জীবনচরিত পাঠের প্রয়োজনীয়তা/জীবনচরিত পাঠের উপকারিতা/জীবনচরিত পাঠের আবশ্যিকতা
“যাঁহাদের নাম স্মরণ আমাদের সমস্ত দিনের বিচিত্র মঙ্গলচেষ্টার উপযুক্ত উপক্রমণিকা বলিয়া গণ্য হইতে পারে, তাঁহারাই আমাদের প্রাতঃস্মরণীয়।” –রবীন্দ্রনাথ
ভূমিকা
মানুষ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে, আবার কালের নিয়মে একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। এটাই জাগতিক নিয়ম; এটাই শাশ্বত। কেউ মনে রাখে না আমাদের কথা। কিন্তু কখনো-কখনো এমন কিছু মানুষ জন্ম নেন, তাঁরা মৃত্যুর পরেও মানুষের হৃদয়ে, আলাপে আলোচনায় প্রাসঙ্গিক হয়েই থেকে যান। তাঁরা ক্ষণজন্মা, তাঁদের ঐশ্বর্য মানুষের কল্যাণেই ব্যয়িত হয়। তাঁরা চিরবরেণ্য, চিরস্মরণীয়।
জীবনচরিত পাঠের উপকারিতা
মানুষ অপূর্ণ, প্রকৃতির বশ। নিজের ভালোমন্দ বোঝার ধারণাও মাঝে মাঝে ভুলে যায়। চলার পথে বাধা পেয়ে আশাহত হয়ে পড়ে। জীবনটা বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। অজ্ঞতা, সংকীর্ণতা আমাদের মনকে পঙ্গু করে দেয়। সেই নিস্তব্ধ বদ্ধ জীবনের সঙ্গী হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে অভয় বাণী শোনান এই ঐশ্বর্যমণ্ডিত মানুষ। জীবনসংগ্রামে বেঁচে থাকার প্রেরণা দেন।
মহৎ প্রাণের স্পর্শে মনে জাগে মহাভাবনা
মানুষ প্রবৃত্তির দাস, আর মানুষ মাত্রেই স্বার্থপর। মনুষ্যত্ব বিবেক বিসর্জন দিয়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থতাই একমাত্র লক্ষ্য হয়ে পড়ে। মহাপুরুষদের জীবনপাঠে, তাঁদের আদর্শ উপলব্ধির মধ্য দিয়ে মানবজীবনের ক্ষুদ্র সীমাবদ্ধ গণ্ডির সীমারেখা দূর হয়। আমাদের মনের কালিমা অপসারিত হয়। আত্মত্যাগের মহিমায় আমাদের মন অভিষিক্ত হয়। মানুষ নতুন করে বাঁচার মন্ত্র পায়।
মহাজীবনের সংস্পর্শে মানবজীবন ধন্য
কথায় আছে ‘সঙ্গাৎ সঞ্জায়তে সাধু’ অর্থাৎ সঙ্গই মানুষকে প্রকৃত সাধুমনের সান্নিধ্য দেয়। প্রয়োজন সত্যস্বরূপে অবস্থান। প্রেমই মানবজীবনের দুর্লভ বস্তু। প্রেমহীন জীবন ব্যর্থ, মরুময়। তাই প্রয়োজন প্রেমীর সঙ্গ। মহান, পুণ্যাত্মা যাঁরা, তাঁদের সঙ্গলাভে জীবন ধন্য হয়। তাইতো কথা রয়েছে, ‘জীবন বাঁচে আয়ুতে নয়, কল্যাণপূত কর্মে।’
মহাজীবনে দেশকালের চিত্র
সমাজ বহতা নদীর মতোই চলমান জীবনের প্রতিচ্ছবি। সেখানে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, উত্থান-পতন। রাজনৈতিক-সামাজিক, অর্থনৈতিক-ধর্মীয় নানা তরঙ্গবিক্ষোভে অশান্ত। মহাপুরুষের জীবন কোনো অভিঘাতে প্রতিকূলতায় বিক্ষুব্ধ নয়, বরং শান্ত সমাহিত। তাই মনীষীর জীবনপাঠে আমরা দেশের সমাজ, সভ্যতা, রাজনীতি, ধর্মবিশ্বাস, আচার-আচরণ, যুগলক্ষণ ইত্যাদির পরিচয় পাই।
জীবনচরিত নির্বাচন
জীবনকাহিনিই জীবনচরিত। তাহলে কোন্ জীবনচরিত আমাদের পাঠের উপযোগী? এ প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসবে। তার উত্তরে বলা যায় যে মহাজীবন আমাদের ক্ষুদ্র স্বার্থময় জীবনের বেষ্টনী থেকে এক বৃহৎ জীবনের বেদীতলে নিয়ে আসতে পারে, সেই জীবনচরিতই আমাদের পাঠ্য। যে মহাজীবন নিজের জীবন দিয়ে আচরণ করে বাঁচার পথ, কল্যাণের পথ, শান্তির পথের সন্ধান দিয়েছেন, তিনিই আচার্য, তিনিই বরেণ্য।
উপসংহার
মানুষ আজ দিশেহারা। অথচ তার অর্থের প্রাচুর্য সীমাহীন। তবু কেন এই দীনতা? নেই কেন শান্তি ? আসলে মানুষ তার প্রকৃত ভালো কীসে আসতে পারে তার পথ জানে না। মানুষ আজ অন্ধ। দেখেও দেখে না। মানবজন্ম ক্ষুদ্র নয় বৃহৎ, এ জীবন শূন্য নয়, পূর্ণ। জীবনচরিত পাঠে সেই পথের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তাই আর থেমে থাকা নয়, এগিয়ে চলা। জীবনচরিত পাঠই মানুষকে তার। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) জীবনচরিত পাঠের উপকারিতা, (২) জীবনচরিত পাঠের আবশ্যিকতা ।
আরও পড়ুন – শৈশবের স্মৃতি রচনা