আমার প্রিয় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা/বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ/তোমার প্রিয় কবি/কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ
আমার প্রিয় কবি – রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের বিপুল পরিসরে তিনি একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা কাব্যে ভাবগঙ্গার তিনি ভগীরথ। মানবজীবনের এমন কোনো চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র নেই, যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। মানুষের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, মিলন-বিরহ নিয়েই তাঁর রচনাসম্ভার। তিনি বিশ্বসাহিত্যের এক কল্পবৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই আমাদের প্রতিদিনের জীবন।
ভূমিকা :
রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি। বাংলা তথা বিশ্বসাহিত্যের বিপুল পরিসরে তিনি একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা কাব্যে ভাবগঙ্গার তিনি ভগীরথ। মানবজীবনের এমন কোনো চিন্তাভাবনার ক্ষেত্র নেই, যেখানে তিনি বিচরণ করেননি। মানুষের চিরন্তন আশা-আকাঙ্ক্ষা, সুখ-দুঃখ, মিলন-বিরহ নিয়েই তাঁর রচনাসম্ভার। তিনি বিশ্বসাহিত্যের এক কল্পবৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়েই আমাদের প্রতিদিনের জীবন।
জন্ম ও শিক্ষা :
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে (বাংলা ২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ) জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথের জন্ম। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাতা সারদাদেবী, পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ওরিয়েন্টাল সেমিনারি ও নর্মাল স্কুলে তাঁর শৈশব ও কৈশোরের কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়েছিল। কিন্তু চার দেয়ালের গণ্ডিবদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় বালক রবীন্দ্রনাথের মন ভরে না। শেষ পর্যন্ত গৃহশিক্ষকের তত্ত্বাবধানেই গৃহেই শুরু হল শিক্ষা।
কাব্যচর্চার সূত্রপাত :
কাব্যচর্চার শুরু ছোটো বয়স থেকেই। মাত্র ১৩ বছর বয়সেই। ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকায় তাঁর প্রথম কবিতার প্রকাশ। ১৭ বছর বয়সে পাড়ি দেন বিলেত। উদ্দেশ্য আইনজীবী হওয়া। কিন্তু তিনি যে বাণীর বরপুত্র। তাই দেড় বছর পরেই ফিরে এলেন স্বদেশে। রচিত হল প্রথম গীতিনাট্য, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’; যা তাঁর প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সংগীতচর্চার এক আশ্চর্য ফসল।
কবি রবীন্দ্রনাথ :
আমার প্রিয় কবি মানুষের হৃদয়ের অনুভূতিকে ভাষায় রূপ দিয়েছেন। জীবনের প্রথম দিকে তাঁর কাব্যে যে উৎস মুখ খুলে গিয়েছিল, তাই কলতানে কল্লোলিত হয়ে উঠল ‘সন্ধ্যাসংগীত’ ‘প্রভাতসংগীত’ ‘কড়ি ও কোমল’, ‘ভানুসিংহের পদাবলি’, ‘মানসী’ ও ‘সোনার তরী’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থে। ‘মানসী’ থেকেই কবির ব্যক্তিত্ব পূর্ণরূপে প্রকাশিত হল। সোনার তরির পালে লাগল নতুন হাওয়া। সৃষ্টি হল ‘চিত্রা’, ‘চৈতালি’, ‘কল্পনা’, ‘কথা ও কাহিনী’, নৈবেদ্য’, ‘খেয়া’, এবং ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’ ও ‘গীতালি’। সোনার ফসলে ভরে উঠল বাংলা সাহিত্যের তরি। এখানেই থেমে থাকা নয়; ‘বলাকা’, ‘পলাতকা’, ‘পূরবী’ ও ‘শ্যামলী’র ধারা বেয়ে তাঁর কাব্যতরি ‘নবজাতক’, ‘সানাই’, ‘জন্মদিনে ও ‘শেষলেখা’-র মধ্য দিয়ে বেয়ে চলেছে আমরণ। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজিতে গীতাঞ্জলি’র অনুবাদ করে তিনি ‘নোবেল’ পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলার কবি হলেন বিশ্বকবি। তাঁর রচিত গানের সংখ্যা কয়েক হাজার। ভারতের এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তাঁরই সৃষ্টি।
আমার প্রিয় কবি কেন? :
‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’। রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনের আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সবকিছুরই চিরসাথি। তিনিই আমাকে শিখিয়েছেন ‘যারে বলে ভালোবাসা তারে বলে পূজা’। অন্তরের শেষ শ্রদ্ধা নমস্কার তাঁর পায়েই নিবেদন করলাম। তিনি অন্তরের সঙ্গী। তাঁর কাব্য নিয়েই মূঢ় ম্লান-মূক নতশির মানুষের মুখে প্রতিবাদের ভাষা জোগান দিয়েছেন। দেশপ্রেমের মূর্ত প্রতীক। তিনি বিপ্লবী, তিনি ভারতবর্ষের কোটি কোটি মানুষের অগ্রণী সৈনিক।
কবি রেখে গিয়েছেন অক্ষয় মানবসম্পদ। বোলপুরে শান্তিনিকেতনে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘বিশ্বভারতী’ বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্য, কলা, বিজ্ঞানচর্চার পীঠস্থান। অদূরে প্রতিষ্ঠিত ‘শ্রীনিকেতন’ প্রতিষ্ঠানটি কৃষি শিল্পের এক অনন্য কেন্দ্ৰ। কবি হয়েও তিনি সমাজসেবক ও দক্ষ সাংগঠনিক।
উপসংহার :
অবশেষে অম্লান মানবপ্রীতি সাহিত্যের সোনার তরি, অফুরন্ত সংগীতের ভাণ্ডার এবং গভীর স্বদেশানুরাগ দেশবাসীর হাতে দিয়ে ২৫ বৈশাখের রবি অস্তমিত হল ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ২২ শ্রাবণ। গভীর স্পর্শকাতরতা, নিবিড় বিশ্বাত্মাবোধ এবং ঈশ্বরচেতনা তাঁর কাব্যপ্রতিভাকে ত্রিবেণি সংগমে বেঁধেছিল। আজও তিনি অম্লান। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী।
তাঁকে পেয়েই মানুষ চিরনন্দিত। এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, (২) তোমার প্রিয় কবি, (৩) কবিশ্রেষ্ঠ রবীন্দ্রনাথ।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচনা/সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগর/তোমার আদর্শ মহাপুরুষের জীবনচরিত/করুণাসাগর বিদ্যাসাগর
ভূমিকা :
যুগে যুগে কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করেন, যাঁরা চিন্তায়, কর্মে সাধারণ মানুষ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাঁদের লক্ষ্য মানবকল্যাণ। এমনই একজন মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত। তাঁর পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত৷
জন্ম ও বংশ পরিচয় :
মেদিনীপুর জেলার এক শান্তশ্যামলিমা ঘেরা গ্রাম বীরসিংহ। জন্ম নিলেন বীরসিংহের সিংহশিশু ঈশ্বরচন্দ্র। ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর। দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার। পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, মাতা করুণাঘন মূর্তি ভগবতী দেবী। পিতামহ রামজয় তর্কভূষণ এক অনন্যসাধারণ বলিষ্ঠ, উন্নত চরিত্রের মানুষ। তিনি ছিলেন এক অনন্যসাধারণ মাতৃভক্তির চরম পরাকাষ্ঠা। শিশু ঈশ্বরচন্দ্র দারিদ্র্যকে সঙ্গী করেই পথচলা শুরু করেন।
শিক্ষাজীবন :
শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় গ্রামেরই চতুষ্পাঠীতে। আট বছর বয়সে পায়ে হেঁটে পিতার সঙ্গে আসেন কলকাতায়। ভরতি হন সংস্কৃত কলেজে। সংস্কৃত কলেজের সর্বোচ্চ উপাধি ‘বিদ্যাসাগর’ তাঁরই শীর্ষে স্থাপিত হল। সংস্কৃত ছাড়াও ইংরেজি শিক্ষাতেও তিনি ছিলেন কঠোর অধ্যবসায়ী।
কর্মজীবন :
কর্মই মানুষের শ্রেষ্ঠ পরিচিতি। কর্মজীবনের শুরুতে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজে প্রধান পণ্ডিতের পদ অলংকৃত করেন। পরে সংস্কৃত কলেজে সহকারী সম্পাদক পদে যোগদান। ক্রমে সম্পাদক ও অধ্যক্ষের পদ গ্রহণ করেন। তিনি স্কুল পরিদর্শকের দায়িত্বও গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু শিক্ষাবিভাগের কর্মকর্তার সঙ্গে মতান্তরে ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। শুরু হয় জীবনের আর এক অধ্যায়।
সমাজসেবা :
মহৎ প্রাণ, মহান জীবনের অধিকারী ঈশ্বরচন্দ্র। আর্ত, পীড়িত, অসহায় মানুষের সকরুণ আবেদন তাঁর হৃদয়কে উদ্বেল করেছিল। তাই তাদের সেবাতেই আত্মনিয়োগ করলেন তিনি। সমাজসংস্কারে ব্রতী হলেন] কৌলীন্য ও বহুবিবাহ প্রথা ছিল তখন এক সামাজিক ব্যাধি। বাল্যবিধবার অশ্রুমোচনের জন্য দয়ার সাগর বিদ্যাসাগর সচেষ্ট হলেন। খুঁজে বার করলেন শাস্ত্রীয় সমর্থন। গর্জে উঠল রক্ষণশীল সমাজ। তাঁর প্রাণসংহারেরও চেষ্টা হয়েছিল। তবু বিদ্যাসাগর ছিলেন অবিচল, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আপসহীন সংগ্রামে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই ‘বিধবা বিবাহ’ আইন পাস হল। বিধবা বিবাহ প্রবর্তন ও বাল্যবিবাহ নিবারণ ছিল তাঁর জীবনের এক মহান ব্রত। শিক্ষাবিস্তার ও বিশেষত নারীশিক্ষা বিস্তারে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিকৃৎ। বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠে। দুস্থ মানুষ, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার তিনি ছিলেন অনাহৃত বন্ধু।
সাহিত্যসেবা :
ঈশ্বরচন্দ্র সাহিত্যসেবায়ও নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। তিনি বর্ণপরিচয় (১ম ও ২য় ভাগ), ব্যাকরণ কৌমুদী, কথামালা, ঋজুপাঠ, উপক্রমণিকা, সীতার বনবাস, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, ভ্রান্তিবিলাস, বাংলার ইতিহাস প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেন। বাংলা গদ্যকে তিনি সাবলীল ছন্দময় করে তুললেন।
করুণাসাগর :
বিদ্যাসাগর ছিলেন করুণাঘন মূর্তির বাস্তব রূপকার। মানবতার মূর্ত প্রতীক। কার্মাটারে দরিদ্র শবর সম্প্রদায়ের সেবায় তিনি ছিলেন আত্মমগ্ন। অন্ন-বস্ত্র-ওষুধ দিয়ে সেবা দিয়ে তাদের আপন করে নিয়েছিলেন।
উপসংহার :
মানবজীবন চিরস্থায়ী নয়। ‘জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে?’ ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই। । শোকাহত, বাকরুদ্ধ মানুষ। বিদ্যাসাগর শ্রাবণ রাত্রির ঘনঘোর অন্ধকারে একা যাত্রা করলেন অমৃতলোকের পথে। এক অনির্বাণ দীপশিখা নিভে গেল আকাশপথে। মানুষকে দিয়েছেন চলার পথের সন্ধান, রেখে গিয়েছেন অক্ষয় কীর্তি।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) সমাজসংস্কারক বিদ্যাসাগর, (২) তোমার আদর্শ মহাপুরুষের জীবনচরিত, (৩) করুণাসাগর বিদ্যাসাগর।
আরও পড়ুন – সার্ভে পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা