নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ১০

Jenkins School, Cooch Behar

নবম শ্রেণি প্রশ্নবিচিত্রা উত্তর বিষয় বাংলা সেট ১০

১.১ “ইলিয়াসের তখন খুব বোলবোলাও,” – ‘বোলবোলাও’ শব্দের অর্থ হল— (ক) নামডাক।
১.২ “তোর জীবিকা বেশ পবিত্র বলতে হয় দেখছি।” – কথাটি বলেছে – (গ) শ্যালক।
১.৩ মাস্টারমশাইয়ের চোখ ছুরির ফলার মতো ঝক্‌ঝক্ করত – (গ) বুদ্ধিতে।
১.৪ ‘শহিদ’ শব্দটিকে বাংলায় এনেছেন (ঘ) নজরুল ইসলাম।
১.৫ ‘হিমালয় দর্শন’ যে শ্রেণির রচনার অন্তর্ভুক্ত তা হল – (ক) ভ্রমণ কাহিনি।
১.৬ কবি বলেছেন কামরাঙা-লাল মেঘ (খ) গঙ্গাসাগরে ডুবে গেছে।
১.৭ ‘খেয়া’কবিতাটি – (গ) ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।
১.৮ ‘একজন প্রকৃত সিংহীর প্রয়োজন।’ (ক) ভারতের নারীসমাজের জন্য।
১.৯ ‘আমাদের ছেলে (ক) বিজয়সিংহ লঙ্কা করিয়া জয়।’ 
১.১০ রাধারাণী ও তার মা প্রথমে থাকতেন (ক) ভদ্রাসনে ।
১.১১ শঙ্কু (ক) পদার্থবিদ্যা বিষয়ের অধ্যাপক ছিলেন।
১.১২ ‘ধোঁয়াশা’– (গ) জোড়কলম শব্দ ।
১.১৩ সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিতভাবে বাংলায় আগত শব্দগুলি হল – – (গ) তৎসম শব্দ। 
১.১৪ ‘গোলাপ’ শব্দটি হল (খ) ফারসি।
১.১৫ ‘মূর্খ তুমি, তাই এ কথা বললে’ – রেখাঙ্কিত পদটি – (ঘ) সর্বনামের বিশেষণ ।
১.১৬ ‘এবং’, ‘ও’, ‘আর’ প্রভৃতি – (গ) সংযোজক অব্যয়।
১.১৭ “বাবা জোরে হাঁটতে পারেন” – রেখাঙ্কিত পদটি (গ) ক্রিয়া বিশেষণ।
১.১৮ “মায়ের মুখে মহাভারত পড়া শুনত” – ক্রিয়াপদটি – (গ) নিত্যবৃত্ত অতীত কালের।
১.১৯ ‘নারীকুলের রত্নবিশেষত – বলা হয়েছে (খ) মিসেস সেভিয়ারকে।
১.২০ বাংলায় যেসব বিদেশি ভাষা ঢুকেছে তার মধ্যে প্রধান হল (ক) আরবি, ফারসি ও ইংরেজি। 
২.১ একসময় উফা প্রদেশের সবচেয়ে ধনী মানুষ ইলিয়াস বর্তমানে মহম্মদ শা-র বাড়িতে ভাড়াটে মজুর—একথা শুনে অতিথিরা বিস্মিত হন।
২.২ এখানে ‘প্রভু’বলা হয়েছে নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালককে। 
২.৩ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি কলেজের বার্ষিক উৎসবের কথা বলা হয়েছে।
২.৪ লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় স্বচ্ছন্দে আব্রু, ইজ্জৎ, ইমান ইত্যাদি শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন।
২.৫ রেলপথে যাবার কালে জলপ্রপাত বা নির্ঝরের বর্ণনাতীত সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে।
২.৬ ‘খেয়া’ কবিতায় কবি এখানে বলতে চেয়েছেন, খেয়াতরির পারাপারের মাধ্যমে জীবনের এই চলন চিরন্তন।
২.৭ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় বাংলার নীল সন্ধ্যাকে কবি কেশবতী কন্যার সঙ্গে তুলনা করেছেন। 
২.৮ স্বামী বিবেকানন্দ দেশের কাজে কিংবা জীবনের ক্ষেত্রেও আমরণ মিস নোল্‌-এর পাশে থাকবেন, এই তাঁর প্রতিজ্ঞা। 
২.৯ ‘বাঙালির কবি’ বলতে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা বলা হয়েছে। তিনি মহামিলনের গান গেয়েছেন।
২.১০ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়-এর ‘রাধারাণী’ উপন্যাসে রাধারাণী আগন্তুক রুক্মিণীকুমার রায়-এর সন্ধান পেল না।
২.১১ ‘হ্যাম্পস্টেড হিথ’ হল লন্ডনের একটি প্রাচীন সুবিশাল উদ্যান । বিস্তীর্ণ ঘাসে ঢাকা অসমতল এই জায়গায় অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন।
২.১২ আমেরিকার সংবাদে বিবেকানন্দ জেনেছেন যে, তাঁর দু-জন বন্ধু মিস ম্যাকলাউড ও বস্টনের মিসেস বুল ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের শরৎকালেই ভারত পরিভ্রমণে আসছেন।
২.১৩ যোগরুঢ় শব্দ : যেসব সাধিত শব্দ একাধিক ব্যুৎপত্তিগত অর্থের যে-কোনো একটিকে বোঝায়, তাকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন—পঙ্কজ–ব্যুৎপত্তিগত অর্থ যা পাঁকে জন্মায়। পাঁকে অনেক কিছুই জন্মায় কিন্তু পঙ্কজ শব্দটির ব্যাবহারিক অর্থ কেবল পদ্মফুলকেই বোঝায় ।
২.১৪ অর্ধতৎসম শব্দ : যে সমস্ত সংস্কৃত শব্দ বাঙালির মুখের ভাষায় বা কবিতার ভাষায় উচ্চারণ সুবিধা বা বিকৃতিতে সামান্য পরিবর্তিত রূপে ও বানানে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, তাদের অর্ধতৎসম শব্দ বলে। যেমন- – কুৎসিত > কুচ্ছিত, শ্রী > ছিরি।
২.১৫ “কলকাতা একসময় ভারতবর্ষের রাজধানী ছিল”.এখানে ‘কলকাতা’ সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। 
২.১৬ পূরণবাচক বিশেষণ : সংখ্যার ক্রমকে নির্দেশ করে যে বিশেষণ, তাকে পূরণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— রীতা নবম শ্রেণিতে পড়ে।
২.১৭ “পড়াশোনায় মন দাও”–এখানে ক্রিয়াপদটি ‘বর্তমান অনুজ্ঞা’। 
২.১৮ আত্মবাচক সর্বনাম : যে সর্বনাম পদ আত্মজ্ঞাপক বা নিজেকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে। এর আর একটা নাম স্বকর্তৃত্বজ্ঞাপক সর্বনাম। যেমন–নিজ, নিজে, আপনি, আপনার, স্বয়ং ইত্যাদি।
২.১৯ পঙ্গুক্রিয়া : যেসব ক্রিয়াকে সর কালে ও ভাবে ব্যবহার করা চলে না তাদের বলা হয় পঙ্গুক্রিয়া বা অসম্পূর্ণ ক্রিয়া বা অপূর্ণরূপ ক্রিয়া। যেসব ধাতু থেকে এই ক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাদের পঙ্গু ধাতু বা অসম্পূর্ণ ধাতু বলে। ‘বট্’ ধাতুর বর্তমান ছাড়া অন্য কোনো কাল নেই।
যেমন—একা দেখি কুলবধূ কে বট আপনি।
২.২০ “বিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসছে” এটিতে ক্রিয়ার নির্দেশক ভাব প্রকাশ পেয়েছে।
৩.১ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ গদ্যাংশে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা রাধারাণী। অপরিচিত ব্যক্তিটি রাধারাণীকে ফুলের মালার দাম হিসেবে একটি চক্‌চকে পয়সা দিয়েছিল। অন্ধকারে বুঝতে পারেনি বলে রাধারাণী বলেছিল ঘরে গিয়ে আলো জ্বালিয়ে দেখে যদি টাকা হয় তবে সে ফিরিয়ে দেবে। সে তাই চালের খড় পেড়ে চকমকি ঠুকে আগুন জ্বেলে দেখে এটি টাকা, পয়সা নয়। সে তৎক্ষণাৎ বাইরে এসে দেখে ব্যক্তিটি সেখানে নেই। তখন সে, তার মাকে কাতর কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করে— ‘এখন কী হবে’।
রাধারাণী তার মায়ের কাছে এসে কাতরতা প্রকাশ করলে তার মা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে যে, যে ব্যক্তি এই টাকা দান করেছে সে সবকিছু জেনেই দান করেছে। সে দাতা তাই অর্থদান করে তাদের দুঃখমোচন করেছে। বিধির পরিহাসে তারা আজ ভিখারি তাই তারাও সেই দান গ্রহণ করে খরচ করবে।
৩.২ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা ‘দাম’ গল্পে আলোচ্য উদ্ধৃতির বক্তা হলেন অঙ্কের মাস্টারমশাই।
অবসরের পর মাস্টারমশাই আশ্রয় নিয়েছিলেন বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি শহরে নির্বিবাদে জীবন কাটানোর অভিপ্রায়ে। মাস্টারমশাই-এর ছেলে একদিন একটি পত্রিকা তাকে দেখায় যেখানে তার প্রাক্তন ছাত্র তথা ‘দাম’ গল্পের কথক সুকুমার তাঁকে নিয়ে একটি গল্প লিখেছে; গল্পটিতে সুকুমার তাঁকে নিয়ে কল্পনার রং মিশিয়ে, উপদেশ বর্ষণ করে লিখেছে জেনেও মাস্টারমশাই আনন্দ পেয়েছিলেন। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে ছাত্রের এই অবমাননাটুকুও সুন্দর হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে।
কথক পত্রিকার আবদার মেটাতে মাস্টারমশাইকে নিয়ে যে গল্পটি লিখেছিলেন তাতে ছিল কল্পনার রং মেশানো। কিন্তু সেইটি পড়ে মাস্টারমশাই গর্ববোধ করছেন – একথা শুনে আত্মগ্লানিতে এবং লজ্জায় কথকের মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করেছিল। মাস্টারমশাইকে নিয়ে লেখা গল্প পত্রিকাকে দশ টাকায় বিক্রি করে কথকের অপরাধবোধ হয়েছিল। মাস্টারমশাই-এর সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাতের পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মাস্টারমশাই স্নেহ-মমতা-ক্ষমার যেন এক মহাসমুদ্র।
৩.৩ প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি লিও তলস্তয় রচিত ‘ইলিয়াস’ শীর্ষক ছোটোগল্প থেকে গৃহীত। উক্তিটির বক্তা মোল্লা।
পঁয়ত্রিশ বছরের প্রভূত পরিশ্রমে ইলিয়াস যে সম্পত্তি তৈরি করেছিল তার দেখাশোনা করত ইলিয়াস নিজেই, যদিও তার স্ত্রীও তাকে এই কাজে সাহায্য করত। এই সময় ইলিয়াসের বহু ধনী, গুণী মানুষের সঙ্গে পরিচিয় হয়েছিল। এরপর সে সর্বহারা হয়ে পড়ল। সর্বহারা ইলিয়াসের অতীত জীবনের সমৃদ্ধি ও প্রতিপত্তির কথা দেশ-বিদেশের বহু মানুষই জানত, ইলিয়াসের অতিথি-বৎসলতার কথাও অজ্ঞাত ছিল না তাদের কাছে। কিন্তু বৃদ্ধ ইলিয়াসের কোনো দুঃখ ছিল না সম্পত্তি হারিয়ে। কারণ, প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হলেও তার জীবনে সুখ ছিল না, শাস্তি ছিল না। সবসময় চিন্তা হত অতিথিদের সঠিকভাবে আপ্যায়ন করা হল কি না। ঘোড়ার বাচ্চা, গোরুর বাছুর নেকড়ে নিয়ে গেল কি না— এসমস্ত দুশ্চিন্তা তার মাথায় থাকত। তাই জীবনের প্রকৃত সুখের হদিস তখন সে পায়নি।
ইলিয়াস এখন মহম্মদ শা-র বাড়িতে মজুরের কাজ করে, কিন্তু সব হারিয়ে এখানে এসে সর্বহারা ইলিয়াস তার জীবনের প্রকৃত সুখ খুঁজে পেয়েছে। এখন তাদের আর কোনো পিছুটান নেই, নেই অশান্তি ও দুশ্চিন্তাও। তাদের এখন একটাই মাত্র কাজ প্রভুর সেবা করা। বাড়ি এলে তারা খাবার ও কুমিস পায়। এখন ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার সময়ও আছে তাদের। সে বুঝেছে মানুষ মোহাসক্ত হয়েই সম্পত্তি হারিয়ে কাঁদে। কিন্তু ঈশ্বর সাধনাই মুক্তি লাভের একমাত্র পথ, ঈশ্বরই প্রকৃত সত্যটিকে তাদের সামনে উদ্ঘাটিত করেছে। এই বিষয়টিকেই মোল্লা জ্ঞানের কথা বলেছে।
৪.১ নদিয়ার নবদ্বীপের জগন্নাথ মিশ্র ও শচীদেবীর কনিষ্ঠ পুত্র চৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩ খ্রিস্টাব্দ)। তাঁর বাল্যকালীন গৃহনাম ছিল নিমাই। তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল বিশ্বম্ভর। গায়ের রঙের উজ্জ্বলতার জন্য গৌরাঙ্গ, পরবর্তীতে মহাপ্রভু এবং শ্রীকৃচৈতন্য বা সংক্ষেপে চৈতন্যদেব নামেই পরিচিত হন তিনি। গৌড়ীয় বৈঘ্নবধর্মের জনক নিমাই তাঁর প্রথমা পত্নী লক্ষ্মীপ্রিয়ার অকালমৃত্যুর পর বিষ্ণুপ্রিয়াকে বিবাহ করেন। গয়ায় ঈশ্বরপুরীর কাছে গোপালমন্ত্রে এবং কাটোয়ায় মাত্র ২৪ বছর বয়সে কেশব ভারতীর কাছে তিনি সন্ন্যাস দীক্ষা নেন। জীবনের শেষপর্ব জগন্নাথ ধামেই কাটিয়েছিলেন। জয়ানন্দের ‘চৈতন্যমঙ্গল” কাব্যে উল্লিখিত যে, রথের সামনে ভাবাবেগে বিহ্বল হয়ে নৃত্যকালে তাঁর পায়ে ইটের কুচি বিদ্ধ হওয়ায় ব্যাধিকবলিত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
চৈতন্যদেব বৈষ্ণবধর্মের নতুন দিক উন্মোচন করলেন। যেখানে সংস্কারের চেয়ে প্রধান হয়ে উঠল মানবতা ও সর্বধর্মমিলন। তিনি বিভাজিত বঙ্গসমাজকে হরিমন্ত্রের আবেশে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে তাঁর এই ভক্তিসাধনা পরবর্তী। বাঙালি জীবন-শিল্প ও ধর্মকে পরিবর্তন করেছিল। ষোড়শ শতাব্দী তাই চৈতন্য রেনেসাঁ নামে পরিচিত।
তৎকালীন মুসলমান শাসকের অত্যাচার, ব্রাক্ষ্মণ্যধর্মের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় বহু মানুষ চৈতন্যদেবের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ব্রাহ্মণ, শূদ্র, চণ্ডাল এমনকি উচ্চবংশীয়রাও চৈতন্য প্রবর্তিত ধর্মমতকে আপন করেছিলেন। ধর্মের বিভেদ মুছে তিনি উদাত্তকণ্ঠে বলে উঠেছিলেন— ‘চণ্ডালোঽপি দ্বিজশ্রেষ্ঠ হরিভক্তি পরায়ণম।’ সেদিনের বঙ্গসমাজের নিপীড়িত বাঙালির অন্তরসত্তা থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন চৈতন্যদেব। কবি এই অর্থে ‘আমরা’ কবিতায় বলেছেন “বাঙালির হিয়া অমিয় মথিয়া নিমাই ধরেছে কায়া।’ ‘অমিয় মথিয়া’ শব্দের অর্থ ‘অমৃত মন্থন’। চৈতন্যের স্পর্শে ষোড়শ শতাব্দীতে বঙ্গ সমাজে যেমন একতা ফিরে এসেছিল তেমনি বাংলা সাহিত্য-শিল্প সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিল। রাধাকৃষ্ণের লোকজ কথায় স্থান পেয়েছিল আধ্যাত্মিকতা। মানুষের বাস্তব জীবনাভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে রচিত হয়েছিল পদাবলি, মানবতা যার আধার। আলোচ্য কবিতায় কবি একেই ‘মানুষের ঠাকুরালি’ বলেছেন। কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত চৈতন্যদেবকে বাঙালির শুভবোধের চিরন্তন প্রতীকরূপে দেখিয়েছেন। ‘আমরা’ কবিতায় তাই ‘নিমাই’ হলেন বাঙালির হৃদয়ামৃতের মূর্তবিগ্রহ।
৪.২ ‘খেয়া’ কথার সাধারণ অর্থ নৌকা। খেয়াতরি পারাপারের মাধ্যমে জীবনের চিরন্তন চলনকেই ইঙ্গিত করেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রোমান্টিক কবি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করে মনশ্চক্ষে দেখেছেন মানবের অনিবার্য ও নিশ্চিত প্রবাহকে। নদীতটে একাকী বসে তিনি দুই তীরের গ্রাম দুখানি দেখেছেন, দেখেছেন খেয়াতরি করে যাত্রীদের নিরন্তর পারাপার। বিষাদঘন হৃদয়ে উদাসী কবি মানুষের খেয়া পারাপার লক্ষ করে বলেছেন—
“কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে ৷৷ ‘
জীবন-মৃত্যুর দ্যোতক এপার-ওপার তথা গ্রাম দুখানি থেকে মানুষ আপন ঘরে ফেরে, কেউ বা অজানা গন্তব্যে পাড়ি দেয়। কিন্তু তাদের যাতায়াতে কোনো ছেদ পড়ে না—নিরন্তর এই চলাকে কবি আলোচ্য কাব্যাংশে স্পষ্ট করেছেন।
জগৎ-সংসার সম্বন্ধে নির্মোহ থেকে কবি মানবসভ্যতার অনন্ত প্রবাহধারার স্বরূপ অন্বেষণ করেছেন খেয়া চলাচলের চিরন্তনতার মাধ্যমে। সম্মুখে খেয়াঘাট, কবি একাকী বসে উদাস নয়নে অপলকে চেয়ে আছেন সেই দিকে। যাত্রীদল পারাপার করছে এপার থেকে ওপারে, এ গ্রাম থেকে পরপারের গ্রামখানিতে। মানবজীবনরূপ নদীবক্ষে জীবনতরিতে ভেসে চলেছে মানুষও সে চলা শুরু হয়েছে জন্ম থেকে, চলবে আমৃত্যু। নবীনের আগমনে, পুরাতনের বিদায়ে এই চলন যেন অনন্ত। সংঘাত-সংক্ষুব্ধ ইতিহাসের প্রতি উদাসীন থেকে প্রকৃতির কোলে শান্ত সমাহিত নিরীহ গ্রাম দুখানির যাত্রীদল খেয়া নৌকার চলনকে গতিদান করে চলেছে যুগ-যুগান্তর ধরে-ি – বিষণ্ণ কবি সভ্যতার সেই শাশ্বত রূপটি অবলোকন করেছেন হৃদয়ালোকে। ‘খেয়া’ কবিতার আলোচ্য অংশে সভ্যতার সেই সারসত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪.৩ চিত্ররূপময় কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের অন্তর্গত ‘আকাশে সাতটি তারা’ চতুর্দশপদী কবিতাটি সময়ের আবহমান হৃদয় থেকে বাংলাদেশের একটি সন্ধ্যাকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে। সন্ধ্যার সূচনায় আকাশে সাতটি তারা ফুটে উঠলে কবি ঘাসের উপর বসে থাকেন। অস্তমিত সূর্যের আলোয় দিগন্ত রেখার মেঘ যখন গঙ্গাসাগরে ক্রমশ ডুবতে থাকে, যখন কামরাঙা-লাল বর্ণ ধারণ করে, কবি তার সঙ্গে মিল খুঁজে পান মৃত মুনিয়া পাখির। কবি প্রত্যক্ষ করেন নিত্যদিনের নিয়মানুসারে শান্ত, অনুগত নীল সন্ধ্যা বাংলাদেশে নেমে আসছে আর তার মায়াবী আলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে বাংলার নিসর্গপ্রকৃতি। কবির মনে হয়েছে এই মায়াময় সন্ধ্যা যেন কেশবতী কন্যা; যার চুল কবির চোখে-মুখে খেলা করছে। বঙ্গপ্রকৃতির সান্ধ্যসৌন্দর্যে আবিষ্ট হয়ে যান কবি এবং সমগ্র চরাচর। প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ লক্ষ করেন বাংলার পল্লিপ্রকৃতির এই বিরল সৌন্দর্য থেকে বঞ্চিত বাকি পৃথিবী। কবি আর কোথাও দেখেননি সন্ধ্যার এমন মোহময় রূপ কোনো কেশবতী কন্যার অজস্র চুলের মতো আবেশে আচ্ছন্ন করেছে হিজল-কাঁঠাল কিংবা জামগাছকে। কবি নানা অনুষঙ্গে অনুভব করেন সন্ধ্যার স্নিগ্ধ গন্ধ। কখনও নরম ধানে, কলমির ঘ্রাণে, আবার কখনও হাঁসের পালক, শর, পুকুরের জল, চাঁদা-সরপুঁটিদের মৃদু ঘ্রাণে বাংলার সন্ধ্যা আমোদিত করে দেয় কবিকে। এসবের মাঝে কিশোরীর স্নেহের পরশ, কিংবা কিশোরের পায়ে দলা মুথাঘাস, লাল লাল বটের ফলের ব্যথিত গন্ধের ক্লান্ত নীরবতায় কবি স্পর্শ পান বাংলার সান্ধ্যকালীন সমাহিত রূপের। বঙ্গপ্রকৃতির এই সন্ধ্যার রূপ পরিবেশিত হয়েছে ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায়, সেখানে অনাড়ম্বর, বৈভবহীন আয়োজনে রয়েছে শুধুই সমাহিত শান্তির আশ্বাস যা তার রূপকে অতুলনীয় ঐশ্বর্যে সমৃদ্ধ করেছে।
৫.১. স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনার আলোচ্য উদ্ধৃতিতে ‘তুমি’ বলতে স্বামীজির শিষ্যাদের মধ্যে অন্যতম মিস মার্গারেট ই নোকে বোঝানো হয়েছে।
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ জুলাই উত্তরাখণ্ডের বিখ্যাত শৈলশহর আলমোড়াতে বসে বিবেকানন্দ মিস নোকে লেখা চিঠিতে একথা বলেছেন।
‘সেইরূপ’ বলতে ‘শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ সহানুভূতিশীল মানবপ্রেমী এক নারীর কথা বলা হয়েছে। মিস নোল্‌-এর শিক্ষা, ঐকান্তিকতা, অসীম ভালোবাসা, দৃঢ়তা – সর্বোপরি তাঁর ধমনীতে প্রবাহিত কেল্টিক রক্তের জন্য তাঁকে ‘সেইরূপ নারী’ বলা হয়েছে।
৫.২ ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধের বর্ণনা অনুযায়ী লেখিকা বেগম রোকেয়ার যাত্রাপথে যথেষ্ট চড়াই-উতরাই ছিল। তারই মধ্য দিয়ে রেলগাড়ি চলেছে। পথের দু-ধারের উঁচু চূড়া কিংবা নিবিড় অরণ্য লেখিকাকে আকৃষ্ট করে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ হলেও প্রথমে শীত অনুভূত হয় না। নীচু উপত্যকায় কুয়াশাকে নদী বলেই ভুল হয়। দূরে সারি সারি হরিদ্বর্ণ চা ক্ষেত্রগুলি প্রকৃতির মনোরম শোভাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। রেলপথের পাশে রয়েছে ঝরনা। ঝরনার ছন্দধারার কলকল্লোলগীতিতে যেন মানবমনে সুরমূর্ছনার সৃষ্টি হয়।
‘হিমালয় দর্শন’ ভ্রমণ কাহিনির লেখিকা বেগম রোকেয়া শৈলশহর শিলিগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে হিমালয় রেল রোড থেকে হিমালয়ান রেলগাড়ির আরোহী হয়ে হিমালয় দর্শনের জন্য যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখানে এই পার্বত্য রেলপথের কথাই বলা হয়েছে আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে।
৬.১ Barlow Girls’ High School (HS)-এর ১০.১-এর উত্তরটি দেখুন।
৬.২ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে রাজা দুষ্মন্ত হলেন পুরুবংশের একজন শ্রেষ্ঠ সম্রাট। হস্তিনাপুরে তাঁর রাজধানী ছিল। কণ্বমুনির আশ্রমে শকুন্তলাকে দেখে তিনি মুগ্ধ হন এবং গান্ধবর্মতে তাকে বিরাহ করেন।
Chakdah Purbachal Vidyapith (HS)-এর ৩.৪-এর অথবা এর উত্তরটি দেখুন। 
৭.১ প্রোফেসর শঙ্কুর লন্ডনের বিজ্ঞানী পত্রবন্ধু জেরেমি সন্ডার্স প্রোফেসর শঙ্কুর উদ্দেশে এই উক্তিটি করেছেন। শক্তিমান ওষুধটি হল প্রোফেসর শঙ্কুর তৈরি মিরাকিউরল বা সর্বরোগনাশক বড়ি।
সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে জেরেমি সন্ডার্স প্রোফেসর শঙ্কুকে সর্বরোগনাশক বড়ি মিরাকিউরল নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার কথা বলেছেন। সন্ডার্সের মুখে ‘মিরাল কিওরের’কথা শুনে শুধু ডাক্তারি মহলে নয়, বৈজ্ঞানিকদের মধ্যেও তুমুল আলোড়ন পড়ে যায়। তারা পরীক্ষা করে দেখতে চান কোন্ বৈজ্ঞানিক উপাদানের জন্যে মিরাকিউরলের রোগজীবাণুনাশক শক্তি এত বেশি। তারা চান এই অত্যাশ্চর্য ওষুধের অ্যানালিসিসের মাধ্যমে তার উপাদানগুলি জেনে কৃত্রিম উপায়ে ল্যাবরেটরিতে এই ওষুধ তৈরি করতে। যার কারণে ভবিষ্যতে অনেক মানুষের উপকার হতে পারে। তাই সন্ডার্স এই মিরাকিউরল ওষুধকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে এবং শঙ্কুকে বৈজ্ঞানিক হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি জানাতে তাকে লন্ডনে আসতে বলেন।
৭.২ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্প থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে সেইদিন রাত বলতে দেড় বছর পরে পুজোর ছুটিতে প্রোফেসর শঙ্কু যেদিন বাড়ি এসেছিলেন সেই দিন রাতের কথা বলা হয়েছে।
Chakdah Purbachal Vidyapith (HS)-এর ৩.৫-এর দ্বিতীয় অংশ-এর উত্তরটি দেখুন।
৮.১ ফুল তার সৌন্দর্য ও গন্ধ দিয়ে অপরকে মুগ্ধ করে। অপরকে মুগ্ধতা দান করাই তার জীবনের সার্থকতা, তেমনি পরের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতে পারলে সেটাই হবে মানবজীবনের প্রকৃত সার্থকতা।
গভীর অরণ্যে অনেক ফুলই বিকশিত হয় কিন্তু সেই ফুলের ঘ্রাণ গ্রহণ করার জন্য কেউ থাকে না। ফুলের জীবনের সার্থকতা দেবতার পায়ে অঞ্জলিতে। তেমনি শুধু মানুষ রূপে জন্মগ্রহণ করলেই নয় সংকীর্ণতা ও ক্ষুদ্র আমিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে দেশের ও দশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করলে, পরের উপকার করলে তবেই মানবজীবন সার্থক হবে। মানবতার ইতিহাসে আমরা অনেক মহাপুরুষকেই প্রত্যক্ষ করেছি যারা আজীবন নিজেকে পরার্থে বিলিয়ে দিয়েছেন। বৃহত্তর সমাজ কল্যাণে নিজেদেরকে উৎসর্গ করেছেন। আমাদের প্রতিটি মানুষেরই উচিত হৃদয়কে প্রসারিত করা। পুষ্পের রূপ-রস-গন্ধ যেমন সকলকে আমোদিত করে তেমনি মানুষেরও উচিত উদার হৃদয়ধর্মের মাধ্যমে সকলের মনে অধিষ্ঠিত হতে পারা। বিবেকানন্দের ভাষায়— “জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”
Barlow Girls’ High School (HS)-এর ১৩.২-এর উত্তরটি দেখুন।
৯.১ Bantra MSPC High School-এর ৭.৩-এর রচনাটি দেখুন।

Leave a Comment