছাড়াও রয়েছে হিংসা, বিদ্বেষ, অপরকে ছোটো করে নিজেকে বড়ো করে দেখানোর তীব্র প্রতিযোগিতা। এ সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ছাত্রসমাজের নিঃস্বার্থ সেবা। সমাজে যে-কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মূলে রয়েছে এই ছাত্রসমাজই। নিজেদের জীবন দিয়েছে, পরার্থপরতায় সমস্ত সুখ, চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে সমাজের মঙ্গলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর তাতেই সমাজ হৃতগৌরব ফিরে পেয়েছে।
দেশগঠনে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা :
‘মানুষ বাঁচে আয়ুতে নয় কল্যাণপূত কর্মে’ এই মন্ত্রই যেন ছাত্রসমাজের জপমালা। জীবনবাজি রেখে সমাজের কল্যাণে নিজেদের উৎসর্গ করে। প্রশংসা চায় না, ফলের প্রত্যাশী নয়, শুধু দেশের প্রয়োজনে কিছু করার একটা আন্তরিক তাগিদ। অন্নহীনে অন্ন দিতে, দেশের গৌরব বৃদ্ধিতে, জ্ঞানের প্রসারে ছাত্রসমাজই অগ্রণী। বিশেষত ছাত্রসমাজ কোনোদিনও সংকীর্ণ জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদকে প্রশ্রয় দেয় না। তাই তাদেরই প্রয়োজন হয় দেশগঠনে।
বাস্তব কর্মসূচি :
ছাত্রসমাজ বুদ্ধিতে; অভিজ্ঞতায় অপরিপক্ক। তাই এদের ভুলও হয় বেশি; খেসারতও দিতে হয় অনেক। প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিচালনা। ছাত্রদের সুপ্ত চেতনাকে জাগ্রত করে উজ্জীবিত করতে হবে। নির্দিষ্ট কর্মধারা সামনে রেখে তাদের মনের কাছে পৌঁছাতে হবে। ছাত্রসমাজ বাস্তব উন্নয়নের দিশারী। এর জন্য প্রয়োজন বাস্তব কর্মসুচি। এর মধ্য দিয়েই তারা গন্তব্যপথে আগুয়ান হয়।
উপসংহার :
ছাত্রসমাজ নবীন প্রজন্ম, ভবিষ্যতের দিগ্দিশারী। তাদেরকে এগিয়ে আনতে হবে। গতিময়তাই জীবন। ছাত্রসমাজ গতিময় জীবনের অধিকারী হতে চায়। মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা, আদর্শ, ভগবানের আশিস নিয়ে তাদের পথচলা। পরিবার, সমাজ, দেশ তাকিয়ে থাকে এই ছাত্রসমাজের দিকে। এরাই অমর প্রদীপ, দশ ও দেশের আশ্রয়স্থল। উৎসাহ, উদ্দীপনা, দুর্নিবার বাসনা নিয়ে সমস্ত রকম বাধা অতিক্রম করে যায়। এজন্য প্রয়োজন পুণ্যশ্লোক, সরল, উচ্ছল, প্রাণবন্ত ছাত্র সমাজকে মহৎ কাজে অনুপ্রাণিত করা।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) সমাজসেবা ও ছাত্রসমাজ, (২) দেশের কল্যাণে ছাত্রসমাজ।
একটি ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
“থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে।”
–নজরুল
ভূমিকা :
ভ্রমণের নেশা মানুষের চিরন্তন। সুদূরের আহ্বান আসে তার কাছে। ডাকে অরণ্য, পর্বত, সমুদ্র। এক দুর্বার আকর্ষণ অনুভূত হয় হৃদয়ে। ‘হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে।’ সেই টান, সেই আকর্ষণ আমারও হৃদয়ে জেগে ওঠে বারবার। ছোটোবেলা থেকেই বাবা-মায়ের হাত ধরে কাছে – দূরে নানা স্থানে গিয়েছি ভ্রমণে, তবে আমার কাছে সব থেকে আকর্ষণীয় হয়েছে হরিদ্বার-বদরীনাথ ভ্রমণ।
যাত্রার শুরু দিল্লি থেকে হরিদ্বারের পথে :
হাওড়া স্টেশন— লোকে লোকারণ্য। বেশিরভাগ লোকই ছুটি কাটানোর আমেজে মশগুল। আমাদের গন্তব্য ছিল হাওড়া থেকে দিল্লি, সেখান থেকে হরিদ্বার যাত্রা। দিল্লি থেকে হরিদ্বারের যাত্রাপথ ছিল। বড়োই আকর্ষণীয়। ছুটে চলেছে ট্রেন। জানলার ফাঁক দিয়ে দূর আকাশের পানে ছুটে যায় চোখ; কিন্তু সামনেই তো পাহাড় ঘেরা। আবার হঠাৎ এক অন্য মনোরম আকর্ষণীয় দৃশ্য। এমনি করে চলতে চলতে দেখতে দেখতে ট্রেন এসে পৌঁছালো হরিদ্বারে। স্টেশনে নেমে আমরা গেলাম ‘মাণ্ডি গোবিন্দাশ্রম’ ধর্মশালায়। নির্দিষ্ট ঘরে সামান্য বিশ্রাম করে দুপুরের খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।
সন্ধ্যায় হরকোপৌড়ির দৃশ্য :
মন কিন্তু পড়ে আছে অন্য জায়গায়। সন্ধ্যায় হরিদ্বারের গঙ্গার ঘাটে অর্থাৎ হরকোপৌড়ি গঙ্গা-আরতির দৃশ্যাবলি দেখার জন্য। হ্যাঁ, এ-এক অনুপম সন্ধ্যা-আরতির দৃশ্য। এক শব্দ, এক সংগীতের ধ্বনি ভেসে আসে গঙ্গার বুক থেকে। সে ধ্বনি যেন স্বর্গীয় পরিবেশের এক মায়াময় জগৎ তৈরি করছে। চোখে না দেখলে সে দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না। গঙ্গার জলে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাওয়া প্রদীপের মৃদু আলোর সৌন্দর্য-অপূর্ব। তার সঙ্গে মন্দিরের কাঁসর-ঘণ্টার শব্দ যেন এক মোহময় স্বর্গীয় পরিবেশ।
বদরীনাথের পথে গমন :
হৃষিকেশের মন্দির, লছমনঝোলার মন্দির দেখে সেখানে এক রাত কাটিয়ে আমরা রওনা দিয়েছিলাম বদরীনাথের উদ্দেশ্যে। পার্বত্য পথ দুর্গম, কিন্তু এর অভিজ্ঞতা অত্যন্ত রোমা কর। চড়াই-উতরাই করতে করতে বাস এগিয়ে চলেছে। যাত্রাপথে সঙ্গী হয়েছে অলকানন্দা। শুনছি তার কুলকুল ধ্বনি। এর আগে দার্জিলিং-এ কাঞ্চনজঙ্ঘার মায়াময় রূপ আমার চোখে ধরা পড়েছে, কিন্তু বদরীনাথের পথে পর্বতের রূপ যেন ভিন্নধর্মী। যাত্রাপথে দেবপ্রয়াগ, কর্মপ্রয়াগ ও রুদ্রপ্রয়াগ পার হয়ে এসেছি। এগুলি এক-একটি নদীর মিলনস্থল। আমরা প্রতিটি প্রয়াগে নেমে গঙ্গার পূত ধারার স্পর্শ নিলাম। পৌঁছালাম পিপিলকোর্ট নামে এক জায়গায়। রাত্রিবাস সেখানেই।
অলকানন্দার রোমাঞ্চকর পরিবেশ :
পরদিন সকালে আবার যাত্রা করলাম এক ভিন্ন স্বাদের কৌতূহল নিয়ে। শোনা যাচ্ছে অলকানন্দার গুরুগম্ভীর ধ্বনি। হাজার-হাজার ফুট খাদ পাশে। কিন্তু বুকে ভয়, মনে বল, চোখে অদেখাকে দেখার তৃষ্ণা নিয়ে চলেছি। চলতে চলতে পৌঁছালাম বদরীনাথের নারায়ণ মন্দিরে।
তুষারাবৃত বদরীনাথের নারায়ণ মন্দির :
প্রকৃতির এমনই কৃপা যে বদরীনাথের মন্দিরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে গেল তুষারপাত। মন্দির প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় ফুলের সঙ্গে আমাদের হাত বরফে পূর্ণ হয়ে গেল। এক অলৌকিক স্বর্গীয় পরিবেশ।
উপসংহার :
এবার ফিরে আসার পালা। ছুটি শেষের পথে। আমরা ফিরে এলাম হরিদ্বারে। এখান থেকেই ট্রেনে ফিরতে হবে। কয়েকটা দিনের স্মৃতি চিরদিনের মতো মনে গেঁথে নিলাম। ভ্রমণ মানুষের মনের শক্তি, প্রেরণা। এ এক অন্য তৃপ্তির স্বাদ। আমার মনের মণিকোঠায় চির অম্লান হয়ে থাকবে এই স্বর্গীয় পরিবেশের রোমাঞ্চকর সমস্ত দৃশ্যের অভিজ্ঞতা।
আরও পড়ুন – সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা