Balurghat High School
১.১ চন্দ্রনাথ, হীরু ছিল কথকের (গ) সহপাঠী।
১.২ রাধারাণীরা দরিদ্র কিন্তু – (খ) লোভী নয়।
১.৩ ‘এমন ছেলের আমার দরকার নেই’ (ক) বাবার এমন ছেলের দরকার নেই।
১.৪ বঙ্গদেশের ভালে অবস্থান করছে – (ঘ) কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১.৫ বিবেকানন্দ নোকে বিশেষভাবে চিন্তা করতে বলেছেন – (ঘ) কর্মে-ঝাঁপ দেবার পূর্বে।
১.৬ ধ্বংস-নিশান উড়বে (ঘ) প্রাচীরে।
১.৭ ফুল দুলছে – (ঘ) সন্ধ্যার বাতাসে।
১.৮ কেশবতী কন্যা এসেছে – (খ) আকাশে।
১.৯ খেয়া নৌকা পারাপার করে – (ঘ) নদী স্রোতে।
১.১০ ভুটিয়ানিরা আপনাদের পরিচয় দেয় (ঘ) পাহাড়নি বলে।
১.১১ বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য সৃষ্টি – (ক) পদাবলি কীর্তন।
১.১২ অঙ্ক না জানা মানুষের প্রবেশ নিষেধ – (গ) স্বর্গে।
১.১৩ ইলিয়াসের পুত্র সংখ্যা ছিল – (খ) দুই।
১.১৪ নিজের পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় – (ঘ) গ্রিব পাখি।
১.১৫ মঠ অট্টালিকা ভেঙে খান খান করল- (ক) বীর হনুমান। 1
১.১৬ দুধ > দুদ – এতে যে ধ্বনি পরিবর্তন ঘটেছে – (খ) ক্ষীণায়ন। ১.১৭ একটি বিদেশি উপসর্গ – (ঘ) হাফ।
১.১৮ শব্দ + বিভক্তি = (ঘ) পদ।
১.১৯ স্বরভক্তির অপর নাম – (ঘ) বিপ্রকর্ষ।
১.২০ নাসিক্য ব্যঞ্জনধ্বনি নয় – (খ) জ।
২.১ পরীক্ষার আগে সেক্রেটারির ভাইপো অর্থাৎ হীরুকে প্রশ্ন জানিয়ে দিয়েছেন অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার। খাতাও নির্ভুলভাবে দেখা হয়নি। অঙ্ক পরীক্ষায় হীরু চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক ঢুকেছে। এভাবেই সে ফার্স্ট হয়েছে।
২.২ প্রায় দশ লক্ষ টাকার সম্পত্তি নিয়ে রাধারাণীর মায়ের সাথে এক জ্ঞাতির মামলা হয়। তাতে তারা পরাজিত হলে বাড়ি থেকে বিতাড়িত হন। এরপর প্রিবি কাউন্সিলে একটি আপিল করেন রাধারাণীর মা। তার খরচ চালাতেই তারা সর্বস্বান্ত হন। তাই রাধারাণীকে আর বিবাহ দিতে পারেননি তিনি।
২.৩ যেভাবে ফটো দেখিয়ে শোভনকে পরীক্ষা করা হচ্ছিল যে, সে তার নিজের ছবি নিজে চিনতে পারছে কিনা, তা শোভনের কাছে অসহ্য মনে হয়েছিল।
২.৪ বাঙালি বৌদ্ধ আচার্যদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত এবং শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্কর।
তিনি দুর্গম হিমালয় অতিক্রম করেছিলেন তিব্বতে গিয়ে মহাযান বৌদ্ধধর্ম প্রচার করতে।
২.৫ বিবেকানন্দের মতে, মি স্টার্ডির চিঠিটি ছিল শুষ্ক এবং প্রাণহীন।
২.৬ পরাধীনতার জ্বালায় জর্জরিত নজরুল বলেছেন, বিপ্লবীরা যেন পদাঘাতে ইংরেজদের কারাগারের তালা ভেঙে বন্দিশালায় আগুন লাগিয়ে দেন, যার মধ্য দিয়ে ধ্বনিত হবে প্রতিবাদ।
২.৭ বাংলাদেশে প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য উপভোগের নেশায় মাতোয়ারা বঙ্গবাসীর যাওয়া-আসা বন্ধ থাকে না বলেই কবি। বলেছেন, তাদের গল্পের নটেগাছটি বুড়িয়ে উঠলেও মরে যায় না।
২.৮ ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কিশোরীর চালধোয়া হাতখানি সিক্ত এবং সিক্ত হওয়ার কারণে তা ঠান্ডা।
২.৯ সাংসারিক ও সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ কবি পারিপার্শ্বিক বন্ধন মোচন করে সমুদ্রের উদ্দেশে পাড়ি দিতে পারেন না। তাই সারারাত দাঁড় টানা কবির কাছে মিথ্যে হিসেবে প্রতিপন্ন হয়। কারণ, কবির তরির নোঙর পড়ে গিয়েছে তটের কিনারে।
২.১০ ভুটিয়ানিরা সাত গজ লম্বা কাপড় ঘাঘরার মতো করে পরে, কোমরে একখণ্ড কাপড় জড়ানো থাকে, গায়ে থাকে জ্যাকেট, বিলাতি শাল দ্বারা তারা মাথা আবৃত করে রাখে।
২.১১ কথক সুকুমারের বিশ্বাস, কলকাতায় অনেক নামজাদা বক্তা থাকায় কথকের মতো নগণ্য ব্যক্তিরা সেভাবে বিশেষ পাত্তা পান না। কিন্তু শহর থেকে দূরে গেলে রাজোচিত সম্মান পাওয়া যায়।
২.১২ ইলিয়াসের বোলবোলাও দেখে আশেপাশের সকলেই তাকে ঈর্ষা করে বলত ইলিয়াস ভাগ্যবান পুরুষ, তার কোনো অভাব নেই। তার মরবারও দরকার নেই।
২.১৩ বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ যজ্ঞীয় পশু বধের সময় নির্দয় হয়।
২.১৪ ‘মহী’ শব্দের সমার্থক শব্দ পৃথিবী বা ভুবন। প্রবল বর্ষণে পৃথিবী প্লাবিত হওয়ায় জল ও মাটি একাকার হয়ে যায়। তার ফলে পথ দেখা যায় না।
২.১৫ ‘এয়ারকন্ডিশনিং পিল’ শঙ্কুর একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। এটি জিভের তলায় রাখলে গরমকালে শীত ও শীতকালে গরমের বোধ হয় ।
২.১৬ ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু হের্ গোয়রিং-এর ড্রাইভারকে আলোচ্য উক্তিটি করেছে।
২.১৭ সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ : যে বিশেষ্য পদের দ্বারা কোনো সংখ্যা বোঝানো হয়, তাকে সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ বলে। যেমন— সাত পাঁচ ভেবো না। সাত ও পাঁচ হল সংখ্যাবাচক বিশেষ্য পদ।
২.১৮ প্রদত্ত শব্দটিতে ধ্বনি বিপর্যাস ঘটেছে।
২.১৯ ‘অন্ধকার’ শব্দের ব্যুৎপত্তি হল — অন্ধ + কৃ + অ।
২.২০ ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রের নাম – সিমোগ্রাফ।
৩.১ ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে নায়েবমশাই বলেন ফটোর সাথে আগত শোভন নামধারী যুবকের চেহারার বেশ মিল আছে।
” তা সত্ত্বেও নায়েবমশাই যা বলেন তা যথার্থই মর্মভেদী। সাতদিন আগে শোভনের মৃত্যু হয়েছে রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়ে অপঘাতে। তার নাম-ধাম পরিচয় পাওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু যারা দুর্ঘটনায় উপস্থিত ছিল তাদের কয়েকজন খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করে। তাছাড়া, নায়েবমশাইরা হাসপাতালে গিয়েও খবর নিলে একই জবাব পান।
অথবা, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় রচিত ‘দাম’ গল্পে উদ্ধৃতিটির বক্তা কথক, সুকুমার।
অঙ্কের মাস্টারমশাই সম্পর্কে কথক উদ্ধৃত উক্তিটি করেছেন। তিনি ছিলেন খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ। তাঁর শাস্তি এবং শাসনে তটস্থ হয়ে থাকত ছাত্ররা। যারা তেমন ভালো অঙ্ক কষতে পারত না, মাস্টারমশায়ের প্রকাণ্ড হাতে প্রচণ্ড চড় খেয়ে তাদের মাথা ঘুরে যেত, অথচ কাঁদবার উপায় ছিল না। চোখে একফোঁটা জল দেখলে হুংকার ছেড়ে তিনি পা ধরে স্কুলের পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এই ভয়াবহ পরিবেশের নির্মাতা মাস্টারমশাইকে তাই ছাত্রদের বিভীষিকা বলে মনে হত।
৩.২ বট, অশ্বত্থ, বেল, অশোক ও আমলকী এই পাঁচ বৃক্ষের সমন্বিত এলাকাকে পঞ্চবটী বলা হয়।
প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের “আমরা” কবিতা থেকে সংগৃহীত। এখানে ‘শ্মশানের’ একটি অর্থ মৃতদেহ দাহ করার স্থান। কবিতায় কবি ‘শ্মশান’ বলতে প্রাণহীন, উদ্যমহীন পরাধীন ভারতবর্ষকে বুঝিয়েছেন। কবি আলোচ্য কবিতায় বলতে চেয়েছেন, মৃতপ্রায়, অনুভূতিহীন দেশে বাঙালি জাতি ‘পঞ্চবটী রোপণ’ তথা প্রাণ সঞ্চার করেছে। যেখানে জীবনপ্রবাহ থেমে যায়, সেই শূন্যতা থেকেই সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার আদর্শে অনুপ্রাণিত বাঙালি শান্তিমন্ত্রে মহামানবতার সাম্রাজ্যের নবজন্ম ঘটিয়েছে।
অথবা, ‘গাজন’ হল একজাতীয় লোকউৎসব, যা চৈত্র মাসের শেষে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত হয়। এই অনুষ্ঠানেই গাজনের বাজনা বাজে ।
“ভাঙার গান’ কবিতায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম পরাধীন ভারতের বীর বিপ্লবী তরুণদের মধ্যে দেবাদিদেব মহাদেবের প্রলয়ংকর রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন। সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকরা ভারতবাসীর উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিল, তাই সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসককে কবি ভারতবাসীর ‘রাজা’ বা ‘মালিক’ বলে অভিহিত করেছেন। গাজনের বাজনা বাজিয়ে তাদের সেই প্রাচীরকে ভেঙে দিতে বলেছেন কবি। গাজনের বাজনার মধ্যে প্রলয়ের আভাস আছে। ভারতের যুবশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে সেটাকেই তিনি কাজে লাগাতে বলেছেন।
৪.১ তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশে চন্দ্রনাথ হীরুর বাড়িতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে চিঠি দিয়ে নিমন্ত্রণ রক্ষার অক্ষমতার কারণ জানায়। তবে চিঠির সম্বোধনে সে হীরুকে বন্ধুত্বের আন্তরিকতার বন্ধনে না বেঁধে প্রথাগত মানুষের ন্যায় সম্বোধন করে। প্রিয়বরেষু” কেটে লেখে ‘প্রীতিভাজনেষু’। সেই চিঠি থেকে জানা যায় সে প্রথমে অনুষ্ঠানে না থাকার কারণে মার্জনা চায়। হীরুর সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে। পাশাপাশি স্কলারশিপের জন্য এত বড়ো বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয় এ মতও প্রকাশ করে। এরপর সে যাত্রা করে সকলের অজানা গন্তব্যে। হীরুর কাছে চন্দ্রনাথ প্রেরিত চিঠিটি স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ থেকে যায়।
চন্দ্রনাথ ও হীরু প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন হওয়া সত্ত্বেও হীরু তার অভিমানী বন্ধুকে ভুলে থাকতে পারেনি। তার চারিত্রিক সারল্যই জয়ী হয়েছে এখানে। চন্দ্রনাথের চলে যাওয়াকে তাই স্বীকৃতি দিলেও বন্ধুর প্রদেয় চিঠিটিকে তার স্মৃতির স্মারক হিসেবে অন্তরের গভীরে ধারণ করেছে হীরু।
৪.২ ‘ইলিয়াস’ গল্পটি আদ্যন্ত ইলিয়াসের জীবনের উত্থানপতনের জীবনচরিত হয়ে উঠেছে। প্রথম জীবনে ইলিয়াস দরিদ্র থাকলেও পঁয়ত্রিশ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রভূত সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিল সে। এইসময় তার সম্পত্তি বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক জানিয়েছেন- “তখন তার দুশো ঘোড়া, দেড়শো গোরু-মোষ, আর বারোশো ভেড়া এই সময় ইলিয়াসের ‘বোলবোলাও’ কম ছিল না। তার প্রভূত সম্পত্তিতে পাড়া-প্রতিবেশী হিংসা করত, বলত – ইলিয়াস তো ভাগ্যবান পুরুষ; কোনো কিছুরই অভাব নেই; ওর তো মরবারই দরকার নেই।’
ইতিমধ্যে ইলিয়াসের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ইলিয়াস যখন গরিব ছিল, ছেলেরা তার সঙ্গে কাজ করলেও কালক্রমে তারা আয়েশি হয়ে ওঠে। বড়োটি এক মারামারিতে মারা যায়, ছোটোটি ঝগড়াটে বউ বিয়ে করে এনে বাবার আদেশ অমান্য করতে আরম্ভ করে। ফলে ইলিয়াস তাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। ইলিয়াস সেই ছেলেকে বাড়ি দেয়, কিছু গোরু-ঘোড়াও দেয়। ফলে ইলিয়াসের সম্পত্তিতে টান পড়ে। তারপরেই ইলিয়াসের ভেড়ার পালে মড়ক লেগে অনেকগুলি ভেড়া মারা যায়। তার পরের বছর দেখা দেয় দুর্ভিক্ষ। একেবারে খড় না পাওয়া যাওয়ায় শীতকালে অনেকগুলি গোরু-মোষ না খেয়ে মারা যায়। তারপর ‘কিরবিজ’রা তার সবচেয়ে ভালো ঘোড়াগুলি চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় ইলিয়াসের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শরীরের দিক থেকেও একপ্রকার নিঃস্ব ইলিয়াস সত্তর বছর বয়সে বাধ্য হয়ে তার পশমের কোট, কম্বল, ঘোড়ার জিন, তাঁবু ও গৃহপালিত পশুগুলিকে বিক্রি করে দুর্দশার চরম শিখরে উপনীত হয়। আসল অবস্থা বুঝে ওঠার পূর্বেই সে সর্বহারা হয়ে পড়ে।
৫.১ বিদ্রোহী কবি নজরুল ভারতবর্ষের পরাধীনতার জ্বালা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন। তাই তিনি অত্যাচারী ইংরেজদের কারাগারে বন্দি ভারতীয় বিপ্লবীদের সঙ্গে একীভূত হয়ে লৌহকঠিন কারাগারের কপাট ভেঙে ফেলতে চান। ‘পাগলা ভোলা’-র মতো প্রবল শক্তিধর হয়ে প্রলয় দোলায় গারদগুলোকে জোরসে ধরে হ্যাঁচকা টানে ভূলুণ্ঠিত করে সবকিছু লোপাট করতে চান।
কবি নজরুল স্বদেশপ্রেমিক, সুন্দরের পূজারি। তাই স্বদেশের অপমান তিনি যেমন সহ্য করেন না, তেমনই সুন্দরের অপমানেও তিনি। কষ্ট পান। তিনি কবি, তিনি সচেতন, সংবেদনশীল এবং প্রতিবাদী। তিনিই বলতে পারেন-
“রক্ত ঝরাতে পারি না তো এবা তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা ।”
পরাধীনতার জ্বালাতে কবির সহ্যশক্তি হারিয়ে গেছে বলেই তিনি প্রতিবাদী হয়েছেন। তিনি দেখেছেন ভারতবর্ষের মানুষেরা ইংরেজদের অত্যাচারে জর্জরিত। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে না পেরে ‘অগ্নিবীণা’ হাতে নিয়ে ‘বিষের বাঁশি’তে ‘ভাঙার গান’ গেয়েছেন। তাঁর বিদ্রোহ প্রকাশ পেয়েছে ‘ভাঙার গান’ গীতিকায়—
“কারার ওই লৌহ-কপাট ভেঙে ফেল, কররে লোপাট ….
যে ঈশান তরুণ অর্থাৎ যে বিপ্লবী তরুণ তাকেই বিদ্রোহের জয়পতাকা হাতে তুলে নিতে হবে। বিষাণের প্রবল ধ্বনিতে পৃথিবীতে সে নামিয়ে আনবে বিপ্লবের প্রবল বর্ষণ। ধ্বংস হবে ইংরেজের বন্দিশালা। প্রাচীরের গায়ে বিজয়শঙ্খের মতন উত্থিত হবে জয়পতাকা।
৫.২ কবিতার শিরোনাম তার অন্তর্নিহিত ভাব বা ব্যঞ্জনাকে আভাসিত করে। কবি অজিত দত্তের ‘শাদা মেঘ কালো পাহাড়’ কাব্যগ্রন্থের ‘নোঙর’ কবিতাটিও এর ব্যতিক্রম নয়। নোঙর হল লোহার তৈরি ভারী একটি বস্তু যার সাহায্যে নৌকা বা জাহাজ বাঁধা হয়। কাছি বা শিকল দিয়ে নোঙরের সঙ্গে নৌকাকে প্রয়োজন অনুযায়ী বেঁধে রাখা হয়। নোঙরের বন্ধন ছিন্ন করে নৌকা এগিয়ে যেতে পারে না। অনুরূপভাবে এই জগৎ সংসারে মানুষও বাঁধা পড়ে থাকে নানান পারিপার্শ্বিক বন্ধনে। জীবনে কোনো মহৎ লক্ষ্যে পৌঁছাতে চাইলেও সে বন্ধন উপেক্ষা করা মানুষের পক্ষে সর্বদা সম্ভব হয় না। আলোচ্য কবিতায় নোঙর হল সেই প্রতিবন্ধকতা যা মানুষকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে দেয় না। আর এই সূত্রেই কবিতায় অভিব্যক্ত কবির অনুভবকে ব্যঞ্জিত করে ‘নোঙর’ নামকরণটি।
কবি চান তরি নিয়ে সাতসাগরের পারে যাত্রা করতে, কিন্তু সংসারসীমান্তে তিনি বাঁধা পড়ে আছেন। যতই দাঁড় টানেন, যতই চেষ্টা করেন সেই বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন না। রোমান্টিক কবিমন চিরচঞল। আজীবনের আশা-আকাঙ্ক্ষাসহ তাঁর সমূহ সঞ্জয় তথা বাণিজ্য তরিটিকে নিয়ে কবি পরিচিত জগতের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যেতে চান দূর দেশে, নতুনের সন্ধানে। কিন্তু পারেন না। এই ব্যর্থতা, অসহায়তা কবির হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে।
নোঙর স্থবিরতার প্রতীক, প্রতীক প্রতিবন্ধকতা আর বন্ধনেরও। দাঁড় টেনে, মাস্তুলে পাল বেঁধে সারারাত শত চেষ্টা করেও কবি তাঁর তরিটি চলমান রাখতে ব্যর্থ হন। নোঙরের কাছি চিরকাল বাঁধা রয়ে যায় তটের কিনারে। অর্থাৎ জীবন প্রথাগত চিন্তা-চেতনা সংস্কারে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রতি পদক্ষেপে কবি অনুভব করেন ব্যর্থতার গ্লানি। জীবনের ধর্মে তিনি এগিয়ে চলার চেষ্টা করে যান ঠিকই, কিন্তু নোঙরের শক্তিশালী বন্ধন থেকে অর্থাৎ এই মায়াময় জগতের অবিচ্ছেদ্য আকর্ষণ থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত করতে পারেন না। কবিজীবনের এই স্তব্ধতা, গতিহীনতা ‘নোঙর’ নামকরণটিকে ব্যঞ্জনাধর্মী এবং সাথর্ক করে তোলে।
৬.২ চিন্তানায়ক বিবেকানন্দ তাঁর বিশ্বাস থেকে মিস নো-কে লেখা পত্রে খোলাখুলি জানিয়েছেন ভারতবর্ষের কাজে তাঁর এক বিরাট ভবিষ্যতের কথা। পরাধীন ভারতবর্ষকে দুর্দশামুক্ত করতে এবং নারীজাতিকে চরম অপমানের হাত থেকে রক্ষা করতে ‘প্রকৃত সিংহী’ রূপী মিস নোল-এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বিবেকানন্দ। তাঁর দৃষ্টিতে মিস নো— “সেইরূপ নারী, যাকে আজ প্রয়োজন।”
কিন্তু প্রয়োজনীয়তা সত্ত্বেও নানা বিঘ্ন রয়েছে। সেই কারণে ‘কিন্তু’ শব্দের প্রয়োগ করা হয়েছে।
বিবেকানন্দ বুঝতে পেরেছেন, ভারতের কাজে মিস নো-এর বিরাট ভবিষ্যৎ থাকলেও বিঘ্ন আছে বহু। পরাধীন ভারতবর্ষের দুঃখ-বেদনা, কুসংস্কার, দাসত্ব প্রভৃতি কী ধরনের, তা ধারণার বাইরে। মিস নোবল ভারতে এসে নিজেকে অর্ধ-উলঙ্গ অসংখ্য নরনারী পরিবেষ্টিত অবস্থায় দেখতে পাবেন। ইংরেজ জাতি ও তাদের স্পর্শ সম্বন্দ্বে পরাধীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভারতবাসীর বিকট ধারণা, ভয় কিংবা ঘৃণা যে কারণেই হোক, তারা শ্বেতাঙ্গদের এড়িয়ে চলে। তাই মিস নোবল যদি ভারতীয়দের জন্য কিছু করেন, তাহলে শ্বেতাঙ্গরা মিস নোব্ল্-কে খামখেয়ালি বলে মনে করবে এবং প্রত্যেকটি গতিবিধি সন্দেহের চোখে দেখবে। তাছাড়া, ভারতবর্ষের জলবায়ু গ্রীষ্মপ্রধান। শহরের বাইরে কোথাও ইউরোপীয় সুখস্বাচ্ছন্দ্য পাওয়ার উপায়ও নেই। স্বামী বিবেকানন্দ এইসব বিঘ্নের কথা মিস নোবল-কে পত্রে জানানোর পর বলেছেন – “এসব সত্ত্বেও যদি তুমি কর্মে প্রবৃত্ত হতে সাহস কর, তবে অবশ্য তোমাকে শতবার স্বাগত জানাচ্ছি।” এ প্রসঙ্গে স্বামিজি মিস মুলারের কথা উল্লেখ করে বলেন, কারও পক্ষপুটে থাকলে চলবে না, স্বনির্ভর হয়ে উঠতে হবে।
৭.১ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে দরিদ্র ধীবর নিজের শিকার করা একটি রুইমাছ কাটার সময় তার পেটের মধ্যে শকুন্তলাকে দুষ্মন্তের উপহার দেওয়া মণিমুক্তায় ঝলমলে আংটিটি পায়।
একটি বহুমূল্য আংটি নাট্যাংশের মূল বক্তব্যকেন্দ্রে অবস্থান করে নাট্যদৃশ্যটিকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আংটির গুরুত্ব প্রবলভাবে বেড়ে যায় কারণ এটি রাজা ও শকুন্তলার বিবাহসম্পর্কের একমাত্র নিদর্শন হয়ে পড়ে। কিন্তু ঘটনাক্রমে আংটিটি শকুন্তলার হাত থেকে জলে পড়ে যায় এবং একটি মাছ তা খেয়ে নেয়। এরপর মাছটি জনৈক ধীবরের হাতে ধরা পড়ে। মাছের পেট থেকে ওই আংটি পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই ধীবর তা বিক্রি করে ভাগ্য ফেরাতে উদ্যোগী হয়। ওই ধীবর অবশেষে নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজ শ্যালক ও তার দুই সঙ্গী রক্ষীর কাছে ধরা পড়ে বন্দি হয়ে রাজধানীতে আসে। ধীবরের কাছে রাজ-নামাঙ্কিত আংটি রাজ শ্যালকের মনে সন্দেহের জন্ম দেয়। ধীবরের আংটিপ্রাপ্তির ঘটনায় অবিশ্বাস্যতা ছিল বলেই রাজ শ্যালক স্বয়ং রাজার কাছে যান এবং ঘটনার সত্যতা প্রকাশিত হয়।
নাট্যাংশের শেষে দেখা যায়, রাজা পুনরায় তাঁর আংটি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু ঘটনাক্রমে কোনো এক প্রিয়জনের চিন্তায় তিনি বিহ্বল হয়েছেন। তবে ধীবর শুধুমাত্র এই আংটির কল্যাণে রাজার আদেশে মুক্তি পেয়েছে ও উপযুক্ত পারিতোষিক লাভ করেছে।
৭.২ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’নাট্যাংশে মহারাজ হলেন পুরুবংশীয় রাজা দুষ্মন্ত।
শকুন্তলাকে বিবাহ করে রাজা দুষ্মন্ত তাকে নিজ নামাঙ্কিত মূল্যবান রত্নখচিত যে আংটি দেন, রাজা ও শকুন্তলার বিবাহ সম্পর্কে তা ছিল একমাত্র পরিচায়ক। দুর্বাসা মুনির দেওয়া অভিশাপ অনুযায়ী রাজা শকুন্তলাকে তখনই চিনতে পারবেন যখন কোনো স্মারক বা নিদর্শন শকুন্তলা দেখাতে পারবেন। শকুন্তলার সখীরা তাই ভেবেছিলেন একমাত্র এই রাজনামাঙ্কিত আংটিই হবে শকুন্তলার পরিচয়জ্ঞাপক নিদর্শন বা স্মারক।
শকুন্তলা মহর্ষি কম্বের উদ্যোগে যখন পতিগৃহে যাত্রা করেছিলেন তখন পথে শচীতীর্থে স্নানের পর অঞ্জলি দেওয়ার সময় তার হাত থেকে খুলে পড়ে যায় রাজ-নামাঙ্কিত আংটিটি। এরপর একটি রুই মাছ তা খেয়ে নেয় এবং ঘটনাক্রমে আংটিটি হস্তগত হয় জনৈক ধীবরের।
ধীবর সেই আংটি পেয়ে তা বিক্রির উদ্দেশে জনসমক্ষে এলে ‘চোর’, ‘গাঁটকাটা’ ইত্যাদি অপমানসূচক কটূক্তিতে ভূষিত হয়ে ধৃত হয় রাজ-শ্যালক ও রক্ষীদ্বয় দ্বারা। এরপর, রাজা ধীবরকে শাস্তি প্রদানের পরিবর্তে আংটি পেয়ে বিহ্বল হন কারো চিন্তায়। তবে, তা শুভ চিন্তার ইঙ্গিতবাহী বলেই ধীবর রাজার থেকে উপযুক্ত সম্মান ও পারিতোষিক লাভ করেন।
৮.১ প্রোফেসর শঙ্কু পাখিদের মস্তিষ্কে মানুষের বোধবুদ্ধি সঞ্চারিত করতে তৈরি করে ফেললেন ‘অরনিথন’ নামক যন্ত্র। ল্যাবরেটরিতে পৃথক খাঁচা ও বৈদ্যুতিক সংযোগ সমন্বিত প্রকোষ্ঠযুক্ত পাখি পড়ানোর অরনিথন যন্ত্রটি তৈরির সময় খোলা জানলা দিয়ে পায়রা-চড়ুই-টিয়া ইত্যাদির সঙ্গে একটি কাকও ঢুকত। এই কাকটি শেখার আগ্রহ থেকেই সেই খাঁচাটির মধ্যে ঢুকে পড়ে। আর শঙ্কু তখন যন্ত্র সক্রিয় করে দিলে চঞ্চল কাকটির রূপান্তর ঘটে যায়। এইভাবে হিউম্যান ইনটেলিজেন্সের অধিকারী হয়ে সে ঠোঁটে পেনসিল নিয়ে নিজের নাম C-O-R-V-U-S লিখে ফেলে; বলে দিতে পারে মাস, তারিখ, বার। বাংলা ভাষায় শিক্ষা শুরু হলেও পরে বিদেশে ডিমন্সট্রেশনের জন্য ইংরেজিতেও সে রপ্ত হয়ে ওঠে।
সানতিয়াগোর পক্ষীবিজ্ঞানী সম্মেলনে প্রশিক্ষিত কর্ভাস তার অধিগত শিক্ষায় সমাগত অতিথিদের স্তম্ভিত করে দেয়; প্রশংসা বের হয় ‘কোরিয়েরে দেল সানতিয়াগো’ নামক দৈনিকে। সুটকেসের চাবির জোগান, পাসপোর্ট-এর কথা স্মরণ করানো, ল্যাম্প নিভিয়ে ধান্দাবাজ আর্গাসকে অসম্মান ও অবজ্ঞা করা, জাপানি বিজ্ঞানী মোরিমোতোর ক্লান্তিকর বক্তৃতায় বিরক্তি প্রকাশ করা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে সত্যই কর্ভাস তার মানবিক গুণের প্রতিফলন ঘটিয়েছে। আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে বজ্রাঘাতে মৃত কাকের জন্য যখন দল বেঁধে অন্যরা চেঁচামেচি করেছে— কর্ভাস তখন নীরবে নিমগ্নচিত্তে পেনসিল নিয়ে ‘প্রাইম নম্বর’ লিখতে ব্যস্ত থেকেছে। সচেতনভাবেই কর্ভাস স্বজাতি থেকে নিজের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করেছে।
৮.২ বাংলা কিশোর সাহিত্যের উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে কল্পচরিত্র প্রোফেসর শঙ্কুর সর্বরোগনাশক ‘মিরাকিউরল’ ওষুধ আবিষ্কারের আশ্চর্য সুন্দর বর্ণনা করেছেন।
প্রোফেসর শঙ্কু পেশায় ছিলেন অধ্যাপক এবং তাঁর নেশা ছিল গবেষণা। বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর মৃত্যুর কয়েকদিন আগে তিনি তাঁর কাছ থেকে টিকড়ীবাবার এক আশ্চর্য কাহিনি শোনেন। তাঁর বাবার কাছে টিক্ড়ীবাবা শ্বাসকষ্টের ওষুধ নিতে এসে তাঁর বাবার কঠিন অসুখের চিকিৎসার কথা জানাতে গিয়ে এক কাহিনি বলেন। তিনি যখন কাশীতে ছিলেন, তখন তাঁর কঠিন পান্ডুরোগ হয়। কিন্তু তাঁর গুরুদেব সোনেপত্তীর দুটো শুকনো পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে রাতে তাঁকে খাইয়ে দিতে তিনি উপশম পান। এই পাতা পেতে হলে যেতে হবে কসৌলি। সেখান থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে আছে এক চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। সেই মন্দিরের পিছনে জঙ্গলের পাশের এক ঝরনার ধারেই জন্মায় সোনেপত্তী।
বাবার মুখে এ কাহিনি শুনে শঙ্কু সোনেপত্তী আনতে চাইলে মৃত্যু পথযাত্রী বাবা বারণ করেন। এর ঠিক দু-দিন পরেই তাঁর বাবা মারা যান। বাবার মৃত্যুর পর তিনি কসৌলির উদ্দেশে রওনা দেন। আড়াই দিন লাগে গিরিডি থেকে কালকা পৌঁছোতে। সেখানে গিয়ে এক হোটেলের ম্যানেজার নন্দকিশোর রাওয়ালকে জিজ্ঞাসা করে শঙ্কু চামুণ্ডার মন্দিরের ঠিকানা নেন। নন্দকিশোরই তাঁকে ঘোড়ার ব্যবস্থা করে দেন। ঘোড়ার মালিক ছোটেলাল সঙ্গে থাকেন। দু-জন মিলে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করেন এবং শঙ্কু স্বর্ণপর্ণী দেখতে পান। ছোটেলাল গাছড়াটিকে শিকড়সুদ্ধ তুলে শঙ্কুর হাতে দেন।
তিনদিন পরে বাড়ি ফিরে শঙ্কু মালি হরকিষণকে গাছটি পরিচর্যার দায়িত্ব দেন। তাঁর ওষুধটা প্রয়োগ করার খুব ইচ্ছা ছিল। তাই আজন্ম গিরিডিবাসী উকিল জয়গোপাল মিত্রের গুরুতর অসুস্থতায় সেই ওষুধ প্রথম প্রয়োগ করেন। জয়গোপাল মিত্র পরের দিনই সুস্থ হয়ে ওঠেন। ইতিমধ্যে বাগানের দক্ষিণদিকে আরও এগারোটি স্বর্ণপর্ণীর গাছ গজায়। শঙ্কু ঠিক করেন শুকনো পাতা গুঁড়িয়ে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার চেয়ে বড়ি তৈরি করে নেওয়া শ্রেয়। সেই অনুযায়ী তিনি বড়ি তৈরি করেন, নাম দেন ‘মিরাকিউরল’ অর্থাৎ মিরাল কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস’।
৯. আলংকারিক অব্যয় : যে অব্যয়গুলি স্পষ্ট কোনো অর্থ বহন না করলেও বাক্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে ও অতি সূক্ষ্মভাবে বাক্যের ব্যঞ্জনাকে সামান্য পরিবর্তিত করে তাদের আলংকারিক বা বাক্যালংকার অব্যয় বলে। এর অপর নাম নিরর্থক অব্যয়।
প্লুতস্বর : যখন কোনো স্বরধ্বনিকে অতি দীর্ঘরূপে উচ্চারণ করা হয় তখন তাকে প্লুতস্বর বলে। যেমন— ‘ওহে এএএএএএ’ শব্দে ‘এ’স্বরটি প্লুতস্বর। কাউকে দূর থেকে ডাকার সময় প্লুতস্বরের প্রয়োগ করা হয়।
প্রত্যয় : যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ ধাতু বা শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে, তাকে প্রত্যয় বলে। অ, আ, ই ইত্যাদি হল এক ধ্বনির প্রত্যয়। তৃচ্, অন, ইমা ইত্যাদি একাধিক ধ্বনি সমন্বয়ের প্রত্যয়। প্রত্যয় দু-রকম। যথা- (ক) ধাতু বা কৃৎ প্রত্যয় ও (খ) তদ্ধিত বা শব্দ প্রত্যয়।
১০.১ মানুষ বিধাতার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। ঈশ্বরই এই জীবজগৎ সৃষ্টি করেছেন। জীবকুলের মধ্যে সেরা মনুষ্যজাতি। মানুষের জীবনের শ্রেষ্ঠ পরিচয় হল তার মনুষ্যত্ববোধ। সেবা, দয়া, মায়া এই সকল গুণের অধিকারী মানুষ। এই মনুষ্যত্ব অর্জন করা প্রতিটা মানুষের ধর্ম। তবেই তো মানুষে মানুষে প্রেম, প্রীতি, মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠবে।
বাস্তবে দেখা যায় মানুষ ধর্ম, সংস্কার, কুসংস্কারের বেড়াজালে আটকে পড়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ বিভেদের প্রাচীরে মনুষ্যত্ববোধ আজ বিপর্যস্ত। মানুষ সংস্কার দ্বারা আবৃত হয়ে অপরকে ঘৃণা করছে, অবজ্ঞায় দূরে সরিয়ে দিচ্ছে অর্থাৎ বিধাতা পুরুষের সৃষ্টিকেই সে অপমান করছে। কবি এখানে বলতে চেয়েছেন এই প্রাণীকুলের সমস্তই ঈশ্বরের সৃষ্টি। মানুষে মানুষে এই ভেদাভেদ, দলাদলি কখনই করা উচিত নয়। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আপন করে নেওয়াই আমাদের কর্তব্য। তবেই মনুষ্যজীবন সার্থক।