গ্রন্থাগার রচনা

ভূমিকা : 

গ্রন্থাগার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ত্রিবেণি সংগম। মানুষের মনের নানান জিজ্ঞাসা, তার সমাধান লিপিবদ্ধ থাকে গ্রন্থে। অজানা রহস্যের অনুসন্ধান, বিশ্বের জ্ঞানভাণ্ডারের অমূল্য সম্পদ সবই এই গ্রন্থের কারাগারে বন্দি। মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল। কিন্তু কোনো ব্যক্তির পক্ষে বিশ্বভাণ্ডারের এই গ্রন্থ সংগ্রহ করা অসাধ্য। গ্রন্থসমূহ মানুষ যত্নে একত্রিত করে গড়ে তোলে গ্রন্থাগার।

গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা : 

মানুষ বৃহৎ জগতের কাছে নিজেকে মেলে ধরতে চায়। নিজেকে জানতে চায়, জানাতেও চায়। রচনা করে নানান গ্রন্থ। অতীত ইতিহাস বিধৃত থাকে, নতুন প্রজন্ম সেই গ্রন্থের স্পর্শে জ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ করে। গ্রন্থাগারই মানুষের একমাত্র সহায়ক। প্রাচীনকালের গ্রন্থাগার প্রাচীনকালে ছিল গুরুপরম্পরায় শিক্ষাদান। পরে তালপাতায়, ভূর্জপাতায়, পশুর চামড়ায়, তুলোট কাগজে মানুষ তার চিন্তাভাবনাগুলিকে ধরে রাখত। আরও পরে শিলালিপিতে খোদাই করে রাখা হত। তারপর আবিষ্কৃত হয় মুদ্রণযন্ত্র। প্রাচীন রোমেই সর্বসাধারণের জন্য প্রথম গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়। ভারতবর্ষের বুকে বৌদ্ধবিহারে, নালন্দা মহাবিহার ও বিক্রমশিলার গ্রন্থাগার ছিল অত্যন্ত বৃহৎ। সোমনাথ ও বারাণসীর গ্রন্থাগারও ছিল উল্লেখযোগ্য।
গ্রন্থাগার রচনা

বর্তমানের গ্রন্থাগার : 

গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বর্তমানে শিক্ষার্থীর হার অনেক বেশি। ফলে আরও বেশি করে গ্রন্থাগারের প্রয়োজন হওয়ায় নানান ধরনের গ্রন্থাগার তৈরি হয়েছে। প্রায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোটো-বড়ো গ্রন্থাগার রয়েছেই। এগুলিতে মূলত শিক্ষার্থীদের পঠন-পাঠন উপযোগী গ্রন্থ থাকে। কিন্তু বিদ্যালয়ের বাইরেও অগণিত মানুষ রয়েছে। তাই তাদের কাছে জ্ঞানভাণ্ডার পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সরকারি ও বেসরকারি গ্রন্থাগার। জাতীয় গ্রন্থাগার ছাড়াও রয়েছে গ্রামে গঞ্জে গ্রামীণ গ্রন্থাগার।

আধুনিক গ্রন্থাগারের ভূমিকা : 

গ্রন্থাগার মানুষকে জ্ঞানের আলো দেয়। গ্রন্থাগার মনের অন্ধকার দূর করার সহায়ক। আধুনিক গ্রন্থাগারের একটি বড়ো কাজ হল রেফারেন্স সার্ভিস’। এখানে পাঠকগণ তাদের মনের কথা বলে প্রয়োজনমতো পুস্তক সংগ্রহ করতে পারে। বিভাগীয় কর্মীরা পাঠকদের সেইভাবে সাহায্য করে। এ ছাড়াও এখন প্রদর্শনী, নির্দিষ্ট দিন ঠিক করে বিষয়গত আলোচনা হয়ে থাকে, যাতে পাঠকবর্গ ভুলপথে পরিচালিত না হয়।

গ্রন্থাগারিকের ভূমিকা : 

গ্রন্থাগার যত বেশি সচল, যত বেশি মানুষের উপস্থিতি ঘটাতে পারে সেই গ্রন্থাগারটি তত বেশি সফল। এখানে গ্রন্থাগারিকের ভূমিকা অত্যন্ত প্রবল। শিক্ষার্থীদের পরিচালনা করতে হলে, তাদের মনের কাছে পৌঁছে যেতে হলে গ্রন্থাগারিককে অমায়িক হতে হবে, সন্ত্বনয় ও ছাত্রস্বার্থরক্ষাকারী এক ব্যক্তিরূপে নিজেকে তুলে ধরতে হবে।

উপসংহার : 

গ্রন্থাগার মানুষের জীবনসহায়ক। অন্ধ যেমন যষ্টিকে আশ্রয় করে চলে, তেমন জ্ঞানপিপাসু শিক্ষার্থীরাও গ্রন্থাগারকে আশ্রয় করে এগিয়ে চলে। মননশীল লেখক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, “লাইব্রেরি হাসপাতালের চেয়ে কম উপকারী নয়, তার কারণ আমাদের বর্তমান অবস্থায় লাইব্রেরি হচ্ছে একরকম মনের হাসপাতাল।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) গ্রন্থাগার ও শিক্ষাবিস্তার, (২) মানবসভ্যতা ও গ্রন্থাগার।

Leave a Comment