Panskura BB High School
বিভাগ-ক
1 (i) প্রাক্ ফরাসি বিপ্লব যুগে চার্চকে দেওয়া কর ছিল (b) টাইথ।
(ii) ‘লেতর ফিলজফিক’ গ্রন্থের লেখক হলেন – (a) ভলতেয়ার।
(ii) (d) ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুলাই রোবসপিয়রকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়।
(iv) কোড নেপোলিয়নে মোট ধারা ছিল – (c) ২২৮৭ টি।
(v) ইটালিতে সিজালপাইন প্রজাতন্ত্রকে যে নামে আখ্যা দেওয়া হয় – (b) ইটালি প্রজাতন্ত্র ।
(vi) রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের টিলসিটের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় – (a) ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে।
(vii) (c) হায়েস-এর মতে, জাতীয়তাবাদ হল জাতীয়তা ও দেশপ্রেম এ দুটি প্রাচীন ভাবের আধুনিক এক আবেগময় অনুভূতিপ্রবণ সংমিশ্রণ ও অতিরঞ্জন।
(viii) প্রিন্স মেটারনিখ ছিলেন (d) অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
(ix) ‘কার্বোনারি’ নামে গুপ্ত সমিতিটি গড়ে উঠেছিল (c) ইটালিতে।
(x) ‘বাষ্পীয় ইঞ্জিন’ আবিষ্কার করেন – (b) জেমস ওয়াট।
(xi) (c) কার্ল মার্কস-এর মতে, ‘রাষ্ট্র শ্রেণি শোষণের যন্ত্র’।
( xii) ইঞ্জিনে টানা প্রথম রেলগাড়ি চলাচল শুরু হয় – (d) ১৮২৫ খ্রি।
(xiii) রুশ বিপ্লবের প্রাক্কালে রাশিয়ায় যে বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল – (b) রোমানড।
(xiv) রাশিয়াতে ‘এপ্রিল থিসিস’ ঘোষণা করেন – (c) লেনিন ।
(xv) (a) ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের ৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন চোদ্দো দফা নীতি ঘোষণা করেন।
(xvi) ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ নীতির প্রবক্তা ছিলেন – (a) রুজভেল্ট।
(xvii) জার্মান সংসদের নাম ছিল – (d) রাইখস্ট্যাগ।
(xviii) ৬ ও ৯ আগস্ট জাপানের দুটি শহর হিরোশিমা ও নাগাসাকির ওপর পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয় (a) ১৯৪৫ খ্রি।
(xix) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত হয় – (b) জাতিসংঘ।
(xx) বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা হল (d) ১৫।
বিভাগ-খ
উপবিভাগ : A
(i) ‘লেত্র দ্য গ্রেস’ হল যে-কোনো অভিযুক্ত, আটক ব্যক্তিকে মুক্তিদানের আইন বা বিধি ।
(ii) ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে ‘ইয়ং ইটালি’ দল গড়ে তোলেন জোসেফ ম্যাৎসিনি।
(iii) ১৭৮৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে টেলিগ্রাফের দ্বারা সংবাদ প্রেরণের ক্ষেত্রে তড়িৎ শক্তির ব্যবহার শুরু হয়।
(iv) ‘পোপুলো দ্য ইতালিয়া’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন মুসোলিনি।
উপবিভাগ : B
(i) ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন ব্রিটিশ সেনাপতি নেলসনের কাছে পরাজিত হন। – ঠিক ।
(ii) প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন। ভুল।
(iii) ‘দ্য এজ অফ একট্রিমস’ গ্রন্থের লেখক হলেন ঐতিহাসিক এরিক হবসবম। – ঠিক।
(iv) জন্মলগ্নে জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫০। — ভুল।
উপবিভাগ : C
ক-স্তম্ভের সঙ্গে খ-স্তম্ভের মিলকরণ :
(i) সামাজিক চুক্তি (c) রুশো
(ii) মেটারনিখ (a) অস্ট্রিয়ার প্রধানমন্ত্রী
(iii) রুজভেল্ট (d) আমেরিকার রাষ্ট্রপতি
(iv) তোষণনীতি (b) ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স
উপবিভাগ : E
(i) ব্যাখ্যা – (b) মুক্তির ঘোষণার মাধ্যমে তিনি রাশিয়ার ভূমিদাসদের মুক্তি দেন।
(ii) ব্যাখ্যা – (a) তাঁরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ধারণার বিরোধী ছিলেন।
(iii) ব্যাখ্যা – (a) বিরোধী শক্তির দুর্বলতার সুযোগে হিটলার জার্মানদের আর্থিক স্থিতিশীলতার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
(iv) ব্যাখ্যা – (b) মার্কিন পুঁজিবাদ ও সোভিয়েত সাম্যবাদের মধ্যে আদর্শগত সংঘাত দেখা দিয়েছিল।
(v) ব্যাখ্যা (b) মার্কিন সমর্থন থেকে জাতিসংঘ বঞ্চিত ছিল।
বিভাগ-গ
3 (i) Jhargram Banitirtha High School (HS)-এর 3. (II) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) Barrackpore Govt High School -এর 3. (ii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iii) ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে ফ্রান্সের দার্শনিক ও সাহিত্যিকরা ফ্রান্সের তৎকালীন রাজনীতি, সমাজ, অর্থনীতি, ধর্মীয় বিষয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে তীব্র সমালোচনা করতেন তা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর প্রধান মাধ্যম ছিল সংবাদপত্র এবং সাময়িক পত্রাদি। ১৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে প্রকাশিত পত্রপত্রিকার সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫টি। ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিপ্লবের মুহূর্তে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৯টি। সংবাদপত্র ও অন্যান্য পত্রপত্রিকার এই সংখ্যা বৃদ্ধি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
(iv) Jadavpur Vidyapith-এর 3. (xiv) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(v) ১৮০৫ খ্রিস্টাব্দের ২ ডিসেম্বর অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার যুগ্মবাহিনীর সঙ্গে নেপোলিয়নের অস্টারলিজের যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে অস্ট্রিয়া ও রাশিয়ার যুগ্মবাহিনী ফ্রান্সের কাছে দারুণভাবে পরাজিত হয়। ফলে তারা বাধ্য হয়ে ‘প্রেসবার্গের সন্ধি’ স্বাক্ষর করে।
(vi) Baita MN High School (HS) -এর 3. (iv) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(vii) রাজা রামমোহন রায় ফরাসি দার্শনিক ও চিন্তাবিদ ভলতেয়ার, রুশো ও মন্তেস্কুর চিন্তাধারায় প্রভাবিত হয়েছিলেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৭-২৯ জুলাই মাত্র তিন দিন আন্দোলন করে ৩০ জুলাই বিপ্লবী জনসাধারণ ফরাসি সম্রাট দশম চার্লসকে সিংহাসনচ্যুত করেন। ফ্রান্সের জুলাই বিপ্লবের সাফল্যে ভারতে রাজা রামমোহন রায় অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছিলেন। তাঁর আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ তিনি বন্দরে দুটি ফরাসি জাহাজে গিয়ে ফরাসি যাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘glory, glory, glory to France’ |
(viii) শিল্পবিপ্লবের ফলে শিল্পের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পশ্রমিক হিসেবে নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। শিল্পবিপ্লবের ফলে একদিকে ধনী পরিবারের নারীদের সুখস্বাচ্ছন্দ্য বেড়েছিল কারণ তারা উন্নত পরিসেবার সুফল ভোগ করত। অন্যদিকে নারীশ্রমিকদের জীবন দুঃখ দুর্দশায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। তাদের বেশি সময় কাজ করতে হত, পুরুষদের তুলনায় তাদের মজুরি ছিল কম এবং মালিকরা তাদের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত।
(ix) Bantra MSPC High School-এর 3. (xiii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(x) রাশিয়াতে জারতন্ত্রের পতনের পর অস্থায়ী বুর্জোয়া প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল লেনিন তাঁর বিখ্যাত ‘এপ্রিল থিসিস’ ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক ও সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে রাশিয়াতে একটি ‘সর্বহারার একনায়কতন্ত্র’ গড়ে তুলতে হবে। যার ফলে সৈনিকরা শান্তি, কৃষকরা জমি ও শ্রমিকরা রুটি পাবে, যা একমাত্র বলশেভিক দলের নেতৃত্বে সম্ভব।
(xi) Burdwan Raj Collegiate School -এর 3. (vi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xii) Baita MN High School (HS) -এর 4. (x) -এর প্রথম অংশের উত্তরটি দ্যাখো।
(xiii) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 3. (xii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xiv) মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রদত্ত নমুনা প্রশ্নপত্র -এর 3. (xi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xv) Baita MN High School (HS)-এর 3. (vii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(xvi) Falakata Girls’ High School (HS) -এর 3. (xvi) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
বিভাগ-ঘ
4 উপবিভাগ : A
(i) Falakata Girls’ High School (HS) -এর 4. (ii) -এর উত্তরটি দ্যাখো।
(ii) নেপোলিয়ন তার শাসনকালে ফরাসি বিপ্লব থেকে উদ্ভূত সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার আদর্শের মধ্যে কোনো আদর্শকেই সঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারেননি বরং সেগুলিকে তিনি ধ্বংস করেন।
শাসনক্ষেত্রে : গণতন্ত্র বা স্বাধীনতার প্রতি তার বিন্দুমাত্র আস্থা ছিল না। এজন্য তিনি কনস্যুলেটের শাসনকালে সব ক্ষমতা হস্তগত করেন এবং সরকারি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্বাচন নীতির বদলে মনোনয়ন প্রথা চালু করেন এবং ক্ষমতাবণ্টন নীতি প্রণয়ন করে আইনসভাকে ক্ষমতাহীন করেন। বিপ্লবকালে সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রচলিত Law of maximum এবং Law of minimum নীতিকে তিনি কার্যকর করেননি। সর্বোপরি ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজেকে ‘সম্রাট’ হিসেবে ঘোষণা করে স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। এগুলির সঙ্গে বিপ্লবী আদর্শের মিল ছিল না।
স্বাধীনতার ক্ষেত্রে : নেপোলিয়ন শাসনব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে প্রাদেশিক আইনসভাগুলির – ক্ষমতা কেড়ে নেন; এ ছাড়া ব্যক্তিস্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, নাটক ও নাট্যশালার ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম, প্রত্যক্ষ ভোটদানের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে বিপ্লবী আদর্শের বিরোধিতা করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে : নেপোলিয়নের শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য ছিল সম্রাট ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নাগরিক গড়ে তোলা। এজন্য তিনি ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচির পরিবর্তন ঘটান ও জেকোবিনদের সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষানীতিকে বাতিল করে বিপ্লবের আদর্শকে ধ্বংস করেন।
ধর্মীয় ক্ষেত্রে : বিপ্লবের সময় বিপ্লবী সরকার ধর্মীয় ক্ষেত্রে যে-সমস্ত নীতি চালু করেছিল নেপোলিয়ন সেইসব নীতি থেকে সরে এসে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে পোপের সঙ্গে ‘ধর্মমীমাংসা চুক্তি’ করে ক্যাথলিক ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের স্বীকৃতি প্রদান করেন। এসব কারণে ঐতিহাসিক জর্জ রুদে সহ অন্যান্যরা নেপোলিয়নকে ‘বিপ্লবের ধ্বংসকারী’ রূপে চিহ্নিত করেছেন।
উপবিভাগ : B
(iii) Burdwan Raj Collegiate School -এর 4. (vii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।
(iv) শিল্পবিপ্লবের সমালোচনায় কার্ল মার্কস : জার্মানির বিখ্যাত দার্শনিক কার্ল মার্কস বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রবাদের যে আদর্শ তুলে ধরেন তাতে অষ্টাদশ শতকের ইউরোপে সংঘটিত শিল্পবিপ্লবের সমালোচনা করা হয়। তিনি শিল্পবিপ্লবের সমালোচনায় বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেন
মালিকশ্রেণির আধিপত্য : জমি, মূলধন, কাঁচামাল ইত্যাদি উৎপাদনের বিভিন্ন উপাদানগুলি প্রকৃতির দান। তাই এগুলির ওপর সকলের সমান অধিকার থাকা উচিত। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিপতি মালিকরাই এই সমস্ত উপাদানের ওপর একচেটিয়া অধিকার কায়েম করে।
উদ্বৃত্ত মূল্য : শ্রমিক তার শ্রমের দ্বারা যন্ত্রের সাহায্যে কাঁচামাল থেকে পণ্যদ্রব্য উৎপাদন করে। এই পণ্যদ্রব্যের দাম কাঁচামাল ও যন্ত্রের জন্য ব্যয়িত দামের থেকে বেশি হয়। এই বর্ধিত মূল্য সৃষ্টি করে শ্রম। কিন্তু শ্রমিক এই মূল্যের খুব কম অংশই পায়। যে অংশ থেকে শ্রমিক বঞ্চিত হয়, তাকে উদ্বৃত্ত মূল্য বলে।
সম্পদবণ্টন: মার্কসের মতে, যেহেতু শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদনের কাজ চলে শ্রমিকের শ্রমের মাধ্যমে, তাই উদ্বৃত্ত মূল্য শ্রমিকদেরই পাওয়া উচিত। এই উদ্বৃত্ত মূল্যের পুরোটাই মালিকশ্রেণি ভোগ করে শ্রমিকশ্রেণিকে শোষণ করে।
বঞ্চিত শ্রমিক : শ্রমের মাপকাঠিতে শ্রমিকদের মধ্যে শিল্পের লভ্যাংশ তথা উদ্বৃত্ত মূল্য বণ্টিত হওয়া উচিত। কিন্তু বাস্তবে পুঁজিপতি মালিকরা শ্রমিকদের শোষণ করে এই লভ্যাংশ আত্মসাৎ করে। এই শোষিত শ্রমিকশ্রেণির কোনো জাতিগত বা দেশগত পার্থক্য নেই। দুনিয়ার সকল শ্রমিকের একমাত্র শত্রু হল মুনাফালোভী বুর্জোয়া শ্রেণি। বুর্জোয়া শ্রেণির অবসান ঘটলে সাম্যবাদী সমাজ গড়ে উঠবে এবং শ্রমিকশ্রেণির ওপর শোষণ বন্ধ হবে।
উপবিভাগ : C
(v) অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণ : ত্রিশের দশক সংকটের যুগ নামে পরিচিত। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে ইউরোপে মার্কিন ঋণের সম্পূর্ণ স্থগিতকরণ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সংকটের দিক নির্দেশ করে; এরপরে শীঘ্রই সমগ্র বিশ্বজুড়ে এক অর্থনৈতিক মহামন্দা দেখা দেয়। ১৯২৯ থেকে ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছিল এই মহামন্দার স্থায়িত্বকাল। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে এই বিপর্যয়ের সূত্রপাত হলেও ক্রমশ তা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই অর্থনৈতিক মহামন্দার কারণ সম্পর্কে মতভেদ আছে। তথাপি মোটামুটিভাবে মন্দার মূল কারণগুলি হল– (ক) অর্থনৈতিক সাম্য ব্যবস্থার বিনাশ, মুদ্রামানের অবনতি, বৈদেশিক মূলধনের জোগানের অভাব, শুল্কপ্রাচীরের সৃষ্টি করে আন্তর্জাতিক ব্যাবসাবাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ এবং বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে যুদ্ধপূর্ব যুগে প্রচলিত উদার ধনতন্ত্রবাদের ভিত্তি ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রকৃতি ভিন্ন হলেও সর্বত্র পূর্বতন অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম দেখা দেয়। (খ) বিশ্বযুদ্ধের ফলে স্বর্ণ বিনিময় মানের অবনতি, কমিউনিস্ট রাশিয়া কর্তৃক পূর্বতন জার সরকারের কৃত সকল ঋণ বাতিল করার ফলে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির আর্থিক ক্ষতি, মিত্রপক্ষ কর্তৃক আমেরিকার নিকট কৃত ঋণ পরিশোধের অক্ষমতা প্রভৃতি কারণে অর্থনৈতিক সংকটের উদ্ভব হয়। বিশ্বে সোনার জোগান হ্রাস পাওয়ায় আন্তর্জাতিক ব্যাবসাবাণিজ্য বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মন্দা দেখা দিলে বিভিন্ন দেশ তাদের সঞ্চিত সোনা বাঁচাবার জন্য শুল্কপ্রাচীর তুলে আমদানি বন্ধ করার চেষ্টা করলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভয়াবহ মন্দা দেখা দেয়। (গ) অনেকের মতে, রুপোর আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় রুপোর মূল্য কমে যায়। সমগ্র বিশ্বে কৃষিজাত পণ্য অতিরিক্ত মাত্রায় উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ায় মূল্য কমে যায়। এর ফলে কৃষিজীবীদের পক্ষে শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী ক্রয় করার ক্ষমতা কমে যায়। (ঘ) শিল্পে অনগ্রসর দেশগুলি নিজ নিজ শিল্প-স্বার্থ রক্ষার্থে আমদানি শুল্কপ্রাচীরের সৃষ্টি করে। ফলে শিল্পপ্রধান দেশগুলিতে শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী জমে যায়, কলকারখানা বন্ধ হলে বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় এবং অপরদিকে শিল্পে অনগ্রসর দেশগুলির উৎপাদিত পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পায় ।
(vi) স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুধুমাত্র স্পেনের ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ইউরোপের বহু দেশ এই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
ফ্যাসিবাদের পক্ষে : স্পেনে বলশেভিক বিপ্লবের মতো কোনো বিপ্লব ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় জার্মানি ও ইটালি এই দুটি একনায়কতান্ত্রিক রাষ্ট্র ফ্রাঙ্কোর সমর্থনে এগিয়ে আসে। হিটলার ও মুসোলিনি ফ্রাঙ্কোকে সৈন্য ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করে। তাঁরা মনে করেন যে, ফ্রাঙ্কো যদি সমাজতন্ত্রী ও সাম্যবাদীদের সমর্থিত প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হন তবে স্পেনে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে ইউরোপে ফ্যাসিবাদী শক্তি সুদৃঢ় হবে। এর ফলস্বরূপ স্পেনে ইটালি ও জার্মানির প্রভাব বৃদ্ধি পাবে এবং ভবিষ্যতে কোনো যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দিলে তারা সেখানে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করবে।
ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে : সোভিয়েত ইউনিয়ন নিজ প্রভাব বৃদ্ধির আশায় ‘পপুলার ফ্রন্ট’ বা প্রজাতান্ত্রিক সরকারের কাছে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক পরামর্শদাতা ও দক্ষ কারিগর পাঠায়। এছাড়া জার্মানি ও ইটালির ফ্যাসিবাদ বিরোধী উদ্বাস্তু এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্ট ও প্রজাতান্ত্রিক সরকার পপুলার ফ্রন্ট সরকারকে সাহায্যের উদ্যোগ নেয়। এইভাবে স্পেনের গৃহযুদ্ধকে কেন্দ্র করে ফ্যাসিবাদ তথা একনায়কতন্ত্র বনাম বিরোধী আদর্শ তথা গণতন্ত্র ও সাম্যবাদের সংঘাত দেখা দেয়। তবে ফ্রাঙ্কো যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য লাভ করেছিল তার তুলনা প্রজাতান্ত্রিক সরকার অনেক কম সাহায্য লাভ করেছিল।
ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের নিরপেক্ষতা : ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এই গৃহযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে সাহায্য না করে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহণ করে যা পরোক্ষভাবে প্রজাতান্ত্রিক সরকারকে দুর্বল করে তুলেছিল।
উপবিভাগ : D
(vii) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান অক্ষশক্তিভুক্ত দেশ ছিল। মিত্রশক্তিভুক্ত আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকির ওপর পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে শহর দুটিকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।
কারণ :
পার্ল হারবার ঘটনা : প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্ল হারবারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-ঘাঁটি ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের ৭ ডিসেম্বর জাপান পার্ল হারবার আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়। এই ঘটনা ‘পার্ল হারবার’ ঘটনা নামে পরিচিত। এই ঘটনার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানে বাধ্য হয়। এই ঘটনার দ্বারা জাপান নিজের পতনের বীজ নিজেই বপন করেছিল।
জার্মানির আত্মসমর্পণ : জার্মানি আত্মসমর্পণ করার (১৯৪৫ খ্রি ৭ মে) পর মিত্রশক্তি সর্বশক্তি দিয়ে জাপানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
পোটসডাম সম্মেলনের ব্যর্থতা : ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই জার্মানির পোটসডাম শহরে এক সম্মেলনে সমবেত হয়ে মিত্রশক্তির নেতৃবৃন্দ জাপানকে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের জন্য এক চরমপত্র ঘোষণা করে। কিন্তু জাপান এতে কর্ণপাত করেনি।
মিত্রশক্তির দ্রুত যুদ্ধ শেষ করার ইচ্ছা : মিত্রশক্তি চেয়েছিল যেভাবে হোক দ্রুত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করতে হবে।
হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ : জাপান মিত্রপক্ষের চরমপত্র অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। এই অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬ আগস্ট জাপানের হিরোশিমা ও ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে।
ফলাফল :
প্রাণহানি : পরমাণু বোমা নিক্ষেপের পর শহর দুটিতে লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়।
জাপানের আত্মসমর্পণ : জাপানের সম্রাট হিরোহিতো (Emperor Hirohito) মিত্রশক্তির কাছে জাপানের আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত জানান। সেই অনুসারে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ২ সেপ্টেম্বর টোকিও উপসাগরে ‘মিজুয়ী’ (Missouri) জাহাজে জাপানের বিদেশমন্ত্রী শিগেমিৎসু (Shigemitsu) মার্কিন সেনাপতি ম্যাক আর্থার (Mac Arthur) -এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান : জাপানের আত্মসমর্পণের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে (২ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৫ খ্রি)।
(viii) জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের পারস্পরিক সম্পর্ক : জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি তাঁদের বিভিন্ন যুক্তি উত্থাপন করেছেন, যা নিম্নে আলোচনা করা হল–
আদর্শ জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী নয় : জাতীয়তাবাদের আদর্শ রূপটি আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী নয়। যদিও বিভিন্ন জাতির সংকীর্ণ অহমিকা আন্তর্জাতিকতা প্রসারের পথে বিঘ্ন ঘটায়। অর্থাৎ বিকৃত জাতীয়তাবাদ হল আন্তর্জাতিকতার পরিপন্থী। তবে আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানুষের মনে স্বজাতি ও স্বদেশের প্রতি ভালোবাসার সঞ্চার করে, দেশের স্বার্থে দায়িত্ব সম্পাদনে উদ্বুদ্ধ করে, আত্মত্যাগে প্রেরণা জোগায়। এদিক থেকে বিচার করলে জাতীয়তাবাদ হল আন্তর্জাতিকতার প্রথম সোপান। বস্তুতপক্ষে জাতীয়তাবাদের পথ ধরেই একটি জাতি যাবতীয় সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে উত্তীর্ণ হয় আন্তর্জাতিকতা ও বিশ্বভ্রাতৃত্বের অখণ্ড চেতনায়। তাই বলা যায়, মানবসভ্যতার ভবিষ্যৎ নিহিত রয়েছে জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতার সমন্বয়সাধনের মধ্যে।
উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী :
উগ্র জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ জাত্যাভিমানকে উৎসাহিত করে। এইরকম জাত্যাভিমানযুক্ত জাতি বিশ্বাস করে যে তার ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি, সভ্যতা পৃথিবীর অন্যান্য জাতির ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আন্তর্জাতিকতাবাদ বিভিন্ন জাতির ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতিকে শ্রদ্ধা করে। উগ্র জাতীয়তাবাদ জাতিতে জাতিতে যুদ্ধের সূচনা করে। সবল জাতি দুর্বল জাতির স্বাধীনতা ও সংস্কৃতিকে বিপন্ন করে। আন্তর্জাতিকতাবাদে জাতির স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে। ওউগ্র জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্বুদ্ধ রাষ্ট্রনেতাগণ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়নীতিকে অবজ্ঞা করে বা তার বিরোধী আচরণ করে। আন্তর্জাতিকতাবাদ আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়নীতি মেনে চলার শিক্ষা দেয়। পরিশেষে বলা যায়, জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই। বলা হয়, জাতীয়তাবাদের রাজপথ ধরেই আন্তর্জাতিকতাবাদে পৌঁছোনো যায়।’
কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদ মানবসভ্যতার প্রধানতম শত্রু। বর্তমান মানবসভ্যতাকে রক্ষা করতে হলে জাতীয়তাবাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিকতাবাদের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতাবাদের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বিভাগ-ঙ
5 (i) ভূমিকা : ফরাসি সম্রাট ষোড়শ লুই ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে স্টেটস্ জেনারেলের অধিবেশন আহ্বান করেন। এই অধিবেশনে সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির প্রতিনিধিদের মাথাপিছু ভোটদানের দাবি না মানলে তারা নিজেদের সভাকে জাতীয় সভা (National Assembly) বলে ঘোষণা করে এবং টেনিস কোর্টের শপথ (20 জুন, ১৭৮৯ খ্রি) নিয়ে নতুন সংবিধান রচনার অঙ্গীকার করে। এই অবস্থায় সম্রাট তৃতীয় শ্রেণির দাবি মেনে নিয়ে তিন শ্রেণির যৌথ অধিবেশন আহ্বান করেন। ফলে জাতীয় সভা ‘সংবিধান সভা’ (Constituent Assembly)-য় রূপান্তরিত হয়।
সংবিধান রচনা : বিপ্লবের যুগে ফরাসি সংবিধান সভা দু-বছরের (১৭৮৯-১৭৯১ খ্রি) চেষ্টায় একটি সংবিধান রচনা করে। এই সংবিধান রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন লাফায়েৎ, মিরাবো, ট্যালির্যান্ট, রোবসপিয়র প্রমুখ প্রথম সারির নেতারা। তাঁদের রচিত সংবিধানই ছিল ফ্রান্সের প্রথম লিখিত সংবিধান ।
সংবিধান সভার কার্যাবলি : সংবিধান সভা মূল সংবিধান রচনার আগে দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল– সামন্তপ্রথার বিলোপ : সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ আগস্ট এক ঘোষণার দ্বারা ফ্রান্সের সামন্তপ্রথা, সামন্ত কর, বেগার শ্রম প্রভৃতি বিলোপ করে।
ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার ঘোষণা : সংবিধান সভা ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট ‘ব্যক্তি ও নাগরিকের অধিকার’ ঘোষণা করে। এই ঘোষণায় বলা হয়, স্বাধীনভাবে বাঁচা মানুষের জন্মগত অধিকার, আইনের চোখে সবাই সমান প্রভৃতি। ঐতিহাসিক ওলার (Aulard)-এর মতে এই ঘোষণাপত্রটি ছিল ‘পুরাতনতন্ত্রের মৃত্যু পরওয়ানা’ (The Declaration was a death certificate of the Old Regime) | –
সংবিধান সভার সংস্কারকার্য : ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দে সংবিধান সভা কর্তৃক সংবিধান রচনার কাজ সম্পূর্ণ হয়। এর সংস্কারমূলক কার্যাবলিকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলি হল শাসনতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক সংস্কার, বিচারবিভাগীয় সংস্কার ও ধর্মীয় সংস্কার ।
শাসনতান্ত্রিক সংস্কার : শাসনতান্ত্রিক ক্ষেত্রে সংবিধান সভার সংস্কারমূলক কাজগুলি হল– ফ্রান্সের রাজার ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব করা হয়। শাসন, আইন ও বিচারবিভাগকে পৃথক করা হয়। সমগ্র ফ্রান্সকে ৮৩টি প্রদেশে (ডিপার্টমেন্ট) বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রদেশকে আবার জেলা, ক্যান্টন ও কমিউনে ভাগ করা হয়।
অর্থনৈতিক সংস্কার : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসি সংবিধান সভার কার্যাবলি হল– ফ্রান্সের গির্জার সকল ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। অ্যাসাইনেট (Assignat) নামে একপ্রকার কাগজের নোট প্রচলন করা হয়। সারাদেশে একই ধরনের ওজন, মাপ ও শুল্কব্যবস্থা চালু করা হয়।
বিচারবিভাগীয় সংস্কার বিচারবিভাগীয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ হল– আইনের চোখে সকলেই সমান এই নীতি চালু করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিলের অধিকার স্বীকৃত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ ও তাদের নিয়মিত বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
ধর্মীয় সংস্কার : ধর্মীয় ক্ষেত্রে সংবিধান সভার উল্লেখযোগ্য কাজগুলি হল– ফ্রান্সের গির্জা ‘গ্যালিকান গির্জা’ (Galican Church) নামে পরিচিত হয় এবং আইনের মাধ্যমে গির্জাকে রাষ্ট্রের অধীনে আনা হয়। যাজক ও বিশপদের নির্বাচন করার অধিকার জনগণকে দেওয়া হয়। বিশপ ও যাজকদের সরকারি বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
মন্তব্য : সংবিধান সভার কার্যাবলি ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। সংবিধান সভা স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে ফ্রান্সের জনগণের হাতে ক্ষমতা প্রদান করেছিল।
(ii) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮ জুন মিত্রশক্তি ও তার সহযোগীদের সঙ্গে জার্মানির ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। আসলে বিজয়ী মিত্রপক্ষ জার্মানিকে ভার্সাই চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য করেছিল। সেই অর্থে ভার্সাই চুক্তি ছিল পরাজিত জার্মানির ওপর আরোপিত চুক্তি (Dictated peace) ।
লক্ষ্য : কয়েকটি বিশেষ লক্ষ্য নিয়ে ভার্সাই সন্ধির শর্তাবলি রচিত হয়। জার্মানিকে চিরতরে পঙ্গু করে রাখা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্রপক্ষের ক্ষয়ক্ষতি জার্মানির কাছ থেকে আদায় করা। ইউরোপের শক্তিসাম্য বজায় রাখা। জার্মানি যাতে ভবিষ্যতে বিশ্বশান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে তার ব্যবস্থা করা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে সর্বতোভাবে দায়ী করা।
শর্তাবলি : বিশালাকার এই চুক্তিপত্রকে চারভাগে ভাগ করা যায়– ভৌগোলিক শর্তাবলি, ও সামরিক শর্তাবলি, অর্থনৈতিক শর্তাবলি, রাজনৈতিক শর্তাবলি।
ভৌগোলিক শর্ত : ভার্সাই সন্ধির ভৌগোলিক শর্তানুযায়ী স্থির হয় যে, জার্মানি ফ্রান্সকে আলসাস ও লোরেন এবং বেলজিয়ামকে ইউপেন, ম্যালমেডি এবং মরেসনেট প্রদান করবে। স্লেজউইগ অঞ্চলকে দু-ভাগে ভাগ করা হয় উত্তর স্লেজউইগ ডেনমার্ককে এবং দক্ষিণ স্লেজউইগ জার্মানিকে প্রদান করা হয়।
জার্মানিকেও বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। জার্মানির আপার সাইলেসিয়ার একটি অংশ চেকোশ্লোভাকিয়াকে এবং পূর্ব সীমান্তের পোজেন এবং পশ্চিম প্রাশিয়া অঞ্চল পোল্যান্ডকে প্রদান করা হয়। জার্মানির ডানজিগকে ‘উন্মুক্ত শহর’ (Free City) বলে ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া জার্মানির দূরপ্রাচ্যের উপনিবেশগুলি জাপানকে দেওয়া হয়। এইভাবে ভার্সাই চুক্তির ফলে জার্মানি তার মোট ভূখণ্ডের ১/৮ অংশ হারায়।
সামরিক শর্ত : জার্মানির সামরিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ভবিষ্যতে তার উত্থানের সম্ভাবনাকে নির্মূল করার উদ্দেশ্যে তার ওপর বেশ কিছু কঠোর সামরিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরোপিত হয়। যেমন– জার্মানির জল, স্থল ও বিমানবাহিনীকে ভেঙে দেওয়া হয়। জার্মানির সৈন্যসংখ্যা কমিয়ে এক লক্ষ করা হয়। এই বাহিনীর কাজ কেবলমাত্র জার্মানির সীমানা রক্ষা ও অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ করা হয়। জার্মানির যুদ্ধজাহাজগুলি ইংল্যান্ডকে প্রদান করা হয়।
অর্থনৈতিক শর্ত : যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির ওপর ৬৬০ কোটি পাউন্ড অর্থের বোঝা চাপানো হয়। জার্মানির অধিকাংশ বাণিজ্য বন্দর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সকে প্রদান করা হয়। জার্মানির কয়লাসমৃদ্ধ সার অঞ্চলটি ফ্রান্সের তথা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে রাখা হয়। জার্মানির বাজারে মিত্রপক্ষের পণ্য বিক্রিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। জার্মানির কয়েকটি জলপথ বিশেষ করে রাইন নদীটিকে আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। অন্যান্য দেশে জার্মানির বিশেষ বাণিজ্যিক অধিকারের বিলোপ করা হয়।
রাজনৈতিক শর্ত : ভার্সাই সন্ধিতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য জার্মানিকে দায়ী করা হয়। যুদ্ধাপরাধী হিসেবে কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়মকে অভিযুক্ত করে তার বিচারের ব্যবস্থা করা হয়। বিচারের জন্য কাইজার দ্বিতীয় উইলিয়ম ও তাঁর অনুগত কয়েকজন রাজকর্মচারীকে মিত্রপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন (League of Nations বা জাতিসংঘ) প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। পোল্যান্ড, বেলজিয়াম, যুগোশ্লাভিয়া ও চেকোশ্লোভাকিয়ার স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়।
মূল্যায়ন : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের ফলে জার্মানির ওপর ভার্সাই সন্ধি আরোপের মাধ্যমে বিজয়ীপক্ষ জার্মানিকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ চরিতার্থ করেছিল। জার্মান ঐতিহাসিকরা এই সন্ধিকে ‘একতরফা ও জবরদস্তিমূলক সন্ধি’ নামে অভিহিত করেছেন। এই সন্ধিতে ন্যায়নীতি সম্পূর্ণভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছিল। যুদ্ধের জন্য কমবেশি সমস্ত দেশই দায়ী থাকলেও জার্মানিকে সম্পূর্ণভাবে দায়ী করা হয়। জার্মানির ওপর কিছু অবাস্তব অর্থনৈতিক শর্ত চাপিয়ে দেওয়া হয় যা পূরণ করার ক্ষমতা তার ছিল না। জার্মানি থেকে জার্মান অধ্যুষিত বহু অঞ্চলকে কেড়ে নিয়ে প্রতিবেশী অ-জার্মান রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে জার্মান জাতীয়তাবাদকে উপেক্ষা করা হয়। এককথায় ভার্সাই সন্ধির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীজ নিহিত ছিল।
তবে বেশ কিছু ঐতিহাসিক ভার্সাই সন্ধিকে সমর্থন করেছেন। তাঁদের মতে, পৃথিবীর সকল বিজয়ী শক্তিই বিজেতাদের ওপর একতরফাভাবে চুক্তি আরোপ করে। জার্মানি জয়ী হলে সেও একই কাজ করত।
(iii) Bankura Zilla School-এর 5. (iii)-এর উত্তরটি দ্যাখো।