নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ৭

DH Bharat Sevasram Sangha Pranab Vidyapith (HS)

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ৭

১.১ ইলিয়াস বাস করত – (খ) উফা প্রদেশে।
১.২ ‘দাম’ গল্পের কথকের নাম (গ) সুকুমার।
১.৩ ঈশানে উড়িল মেঘ সঘনে (গ) চিকুর।’
১.৪ নোঙর পড়ে গিয়েছে – (খ) তটের কিনারে। 
১.৫ ‘আবেস্তা’ ভাষাটি ব্যবহার করত (ঘ) প্রাচীন আরব দেশীয়রা।
১.৬ লেখিকা বেগম রোকেয়া চায়ের খেতগুলির বর্ণনায় যে রঙের উল্লেখ করেছেন, তা হল – (গ) সবুজ।
১.৭ শকুন্তলাকে অভিশাপ দিয়েছিলেন – (ক) দুর্বাসা।
১.৮ শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু পেশায় ছিলেন— (খ) আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক।
১.৯ প্রোফেসর শঙ্কু আবিষ্কৃত ‘রিমেমব্রেন’-এর কাজ হল (ঘ) লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনা।
১.১০ সন্ডার্সের স্ত্রী ডরথির সঙ্গে শঙ্কু যে বিখ্যাত ইংরেজ কবির বাড়ি দেখতে গিয়েছিলেন তাঁর নাম (খ) কিট্স ।
১.১১ বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনি (ক) ৭টি।
১.১২ ‘আস্তাবল’শব্দটি—(ক) ধ্বনির আগমজাত পরিবর্তনের ফল। ১.১৩ তালব্য ধ্বনিগুলি হল – (খ) চ্, ছ, জ, ঝ
১.১৪ বিসর্গসন্ধি – (খ) দুই প্রকার। –
১.১৫ ‘ফুল’ একটি – (ঘ) বিদেশি উপসর্গ।
১.১৬ ‘শান্‌চ’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দ নয় – (ক) জিজ্ঞাসা । 
১.১৭ ‘তৎসম’ কথাটির অর্থ – (ঘ) সংস্কৃতের সমান ।
১.১৮ সর্বনাম পদটি হল – (ক) উনি ।
২.১ ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পটির কথক হল নরু। নরুর প্রকৃত নাম নরেশ। 
২.২ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের রচিত ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশে রথের মেলায় রাধারাণীর অবিক্রীত বনফুলের মালা আগন্তুক ব্যক্তি কিনে নেবে এই কথা শুনে রাধারাণীর আনন্দ হয়।
২.৩ ‘ভাঙার গান’ কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম পরাধীন ভারতবর্ষে ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বীর বিপ্লবীদের রক্তে জমাট বেদীকে ‘পাষাণ-বেদী’ বলেছেন। ইংরেজদের বন্দিশালাই আসলে এখানে ‘পাষাণ-বেদী’।
২.৪ ‘আবহমান’ কথাটির অর্থ হল ক্রমাগত বা চিরপ্রচলিত। প্রাচীন কাল থেকে যা চলে আসছে তা’ই আবহমান।
২.৫ মিস মুলারের পুরো নাম হল হেনরিয়েটা মুলার।
২.৬ ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধে লেখক বেগম রোকেয়া লিখেছেন- হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে অরণ্যপ্রকৃতি অত্যন্ত ঘন ও সন্নিবিষ্ট। নির্জন বন্যপথে বাঘ নেই, তাই নির্ভয়ে ভ্রমণ করা যায় সেখানে ।
২.৭ মহর্ষিকণ্ব বনে পক্ষীপরিবৃত অবস্থায় শকুন্তলাকে পেয়েছিলেন ২.৮ নিউটনের দীর্ঘায়ু হওয়ার কারণ প্রোফেসর শঙ্কুর নিজের তৈরি ওষুধ মার্জারিন।
২.৯ স্বর্ণপর্ণীর প্রয়োগ প্রোফেসর শঙ্কু প্রথম করেন গিরিডিবাসী উকিল জয়গোপাল মিত্রের ওপর।
২.১০ ‘হাইল হিটলার’ কথার অর্থ হল ‘হিটলার জিন্দাবাদ’। 
২.১১ বিশেষ্য পদের মূলত নয়টি ভাগ। দুটি ভাগের নাম হল – (ক) সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য, (খ) শ্রেণিবাচক বিশেষ্য ।
২.১২ পুরুষবাচক সর্বনাম তিনপ্রকার। যথা— উত্তম পুরুষ, মধ্যম পুরুষ ও প্রথম পুরুষ।
২.১৩ ক্রিয়া বিভক্তি : যে বিভক্তি ধাতু বা ক্রিয়াপদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কার্যবাচক ক্রিয়াপদ তৈরি করে তাকে ক্রিয়া বিভক্তি বলে। যেমন— অ, ও, এ, এন ইত্যাদি।
২.১৪ সংস্কৃত উপসর্গ ‘প্র’ যোগ করে পূর্ববর্তী অর্থ বোঝায় এমন দুটি শব্দ হল – প্রপিতামহ, প্রবীণ ।
২.১৫ ‘অনীয়’ হল ‘উচিত’ বা ‘যোগ্য’ অর্থবাচক প্রত্যয়। কর্মবাচ্য ও ভাববাচ্যে ‘অনীয়’ প্রত্যয় হয়। যেমন— দৃশ্ + অনীয় = দর্শনীয়।
২.১৬ (১) জগদ্বন্ধু = জগৎ + বন্ধু, (২) অন্তর্হিত = অন্তঃ + হিত।
২.১৭ বাংলায় পাঁচ ধরনের অপিনিহিতি লক্ষ করা যায়। যথা— 
(ক) ‘ই’ কারের অপিনিহিতি—আজি > আইজ, কালি > কাইল।
(খ) “উ’ কারের অপিনিহিতি—সাধু >সাউধ, মাছুয়া > মাউছুয়া মাউছ্যা, গাছুয়া > গাউছুয়া > গাউচ্ছ্যা ইত্যাদি। 
(গ) ‘য’ ফলার অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি— সত্য > সইত্ত, বাক্য > বাইক্ক ইত্যাদি।
(ঘ) ‘জ্ঞ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপনিহিতি—যজ্ঞ > যইগ্‌গ।

(ঙ) ‘ক্ষ’ ধ্বনির অন্তর্গত ‘ই’ ধ্বনির অপিনিহিতি— চক্ষের > চইক্ষের, লক্ষ > লইক্‌খো ইত্যাদি।
২.১৮ স্বর্ণপর্ণী দিয়ে প্রোফেসর শঙ্কু যে ঔষধ তৈরি করেছিলেন তার নাম মিরাকিউরল বা সর্বরোগনাশক বড়ি। 
২.১৯ কবি জীবনানন্দ দাশ-এর রচিত ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি যে মেঘের কথা বলেছেন অস্তমিত সূর্যের আলোয় তার বর্ণ কামরাঙা-লাল। সেই মেঘকেই কবির মনে হয়েছে মৃত মনিয়ার মতো। 
৩।
৩.১ রবীন্দ্র-পরবর্তী বিখ্যাত কবি ও ছোটোগল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে উদ্ধৃত উক্তির বক্তা হলেন গল্পকথক। তিনি তাঁর সঙ্গী সোমেশকে একথা বলেছেন ।
গল্পকথক শীতকালের এক বাদল দিনে খবরের কাগজের পাতা ওলটাতে ওলটাতে হঠাৎ প্রত্যক্ষ করেন একসঙ্গে সাত-সাতটি নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। এই ঘটনা তাঁর কাছে ‘একটা আশ্চর্য ব্যাপার বলে মনে হয়েছে। কারণ, তিনি জানেন, এই ধরনের বিজ্ঞাপনগুলি পুরোপুরি অর্থহীন, বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই উদ্দিষ্ট ব্যক্তি বাড়ি ফিরে আসে।
৩.২ উদ্ধৃত অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের লেখা ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে।
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ‘আমরা’ কবিতায় ‘মুক্তবেণীর গঙ্গা’ বলতে গঙ্গা নদীর অবারিত গতিধারাকে বোঝাতে চেয়েছেন। গঙ্গার উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত গতিপথে বহু শাখা ও উপনদী রয়েছে। কিন্তু গঙ্গা অন্য কোনো নদনদীর সঙ্গে মিলিত না হয়ে মুক্তগতিতে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। গঙ্গা বাধা-বন্ধনহীন। তাই সত্যেন্দ্রনাথ ছন্দের জাদুতে তাকে মুক্তবেণী বলেছেন।
৩.৩ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃত অংশটিতে ‘তারা’ বলতে অঙ্কে যারা একশোর মধ্যে একশো পায় অর্থাৎ স্কুলের মেধাবী ছাত্রদের কথা বলা হয়েছে।
‘দাম’ গল্পে অঙ্কের মাস্টারমশাই-এর ছিল আশ্চর্য পরিষ্কার মাথা। নিপুণ দক্ষতায় যে-কোনো অঙ্ক একবার দেখেই তিনি কষে ফেলতে পারতেন নিমেষে। পুরুষ মানুষ হয়ে অঙ্ক না পারাটা ছিল তাঁর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। নানা শাস্তি, শাসনের মধ্য দিয়ে যে-কোনো উপায়ে তিনি সব ছাত্রদের অঙ্ক শেখাতে চাইতেন। তাই সব ছাত্ররা এমনকি মেধাবী ছাত্র, যারা অঙ্কে একশো তে একশো পেত তারাও তাঁর ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত।
৪.১ সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে ভাষার স্বয়ংসম্পূর্ণতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রশ্নে দেওয়া মন্তব্যটি করেছেন। সংস্কৃত ভাষা পৃথিবীর প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি। এ ভাষা নিজস্বতায় সমৃদ্ধ। সংস্কৃত ভাষায় রয়েছে এক উন্নত, বিপুল শব্দভাণ্ডার। কোনো নতুন চিন্তা, অনুভূতি কিংবা বস্তুর জন্য নবীন শব্দের প্রয়োজন হলে সংস্কৃত ভাষা তাই অন্য ভাষার কাছে হাত না পেতে নিজের ভাণ্ডারেই খোঁজে। ধাতু বা শব্দের সামান্য অদল-বদল করে প্রয়োজনীয় শব্দটিকে গড়ে নেবার চেষ্টা করে। অর্থাৎ সংস্কৃত ভাষা নিজের প্রয়োজন নিজেই মেটায়। এমনকি বিদেশি শব্দগ্রহণের পরিমাণও মুষ্টিমেয় হওয়ায় তা মূল ভাষাকে প্রভাবিত করে না। এজন্যই সংস্কৃত ভাষা স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল ভাষা।
৪.২ উদ্ধৃত অংশটি কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
মহর্ষি কণ্বের পালিতা কন্যা শকুন্তলা তাঁর স্বামী রাজা দুষ্মন্তের চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। মহর্ষি কণ্ঠের অনুপস্থিতিতে তপোবনে শকুন্তলাকে বিয়ে করে রাজা দুষ্মন্ত রাজধানীতে ফিরে যান। কিন্তু দীর্ঘ সময় কেটে যায় অথচ কোনো দূত শকুন্তলার খোঁজ নিতে তপোবনে আসে না, তাই স্বামীর চিন্তায় শকুন্তলা মগ্ন থাকে ।
৪.৩ ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই বীরসন্ন্যাসী বিবেকানন্দ উত্তরপ্রদেশের বিখ্যাত শৈলশহর আলমোড়া থেকে মিস নো-কে একটি পত্র লেখেন। এখানে সেই পত্রটির কথাই বলা হয়েছে।
বিবেকানন্দ স্টার্ডি নামে তাঁর একজন ইংরেজ ভক্তের কাছ থেকে প্রাপ্ত চিঠিতে মিস্ নো-এর ভারতে আসার অভিলাষ ও সংস্কারমূলক মানসিকতার পরিচয় পেয়েছেন। তাছাড়া, মিস মুলারের কাছ থেকে বিবেকানন্দ জেনেছেন মিস নোব্‌ল্‌-এর কর্মপ্রণালীর কথা। বিবেকানন্দের দৃঢ় বিশ্বাস হয়েছে যে, ভারতের কাজে মিস নো-এর একটা বিরাট ভবিষ্যৎ রয়েছে। তাই সেকথা সরাসরি জানানোর জন্য পত্রলেখা আবশ্যিক বলে মনে করেছেন।
৫.১ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কুর টিড়ীবাবার কথানুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে স্বর্ণপর্ণী গাছ আবিষ্কার করার অভিযানের কথা বলা হয়েছে।
বাবার মুখে হার্টব্লকের উপশমে অব্যর্থ গাছড়া স্বর্ণপর্ণীর নাম শুনে শঙ্কু তখনই ঠিক করেছিলেন কসৌলি যাবেন। কিন্তু বাবার আপত্তিতে আর যাওয়া হয়নি। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা গেলে তিনি দ্রুত পৌঁছে গিয়েছিলেন গন্তব্যে। একটা সস্তা হোটেলে উঠে ম্যানেজার নন্দকিশোরের কাছে জেনে নিয়েছিলেন টিড়ীবাবার বলা সেই চামুণ্ডার মন্দিরের কথা। তারপরই ঘোড়ায় চড়ে ঘোড়ার মালিক ছোটেলালের সঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিলেন গভীর অরণ্যে ঝরনার কাছে। এই ঝরনার পাশেই তিনি খুঁজে পান ‘স্বর্ণপর্ণী’ গাছড়াটি।
৫.২ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে উদ্ধৃতাংশটির বক্তা জেরেমি সন্ডার্সের বাবা লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক জনাথ্যান সন্ডার্স।
প্রোফেসর শঙ্কুর পত্রবন্ধু সন্ডার্স লন্ডনে শঙ্কুকে বৈজ্ঞানিক এবং সর্বরোগনাশক বড়ি মিরাকিউরলের আবিষ্কর্তা হিসেবে পরিচিত করাতে চাইছিলেন। কিন্তু প্রোফেসর শঙ্কু কোনোভাবেই মিরাকিউরলের আবিষ্কর্তার স্বীকৃতি নিতে চাননি। তখন সন্ডার্স তাঁকে ধমকের সুরে বলেন যে, গাছের উল্লেখ শুধু প্রাচীন সংস্কৃত চিকিৎসাশাস্ত্রে পাওয়া যায়, কাশীর সাধু ছাড়া যার সন্ধান কেউ জানেন না, সাড়ে ছ’হাজার ফুট উঁচুতে গভীর জঙ্গলে গিয়ে সেই গাছ খুঁজে আনার কারণে আবিষ্কারকের স্বীকৃতি তাঁরই পাওয়া উচিত। সন্ডার্সের এই কথার সমর্থনে তাঁর বাবা প্রোফেসর শঙ্কুর উদ্দেশে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
৬.১ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের আলোচ্য উক্তিটির বক্তা চন্দ্রনাথ। মেধাবী চন্দ্রনাথ স্কুলের কোনো পরীক্ষায় কখনও দ্বিতীয় হয়নি, সর্বদা সে প্রথম হত। কিন্তু এবার অস্বাভাবিকভাবে তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাকে দ্বিতীয় করা হয়েছে। চন্দ্রনাথ জানে, হীরু কেন ও কীভাবে ফার্স্ট হয়েছে। হীরুর কাকা স্কুলের সেক্রেটারি বলে সে বিশেষ সুবিধা পেয়েছে। পরীক্ষায় সে চন্দ্রনাথের কাছ থেকে তিনটে অঙ্ক টুকেছে। স্কুলের সহকারী শিক্ষক হীরুকে প্রাইভেটে পড়াতে গিয়ে প্রশ্ন বলে দিয়েছেন। তিনি ও আরও দু-একজন শিক্ষক হীরুকে যোগ্যতার চেয়ে বেশি নম্বর ইচ্ছে করেই দিয়েছেন। তাই বক্তার এরকম খেদোক্তি।
বক্তা চন্দ্রনাথ নিজের ‘ডিগ্‌নিটি” অর্থাৎ সম্মান বজায় রাখতে হেডমাস্টার মহাশয়কে পত্র দিয়ে সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছিল। তার দাদা নিশানাথ তাকে অনেক বুঝিয়েছেন, ক্রুদ্ধ হয়েছেন, শাসন করেছেন। হেডমাস্টার মহাশয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রত্যাখ্যানপত্র ফিরিয়ে নিতে বলেছেন। এ বিষয়ে দু-ভাইয়ের বিস্তর তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। চরম অস্ত্র হিসেবে তার দাদা ভাইয়ের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। তাতেও চন্দ্রনাথ নির্বিকারচিত্তে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে। হীরুর কাকা তথা স্কুলের সেক্রেটারি চন্দ্রনাথকে স্পেশাল প্রাইজ দিতে চাইলেও চন্দ্রনাথ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। হেডমাস্টার মহাশয় ডেকে পাঠালেও চন্দ্রনাথ আর স্কুলে যায়নি।
পরে ইউনিভার্সিটির এগ্‌জামিনেও হীরু চন্দ্রনাথের চেয়ে ভালো ফল করেছে এবং সে স্কলারশিপ পেয়েছে। তাই তার বাড়িতে উৎসব হয়েছে। সেই উৎসবের নিমন্ত্রণ চন্দ্রনাথ পত্রমারফত প্রত্যাখ্যান করে সেদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। এইভাবে বক্তা তার ‘ডিগ্‌নিটি’ শেষপর্যন্ত বজায় রেখে গেছে।
৬.২ পার্থিব জগতের অনিবার্য বাস্তবতার মাঝে দাঁড়িয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রোমান্টিক অন্তর্দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছেন। অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের বিস্তৃত কালের গণ্ডিতে খুঁজতে চেয়েছেন তিনি মানবসভ্যতার বিরামহীন ধারার স্বরূপটিকে সেই অনন্য অন্বেষণের কাব্যিক প্রকাশ ঘটেছে ‘খেয়া’ নামক সনেটটির ছোটো পরিসরে।
চিরন্তন গ্রামীণ সমাজচিত্রের প্রতিচ্ছবি উঠে এসেছে খেয়াঘাটের এপার-ওপারে। দুই তীরে দুখানি গ্রাম রেখে নদীটি প্রবাহিত হয়ে গেছে। সুস্থ জীবনের অনিবার্য সম্পর্ক রক্ষার তাগিদে, জীবনধারণে পরস্পরের নির্ভরশীলতার জন্য গ্রামের মানুষগুলো এপার-ওপার করে খেয়া নৌকার মাধ্যমে। জীবনধারণের প্রয়োজনীয়তার জন্য এপার ছুটে যায় ওপারে, ওপার আসে এপারে।
জীবননদীর দুই কূলে গ্রাম দুইখানি দাঁড়িয়ে আছে জীবন-মরণের প্রতীক হয়ে। বহির্জগতের রক্তক্ষয়ী সর্বনাশা ধ্বংসের ঢেউ আছড়ে পড়েনি দূর নদীতটের এই শাশ্বত জীবনের প্রান্তে। গ্রামদুটির সম্বন্ধ নিবিড়, অচ্ছেদ্য। এই খেয়াঘাটের কূলে নেই কোনো দ্বন্দ্ব, ঈর্ষা, কোন্দল। তথাকথিত সভ্যতা থেকে দূরবর্তী এই গ্রামদুটি পৃথিবীর হিংস্র উন্মত্ততায় বিচলিত নয়। তারা মিলনের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে বহমান কাল ধরে।
৬.৩ কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত রচিত ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে ‘আমাদের সেনা’ বলতে বাঙালি সেনার কথা বলা হয়েছে, যে বাঙালি সেনা চতুরঙ্গ সাজে রামচন্দ্রের প্রপিতামহ রঘুর সঙ্গে যুদ্ধ করেছে।
হস্তী, অশ্ব, রথ ও পদাতিক সৈন্য নিয়ে গঠিত সৈন্যবাহিনী ‘চতুরঙ্গ’ সৈন্যদল বলে পরিচিত। অতীত দিনে বাঙালি জাতির বীরসত্তার নিদর্শন হল তাদের চতুরঙ্গে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধ করা ও বিদেশিদের পরাজিত করা।
“আমরা” কবিতায় কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল অতীত তথা ইতিহাসের বর্ণনা করে পরাধীন মানুষের মনে স্বজাত্যবোধের সঞ্চার করতে চেয়েছেন। আত্মবিশ্বাসহীন বাঙালির সামনে তার পূর্বপুরুষের বীরগাথা তুলে ধরতে ইতিহাসের আশ্রয় নিয়েছেন কবি। সেই প্রসঙ্গেই চতুরঙ্গ সাজে রামের প্রপিতামহ আর্য রঘুর বিরুদ্ধে অনার্য বাঙালির সংগ্রামের কথা উল্লেখ করে বাঙালির মহিমা প্রচার করেছেন।
৭.১ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি বহুভাষাজ্ঞ, বিশিষ্ট রচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। ” ভাষার জন্ম থেকে স্বাভাবিক প্রবাহে মিশ্রণ ঘটতে ঘটতে
ভাষা নবরূপ নেয়। বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষাগুলোর মতো হিন্দি ভাষাও আত্মনির্ভরশীল ভাষা নয়। বিবিধ ভাষার প্রভাব ও ঋণ হিন্দি ভাষার নিজস্বতাকে বিনষ্ট করছে। এই ধারণার বশবর্তী হিন্দি ভাষার তাত্ত্বিক ও বহু সাহিত্যিক হিন্দি ভাষাকে এই প্রভাব ও বিনষ্টিকরণ থেকে মুক্ত করতে চাইছেন। এ প্রচেষ্টা সময়সাপেক্ষ হলেও ভবিষ্যতে যে সার্থকতা পাবে তা নিয়ে প্রাবন্ধিক আশাবাদী। তাই তিনি বলেছেন ফল যদি ভালো হয় তাহলে বাংলাতেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন তরুণ সাহিত্যিকরা।
বাংলা সাহিত্যে বিদেশি শব্দ ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের কথা। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল বিদেশি শব্দগ্রহণ ও ব্যবহারে উদারমনা ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ দ্বিধাহীনভাবে সাহিত্যের প্রয়োজনে ‘আৰু’, ইজ্‌জৎ’, ইমান’ ব্যবহার করেছেন। নজরুলও ‘ইনকিলাব’, শহিদ’, ‘খুন’, ‘বাগিচা’ ইত্যাদি অজস্র আরবি-ফার্সি শব্দকে বাংলা শব্দভাণ্ডারে প্রবেশ করিয়েছেন। বিদ্যাসাগর ‘সাধু’ রচনায় বিদেশি শব্দ ব্যবহার না করলেও বেনামিতে লেখা ‘অসাধু’ রচনায় চুটিয়ে আরবি-ফার্সি ব্যবহার করতেন। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরবি ও ফার্সি শব্দের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা ‘আহাম্মুখী’ বলে মনে করতেন।
৭.২ সংস্কৃত সাহিত্যের কবি কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ কাব্যনাটকের অনূদিত নাট্যাংশ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে রাজ-শ্যালক একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
পরিচয় : রাজা দুষ্মন্তের রাজধানী সুরক্ষার কাজে নিযুক্ত ছিলেন রাজার শ্যালক। আলোচ্য নাট্যাংশে তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। নাট্যাংশের শুরুতে দেখা যায়, দুই রক্ষীর সহায়তায় রাজদ্রব্য চুরির অপরাধে রাজ-শ্যালক ধীবরকে বন্দি করে এনেছে।
বিচক্ষণতা ও দায়িত্ব সচেতনতা : নগররক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক চরিত্রটি বিচক্ষণ ও দায়িত্ব সচেতন। চোর অভিযোগে ধৃত ধীবরকে আত্মপক্ষ সমর্থনে বারবার বাধা দেওয়া হচ্ছিল দেখে রাজ-শ্যালক বলেন— “একে পূর্বাপর সব বলতে দাও। মধ্যে বাধা দিয়ো না।” বিচক্ষণ নগররক্ষক ধীবরের কথার সত্যতা যাচাই করতে আংটি নিয়ে রাজার কাছে গিয়েছিলেন। দায়িত্ব সচেতন এই ব্যক্তি যেমন ধৃতের জবানবন্দি ধৈর্য নিয়ে শুনেছেন, তেমনি বিচারের পর বন্দিকে সম্মানজনক মুক্তি দিয়েছেন। বাকি রক্ষীদের মতো রাজার আদেশের পূর্বে শাস্তি নিয়ে অলীক কল্পনা করেননি। 
রসিকতা ও অহংকারী মনোভার : রাজ শ্যালক চরিত্রটিতে স্থূল রসিকতাবোধ লক্ষ করা যায়। মৎস্যজীবী ধীবরের পেশা নিয়ে ব্যঙ্গ করে তিনি বলেন — “তোর জীবিকা বেশ পবিত্র বলতে হয় দেখছি।” পদমর্যাদায় গর্বিত রাজ-শ্যালক অহংকারের সুরে নীচুশ্রেণির ধীবরকে জাত নিয়েও তাচ্ছিল্য করেছেন – “… এর গা থেকে কাঁচা মাংসের গন্ধ আসছে। এ অবশ্যই গোসাপ খাওয়া জেলে হবে।”
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা : ধীবরের কাছ থেকে আংটি নিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে গিয়েছিলেন রাজ শ্যালক। আংটি পেয়ে স্বভাবগম্ভীর রাজার যে ক্ষণিক বিহ্বলতা তা অনুধাবন করতে পেরেছিলেন তিনি। এর মধ্যে দিয়ে রাজ-শ্যালকের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
মহানুভবতা : রাজ-শ্যালক চরিত্রটি পূর্ণতা পায় নাট্যাংশের শেষ পর্বে। রাজাদেশে ধীবরকে রাজার দেওয়া পুরস্কারসহ মুক্তি • দিয়েছিলেন নগররক্ষক। প্রথমে সুনজরে না দেখলেও ধীবরের সততা, মার্জিত আচরণ তাকে প্রভাবিত করেছিল। নানাভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করলেও উদার ধীবর যে রক্ষীদের প্রতি প্রতিহিংসা বজায় রাখেনি, বরং তাদের অর্ধেক উপহার দিয়েছে তা রাজ শ্যালককে মুগ্ধ করেছিল। তাই মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে জাত্যভিমানী নগররক্ষক সামান্য ধীবরকে ‘বিশিষ্ট প্রিয়বন্ধু’ বলে গ্রহণ করেছে।
৭.৩ মহান চিন্তাবিদ বিবেকানন্দ তাঁর ‘চিঠি’ রচনায় মিস নোকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আলোচ্য উক্তিটি করেন।
‘যাঁরা’ বলতে এখানে সেভিয়ার দম্পতির কথা বলা হয়েছে। সেভিয়ার দম্পতি হলেন ক্যাপ্টেন জে এইচ সেভিয়ার এবং তাঁর স্ত্রী মিসেস সেভিয়ার।
মিসেস সেভিয়ার স্বামীজির চোখে ছিলেন ‘নারীকুলের রত্নবিশেষ।’ তিনি অমায়িক এবং স্নেহময়ী। বিবেকানন্দ তাঁর চিঠিতে মিস্ নোব্‌ল্‌কে জানান সেভিয়ার দম্পতিই একমাত্র ইংরেজ, যাঁরা এদেশীয়দের ঘৃণা করেন না। তাঁরা এদেশের মানুষের ওপর কর্তৃত্ব করতে আসেননি, এসেছেন সেবার মনোভাব নিয়ে। আজীবন বেদান্ত প্রচারের কাজে নিবেদিত এই মহীয়সী নারীর প্রতি স্বামীজির মুগ্ধতা ও আস্থা প্রকাশ পেয়েছে। যদিও স্বামীজি একথা উল্লেখ করেছেন যে তাঁদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কার্যপ্রণালী গড়ে ওঠেনি। তাই স্বামীজি মিস নোকে ‘চিঠি’-তে লিখেছেন যে তিনি এদেশে এলে সেভিয়ার দম্পতি ও মিস নোব্‌ উভয়েরই খুব সুবিধা হবে। স্নেহময়ী এই ইংরেজ ভক্ত মিসেস সেভিয়ারের প্রতি স্বামীজি যে খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিলেন ‘চিঠি’ পাঠ্যাংশে তার প্রমাণ পাওয়া যায়।
৮।
৮.১ ভারতরত্ন সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে আলোচ্য উদ্ধৃতিটির বক্তা প্রোফেসর শঙ্কুর পত্রবন্ধু সন্ডার্স। এরিখ ও হের্ গোয়রিং-এর মতো দুজন পাষণ্ডকে মিরাকিউরল ওষুধ দিতে বাধ্য হওয়ায় প্রোফেসর শঙ্কুর মন ভারাক্রান্ত হয়ে আছে একথা সন্ডার্সকে জানালে সন্ডার্স আলোচ্য উক্তিটি করেন।
এখানে মহৌষধ বলতে প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি ওষুধ মিরাকিউরল বা সর্বরোগনাশক বড়ির কথা বলা হয়েছে।
প্রোফেসর শঙ্কু আর ডরোথি যখন বাইরে ঘুরতে গিয়েছিলেন তখন সন্ডার্স শঙ্কুর সঙ্গে থাকা ‘মিরাকিউরল’-এর বড়ির বদলে ঘুমের ওষুধ ‘সেকোন্যালের বড়ি ভরে দিয়েছিলেন। তাই ব্ল্যাকশার্ট গোয়রিং-এর ওপরে এই অব্যর্থ ওষুধের অপব্যবহার করতে হয়নি শঙ্কুকে। শঙ্কুর মহৌষধ বিশ্বের হীনতম প্রাণীর উপকারে আসুক, তা সন্ডার্স চাননি।

Leave a Comment