একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা 400+ শব্দে

একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা

একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা
একটি শীতের সকাল প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

প্রকৃতির বুকে বর্ণময় ষড় ঋতুর আবির্ভাব নিজ-নিজ বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্যমণ্ডিত। প্রতিটি ঋতুতেই প্রকৃতি নবসাজে রূপময়ী হয়ে ওঠে। হেমন্তের বিদায় ঘটেছে। ধরিত্রী এখন শীতের অবগুণ্ঠনে ঢাকা। শীতের কামড়ে প্রকৃতি আড়ষ্ট। এক গভীর শূন্যতা চারিদিকে বিরাজমান। “শুল্ক শাখা যাও যে চুমি কাঁপাও থরথর।” প্রকৃতির এক উদাসী, বিষণ্ণ চেহারা। ধীরে ধীরে বিদায় নিচ্ছে গাছের সমস্ত পুরোনো পাতা। জীর্ণ, দীর্ণ রূপে আজকের শীতের সকালটি আবির্ভূত। এ যেন, কবির কণ্ঠের সেই সুর, “জীর্ণ পাতা বিদায় গাথা গাহিছে ঝরঝর।” কিন্তু প্রতিদিনের মতো সকালের আগমন হলেও কোথাও যেন ভিন্নতা, রূপময়তা ও আকর্ষণ যেন কত গভীর! মন আজ গেয়ে ওঠে
‘ জাগুক মন কাঁপুক বন, উড়ুক ঝরা পাতা, উঠুক জয়, তোমার জয়, তোমারি জয়গাথা।”

শীতের একটি দিনের সকাল

আজকের সকালটা অন্য দিনের থেকে একটু ভিন্ন স্বাদের। ছুটির দিন। তাই তাড়া ছিল না ঘুম থেকে ওঠার। কিন্তু সময়ের ফাঁকে ফাঁকে দিনমণি তখন অনেকটাই পূর্বদিগন্তের ওপরে অবস্থান করেছে। মায়ের ডাক তো একাধিকবার কানে পৌঁছেছে। কিন্তু আজ যে আলস্য আর শীতের তীব্রতা দুই-ই একসঙ্গে পথ পরিক্রমায়। ভেসে আসছে পথচলা মানুষের কণ্ঠের আওয়াজ।
তাই লেপের আরাম ছেড়ে উঠে পড়লাম। চাদরটা গায়ে চাপিয়ে ঘরের জানলাটা ধীরে ধীরে খুললাম। হঠাৎ মুঠো মুঠো হিমেল হাওয়া ঢুকল ঘরে। বাইরে ঘন কুয়াশার চাদর। দূরের জিনিসও অস্পষ্ট। শীতের স্পর্শে আমার শরীরটা আর-একবার উঠল কেঁপে। শীতের হাওয়ার পরশ আমলকীর ডালে ডালে যেমন নাচন ধরিয়েছে, তেমন শরীর-মনকে আমার কাঁপুনি দিয়ে চলেছে। হাত-মুখ ধুয়ে বারান্দায় সোফায় গিয়ে বসলাম। পুবের রোদ এসে পড়েছে সেই খোলা বারান্দার গায়ে।

সকালবেলার রূপ

শীতের প্রকোপ খুব বেশি। রোদের তীব্রতা আজ ছিল না। দূরে চোখ পড়তেই দেখলাম বেশ কয়েকজন লোক জটলা করে বসে টায়ার পুড়িয়ে শীতের হাত থেকে নিজেদের রক্ষায় ব্যস্ত। উত্তুরে হাওয়ার প্রকোপেও মানুষের ব্যস্ততার শেষ নেই। কারও গায়ে চাদর, কারও শীতের গরম পোশাক গায়ে চাপানো। এই অবস্থায় কেউ কেউ সঙ্গীকে ডাক দিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্রে চলেছে। এখনও গ্রামের মানুষের অনেকেরই অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব।
যদিও তিন-ফসলি চাষের জন্য বা একশো দিনের কাজের জন্য কর্মদিবস এখন অনেক বেশি। দেখলাম, দূরে মেঠো পথ ধরে ধান চাষের জন্য তৎপর হয়ে বাড়ির পুরুষরা বেরিয়ে পড়েছে মাঠের দিকে। নীল আকাশের বুক থেকে সূর্যের একরাশ দীপ্তি এসে পড়ল আমার মুখে। কী-তৃপ্তি! তপ্ত রোদের স্পর্শ মনকে রাঙিয়ে দিল। রাস্তা দিয়ে মাথায় ঝাঁকা নিয়ে নানান সবজি সাজিয়ে দোকানিরা চলেছে হাটের পথে। বাগানের ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুলের দিকে চোখ পড়তেই বুকটা আনন্দে নেচে উঠল।

মনের প্রতিক্রিয়া

শীতের সকালটা মনকে কোথায় যেন চুপিচুপি ডেকে নিয়ে গেল। কৃষকদের মনে এক আনন্দের মূর্ছনা। এ যে মুগ, মুশুর, ছোলা, কলাই বোনার সময়। নলেন গুড়ের গন্ধে আমোদিত চারিদিক। মায়ের হাতে তৈরি নানা রকম পিঠেপুলি, পায়েসের ঘ্রাণ, আর চড়ুইভাতির কথা মনে ভেসে ওঠে। কানে আসে চিড়িয়াখানার ডাক শহুরে ছেলে-মেয়েরা নিশ্চয়ই এতক্ষণে চিড়িয়াখানার গেট পেরিয়ে গেছে। অনাবিল আনন্দের ঢেউ মনকে দোলা দিয়ে যায়।

উপসংহার

আজকের শীতের সকালের এক বিচিত্র অনুভূতি মনকে অনুরণিত করে তোলে। শীতের হাড় হিমকরা শীতলতার স্পর্শ, কিছুটা সময়ের জন্য বিষণ্ণ করে তুললেও শীতের মাসেই পাই উদাসী বাউলের স্পর্শ। শীত মনে প্রাণচঞ্চল জীবনের স্পন্দন জাগায়, মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) একটি শীতের দিন, (২) শীতের সকালের অনুভূতি।

Leave a Comment