আধুনিক জীবনে কম্পিউটার
ভূমিকা :
বিজ্ঞান প্রযুক্তির মধ্য দিয়ে নব নব বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের রং-রূপ-ভাব বদলে দিয়েছে। এই আবিষ্কারের পিছনে রয়েছে মানুষের অক্লান্ত প্রচেষ্টা। বিজ্ঞান যত মানবিক কল্যাণমুখী হয়ে উঠবে, ততই আলোকে রঙিন হবে জগৎ। বিংশ শতাব্দীর নব বিস্ময় কম্পিউটার বা যন্ত্রগণক।
আবিষ্কার ও ক্রমবিবর্তন :
গণনার দ্রুততা বা জটিল গণনা সমাধানে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে গণিতবিদ চার্লস ব্যাবেজ যন্ত্রটি আবিষ্কার করেন। এরপর যাঁর নাম করা যায় তিনি হলেন হারমান হলারিথ। এঁর অবদানও কম্পিউটার জগতে স্মরণীয়। প্রথম যে কম্পিউটার আবিষ্কৃত হয়েছিল তার নাম দেওয়া হয়েছিল – ‘এনিয়াক (ENIAC)’। এরপর আবিষ্কৃত হল ‘মাইক্রো কম্পিউটার’ (Micro Computer)। আধুনিক কম্পিউটার বিংশ শতাব্দীর বিস্ময়।
কম্পিউটারের কয়েকটি দিক :
কম্পিউটার যন্ত্রটির মধ্যে তথ্য ও নির্দেশদানের ক্ষমতা যেমন রয়েছে, তেমন সংরক্ষণ ক্ষমতাও রয়েছে। কম্পিউটারের কার্যধারা পরিচালিত হয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার – এই দুটি জিনিসের সমন্বয়ে। – যান্ত্রিক অংশটিকে বলা হয় হার্ডওয়্যার এবং এই যান্ত্রিক সমবায়কে সঠিকভাবে পরিচালিত করার জন্য যে সমস্ত নির্দেশক পরিকল্পনা (programmes) ব্যবহার করা হয়, তাদের বলা হয় সফটওয়্যার। কম্পিউটারের মূল অংশ পাঁচটি – কন্ট্রোলার, মেমরি, গণিত, ইনপুট ডিভাইস ও আউটপুট ডিভাইস। এর কতকগুলি ভাষাও আছে; যেমন – ‘কোবল্’, ‘পাস্কাল’, ‘আডা’, ‘ফোরট্রান’ প্রভৃতি।
কম্পিউটারের ব্যবহার :
বর্তমানে কম্পিউটারের সাহায্যে বহু ধরনের কাজ করা যায়। বহু মানুষের কাজ সে একাই করতে পারে এবং নির্ভুলভাবে সম্পন্ন করে। জটিল গাণিতিক হিসাবনিকাশ ছাড়াও পণ্য উৎপাদনের গুণমান নির্ণয়ে, রেলের ও বিমানের আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আয়ব্যয়ের হিসাব, রোগনির্ণয়ে কম্পিউটারের অবদান অনস্বীকার্য। ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রগণকের ব্যবহার মহাকাশ গবেষণায় বিশেষভাবে কার্যকরী। পারমাণবিক বিদ্যুৎচুল্লির নিয়ন্ত্রণে এর ব্যবহার বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ট্রাফিক কন্ট্রোল, টেলিফোন, ইলেকট্রিক বিল, মার্কশিট তৈরিও হচ্ছে। শিক্ষামূলক ‘কম্পিউটার কিট’ রয়েছে যা বর্ণপরিচয় থেকে শুরু করে ভূগোল, বিজ্ঞান, ইতিহাস, অঙ্ক সবই শেখায়। মানুষের নিঃসঙ্গ জীবনে কম্পিউটার হয়েছে সঙ্গী ও বন্ধু।
ভারতে কম্পিউটার :
ভারতে প্রথম কম্পিউটার বসেছিল ১৯৫৫ সালে। এখন ভারতে উন্নতমানের অনেক কম্পিউটার তৈরি হয়ে থাকে। উন্নত কোম্পানিগুলির মধ্যে রয়েছে ইউনিভ্যাক, এডস্যাট, আই.বি.এম.৬৪০, সিস্টেম ৩৬০, আই.সি.এল ২৯০০, সুপার কম্পিউটার সাইবার ২০৫, ক্লে-১, ক্লে-২ মডেল ইত্যাদি।
কম্পিউটার প্রয়োগে মানুষের কর্মহীনতা :
কম্পিউটার যেমন মানুষকে কাজের গতি দিয়েছে, পাশাপাশি চলার পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অটোমেশনের ফলে হাজার হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। বেকারত্ব নেমে আসছে।
উপসংহার :
বিংশ শতাব্দীর এই আবিষ্কার মানবসমাজের – বিস্ময়। কম্পিউটার সভ্যতার অগ্রগতির প্রতীক। কম্পিউটার তার আশ্চর্য কার্যকারিতা দেখিয়েই মানুষের মন জয় করেছে। এর বাস্তব প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) বিজ্ঞানের অগ্রগতি ও কম্পিউটার, (২) যন্ত্রগণক বিজ্ঞানের নতুন দূত।