“দুর্বল মস্তিষ্ক কিছু করিতে পারে না। আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে। তোমরা সবল হও, গীতাপাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তোমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে।” –স্বামী বিবেকানন্দ।
ভূমিকা :
সুস্থ শরীর সুস্থ মন মানুষের জীবনের অমূল্য ধন। শরীর ও মনের সুস্থতার অন্যতম উৎস হল খেলাধুলা। খেলাধুলার মাধ্যমে যে একই সঙ্গে আনন্দলাভ ও সবল শরীরের বুনিয়াদ তৈরি করা যায় একথা বলাই বাহুল্য। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে “All work and no 1 play makes Jack a dull boy.”
খেলাধুলা ও শিক্ষা :
ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য অধ্যয়ন। শাস্ত্রে আছে – ‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’ ছাত্রজীবনে অধ্যয়নই তপস্যা। পাশাপাশি শাস্ত্রে এ কথাও আছে ‘শরীরমাদ্যং খলু ধর্মসাধনম্’ অর্থাৎ ধর্ম সাধনার ক্ষেত্রেও শরীরকে সুস্থ রাখতে হবে। সুস্থ শরীর জীবনের সমস্ত রকম সাফল্যের চাবিকাঠি। পড়াশোনা মাঝে মাঝে একঘেয়েমি হয়ে দাঁড়ায়। খেলাধুলা মনের সেই একঘেয়েমি দূর করতে সাহায্য করে। খেলাধুলা ও চরিত্রগঠন : ছাত্রজীবন বীজবপনের সময়। জীবনের উত্থান-পতন, সাফল্য-অসাফল্য, শৃঙ্খলা, সংযম, মানসিক দৃঢ়তা, প্রতিযোগী মনোভাব প্রভৃতি মানবচরিত্রের দিকগুলি এই ছাত্রজীবন থেকেই একটু একটু করে তৈরি হতে থাকে। খেলাধুলা ছাত্রজীবনে মানবচরিত্রের এই দিকগুলির পরিণতির সহায়ক। খেলার মাধ্যমে সে সংগ্রহ করে শিষ্ট আচরণের দীক্ষা। সংগ্রহ করে চারিত্রিক দৃঢ়তা, মানসিক বলিষ্ঠতা।
খেলাধুলা ও জাতীয়তাবোধ :
মানুষ যখন একা, তখন সে ক্ষুদ্র, অসহায়। আবার মানুষ যখন অনেকের সঙ্গে মিলিত হয়, তখন সে বৃহৎ অপরিমিত শক্তির অধিকারী। খেলাধুলা মানুষে মানুষে মিলনের সেতু রচনা করে। বিশ্বাত্মবোধ জাগরণের প্রধান উৎস এই খেলাধুলা। এক দেশের সঙ্গে যখন অন্য দেশের খেলা হয়, তখন একক সত্তা দেশীয় সত্তায় রূপান্তরিত হয়। জাতীয়তাবোধের জন্ম হয় তার মনে। দেশের গৌরব জাতির গৌরবের অনুভূতি মনে জাগ্রত হয়। খেলাধুলা জাতীয়তাবোধ ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ প্রকাশের সহায়ক।
জীবিকা অর্জনে খেলাধুলা :
ছাত্রছাত্রী কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভে ব্রতী হয়। এই পরিশ্রমের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য জীবনে প্রতিষ্ঠালাভ। ছাত্রজীবনে এই লক্ষ্য খেলাধুলার মাধ্যমে সাধিত হয়। খেলাধুলা জীবিকা অর্জনের পথের সহায়ক। সামাজিক জীবনে প্রতিষ্ঠার অন্যতম অবলম্বন। শুধু খ্যাতি নয়, কীর্তি নয়, আর্থিক সচ্ছলতাও দেয় খেলাধুলা। প্রতিষ্ঠিত খেলোয়াড়রা পায় জীবিকার্জনের সন্ধান।
বর্তমান সমাজব্যবস্থা ও খেলাধুলা :
বর্তমান সমাজব্যবস্থার দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশিরভাগ একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে টুকরো টুকরো। কর্মরত পিতামাতার সংসারে শিশুদের সঙ্গ দেওয়ার মতো লোক কম। থাকলেও হয়তো থাকে বয়স্ক মানুষ। শিশুরা থাকে নিঃসঙ্গ। অনুভব করে একাকিত্ব। শিশুরা আত্মকেন্দ্রিক বা কেরিয়ার সর্বস্ব হয়ে পড়ে। শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হয়। খেলাধুলার মধ্য দিয়ে তাদের মনের এই অভাববোধ দূর হয়। পরিবেশের মানুষের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে শেখে। দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলাবোধ ও সহযোগী মনোভাব দৃঢ়তর হয়। শিশুরা হয় সমাজমনস্ক।
উপসংহার :
খেলাধুলা ছাত্রজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে খেলাধুলাকে শিক্ষার অঙ্গ করে জীবনে অনুশীলন করতে হবে। মানবজীবনের সহায়ক এই খেলাধুলা। ছাত্রছাত্রীরা জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তুলতে অবশ্যই খেলাধুলাকে গুরুত্ব দেবে।
এই প্রবন্ধের অনুসরণে লেখা যায় : (১) খেলাধুলা ও ছাত্রজীবন, (২) ছাত্রজীবনে খেলাধুলার স্থান।