Chakdah Purbachal Vidyapitc (HS)
১.১ “কলিঙ্গে সোঙরে সকল লোক যে জৈমিনি।।” – “সোঙরে’ শব্দের অর্থ – (ক) স্মরণ করা।
১.২ “পৃথিবীতে কত (ঘ) দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ”।
১.৩ শোভনকে বাড়িতে ঢুকতে প্রথম বাধা দিয়েছিলেন – (গ) নায়েবমশাই।
১.৪ চন্দ্রনাথ পাঁচশো পঁচিশের নীচে পেলে স্কুলের ফেলের সংখ্যা দাঁড়াবে – (খ) ১০।
১.৫ যে প্রাচীন শাস্ত্রে স্বর্ণপর্ণীর উল্লেখ পাওয়া যায় সেটি হল – (ক) চরকসংহিতা।
১.৬ বিজ্ঞানের কথা উঠলেই শঙ্কুর সঙ্গে ঠাট্টা করতেন
(গ) অবিনাশবাবু। ১.৭ ‘ম্যানিফিকো’ শব্দের অর্থ – (গ) চমকপ্রদ।
১.৮ ঢেঁকিশাকের কথা যে পত্রিকায় লেখিকা পড়েছিলেন তার নাম হল – (খ) ‘মহিলা’ ।
১.৯ উর্দু সাহিত্যের মূল সুর বাঁধা – (খ) ফার্সির সঙ্গে। –
১.১০ শকুন্তলার অভিশাপ লাঘবের জন্য ঋষি দুর্বাসাকে অনুরোধ করেন – (গ) সখী প্রিয়ংবদা ।
১.১১ ‘সাঁঝ’ শব্দটি হল – (ক) তদ্ভব শব্দ ।
১.১২ ভক্তি > ভকতি – এটি হল (খ) স্বরভক্তি।
১.১৩ “সকালে ভাত খেয়েছি” – বাক্যটিতে ক্রিয়ার কালের যে বিভাগ আমরা দেখতে পাই, সেটি হল (গ) পুরাঘটিত বর্তমান।
১.১৪ “কাজটি নিজে নিজে করবে।” রেখাঙ্কিত পদটি – (ক) আত্মবাচক সর্বনাম।
১.১৫ ‘দ্যুলোক’ শব্দটির সন্ধি বিচ্ছেদ হল (খ) দিব্ + লোক।
১.১৬ ‘বোধহয়’ যে শ্রেণির অব্যয়, তা হল – (খ) সংশয়সূচক।
১.১৭ ঝমঝমে বৃষ্টি। — রেখাঙ্কিত পদটি – (ঘ) ধ্বন্যাত্মক বিশেষণ।
১.১৮ যৌগিক স্বরধ্বনি হল – (গ) ঐ, ঔ ।
২.১ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতা থেকে নেওয়া উদ্ধৃতাংশটিতে ‘কেহ’ বলতে নবীনে প্রবীণে ভিড় করা যাত্রীদলের কথা বলা হয়েছে।
২.২ ‘আবহমান’ কবিতায় লাউমাচার কথা উল্লিখিত হয়েছে মোট চারবার।
২.৩ ‘নিরুদ্দেশ’ গল্পটি রবীন্দ্র-পরবর্তী বিখ্যাত ছোটোগল্পকার ও কবি প্রেমেন্দ্র মিত্রের লেখা।
২.৪ ‘চন্দ্রনাথ’ গল্পটির কথক হল নরু। নরুর প্রকৃত নাম নরেশ।
২.৫ কার্সিয়াং-এর উচ্চতা ৪,৮৬৪ ফুট।
২.৬ স্বামী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ রচনায় মিস মুলারকে ‘আজন্ম নেত্রী’ বলা হয়েছে, যিনি বেলুড় মঠ স্থাপনের কাজে অর্থ সাহায্য করেছিলেন।
২.৭ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে ধীবরের বাড়ি ছিল শক্রাবতারে।
২.৮ মঙ্গলীয়ের গায়ে দাঁত বসানোর ফলে প্রোফেসর শঙ্কুর বেড়াল নিউটনের অরুচি হয়েছিল।
২.৯ গ্রিব পাখির বিশেষত্ব হল তারা নিজের পালক ছিঁড়ে নিজে খায় আর তার শাবকদের খাওয়ায় ।
২.১০ লুপ্ত স্মৃতি ফিরিয়ে আনার জন্য প্রোফেসর শঙ্কু ‘রিমেমব্রেন’ আবিষ্কার করেছিলেন।
২.১১ সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়ার মাধ্য পার্থক্য :
(ক) বাক্যে সমাপিকা ক্রিয়া অপরিহার্য। বাক্যে অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতেও পারে, নাও থাকতে পারে।
(খ) সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যে একটিই থাকে। বাক্যে অসমাপিকা ক্রিয়া থাকে এক বা একাধিক।
২.১২ সকর্মক ক্রিয়া : যে ক্রিয়ার কর্ম আছে বা কর্মকে অবলম্বন করে যে ক্রিয়া পূর্ণতা পায়, তাকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—মানু ফুটবল খেলে। বিশু মাছ ধরে। বুলবুল সাইকেল চালায় ।
২.১৩ সমীভবন : শব্দমধ্যে যুক্তব্যঞ্জনধ্বনি থাকলে উচ্চারণের সুবিধার্থে তাদের সমব্যঞ্জনে রূপান্তরিত করার পদ্ধতিকে ব্যঞ্জনসংগতি বা সমীভবন বা সমীকরণ বলে।
যেমন— পদ্ম > পদ।
২.১৪ একটি পূরণবাচক বিশেষণ এর উদাহরণ হল – রীতা নবম শ্রেণিতে পড়ে।
২.১৫ নবগঠিত শব্দকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় – (ক) মিশ্র বা সংকর শব্দ, (খ) অনূদিত শব্দ এবং (গ) খণ্ডিত শব্দ ।
২.১৬ ‘ওটা রেখে দাও, কাজে লাগবে।’ চিহ্নিত পদটি নির্দেশক সর্বনাম।
২.১৭ সংস্কৃত উপসর্গের সংখ্যা – ২০টি।
২.১৮ বাংলা ভাষায় অর্ধস্বর চারটি। যথা – ই, উ, ও, এ ।
৩.১ জৈমিনি মুনি ‘মীমাংসা দর্শন’-এর প্রণেতা। জৈমিনি মুনির অপর নাম বজ্রপাত নিবারক। তাই বজ্রপাতের সময় তাঁর নামকীর্তন করা হয়।
কলিঙ্গরাজ্যের আকাশে দৈবাদেশে হঠাৎ ঘন কালো মেঘরাশি সঞ্চারিত হয় এবং দেখতে দেখতে শুরু হয় অকালবর্ষণ। কালো মেঘের বুক চিরে বিদ্যুৎ শিখার ঝলকানি লোকের মনে ত্রাস সঞ্চার করে, আর তার সঙ্গে বজ্রপতনও ঘটতে থাকে। পরিস্থিতি এমন হয় যে, বিপদের চরম আশঙ্কায় প্রজারা বজ্রনিবারক ঋষি জৈমিনির নাম স্মরণ করতে থাকে।
অথবা, ‘আকাশে সাতটি তারা’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ আলোচ্য উদ্ধৃতিতে কেশবতী কন্যা অর্থাৎ বাংলার সান্ধ্যকালীন সৌন্দর্যকে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যাবে না বলেছেন।
কেশবতী কন্যার ঘন চুলের মতো সন্ধ্যার অন্ধকারে পরিব্যাপ্ত চারপাশের পরিবেশ। তার চুলের স্পর্শে অর্থাৎ সন্ধ্যার আবেশে আবিষ্ট হয় হিজল-কাঁঠাল-জামের বন। স্নিগ্ধ গন্ধের মাদকতা ছড়িয়ে থাকে সর্বত্র। কবি বলেছেন ঘন চুলের পরশ তার চোখে-মুখে ভেসে বেড়ায়। বাংলাদেশে নিসর্গ প্রকৃতির বুকে নেমে আসা সন্ধ্যার যে রূপ-রস-গন্ধ-বর্ণ তা কবি সমগ্র সত্তায় অনুভব করেছেন, তা কবিতায় মূর্ত হয়েছে।
৩.২ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্প থেকে নেওয়া প্রশ্নোদ্ধৃত অংশটির বক্তা কথক স্বয়ং।
‘দাম’গল্পের কথক তার স্কুলজীবনের অঙ্কের মাস্টারমশাইকে নিয়ে একটি পত্রিকায় গল্প লিখে নগদ দশ টাকা পেয়েছিলেন। গল্পটির মধ্যে কথক সত্যের অবমাননা করে, কল্পনার রং মিশিয়ে উপদেশ বর্ষণ করে মাস্টারমশাইকে একপ্রকার অপমান করেছিলেন। কিন্তু মাস্টারমশাই-এর সঙ্গে পুনরায় সাক্ষাতের পর তিনি বুঝতে পেরেছিলেন মাস্টারমশাই স্নেহ-মমতা ক্ষমার যেন এক মহাসমুদ্র । তাই তাঁকে দশ টাকায় বিক্রি করে কথক অপরাধ করেছেন। এইজন্য কথক নিজে মনে মনে লজ্জা পেয়েছিলেন।
অথবা, আলোচ্য উদ্ধৃতিটি সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত ‘রাধারাণী’ উপন্যাস থেকে গৃহীত। এখানে তাহারা বলতে রাধারাণী ও তার মায়ের কথা বলা হয়েছে।
‘রাধারাণী’ পাঠ্যাংশে রাধারাণী ও তার মায়ের নির্লোভ মনের পরিচয় পাওয়া যায়। অসুস্থ মায়ের পথ্য জোগাড় করতে রাধারাণী বনফুলের মালার দামস্বরূপ আগন্তুকের কাছে অর্থ গ্রহণে বাধ্য হয়েছিল এবং সেটি খরচ করেছিল। কিন্তু অচেনা আগন্তুক তথা রুক্মিণীকুমার রায় তাদের প্রয়োজন অতিরিক্ত একটি নোট রেখে গেলে নোটটি ফেরত দেওয়ার অভিপ্রায়ে তারা সেটি তুলে রাখে। অর্থের প্রয়োজন তাদের ছিল কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। তারা বর্তমানে দরিদ্র, অসহায় বলেই রুক্মিণীকুমারের দান গ্রহণ করেছে কিন্তু অতিরিক্ত অর্থের প্রতি তাদের লোভ ছিল না তাই তা গ্রহণ করতে তাদের আদর্শে বেধেছিল।
৩.৩ ‘হিমালয় দর্শন’ প্রবন্ধাংশে বেগম রোকেয়া ‘চিত্রকর’ বলতে জগতের সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ বিশ্ববিধাতাকে বুঝিয়েছেন।
হিমালয় দর্শনকালে পার্বত্য প্রকৃতির শোভা দেখে লেখিকার মনে হয়েছিল যে বিধাতা যেন চিত্রকর। এই বিশ্ব-প্রকৃতি তার ক্যানভাস। রং-তুলির টানে পার্বত্যভূমির চিত্র অঙ্কন করে রেখেছেন তিনি। বনভূমি, ঝরনা, নদী, উপত্যকা, মেঘ, হরিৎক্ষেত্র, শ্যামল চায়ের ক্ষেত্র সমস্তই তার চিত্রিত নিপুণ ছবি। মহান শিল্পীর আঁকা সেই বিস্তৃত ক্ষেত্রের মাঝে হিমালয় বালুকণার চেয়েও ছোটো।
অথবা, মিসেস সেভিয়ার হলেন ক্যাপ্টেন জে এইচ সেভিয়ারের স্ত্রী, স্বামী বিবেকানন্দের ইংরেজ শিষ্যা, যিনি বেদান্ত প্রচারের কাজে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। রামকৃষ্ণ সংঘে তিনি ‘মাদার’ নামে পরিচিত ছিলেন।
মিসেস সেভিয়ারের হৃদয় ছিল স্নেহে-ভালোবাসায় পরিপূর্ণ। ইংরেজ মহিলা হয়েও তিনি অন্যান্য ইংরেজের মতো ভারতীয়দের ঘৃণা করেননি, বরং ভালোবেসেছিলেন। তাই বিবেকানন্দের দৃষ্টিতে তিনি ‘নারীকুলের রত্নবিশেষ।
৩.৪ কালিদাস রচিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাটকে নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজ-শ্যালক রাজবাড়িতে গিয়ে স্বয়ং রাজাকে আংটি দেখিয়ে তা কীভাবে পাওয়া গেছে অবগত করতে চেয়েছিলেন এবং এ সম্পর্কে রাজাদেশ কী তা জানতে চেয়েছিলেন।
অথবা, রাজা দুষ্মন্ত কণমুনির পালিতা কন্যা শকুন্তলাকে বিবাহ করে তপোবনে রেখে রাজধানীতে ফিরে যাওয়ার সময়, নিজের নামাঙ্কিত বহুমূল্য আংটি তাকে দিয়ে যান। পরে মহর্ষি কম্বের উদ্যোগে যাত্রাকালে পথে শচীতীর্থে স্নান সেরে অগুলি দেওয়ার সময় ওই আংটি শকুন্তলার হাত থেকে খুলে জলে পড়ে যায়। একটি রুই মাছ সেই আংটি গিলে নেয়। ঘটনাক্রমে সেই মাছ ধীবরের হাতে এলে ধীবর মাছের পেট কেটে রাজার সেই আংটিটি পায়।
৩.৫ সত্যজিৎ রায় রচিত ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে আলোচ্য উক্তিটির বক্তা প্রোফেসর শঙ্কু।
প্রোফেসর শঙ্কুকে তাঁর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু টিড়ীবাবার সঙ্গে পরিচয় এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ ‘সোনেপত্তীর’ আশ্চর্য ঘটনার কথা বলেছেন। ‘স্বর্ণপর্ণী’ গল্পে জানা যায়, টিক্ড়ীবাবা কয়েকজন শিষ্যকে নিয়ে শ্বাসকষ্টের সমস্যার সমাধানের জন্য এসেছিলেন ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কাছে। ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু যখন তাঁর শিষ্যদের ওষুধ বলে দিচ্ছিলেন, তখন হঠাৎই টিক্ড়ীবাবা বলে ওঠেন—তুই হামার চিকিৎসা করছিস, লেকিন তোর পীড়ার কী হবে?’ কিছু না বলা সত্ত্বেও টিড়ীবাবা ত্রিপুরেশ্বরের রোগের কথা বুঝে নিয়েছেন দেখে আশ্চর্য হয়ে যান তিনি। টিক্ড়ীবাবা তাঁকে খুব জোর গলায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে চরকসংহিতায় উল্লিখিত ‘সোনেপত্তী’ নামক ওষুধের সন্ধান দিয়েছেন।
অথবা, ম্যালি-ফাউল পাখি অস্ট্রেলিয়ায় দেখা যায় ৷ * সত্যজিৎ রায়ের ‘কর্ভাস’ গল্পে প্রোফেসর শঙ্কু নানান পাখির বিশেষত্ব আলোচনা করেছিলেন। তিনি পাখিদের সহজাত • ক্ষমতার উদাহরণ দিতে গিয়ে ম্যালি-ফাউল পাখির বাসা তৈরির অদ্ভুত কৌশলের কথা বলেছেন। অস্ট্রেলিয়ার এই পাখি বালি-মাটি আর উদ্ভিজ্জ নানা সামগ্রী দিয়ে মাটিতে একটা ঢিপির মতো বাসা তৈরি করে। তার গায়ে একটা গর্ত থাকে, ভিতরে ঢোকার জন্যে। তারা এক অজ্ঞাত কৌশলে বাসার ভিতরের তাপমাত্রা আটাত্তর ডিগ্রি ফারেনহাইট করে রাখতে পারে। বাইরের তাপমাত্রা যাই হোক, বাসার ভিতরের তাপমাত্রার রদবদল হয় না। এর ফলে বাসার ভিতর তাদের ডিমে তা দিতে হয় না। ভিতরের উত্তাপে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।
৪.১ সেট ২-এর ৬.২ দ্রষ্টব্য।
অথবা, বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের ‘ভাঙার গান’ কবিতা থেকে আলোচ্য চরণটি নেওয়া হয়েছে।
সুন্দরের পূজারি নজরুল ইসলাম তাঁর ‘ভাঙার গান’ গীতিকায় ভারতবর্ষের পরাধীনতার প্রেক্ষাপটে বিপ্লবীদের উদ্দেশে উজ্জীবনের গান গেয়েছেন। নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যে ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে পরিচিত। তিনি ভারতবর্ষের পরাধীনতার জ্বালা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন বলে ‘অগ্নিবীণা’ হাতে নিয়ে ‘বিষের বাঁশি’-তে ‘ভাঙার গান’ গেয়েছেন। বিপ্লবীদের উদ্দেশে কবির বিদ্রোহাত্মক নির্দেশ
“কারার ওই লৌহ-কপাট ভেঙে ফেল, করবে লোপাট”
দেবাদিদেব মহাদেবের প্রলয়ংকর ক্ষমতা তিনি দেখেছেন ভারতবর্ষের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে। তাই সমগ্র গীতিকা জুড়ে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ তরুণ বিপ্লবীদের যেমন তিনি বন্দিশালার লৌহ-কপাট ভেঙে ফেলতে বলেছেন, ব্যাপক অর্থে আবার ভারতের বুকে স্থাপিত ইংরেজ সরকারের ঔপনিবেশিক কারাগারটি সমূলে উপড়ে ফেলার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতমাতার আরাধনায় যে বিপ্লবীরা শিকল পরেছে, তাদের আত্মদানের রক্তে শিকল পূজার পাষাণ বেদী রক্তাক্ত হয়ে গেছে। কবি সেইসব আত্মত্যাগী তরুণদের প্রলয়ংকর মূর্তি ধরে ভারতের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে বলেছেন। বলেছেন—
“বাজা তোর প্রলয়-বিষাণ
ধ্বংস-নিশান,
উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।”
এই প্রাচ্যের পরাধীনতার প্রাচীর ভেদ করে ধ্বংসের ধ্বজা উড়িয়ে দেবে ‘তরুণ ঈশান’রা। তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে সাজা দেওয়ার অধিকার কোনো ‘রাজা’ বা ‘মালিকের নেই। তাই কবি সেই সব নির্ভয় তরুণদের বলেন ‘পাগলা ভোলা’র মতো ভয়ংকর তেজে প্রলয় দোলায় জোর হ্যাঁচকা টানে গারদগুলোকে দুলিয়ে দিতে। ‘হৈদরী হাঁক’ ছেড়ে, দুন্দুভি ঢাক’ কাঁধে নিয়ে মৃত্যুকে উপেক্ষা করে যুদ্ধোন্মাদনায় মেতে উঠতে বলেছেন কবি। ‘ভীম কারার’ ভিত্তি নাড়িয়ে দিতে বলেছেন তারুণ্যের দারুণ তেজে। অত্যাচারী ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদকে নির্মূল করতে তরুণদের প্রতি তাঁর নির্দেশ;—
“লাথি মার, ভাঙরে তালা!
যত সব বন্দি-শালায়- আগুন জ্বালা, ‘আগুন জ্বালা, ফেল উপাড়ি।”
৪.২ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দাম’ গল্পে প্রকাশিত হয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের একটি অদ্ভুত নিদর্শন। আলোচ্য গল্পের কথক সুকুমারের সঙ্গে স্কুলের মাস্টারমশাই-এর দূরত্বের সম্পর্ক তৈরি { হয়েছিল মূলত ভয় থেকে। মাস্টারমশাই তাঁর ভয়ংকর শাস্তি-শাসনে কথকদের মতো ছাত্রদের কাছে অঙ্ক বিষয়টিকেই করে তুলেছিলেন ভয়াবহ। মাস্টারমশাই-এর গলার স্বর শুনে ছাত্রদের বুকের রক্ত হিম হয়ে যেত ভয়ে। পুরুষমানুষ হয়ে অঙ্ক না পারাটা ছিল তাঁর কাছে অকল্পনীয় ব্যাপার। অঙ্ক কষতে না পারা ছেলেদের তিনি পা ধরে ছুঁড়ে জলে ফেলে দেওয়ার হুমকি দিতেন। এ হেন আনন্দহীন শিক্ষার পরিবেশ ছাত্রদের সঙ্গে মাস্টারমশাই-এর দূরত্বের সম্পর্ক রচনা করেছিল।
তবে মাস্টারমশাই-এর অঙ্ক কষার আশ্চর্য দক্ষতা দেখে ছাত্ররা ভক্তিও করত তাঁকে। অঙ্কে অসম্ভব পারদর্শিতা ছিল তাঁর। যে-কোনো জটিল অঙ্ক একবার দেখে নিমেষে কষে ফেলতেন মাস্টারমশাই। যখন ঝড়ের গতিতে মাস্টারমশাই কষে ফেলতেন সব অঙ্ক, ছাত্ররা অবাক বিস্ময়ে দেখত এবং রোমাঞ্চিত হয়ে যেত। ছাত্ররা আন্তরিকভাবে যে ভালোবাসত মাস্টারমশাইকে, তার পরিচয় পাওয়া যায় বহুকাল পর তাঁর সঙ্গে কথকের পুনরায় সাক্ষাতে। মাস্টারমশাই-এর গলার স্বর আচম্বিতে শুনে প্রাথমিকভাবে কথক ভয় পেয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু ভয়ের অনুভূতি কাটিয়ে উঠে পরক্ষণেই ভক্তিতে কথকের মাথা নত হয়েছে। মাস্টারমশাইও প্রাক্তন ছাত্রের প্রতিষ্ঠাকে সম্মান জানিয়েছেন। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি কথকের সঙ্গে যে কথাগুলি বলেছেন তা থেকেও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের অন্তরঙ্গতার পরিচয় পাওয়া যায়।
অথবা, ত্রয়ী বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চন্দ্ৰনাথ’ গল্প থেকে মন্তব্যাংশটি উদ্ধৃত করা হয়েছে। ছলনার বশবর্তী হয়ে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চন্দ্রনাথ প্রথম স্থান না পেয়ে দ্বিতীয় হয়েছে। অপমানিত চন্দ্রনাথ সেইহেতু দ্বিতীয় প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্কুলে প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনের সময় সে যায়নি। তাই তাকে ‘দুর্দান্ত’ বলা হয়েছে।
যে চন্দ্রনাথ স্কুলের কোনো পরীক্ষায় সেকেন্ড হয়নি, তাকে অন্যায়ভাবে এবার সেকেন্ড প্রাইজ দেওয়া হচ্ছে। স্কুলের সেক্রেটারির ভাইপো হওয়ার সুবাদে এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচারের অসততায় হীরু ফার্স্ট প্রাইজ পাচ্ছে। সে চন্দ্রনাথের খাতা থেকে তিনটে অঙ্ক ঢুকেছে। হীরুর খাতা পক্ষপাতের সঙ্গে মূল্যায়িত হয়েছে। এই কারণে প্রবল আত্মমর্যাদাবোধের কারণে চন্দ্রনাথ সেকেন্ড প্রাইজ প্রত্যাখ্যান করেছে। আত্মসম্মানবোধে আঘাত লাগায় চন্দ্রনাথ প্রত্যাখ্যানপত্রের মাধ্যমে পক্ষপাতী মূল্যায়ন ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে। এই কারণে স্কুলে চাঞ্চল্য ও বিক্ষোভ জেগেছে।
৪.৩ বীরসন্ন্যাসী বিবেকানন্দের ‘চিঠি’ নামক পত্রটিতে বিবেকানন্দ তাঁর অন্যতম শিষ্যা মিস নো-কে এই পরামর্শ দিয়েছেন।
বিবেকানন্দ ভারতবর্ষের নারী কল্যাণের জন্য মিস নোবলকে আমন্ত্রণ জানিয়েও তাঁর কাজে সৃষ্ট নানা বিঘ্নের উল্লেখ করে তাঁকে কিছু বিষয়ে চিন্তা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এদেশের মানসিকতা, আর্থ-সামাজিক প্রতিকূলতা, শাসক-শোষিতের সম্পর্ক, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা, ইউরোপীয় স্বাচ্ছন্দ্যের অভাব এবং সর্বোপরি শ্বেতাঙ্গ মানুষদের সন্দেহ মিস নোবলের কর্মপথের বাধা হয়ে উঠবে। এদেশের মানুষদের জাতি ও স্পর্শ সম্পর্কে যে বিকট ধারণা ও শ্বেতাঙ্গদের ব্যবহারে তাদের প্রতি যে ভয় ও ঘৃণা তারা পোষণ করে তার সঙ্গে মিস নো-এর মানিয়ে চলা অসম্ভব মনে হতে পারে। আবার শ্বেতাঙ্গ শাসকরা এই কাজকে নোবলের খামখেয়ালিপনা মনে করতে পারেন। তবু তা সত্ত্বেও মিস্ নোব্ল্ ভারতের উন্নতিকল্পে নিজেকে নিয়োজিত করলে, স্বামীজি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে কাজ করার আগে তিনি বিশেষভাবে চিন্তা করার কথা বলেছেন।
অথবা, ‘হিমালয় দর্শন’ গদ্যাংশের লেখিকা বেগম রোকেয়া বলেছেন যে তিনি ইতিপূর্বে সমুদ্র দেখতে আগ্রহী ছিলেন। বঙ্গোপসাগর দর্শন করে তাঁর সেই সাধ মিটলেও এরপরে তাঁর ইচ্ছা ছিল পর্বত দর্শন করার। কার্সিয়াং-এ এসে তাঁর সেই সাধও পূর্ণ হয়েছে।
লেখিকার হিমালয় দর্শনের সাধ আপাতদৃষ্টিতে পূর্ণ হয়েছে বলে মনে হলেও তিনি তবুও যেন পরিতৃপ্ত হতে পারেননি। কেন না, হিমালয়ের অপার্থিব সৌন্দর্য এমনই যে তা দর্শন করেও আশ মেটে না, অথচ এই বিপুল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতা মানুষের সীমিত। লেখিকা সেইজন্যই এই বলে আক্ষেপ করেছেন যে, মানবদেহে দর্শনেন্দ্রিয়, অর্থাৎ চক্ষু মাত্র দুটি এবং তা দিয়ে এই সৌন্দর্য দর্শন যেন সম্ভব নয় এবং তা ভাষায় ব্যক্ত করাও অসম্ভব। সেই কারণেই হিমালয়ে এসে অত্যন্ত কাছ থেকে খুব সুন্দরভাবে পার্বত্য সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্ত্বেও লেখিকার মনে হয়েছে তাঁর পরিতৃপ্তিলাভের ক্ষেত্রে অপূর্ণতা থেকে গেছে। কেন না ঈশ্বরের এই বিশাল সৃষ্টির অপার সৌন্দর্যকে দর্শন ও ব্যক্ত করার ক্ষমতা তাঁর নেই।
৪.৪ মহাকবি কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’ নাটকের সংক্ষিপ্ত ও বাংলায় অনূদিত ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশের শেষপর্বে নগর রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক ও ধীবর পরস্পর বন্ধু হয়েছিলেন।
আলোচ্য নাট্যাংশের শুরুতে ধীবর রাজ-নামাঙ্কিত আংটি চুরির অপরাধে নগর-রক্ষায় নিযুক্ত রাজ-শ্যালক ও দুই রক্ষীর হাতে ধরা পড়েছিল। রক্ষীরা তাকে নির্মমভাবে বেঁধে আনে রাজধানীতে।
ধীবরের জবানবন্দি না শুনে তারা সকলে নানাভাবে তাকে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিল। বিনয়ী ও সংযমী ধীবর এ সমস্ত নির্যাতনের পরেও বিনা উত্তেজনায় আংটি পাওয়ার ঘটনা জানালে রাজ শ্যালক তার সত্যতা প্রমাণ করতে রাজার কাছে গিয়েছিলেন। রাজার কাছে ধীবরের সত্যতা প্রমাণিত হলে রাজার নির্দেশে ধীবর আংটির সমমূল্যের পারিতোষিক পেয়ে মুক্তি পায়। নিম্নবিত্ত, সাধারণ ধীবরের প্রতি রাজার এই আচরণ রক্ষীরা মেনে নিতে পারেনি। তাদের ঈর্ষান্বিত দেখে সৎ ও উদারমনস্ক ধীবর নিজের অর্ধেক পুরস্কার তাদের দিয়ে দেয়। ধীবরের আচরণে তার প্রতি রাজ-শ্যালকের রুঢ় মনোভাব ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়েছিল। সামান্য ধীবরের এই আচরণ দেখে মুগ্ধ রাজ-শ্যালক তাকে ‘বন্ধু’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।
অথবা, সংস্কৃত সাহিত্যের স্বনামধন্য কবি কালিদাস রচিত ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্’-এর অনুবাদ ‘ধীবর-বৃত্তান্ত’ নাট্যাংশে যে আংটির কথা বলা হয়েছে, সেটি হল – তপোবনপালিতা, শকুন্তলার আংটি। রাজা দুষ্মন্ত তপোবনে শকুন্তলাকে বিবাহ করে তাকে রেখে রাজধানীতে ফিরে যাবার সময় শকুন্তলার হাতে পরিয়ে দেন এই আংটি। রাজ-নামাঙ্কিত এই আংটিটি ছিল মূল্যবান রত্নখচিত।
শকুন্তলাকে বিবাহ করে রাজা দুষ্মন্ত তাকে নিজ নামাঙ্কিত মূল্যবান রত্নখচিত যে আংটি দেন, রাজা ও শকুন্তলার বিবাহ সম্পর্কে সেটি ছিল একমাত্র পরিচায়ক। দুর্বাসা মুনির দেওয়া অভিশাপ অনুযায়ী রাজা শকুন্তলাকে তখনই চিনতে পারবেন যখন কোনো স্মারক বা নিদর্শন শকুন্তলা দেখাবে। শকুন্তলার সখীরা তাই ভেবেছিলেন একমাত্র এই রাজ-নামাঙ্কিত আংটিই হবে শকুন্তলার পরিচয়জ্ঞাপক নিদর্শন বা স্মারক।
শকুন্তলা মহর্ষি কম্বের উদ্যোগে পতিগৃহে যাত্রা করেছিলেন তখন পথে শচীতীর্থে স্নানের পর অঞ্জলি দেওয়ার সময় তার হাত থেকে খুলে পড়ে যায় রাজ-নামাঙ্কিত আংটি। এরপর একটি রুই মাছ তা খেয়ে নেয় ও ঘটনাক্রমে আংটিটি জনৈক ধীবরের হস্তগত হয়।
৪.৫ সেট ১ এর ৮.২ দেখুন।
অথবা, আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যে গোয়েন্দাপ্রধান গবেষণাধর্মী রচনাধারায় সত্যজিৎ রায় যথার্থ আধুনিকতা ও তীক্ষ্ণ মেধার বর্ণময় দ্যুতি উপহার দিলেন, লিখলেন ‘কর্ভাস’-এর মতো গল্পমালা। ‘কর্ভাস’ গল্পে বৌদ্ধিক সেই অনুশীলনের নিবিড় অধ্যবসায় লক্ষ করা গেল, আর সেই অনুষঙ্গে এল ম্যালি-ফাউল ও গ্রিব নামের বিদেশি দুটি পাখির অশ্রুতপূর্ব জীবনাচরণের কথা।
ব্যতিক্রমী পাখি অস্ট্রেলিয়ার ম্যালি-ফাউল বালি, মাটি, উদ্ভিজ্জ ইত্যাদি দিয়ে ঢিবি তৈরি করে বাসা বাঁধে মাটির ভিতরে। তারা ডিমে তা না দিয়ে অজ্ঞাতকৌশলে বাসার ভিতর ৭৮° ফারেনহাইট-এর স্থির তাপমাত্রা রেখে দেয়, যার ফলে ডিম থেকে শাবকের জন্ম হয়। মাটির ভিতর বাসা তৈরির অনন্যকৌশল আর বাসার ভিতরে শাবক জন্মানোর উপযুক্ত তাপমান নিয়ন্ত্রণে পাখিটির বিশেষ ক্ষমতা সিনিয়র শঙ্কুকে আশ্চর্যান্বিত করেছে।
রহস্য বাড়িয়েছে গ্রিব পাখিটিও। অজ্ঞাত কোনো জৈবিক তাড়নায় তারা “নিজেদের পালক ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় এবং শাবকদের খাওয়ায়।” এই পাখিটির আত্মরক্ষার উপায়টিও চমৎকার। অনন্য উপায়ে শরীরের বায়ু বার করে দিয়ে তারা বাড়িয়ে নেয় স্পেসিফিক গ্র্যাভিটি। আর তার ফলে প্রয়োজনমতো ডুবে থাকে জলের ভিতর বা আধ-ডোবা অবস্থায় আত্মগোপন করে থাকে। পক্ষীজগতের এমন বিচিত্র আচার-আচরণ পাখি সম্বন্ধে বিজ্ঞানী-গবেষক শঙ্কুর কৌতূহলকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল।
এছাড়া, যাযাবর পাখির দিক নির্ণয় ক্ষমতা, ঈগল-বাজপাখির শিকার ক্ষমতা, শকুনের ঘ্রাণশক্তি, অন্যান্য বহু পাখির সংগীত প্রতিভার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শঙ্কু বলেছেন সহজাত ক্ষমতার বাইরে মানুষের জ্ঞান বা বুদ্ধি তার মধ্যে সঞ্চারিত করা যায় কি না সে বিষয়ে তিনি সংশয়ান্বিত।