Barlow Girls’ High School (HS)
১.১ চন্দ্রনাথের দাদার নাম – (খ) নিশানাথ। ১.২ ইলিয়াস দম্পতির দাম্পত্য জীবন – (খ) পঞ্চাশ বছরের।
১.৩ “চণ্ডী’ থেকে আরম্ভ করে ‘হুতোম’ পর্যন্ত” — ‘হুতোম’ বলতে বোঝায়— (গ) কালীপ্রসন্ন সিংহকে।
১.৪ আকাশে সাতটি তারা ফুটলে কবি টের পান – (ক) বাংলার প্রাণ ।
১.৫ ‘জৈমিনি’ হলেন একজন (ঘ) ঋষি।
১.৬ শকুন্তলার পালক পিতা – (গ) মহর্ষি কম্ব।
১.৭ পাঠ্য ‘চিঠি’-র রচনাকাল (খ) ২৯ জুলাই।
১.৮ প্রোফেসর শঙ্কু স্বর্ণপর্ণী গাছের সন্ধান পেয়েছিলেন (গ) কসৌলি থেকে।
১.৯ গ্রিক উপকথায় আর্গাসের সর্বাঙ্গে ছিল – (ঘ) সহস্ৰ চোখ
১.১০ ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পে লেখকের বন্ধু ছিলেন – (খ) সোমেশ ।
১.১১ ‘গরমিল’ শব্দের ‘গর’ একটি – (গ) বিদেশি উপসর্গ।
১.১২ “বারোমাসে তেরো পার্বণ” – “বারো’ পদটি হল (ক) সংখ্যাবাচক বিশেষণ।
১.১৩ ক্রিয়া সম্পন্ন হলেও ফল বর্তমান থাকবে। সেই ক্রিয়ার কাল হল – (খ) পুরাঘটিত বর্তমান।
১.১৪ দুটি বাক্যকে এক করে দেয় – (ঘ) সমুচ্চয়ী অব্যয়।
১.১৫ ‘বাগীশ্বরী’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় – (ক) বাক্ + ঈশ্বরী।
১.১৬ মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। —নিম্নরেখ ক্রিয়াটি – (ক) প্রযোজক ক্রিয়া।
১.১৭ একটি পার্শ্বিক ধ্বনির উদাহরণ হল – (গ) ল্।
১.১৮ বাংলায় মৌলিক স্বরধ্বনির সংখ্যা – (গ) ৭টি।
২.১ ‘এখনও’ বলতে প্রবহমানতা বোঝানো হয়েছে। অনেকদিন ধরে যে বিষয়টি চলছিল বর্তমানেও তা চলছে এটা বোঝাতে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ‘আবহমান’ কবিতায় ‘এখনও’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
২.২ অসচ্ছল অবস্থায় ইলিয়াসের ছিল একটি বোঁচকা যার মধ্যে ছিল একটি লোমের তৈরি কোট, টুপি, জুতো ও বুট।
২.৩ নিজের শিকার করা একটি রুই মাছ খণ্ড করে কাটার সময় ধীবর তার পেটের মধ্যে শকুন্তলাকে দুষ্মন্তের উপহার দেওয়া মণিমুক্তায় ঝলমলে আংটিটি পেয়েছিল।
২.৪ চন্দ্রনাথ ইউনিভার্সিটির পরীক্ষার রেজাল্ট তৈরি করেছিল। ২.৫ পালযুগের দুজন বিশিষ্ট শিল্পী ধীমান ও তাঁর পুত্র বিট্পাল-এর কথা বলা হয়েছে।
২.৬ গজারোহী, অশ্বারোহী, রথারোহী ও পদাতিক – এই চার প্রকার সৈন্য নিয়ে গঠিত সৈন্যদলকে ‘চতুরঙ্গ” (চতুঃ+অঙ্গ) বলে।
২.৭ ‘খেয়া’ কবিতায় অন্য যাত্রীরা আপন ঘর থেকে বেরিয়ে অন্যত্র পাড়ি দেয়। তাদের যাত্রা ‘ঘর হতে বাইরে’, অজানা গন্তব্যের উদ্দেশে।
২.৮ বাংলাদেশের এক প্রান্তের একটি কলেজের বার্ষিক উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পের কথক সুকুমার বক্তৃতা করেছিলেন।
২.৯ মিরাকিউরলের পর প্রোফেসর শঙ্কু আবিষ্কার করেন অ্যানাইহিলিন পিস্তল। যা শত্রুকে নিহত না করে নিশ্চিহ্ন করে।
২.১০. প্রোফেসর শঙ্কুর বাবা পঞ্চাশ বছর বয়সে হার্টব্লকে মারা যান।
২.১১ ‘পাতি’ উপসর্গযোগে দুটি শব্দ হল – পাতি + হাঁস = পাতিহাঁস, পাতি + লেবু = পাতিলেবু।
২.১২ পুরাঘটিত বর্তমান কাল : যে কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল বর্তমান, তাকে পুরাঘটিত বর্তমান কাল বলে। যেমন—সকালে ভাত খেয়েছি।
২.১৩ অপিনিহিতি : কোনো শব্দের দ্বিতীয় অক্ষরের ব্যঞ্জনের পর ই’, ‘উ’ ধ্বনি থাকলে, ই’ বা ‘উ’ ধ্বনিটিকে নির্দিষ্ট স্থানের পূর্বে উচ্চারণ করার রীতিকে অপিনিহিতি বলে। যেমন—করিয়া > কইর্যা।
২.১৪ পঁচিশে বৈশাখ – রেখাঙ্কিত পদটি পূরণবাচক বিশেষণ পদ ।
২.১৫ নাবিক = নৌ + ইক, গবেষণা = গো + এষণা।
২.১৬ স্কুল > ইস্কুল – এখানে আদিস্বরাগমের নিয়ম প্রযুক্ত হয়েছে।
২.১৭ প্লুতস্বর : গানে, আবৃত্তিতে, কান্নায় কিংবা দূর থেকে কোনো ব্যক্তিকে আহ্বান করার সময় মৌলিক স্বরধ্বনিকে অতিরিক্ত মাত্রায় টেনে উচ্চারণ করা হয়। এইভাবে উচ্চারিত স্বরধ্বনিকে প্লুতস্বর বলে। যেমন—মা-আ-আ-আ । এটি কমপক্ষে তিনটি মাত্রার হয়, এর লিখিত কোনো চিহ্ন নেই।
২.১৮ উপহার = উপ – √ হৃ + ঘঞ।
৩.১ ইলিয়াসের বোলবোলাও দেখে ঈর্ষা করে লোকেরা বলত ইলিয়াস তো ভাগ্যবান পুরুষ; কোনো কিছুরই অভাব নেই; ওর তো মরবারই দরকার নেই।’
ইলিয়াসের প্রচুর প্রতিপত্তি ছিল, তার বাড়ির নানা কাজ করার জন্য ভাড়াটে লোকজনও ছিল। সংসারের এই উন্নতি দেখে প্রতিবেশীরা তাকে ঈর্ষা করত।
৩.২ যে চন্দ্রনাথ স্কুলের কোনো পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়নি, তাকে অন্যায়ভাবে এবার সেকেন্ড প্রাইজ দেওয়া হয়। স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হওয়ার সুবাদে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচারের অসততায় হীরু ফার্স্ট প্রাইজ পায়। অথচ পরীক্ষায় সে চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক ঢুকেছে। হীরুর খাতা পক্ষপাতের সঙ্গে মূল্যায়িত হয়েছে বলেই প্রবল আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের অধিকারী চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করে।
৪.১ কবি নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ভাঙার গান’ কবিতায় জানিয়েছেন, ইংরেজদের কারাগারে বন্দি বিপ্লবীরা মৃত্যুকে হৈদরী হাঁক দিয়ে ও দুন্দুভি ঢাক কাঁধে নিয়ে জীবনপানে আহ্বান করবে।
৪.২ প্রশ্নোক্ত অংশটি কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের ‘আমরা’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। ‘মন্বন্তর’ শব্দের অর্থ ব্যাপক দুর্ভিক্ষ বা আকাল। আর ‘মারী’শব্দের অর্থ মড়ক; সংক্রামক রোগের জন্য ব্যাপক লোকক্ষয়।
কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘আমরা’ কবিতায় বাঙালির অতীত থেকে প্রবাহিত জীবন ইতিহাস বর্ণনাসূত্রে উদ্ধৃতাংশটি ব্যবহার করেছেন। তৎকালীন সময়ে মহামারি এবং দুর্ভিক্ষে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়েছিল। বিজ্ঞান বা সমাজের কোনো ক্ষমতা ছিল না তা প্রতিরোধ করার। কিন্তু বাঙালি তার আত্মবলে মন্বন্তর ও মহামারির প্রকোপ জয় করে সভ্যতা টিকিয়ে রেখেছিল। সমাজকে নতুন প্রাণশক্তি দান করেছিল।
৫.১ ‘সে’ বলতে এখানে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্রনাথ’ গদ্যাংশের নামচরিত্র কিশোর চন্দ্রনাথকে বোঝানো হয়েছে। মোটা নাক, বড়ো বড়ো চোখ, চওড়া কপাল আর কপালের শিরা ত্রিশূলচিহ্নের মতো প্রকট—এইসব নিয়ে গঠিত চন্দ্রনাথের অসাধারণ মুখমণ্ডল। সুস্থ সবল দীর্ঘ দেহ। দৃষ্টি নির্ভীক। মনে সামান্য চঞ্চলতা জাগলেই তার অদ্ভুত মোটা নাকের প্রান্ত স্ফীত হয়ে ওঠে। সামান্য উত্তেজনাতেই কপালের মধ্যস্থলে শিরা ফুলে উঠে ত্রিশূলচিহ্নের আকার নেয়।
৫.২ সৈয়দ মুজতবা আলী ‘নব নব সৃষ্টি’ প্রবন্ধে মাতৃভাষা বাংলায় ভিনভাষার প্রভাব নিয়ে মনোজ্ঞ আলোচনা করেছেন। বাংলা আত্মনির্ভরশীল ভাষা নয়। ফলত নিজের চাহিদাপূরণের জন্য সে পরভাষার মুখাপেক্ষী। জন্মসূত্রে সংস্কৃত ভাষার মতোই রাজনৈতিক, সামাজিক কারণে, ব্যাবসা-বাণিজ্যের জন্য বাংলা ইংরেজি ভাষার প্রভাবপুষ্ট। সংস্কৃতর পাশাপাশি আধুনিককালে ইংরেজিও বাংলার প্রধান এক খাদ্য।
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সংযোগে, ইউরোপীয় দেশগুলোর রীতিনীতি, ইতিহাস-সংস্কৃতিকে জানতে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সংযোগে, বিশেষ করে দর্শন, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা ইত্যাদি জ্ঞান ও ততোধিক প্রয়োজনীয় বিজ্ঞানের শব্দের জন্য ইংরেজিই প্রধান ভরসা। টেকনিক্যাল শব্দের প্রয়োজন মেটাতেও ইংরেজি অদ্বিতীয়।
তাই লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী বলেছেন, বাংলা ভাষাতে ইংরেজি ভাষা চর্চা বন্ধ করার সময় এখনও আসেনি।
৬.১ সত্যজিৎ রায়ের লেখা ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নোধৃত অংশটিতে ‘আমি’ হল পৃথিবী বিখ্যাত চিলিয়ান জাদুকর আর্গাস, যে পাখি নিয়ে ম্যাজিক দেখাত ।
জাদুকর আর্গাসের চেহারা ও পোশাক বেশ রহস্য-উদ্দীপক। টিয়াপাখির মতো নাক, মাঝখানে সিঁথি করা চকচকে কেশরাশি, চোখে মাইনাস কুড়ি পাওয়ারের পুরু কাচের চশমার লোকটি ছ-ফুটের বেশি লম্বা। কালো কোটের ভিতর দিয়ে ফ্যাকাশে শীর্ণ হাত দুটির সঞ্চালনে দর্শক সম্মোহিত হয়।
৬.২ ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু টিক্ডীবাবার নির্দেশানুসারে স্বর্ণপর্ণী গাছটির সন্ধান পেয়েছিলেন।
বাবার মুখে হার্টব্লকের উপশমে অব্যর্থ গাছড়া স্বর্ণপর্ণীর নাম শুনে সাড়ে ছ-হাজার ফুট উঁচুতে পাহাড়ের গায়ে অবস্থিত কসৌলি শহরের দুর্গম শ্বাপদসংকুল জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে স্বর্ণপর্ণীর গাছড়া খুঁজে পেয়েছিলেন প্রোফেসর শঙ্কু।
৭.১ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশ থেকে নেওয়া আলোচ্য উদ্ধৃতিটিতে ধীবরের কাছ থেকে রাজা দুষ্মন্তের নাম অঙ্কিত বহুমূল্য আংটিটি পাওয়ার সংবাদের কথা বলা হয়েছে।
ধীবরের কাছে প্রাপ্ত এই বহুমূল্য রত্নখচিত আংটিটি ছিল দুর্বাসার অভিশাপ খণ্ডনের জন্য, রাজা দুষ্মন্ত ও শকুন্তলার পরিচিতির একমাত্র স্মারক। আংটিটি রাজার ভীষণ প্রিয় ছিল। রাজ শ্যালকের কথন থেকে বুঝতে পারা যায় আংটিটি দেখে রাজার প্রিয়জন অর্থাৎ শকুন্তলার কথা মনে পড়ে। তাই মহারাজ খুশি হয়েছিলেন।
৭.২ দুর্বাসা মুনির অভিশাপে অভিশপ্ত শকুন্তলার স্বামী-স্বীকৃতি পাওয়ার একমাত্র অবলম্বন ছিল রাজার দেওয়া আংটি। শচীতীর্থে স্নানের পর সেটি হারিয়ে শকুন্তলা যখন রাজা দুষ্মন্তের রাজধানীতে পৌঁছান তখন রাজা কোনোমতেই তাকে চিনতে পারেননি। দুর্বাসার অভিশাপ অনুযায়ী কোনো নিদর্শন না দেখাতে পারলে রাজা তাকে ভুলে যাবেন। তাই কোনো রাজ-নিদর্শন দেখিয়ে স্ত্রীর দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি শকুন্তলা। এই কারণে রাজা দুষ্মন্তের রাজসভায় তিনি অপমানিতা হন।
৮.১ কবি অজিত দত্ত ‘নোঙর’ কবিতায় বলেছেন যে তিনি মিছে দাঁড় টেনে চলেছেন। নৌকা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাঁড় টানার প্রয়োজন। কিন্তু যে নৌকা নোঙরের সঙ্গে কাছি দিয়ে বাঁধা তার দাঁড় টেনে কী লাভ! আলোচ্য কন্তিায় দেখা যায় কবির নৌকাও তটের কিনারে নোঙরে বাঁধা পড়ে আছে। ‘নোঙর’ শব্দের অর্থ হল অঙ্কুশের ন্যায় লোহার ফলক যা দিয়ে নৌকা বা অন্যান্য জলযানকে বেঁধে রাখা হয়। ‘তট’ শব্দের অর্থ নদীর কূল। তিনি যতই দাঁড় টানুন সে নৌকা সচল হবে না। নৌকা কুলের কিনারায় স্থির হয়ে থাকবে। তাই নোঙরের কাছিতে বাঁধা নৌকার দাঁড় টানাকে মিছে অর্থাৎ বৃথা বলেছেন কবি।
বৃথা আশা যেমন মরতে মরতেও মরে না, তেমনই বদ্ধ নৌকার দাঁড় টানা মিছে জেনেও কবি অবিরাম দাঁড় টেনে চলেন। মানুষ নিজের পরাজয়, ব্যর্থতা বা বাসনার অপূর্ণতাকে সহজে মেনে নিতে পারে না। কবিও স্বভাবতই আশাবাদী। তাঁর রোমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মন বাস্তবকে সহজে মানতে পারে না। সুদূর কল্পলোক তাঁকে ডাকে। তিনি সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে চলে যেতে চান দূর সমুদ্রপারে। নোঙরের মতো অদৃশ্য মায়াবন্ধন তাঁকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। কবির বাস্তব ও সচেতন সত্তার সঙ্গে রোমান্টিক সত্তার দ্বন্দ্ব বাধে। কঠিন বাস্তবকে উপেক্ষা করার জন্য তিনি অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যান। নিঃসঙ্গ-নিস্তব্ধ রাতে তাঁর কল্পনাপ্রবণ কবিসত্তা জেগে ওঠে। বাস্তব ও কল্পনার সংঘর্ষে, স্থিতি ও গতির দ্বন্দ্বে কবির চিরচল, অতৃপ্ত মন যেন কেবলই ভাবে সেই অসীমের সন্ধান তিনি পাবেনই। মিছে জেনেও তাই কবি দাঁড় টানেন।
৮.২ মানবজীবন প্রবাহের অনিবার্য ও চিরন্তন গতিময়তাকে কুর্নিশ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ কবিতার শিরোনাম রেখেছেন ‘খেয়া’। ‘খেয়া’ কবিতায় প্রথমদিকে দেখি, এক নাম না জানা নদী এবং তার দুই পার্শ্বে নাম না জানা দুইখানি গ্রাম। খেয়া নৌকা দুই গ্রামের মানুষদের পারাপার করে। খেয়া নৌকাই দুই গ্রামের মানুষদের মধ্যে
যোগাযোগ রক্ষা করে, গড়ে তোলে তাদের আত্মীয়তার বন্ধন। এরপর কবি তুলে ধরেন পৃথিবীতে লড়াই, দ্বন্দ্ব এবং সর্বনাশের চিত্র। দ্বন্দ্বের মাধ্যমে এক রাজার মুকুট অন্য রাজার মাথায় শোভা পায়। মানুষের জীবন সভ্যতা হয়ে ওঠে সংকটাপন্ন। কখনো দ্বন্দ্বের এই বীভৎস চিত্র বহন করে আনে বিষরূপী ধ্বংসকে, কখনো বা সুধারূপী সৃষ্টিকে।
কবি আবার নাম না জানা দুইখানি গ্রামের কথা বলেছেন। খেয়া নৌকায় পারাপারের মধ্যে দিয়ে তাদের মধ্যে গড়ে ওঠে আত্মীয়তা, ঐক্য ও শান্তির সুর। খেয়া নৌকা যেন জীবনের বন্ধন সূচিত করে। নাগরিক জীবনের সেই লড়াই-দ্বন্দ্ব এই দুই গ্রামের মানুষের সম্প্রীতিতে চিড় ধরাতে পারে না। অটুট থাকে তাদের পারস্পরিক প্রেম, ভালোবাসা।
কবি তাঁর কবিতায় ‘খেয়া’র রূপকে বলতে চেয়েছেন জীবনের সঙ্গে জীবনের অকৃত্রিম বন্ধন হোক নাগরিক সভ্যতার মূলমন্ত্র। হিংসা, বিদ্বেষের পরিবর্তে তাদের মধ্যে গড়ে উঠুক স্নেহ, প্রীতি ও ভালোবাসার বন্ধন। এই বন্ধন অতীত বর্তমানের মধ্যে দিয়ে প্রসারিত হোক ভবিষ্যতের দিকে। নদীর জলস্রোতের মতো খেয়ার যাত্রী হয়ে মানবপ্রবাহ যেন বয়ে চলেছে পৃথিবীর পথে। তাই “খেয়া একটি পূর্ণ জীবনবোধের সার্থক দ্যোতক।” এই মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।
৯.১ স্বামী বিবেকানন্দ স্টার্ডির চিঠি পড়ে ও মিস মুলারের কাছ থেকে প্রাপ্ত সংবাদে মিস নোব্ তথা নিবেদিতা সম্পর্কে অবগত হন। পরে তিনি উদ্ধৃত কথাটি বলেছেন মিস নোকে লেখা তাঁর চিঠিতে।
স্বামীজির শিষ্যদের মধ্যে অন্যতম ও অগ্রগণ্য মিস নো-এর সম্পূর্ণ নাম মিস মার্গারেট ই নোব্ল্। ১৮৬৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ অক্টোবর আয়ারল্যান্ডে জন্ম নেওয়া মিস নোব্ল পরবর্তীতে সিস্টার নিবেদিতা নামে পরিচিত হয়েছিলেন। স্বামীজির অনুপ্রেরণায় তিনি ভারতে আসেন এবং নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। ভারতে স্ত্রীশিক্ষা বিস্তারের কাজে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১৩ অক্টোবর মাত্র ৪৪ বছর বয়সে দার্জিলিং-এ তিনি দেহত্যাগ করেন।
৯.২ আলোচ্য উদ্ধৃতিটি লেখিকা বেগম রোকেয়া রচিত ‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। তিনি শিলিগুড়ি থেকে কার্সিয়াং যাওয়ার পথে রেলযাত্রার সময় যে অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ দেখেছিলেন তার সকলকেই মনোহর বলেছেন।
বেগম রোকেয়া রচিত ‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশে আমরা পার্বত্যপথে লেখিকার রেলগাড়িতে যাত্রার যে অপূর্ব বর্ণনা পাই তাতে মনে হয় পাঠকচিত্ত যেন একইসঙ্গে সেই পথের সহযাত্রী হয়ে উঠেছে। লেখিকা শিলিগুড়ি স্টেশনে পৌঁছে হিমালয় রেল রোড থেকে হিমালয়ান রেলগাড়ির আরোহী হয়ে হিমালয় দর্শনের জন্য যাত্রা শুরু করেছেন। ট্রেন ক্রমশ ‘কটাটটা’ ধ্বনি তুলতে তুলতে আঁকাবাঁকা পথ ধরে যতই এগিয়েছে, ততই লেখিকার চোখে পড়েছে কখনও সুউচ্চ পর্বতচূড়া, কখনও নিবিড় অরণ্য বা সবুজ চা-বাগান। রেলগাড়িটিও আকারে এতই নীচু যে চলন্ত গাড়ি থেকেও ওঠানামা করা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফিট উপরে উঠেও লেখিকার শীত বোধ হয় না, কিন্তু চারপাশ মেঘ এসে ঘিরে রাখে। নীচু উপত্যকায় কুয়াশাকে লেখিকা নদী ভেবে ভুল করেন মাঝে মধ্যে। দূরে সারি সারি চা খেতগুলি প্রকৃতির মনোরম শোভাকে যেন বহুগুণ বাড়িয়ে তোলে। কখনো-কখনো মানুষের পায়ে চলা পথের রেখাও লেখিকার চোখে পড়ে সেগুলিকে মনে হয় ধরণীর সিঁথি। পথে অনেকগুলি পাহাড়ি অরণ্যের অসামান্য সৌন্দর্য উপভোগের অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে। কিন্তু যখন জল ভরে নেওয়ার জন্য একটি জলপ্রপাতের সামনে ট্রেনটি দাঁড়িয়েছে, তখন লেখিকা এবং তাঁর সহযাত্রীদের ঝরনা দর্শনের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। এইভাবে লেখিকার পার্বত্যপথে রেলযাত্রার অপূর্ব বর্ণনা ধরা পড়েছে।
১০.১ নামকরণ যে-কোনো সাহিত্য নির্মিতিরই একটি প্রয়োজনীয় অংশ। বলা যেতে পারে, রচনাটি প্রাথমিকভাবে নামকরণ বা শিরোনামের কারণেই পাঠক মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাঠক নামকরণের মাধ্যমে রচনাটির বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। নামকরণ রচনাটিকে পাঠকের কাছে আকর্ষণীয় করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাই প্রতিটি সাহিত্যে নামকরণ উল্লেখযোগ্য বিষয়। সাধারণত কোনো ঘটনা, চরিত্র, বিষয়, বিশেষ ব্যঞ্জনা বা লেখকের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে নামকরণ করা হয়।
‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ পাঠ্যাংশটি মহাকবি কালিদাস বিরচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’-এর ষষ্ঠ অঙ্ক থেকে সংগৃহীত। পাঠ্যাংশের নামকরণ বিষয়কেন্দ্রিক। এখানে একজন ধীবরের সঙ্গে রাজা দুষ্মন্তের রাজধানীর নগর-রক্ষক ও রক্ষীদের কথোপকথন বর্ণিত হয়েছে। নাটকের পূর্বকথা থেকে জানা যায় শকুন্তলার সঙ্গে রাজা দুষ্মন্তের বিবাহের কথা শুনে কণ্বমুনি শকুন্তলাকে পতিগৃহে পাঠানোর আয়োজন করেন। পথমধ্যে শচীতীর্থের জলে শকুন্তলার হাত থেকে রাজ-নামাঙ্কিত প্রতীকী আংটিটি পড়ে যায় এবং একটি মাছ তা খেয়ে নেয়। দুর্বাসার অভিশাপে রাজা শকুন্তলাকে ভুলে যান ও অভিজ্ঞান না থাকায় নিজের পরিচয় দিতে ব্যর্থ শকুন্তলা অপমানিত হয়ে ফিরে যায়। অন্যদিকে আংটি খেয়ে নেওয়া মাছটি ধরা পড়ে একজন ধীবরের জালে। মাছ কেটে আংটি পাওয়া গেলে সামান্য ধীবর তা বিক্রির জন্য নগরে ঘুরতে থাকে। রাজ-নামাঙ্কিত মহামূল্যের আংটি ধীবরের কাছে দেখে তাকে চোর সন্দেহে নগর-রক্ষক ও প্রহরীরা ধরে আনেন। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ ধীবরকে তার বৃত্তি-জাতি নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য সহ্য করতে হয়। নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক আংটি নিয়ে সত্যতা যাচাই করার জন্য রাজার কাছে গেলে জানতে পারে ধীবর নিরপরাধ। আংটি পাওয়া গেলে রাজা ধীবরকে মুক্তি দেন ও সমমূল্যের উপহারে পুরস্কৃত করেন। শাস্তি না পেয়ে পুরস্কৃত ধীবরকে দেখে রক্ষীরা ঈর্ষান্বিত হলে উদারমনস্ক ধীবর তার নিজ প্রাপ্য থেকে অর্ধেক দিয়ে দেন। সত্যবাদী, সৎ ধীবরের আচরণে খুশি হয়ে রাজ-শ্যালক তাকে প্রিয় বন্ধুর মর্যাদা দেন।
চোর সন্দেহে ধৃত ও পরে রাজার দ্বারা পুরস্কৃত ধীবর আলোচ্য পাঠ্যাংশের নায়ক ও মুখ্য চরিত্র। রাজ-নামাঙ্কিত আংটি নিয়ে নাটকটি শুরু হয়েছিল এবং নাটকের শেষে তা পুনরায় রাজার কাছে ফিরে যায় ধীবরের মাধ্যমে। ধীবরের সত্যবাদী, সৎ ও উদারমনস্কতার পরিচয় পাওয়া যায়। সংক্ষিপ্ত পরিসরের সংলাপে সম্পূর্ণ ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে। সামান্য একজন ধীবরের চারিত্রিক দৃঢ়তা ও ইতিবাচক চরিত্রবৈশিষ্ট্য নাট্যদৃশ্যে মুখ্য হয়ে উঠেছে। অতএব বলা যেতে পারে, আলোচ্য নাটকটির নামকরণ নিঃসন্দেহে যথার্থ ও সুপ্রযুক্ত হয়েছে।
১০.২ সেট ২ ৮.১ দ্রষ্টব্য।
১১.১ ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু টিড়ীবাবার নির্দেশানুসারে স্বর্ণপর্ণী গাছটির সন্ধান পেয়েছিলেন।
স্বর্ণপর্ণী প্রোফেসর শঙ্কুর এক অসাধারণ আবিষ্কার। তার পিতা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু ছিলেন গিরিডির এক স্বনামধন্য চিকিৎসক। একবার তার কাছে জনৈক টিড়ীবাবা আসেন হাঁপানির চিকিৎসা করাতে। তার সূত্রে জানা যায় কালকা থেকে ছেচল্লিশ কিলোমিটার দূরে ছয় হাজার ফুট ওপরে কসৌলি শহর। সেখানে চামুণ্ডা মন্দিরের পিছনের জঙ্গলে ঝরনার পাশে স্বর্ণপর্ণীর গাছ জন্মায়।
টিক্ডীবাবা যুবা বয়সে কাশীতে থাকতেন। তখন তার একবার খুব কঠিন পান্ডুরোগ হয়। তাঁর গুরুর কাছে সোনেপত্তীর বা স্বর্ণপর্ণীর শুকনো পাতা ছিল। তিনি তা থেকে দুটি পাতা গুঁড়ো করে দুধের সঙ্গে মিশিয়ে তাকে খাইয়ে দেন এবং তিনি পাণ্ডুরোগ থেকে মুক্তি পান।
প্রোফেসর শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর সন্ধানে কসৌলি গিয়েছিলেন। কলকাতা থেকে ছেচল্লিশ কিলোমিটার দূরে সাড়ে ছ’হাজার ফুট উঁচু ছোট্ট শহর কসৌলি। ঘোড়ায় চেপে তাকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়। একসময় কুলকুল ধ্বনি কানে আসে। শব্দ অনুসরণ করে সেখানে গিয়ে দেখেন ঝরনার পাশে ঘন অন্ধকারাচ্ছন্ন অঞ্চলে একজায়গায় সূর্যের আলো এসে পড়েছে আর সেই আলোয় ঝলমল করছে স্বর্ণপর্ণীর পাতা।
১১.২ সত্যজিৎ রায় লিখিত ‘কর্ভাস’ গল্প থেকে উদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা আর্গাস।
প্রোফেসর শঙ্কুর হোটেলের রুম থেকে কর্ভাসকে চুরি করে নেন আর্গাস। শঙ্কু দলবল নিয়ে কর্ভাসকে উদ্ধার করতে উদ্যত হয়। ঘটনাক্রমে কর্ভাস আর্গাসের মাইনাস বিশ পাওয়ারের সোনার চশমাটা চোখ থেকে খুলে তাকে বিপর্যস্ত করে দেয়। তাই আর্গাস আলোচ্য কথাটি বলেছে।
এরপর দেখা গেল রাস্তার উলটোদিকে নেড়া অ্যাকেসিয়া গাছটার মাথায় বসে আছে কর্ভাস। প্রোফেসর শঙ্কু দেখলেন তাঁর বন্ধু তথা প্রিয় শিষ্য কর্ভাস গাছটার সবচেয়ে উঁচু ডালে বসে নিশ্চিতভাবে তাদের দিকে ঘাড় নীচু করে দেখছে। তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতেই সে অক্লেশে গোঁত খাওয়া ঘুড়ির মতো গাছের মাথা থেকে নেমে এসে বসল তাদের মারসেডিসের ছাদের উপর। তারপর অতি সন্তর্পণে তার ঠোঁট থেকে তার সামনেই নামিয়ে রাখল আর্গাসের মাইনাস বিশ পাওয়ারের সোনার চশমাটা।
১২.১ আধুনিক ছোটোগল্পকার প্রেমেন্দ্র মিত্রের ‘নিরুদ্দেশ’ ছোটোগল্পের কথক শীতের দিনে বন্ধু সোমেশের সঙ্গে থাকাকালীন সংবাদপত্রের পাতা ওলটাতে ওলটাতে হঠাৎ দেখেন একসঙ্গে সাত-সাতটা নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপন। এই সূত্রেই তিনি বলেন নিরুদ্দেশের পেছনে থাকা ঘটনা তাঁর জানা।
কথকের কথানুযায়ী, বাবা-মায়ের সংসারের একমাত্র ছেলে মায়ের প্রশ্রয়ে পড়াশোনা বাদ দিয়ে রাতের পর রাত থিয়েটার দেখে বাড়ি ফেরে। মা জানা সত্ত্বেও বারণ করেন না, ফলে ছেলের স্পর্ধা ক্রমশ বাড়তেই থাকে।
বাবা প্রায়ই রাতে খেতে বসবার সময় ছেলের খোঁজ করলেও ছেলের দেখা পান না, ক্রুদ্ধ হয়ে ছেলের উদ্দেশে বলেন- “পয়সাগুলো আমার খোলামকুচি কিনা, তাই নবাবপুত্তুর যা খুশি তাই করছেন। দূর করে দেবো, এবার দূর করে দেবো।”
এমন সময়ই গুণধর পুত্র বাড়ি ফেরে। বাবা রাগ সামলে রাখতে না পেরে রুষ্ট হয়ে ছেলেকে বলেন— “এমন ছেলের আমার দরকার নেই— বেরিয়ে যা।” অভিমানী ছেলে তৎক্ষণাৎ পিতৃদেবের আদেশ পালন করতে “বিশাল পৃথিবীতে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বেরিয়ে পড়ে।”
ছেলের চলে যাওয়ায় মা আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে সন্তানশোকে শয্যাগ্রহণ করেন। বাড়ির এ অশান্তি সহ্য করতে না পেরে বাবা শেষপর্যন্ত সংবাদপত্র অফিসে যান এবং বিজ্ঞাপন দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন— “একটু ভালো করে লিখে দেবেন। ওর মা কাল থেকে জলগ্রহণ করেনি।” কিন্তু অশ্রুসজল বিজ্ঞাপন বেরোনোর আগেই সন্তান এসে বাড়িতে হাজির হয়। বাড়ি ফিরলেই মা সন্তানের ওপর ছদ্মরোষ প্রকাশ করতে থাকেন আর বাবা সন্তানকে ক্ষমা করেন। কথকের ভাষায়—“অধিকাংশ নিরুদ্দেশের বিজ্ঞাপনের ইতিহাসই এই।”
১২.২ সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশ থেকে উদ্ধৃতিটি সংকলিত। এগারো বছরের বালিকা রাধারাণী অবস্থাপন্ন ঘরের সন্তান কিন্তু পিতার মৃত্যুর পর অবস্থার দুর্বিপাকে অত্যন্ত দরিদ্রতার সম্মুখীন হয়। রথের পূর্বে রাধারাণীর মা গুরুতর পীড়িতা হলে রাধারাণী মায়ের পথ্য সংস্থানে কিছু বনফুল তুলে মালা গেঁথে মাহেশের রথের হাটে বিক্রি করতে গিয়েছিল।
রথের টান অর্ধেক হতে না হতেই প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। প্রথমদিকে রাধারাণী মনে করে বৃষ্টির কারণে সে একটু ভিজলেও বৃষ্টি থামলেই আবার লোক জমবে এবং রাধারাণী বনফুলের মালা বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বৃষ্টি না থামার জন্য লোক জমে না অর্থাৎ মেলা বসে না। সন্ধ্যা-রাত গভীর হওয়াতে রাধারাণী বিফল মনোরথ হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করে।
১৩.১ সেট ১ ১০.১ নং উত্তর দ্রষ্টব্য।
১৩.২ স্নেহময়ী
বহুদিন আগের কথা। শান্ত-স্নিগ্ধ ও মনোরম প্রকৃতির মাঝে নির্জন একটি গ্রাম। লোকসংখ্যা খুব বিশাল কিছু নয়। দামোদর তীরবর্তী গ্রাম, তাই সর্বদাই গ্রামের মানুষ বর্ষাকাল এলেই ত্রস্ত হয়ে থাকে। এই বুঝি বন্যা এল, আর দুকূল ছাপিয়ে সব ভেঙে দিয়ে গ্রামখানা চুরমার করে দিয়ে গেল। এমনি সারাবছর যে ভীষণ রূপ প্রত্যক্ষ করতে হয় তা নয়, শুধুমাত্র প্রবল বর্ষণে নদী পাগল হয়ে ছোটে। এমনি এক সকালে উত্তরদিক থেকে শোনা গেল ঝড়ের শোঁ শোঁ শব্দ, আকাশের থমথমে অভিমানী মুখ দেখে গ্রামবাসীরা তাড়াতাড়ি করে পা চালিয়ে ঘরের দিকে চলতে লাগল। অর্ধেক পথ আসার আগেই খড়ের চালা উড়ে গিয়ে কার গোয়ালে গিয়ে পড়ল, ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটায় কে কোথায় ছিটকে পড়ল কে জানে! জল ফুলতে লাগল, দুকূল ছাপিয়ে সে যেন সর্বগ্রাসী এক রাক্ষসীর রূপ নিল। স্রোতের টান, বৃষ্টির প্রকোপ এতই প্রবল হয়ে উঠল যে কিছু পাকাবাড়ি ছাড়া সবই প্রায় নদীগর্ভের অতলে ঠাঁই পেল। বৃষ্টির দুরন্তপনা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে এসেছিল। বাড়ির দালানে জল ঢুকেছে দেখে বউটি ধীরে ধীরে অন্দরমহল থেকে বেরিয়ে আসল। বেরিয়ে দেখতে পেল চারদিকে যা ছিল সবই গ্রাস করেছে এই রাক্ষুসে নদী। কিছু মৃত গবাদি পশুর মাঝে ভেলায় করে ভেসে চলেছে দুই শিশু। মায়ের প্রাণ কেঁদে উঠল, সে আর স্থির থাকতে পারল না। বাড়ির গুরুজনদের ডাক অগ্রাহ্য করে সে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিশু দুটিকে উদ্ধার করে আনল। সে নিজে ছিল সন্তানহারা এক মা, তাই সন্তান হারানোর যে দুঃখ, তা তার চেয়ে কে আর ভালো বুঝবে? বাচ্চা দুটিকে পেয়ে যেন সে নিজেও এক নতুন জীবন পেল। পরম স্নেহ মমতায় তাদের বড়ো করে তোলবার দায়িত্বভার নিজের কাঁধে তুলে নিল সে।
নীতিবাক্য : মাতৃস্নেহ পৃথিবীর পরম প্রাপ্তি।