জীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য/সময়ের সদ্ব্যবহার রচনা
ভূমিকা
সময় অনন্ত কিন্তু মানবজীবনের পরিধি ক্ষণবন্দি। কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধন মান। অথচ মানুষের এই ছোট্ট জীবনে কত কী স্বপ্ন। নানান স্বপ্ন, আশা-প্রত্যাশার নানান কল্পনা নিয়েই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে মানুষের জীবন। স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে মানুষের জীবনে নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন। কিন্তু সময় কারও জন্য অপেক্ষা করে না। নদীর স্রোতের মতোই বহমানতা তার ধর্ম। শুধুই চলা। শুধুই ‘চরৈবেতি”, ‘চরৈবেতি’র আহ্বান। তাই মানুষের জীবনে সময়ানুবর্তিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
সময়ের অপচয়
কালের তরঙ্গ অবিরাম ছন্দে বহমান, কিন্তু মানবজীবন ক্ষুদ্র কাল পরিমাণের মধ্যে আবদ্ধ। একমাত্র সময়ের সদ্ব্যবহারেই তা সার্থক হয়ে উঠতে পারে। পরম মূল্যবান সম্পদ হাতে পেয়েও মানুষ যদি অবহেলা, উপেক্ষা, আলস্যে অপচয়ে দিন কাটায়া, তবে তার জীবনে অনিবার্যভাবেই নেমে আসে দুঃখের অমানিশা। সময় একবার হারালে আর ফিরে পাওয়া যায় না। কিন্তু অলস, কর্মবিমুখ, উদাসীন মানুষ সময়ের মূল্য সম্পর্কে অজ্ঞ, অচেতন। আর যারা সময়কে উপযুক্তভাবে ব্যবহার করে তাদের মাথায় ঝরে পড়ে ঈশ্বরের অপার করুণাধারা। সোনার ফসল ফলে তাদের মানবজমিনে।
ছাত্রজীবন ও সময়নিষ্ঠা মানবজীবনের ভবিষ্যৎ সফলতার সোপান হল সময়ের সদ্ব্যবহার। উন্নতিকামী প্রতিভাবানরা ঠিকমতো সময়কে কাজে লাগিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার পিরামিড গড়ে তোলে। সময়ের মূল্য সম্পর্কে তাই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। মানুষের ছাত্রজীবন হল ভবিষ্যৎ ফসলের বীজ বপনের প্রত্যাশিত লগ্ন, সার্থক জীবন গঠনের প্রস্তুতিপর্ব। সময় অচেতন, শ্রমবিমুখ, অলস ছাত্র শুধু যে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয় তা নয়, বৃহত্তর জীবনের ক্ষেত্রেও পদে পদে ব্যর্থ হয়।
মহাজীবনে সময়নিষ্ঠার মূল্য
মানবজীবন নশ্বর। যুগে যুগে মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে, কালের নিয়মে একদিন তারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা পার্থিব শরীরে জীবিত না থাকলেও আজও তাঁরা জীবিত। তাঁদের স্মরণীয় অবদানেই সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। কবি, শিল্পী-সাহিত্যিকরা সীমিত জীবনেই মহৎ সৃষ্টির উপহার দিয়েছেন। বিজ্ঞানীরা নব নব আবিষ্কারে ভরিয়ে দিয়েছেন মানবসভ্যতার ভাণ্ডার। সেই আবিষ্কারের পিছনে যেমন রয়েছে অতন্দ্র সাধনা, তেমনি রয়েছে সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার।
জাতীয় জীবনে সময়ের অপব্যয়ের চিত্র
সময়ানুবর্তিতার অভাবে আমাদের জাতীয় জীবন নানা সমস্যায় কণ্টকিত। অফিসে নেই কাজের পরিবেশ, দেশসেবকের নেই কর্মনিষ্ঠা, শিক্ষক চিকিৎসকেরাও নিজ কর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন। ফলে সর্বত্র এক অরাজকতা, বিশৃঙ্খল অবস্থার পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার
সময় জ্ঞানই মানুষের সাফল্যের সার্বিক চাবিকাঠি। সময়ানুবর্তিতাই জাতির জীবনে এনেছে স্বপ্ন সুন্দর সার্থকতা। সময়ের মূল্যবোধই দেশ ও জাতির জীবনকে শৌর্যে বীর্যে, অর্থনেতিক নিশ্চয়তার সমুন্নত পীঠস্থানে পরিণত করেছে। শৈশব থেকেই এই সময় ব্যবহারের মূল্যবোধ গড়ে ওঠে। “জীবনের মূল্য আয়ুতে নয়, কল্যাণপূত কর্মে।’। সময়নিষ্ঠা সেই কল্যাণপূত কর্মের পথ প্রশস্ত করে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) সময়ের সদ্ব্যবহার, (২) জীবনে সময়ানুবর্তিতার মূল্য।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা